২ মার্চ ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৭:৫৪

পরিবহন ক্ষেত্রে অরাজকতা ও মানুষের দুর্ভোগের দায় কার?

পরিবহন ক্ষেত্রে সীমাহীন নৈরাজ্য চলে আসছে। অপরাধ করেও আইনের ঊর্ধ্বে থাকার প্রবণতা বাড়ছে। গত দুই দিন ধরে চলা পরিবহন শ্রমিকদের নজিরবিহীন অরাজকতার কারণে জনজীবনে যে সীমাহীন দুর্ভোগ নেমে এসেছে তার দায়ভার কার? এ প্রশ্নটি এখন সর্বত্র ঘুরপাক খাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের মন্ত্রীরা যেভাবে কান্ডজ্ঞানহীন বক্তব্য দিচ্ছেন, যেভাবে আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, তাতে করেই শ্রমিকরা রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে। সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই তারা প্রশাসনের নাকের ডগায় জনগণকে জিম্মী করে চরমভাবে নাজেহাল করেছে। অবস্থা এমন হয়েছে যে, দেশে কোনো সরকার আছে বলেই প্রতিয়মান হয়নি। সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলেছেন, ধর্মঘট অবৈধ। এটি প্রত্যাহার করা উচিৎ। কেউ বলেছেন, এটা ধর্মঘট নয়, কর্মবিরতি। কারো মতে, আদালতের রায় ঠিক হয়নি। যাবজব্জীবন কারাদন্ড ও মৃত্যুপরোয়ানা নিয়ে কিভাবে গাড়ি চালাবে। শ্রমিকরা এমন রায়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠতে পারে।

উল্লেখ্য, গত রোববার রাজধানীর সেগুনবাগিচার স্বাধীনতা হলে ২৫শে মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণার দাবিতে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছেন ‘শ্রমিকরা সংক্ষুব্ধ হয়ে কোন কিছু করতেই পারে।’

সূত্র মতে, যাত্রীদের জিম্মি করে আদালতের রায় বদলানোর কৌশল নিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। এবার এই কৌশল বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত এল সরকারের একজন মন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে বসে। আর এই সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় সরাসরি জড়িত একজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী এবং সরকার-সমর্থক পরিবহনমালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। গত সোমবার দুপুরে খুলনা সার্কিট হাউসে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের খুলনা বিভাগীয় কমিটির নেতাদের সঙ্গে সরকারের স্থানীয় প্রশাসনের বৈঠক শেষে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু রাতে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সরকারি বাসভবনে বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত পাল্টে যায়। গভীর রাতে ঘোষণা আসে, মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে লাগাতার পরিবহন ধর্মঘট। আকস্মিক এই ঘোষণার শিকার হয় সাধারণ মানুষ।

নৌমন্ত্রী সারা দেশের শ্রমিক সংগঠনের শীর্ষ ফোরাম বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি। ওই বৈঠকে বাস ও ট্রাকমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় সরকার পল্লিউন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ প্রায় ৫০ জন মালিক-শ্রমিকনেতা উপস্থিত ছিলেন। তাদের প্রায় সবাই সরকার-সমর্থক বলে পরিচিত।

শাজাহান খানের বাসায় বৈঠকের বিষয়ে মসিউর রহমান বলেন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি ধর্মঘট প্রত্যাহারের জন্য। শ্রমিকেরাও রাজি হয়েছিলেন। এর মধ্যে ফাঁসির রায়ের খবর আসলে শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তখন আর আমাদের কিছু করার ছিল না।

মালিক-শ্রমিক সংগঠন সূত্র জানায়, বৈঠকে সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না করার কৌশল নেয়া হয়। কারণ, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি ও সরকার সমর্থকেরা ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তাই দায় এড়াতেই এমন কৌশল নেয়া হয়। বৈঠক শেষে কেন্দ্রীয় নেতারাই ফোনে আঞ্চলিক নেতাদের ধর্মঘট পালনের নির্দেশ দেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল সচিবালয়ে এই ধর্মঘটকে দুঃখজনক উল্লেখ করে সাংবাদিকদের বলেন, তাদের (পরিবহনশ্রমিক) উদ্দেশে বলতে চাই, জনগণকে কষ্ট না দিয়ে আপনারা আদালতে এসে আপনাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। আপনাদের বক্তব্য যদি যুক্তিসংগত হয়, তবে তা দেখা হবে। যুক্তিসংগত না হলে দেখা হবে না। এই ধর্মঘটে আদালত অবমাননা হচ্ছে কি না, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, এটি আদালতের বিবেচ্য বিষয়।

আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ধর্মঘটে যাওয়া কতটা যৌক্তিক জানতে চাইলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেন, আদালতের সিদ্ধান্ত পছন্দ না হলে যে কেউ উচ্চতর আদালতের দ্বারস্থ হতে পারেন। কিন্তু পেশিশক্তিকে অস্ত্র বানিয়ে সারা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ নেই। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের শিরদাঁড়া সোজা রাখতে হবে।

হঠাৎ ধর্মঘটের কারণে ঘর থেকে বেরিয়েই ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানী ও আশপাশসহ সারা দেশের মানুষ। সোমবার সন্ধ্যায় ও রাতে দূরপাল্লার বাস-ট্রাক যাত্রী ও পণ্যসহ আটকা পড়ে। সকালে গাবতলী, কাঁচপুর সেতু, গাজীপুর, কেরানীগঞ্জসহ ঢাকার সব প্রবেশমুখে যানবাহন আটকে দেয়া হয়। দূর থেকে আসা যাত্রীরা টার্মিনালের অনেক দূরে নেমে হেঁটে, রিকশায় ও রিকশাভ্যানে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করেন। আবার রাজধানী শহরের ভেতরেও সীমিতভাবে যানবাহন চলে। এই দুর্ভোগের পরও নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ধর্মঘটের পক্ষেই সাফাই গাইলেন। তিনি বলেন, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারে। আপনিও করেন, আমিও করি। ঠিক একইভাবে ওরাও (শ্রমিক) ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তিনি আরও বলেন, চালকেরা মনে করেছেন, তারা মৃত্যুদ-াদেশ বা যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশের মতো রায় মাথায় নিয়ে গাড়ি চালাবেন না। তাই তারা স্বেচ্ছায় গাড়ি চালাচ্ছেন না। এটাকে ধর্মঘট নয় ‘স্বেচ্ছায় অবসর’ বলা যেতে পারে।

নৌমন্ত্রী স্বেচ্ছা অবসর বললেও ধর্মঘট আহ্বানকারীরা দিনভর রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দিয়েছে। কোথাও কোথাও বাসের চালককেও নামিয়ে দেয়া হয়। সিএনজি অটোরিকশা চালকদেরও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর গাবতলীতে আটকেপড়া ব্যক্তিগত গাড়িগুলোকে ধাক্কাধাক্কি করতে দেখা গেছে। অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, অনেক সময় পুলিশ ছোটখাটো আন্দোলন কর্মসূচিতেও চড়াও হয়। কিন্তু পরিবহন ধর্মঘটে পুলিশ ছিল নিষ্ক্রিয় ও নীরব দর্শক। যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের সামনেই যাত্রী ও চালককে বাস থেকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশ কোনো ভূমিকা পালন করেনি। আসলে মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা সরকারের লোক। জনস্বার্থে সরকারের নেওয়া সিদ্ধান্ত তারাও মানেন না।

মালিক-শ্রমিক সংগঠনের একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা জানান, সাধারণ মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় দায়ী চালকের বিরুদ্ধে সাজা দেয়ার নজির নেই। দুর্ঘটনার জন্য মালিকদের মোটা অঙ্কের ক্ষতিপূরণও দিতে হয়নি। কিন্তু পরপর দুটি ঘটনায় সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার ঘটনায় পরিবহনশ্রমিকেরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ভবিষ্যতে এ ধরনের মামলায় আরও সাজা হতে পারে, এ আশঙ্কায় তারা সবাইকে একটা ‘বার্তা’ দিতে চান। এ থেকেই ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

শাজাহান খানের বাসায় বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক মালিক ও শ্রমিকনেতা জানান, মালিকদের সংগঠনগুলো ধর্মঘটের বিষয়ে খুব বেশি সোচ্চার ছিল না। আবার শ্রমিক সংগঠনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে মত দেয়ারও সাহস দেখায়নি। বৈঠকের শুরুতে খুলনা অঞ্চলের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে সরকারকে সময় বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছিল। এ সময় ঢাকা অঞ্চলের ট্রাকমালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে খবর দেওয়া হয় যে, দুর্ঘটনায় এক নারীর প্রাণহানির কারণে একজন ট্রাকচালকের মৃত্যুদ-ের রায় হয়েছে। এরপর নেতারা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। নিশ্চিত হওয়ার জন্য কোনো কোনো নেতা ওই মামলায় আসামীপক্ষের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন। নিশ্চিত হওয়ার পর ধর্মঘট প্রত্যাহারের আলোচনা আর এগোয়নি। মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের দুজন দায়িত্বশীল নেতা দাবি করেন, বিষয়টি এখন নেতাদের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেই। শক্ত কর্মসূচি না নিলে তাদের নেতৃত্বই হুমকির মুখে পড়ে যাবে।

সূত্র মতে, পরিবহন শ্রমিকদের দুই দিন ধরে চলা ধর্মঘটে নৌ মন্ত্রী ও শ্রমিক নেতা শাহজাহান খানের সরাসরি ইন্ধন থাকার অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই বলছেন, তার প্রত্যক্ষ মদদেই দুইজন ড্রাইবারের বিরুদ্ধে আদালতের রায়ের প্রতিবাদে শ্রমিকরা রাজধানীসহ সারাদেশে সশস্ত্র রূপ ধারণ করে। প্রকাশ্যে পুলিশের উপর হামলা চালায়। ভাঙচুর করে পুলিশ বক্স। তাদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি এ্যাম্বুলেন্সসহ সাধারণ মানুষও। গত দুই দিনের ঘটনায় সারাদেশের মানুষ ভয়াবহ জনভোগান্তিতে পড়েছিল। এই ঘটনায় রাজধানীর গাবতলীতে একজন নিহতও হয়েছেন। ভাংচুর চালানো হয় অসংখ্য গাড়িতে। পুলিশসহ আহত হয়েছে অর্ধশত মানুষ। এ অবস্থার জন্য খোদ সরকারি দরও নৌমন্ত্রী শাহজাহান খানকে দায়ী করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারাদেশে চলা ধর্মঘটের দায় কোনভাবেই নৌমন্ত্রী এড়াতে পারেন না।

ধর্মঘটের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নাম প্রকাশ না করে বলেন, সরকারের একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর প্রত্যক্ষ মদদে সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘট হয়েছে। সম্পূর্ণ ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে পরিবহন ধর্মঘটের মাধ্যমে গোটা দেশে একটি অরাজক পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু সরকার এই সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে কোনো সরকার আছে বলে মনে হয় না। আর যেটা আছে সেটা জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার নয়, আছে দখলদার বাহিনীর মতো তিনি বলেন, সমস্ত দেশের মানুষ আজকে চরম অস্থিতিশীল ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। এই সরকার শুধু ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে গোটা দেশকে ধ্বংস করছে।

আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ধর্মঘটে জনভোগান্তির ঘটনায় নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে দায়ী করছেন খোদ আওয়ামী লীগ বেশ কয়েকজন নেতা। তারা বলছেন, শাজাহান খানের প্রত্যক্ষ মদদে সারা দেশে এই ধর্মঘট ছড়িয়েছে। জনভোগান্তি চরমে উঠেছে। এতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আলাপকালে তারা দাবি করেছেন, পরিবহন ধর্মঘট একমাত্র শাজাহান খানের ইন্ধনে সারা দেশে ছড়িয়েছে। এ ছাড়া ধর্মঘটের নামে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি পরিবহনের ওপর আক্রমণ এবং বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তাদের মতে, শুধু রাজধানীতে নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানেও অরাজকতা হয়েছে। সরকারের একজন মন্ত্রীর ইন্ধনে এ ধরনের জনবিরোধী কর্মকা- মেনে নেয়া যায় না।

ধর্মঘটের কারণে মানুষের দুর্ভোগে পড়ায় দুঃখ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, এই অযৌক্তিক ধর্মঘট কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি (শাজাহান খান) একই সঙ্গে মন্ত্রী এবং শ্রমিকনেতা। তাই শ্রমিকদের বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু শ্রমিকেরা যে সহিংসতা করছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত থাকুক, এটা সমর্থনযোগ্য নয়।

শাজাহান খানকে উদ্দেশ করে ফেসবুকে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম লিখেছেন, আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর রক্তের দাগ আপনার হাতে এক সময় ছিল মাননীয় মন্ত্রী। আমরা সবাই ভুলে যাচ্ছিলাম। আপনি আবার শেখ হাসিনার শান্তির দেশে অবরোধ ডেকে মনে করিয়ে দিলেন আপনার অতীত। ছাত্রলীগের সহসভাপতি আহসান হাবিব তার ফেসবুকের পাতায় লেখেন, শেখ হাসিনার হাতে দেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তখন দালাল শ্রেণির শ্রমিকনেতারা দেশকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য ব্যস্ত। ওই সব দালাল শ্রমিকনেতাদের বলছি, দেশের পরিবেশ খারাপ করবেন না। শাজাহান খানকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক রফিকুল ইসলাম। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, শাজাহান খানকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বাদ দেওয়া হোক। আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হোক। তাহলে বাংলাদেশে এ ধরনের অবৈধ আন্দোলন ও ধর্মঘট বন্ধ হবে।

মিরপুর স্টাফ কলেজে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতি তো আমরা চলতে দিতে পারি না। যাতে রাজপথগুলো পরিষ্কার থাকে, সে ব্যবস্থা আমরা অবশ্যই নেব। আমরা এখন দেখছি। মামলা হবে না কেন? পুলিশের একটা রেকার ভেঙে ফেলেছে। আজকে একটা জিপের ওপর আক্রমণ করতে গিয়েছে। সেই সময় আপনারা দেখেছেন একজন শ্রমিক আহত হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী চরম ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, পরিবহন ধর্মঘটের নেপথ্যের নায়ক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান। একজন বাসচালককে সাজা দিয়েছে আদালত। কিন্তু জনগণকে ব্লাকমেইল করে এখন সারাদেশে পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হচ্ছে। এর পেছনের মূল নায়ক কে তা এখন সবাই জেনে গেছে।

এদিকে দুই বাসচালকের কারাদ-ের প্রতিবাদে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে সমর্থন দেয়ায় নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানের অপসারণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ খানের বরাবর স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে। গতকাল বুধবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দ রেজিস্ট্রি ডাকযোগে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বরাবর এ স্মারকলিপি পাঠান। স্মারকলিপিতে তিনি বলেন, সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের একজন মন্ত্রী হয়ে তিনি এ ধরনের কর্মসূচিতে সমর্থন দিতে পারেন না। তাই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

http://www.dailysangram.com/post/273928