২ মার্চ ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৭:৫৩

দু’দিনের ব্যাপক তান্ডব শেষে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

সারা দেশে দুই দিন ধরে ব্যাপক জনভোগান্তির পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। নৌমন্ত্রী ও শ্রমিক নেতা শাহজাহান খান গতকাল বুধবার দুপুরে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বাস পাওয়ার কথা জানিয়ে পরিবহন মালিক শ্রমিকদের যানবাহন চলাচল শুরু করার আহ্বান জানালে টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়তে দেখা যায়। সন্ধ্যার পরই রাজধানীর মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে। হানিফ পরিবহনের ব্যবস্থাপক আলমাস আলম বলেন, শ্রমিক নেতারা আমাদের ফোন করে বলেছে গাড়ি ছাড়া যেতে পারে। এজন্য গাড়ি ছাড়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। যদিও এর আগে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভের পাশাপাশি ব্যাপক ভাংচুর চালায়। রাজধানীর গাবতলীতে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে শ্রমিকরা। স্থানীয় সংসদ সদস্যের ইন্ধনে সরকারদলীয় শ্রমিকরা পুলিশ বক্সে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অর্ধশত মানুষ আহত হয়েছে। এ সময় গুলীতে শাহীন আলম নামের এক পরিবহন শ্রমিক নিহত হয়।

এদিকে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা আসার পরও বিকেল ৩টার দিকে গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে একদল শ্রমিককে রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করতে দেখা যায়। পরে পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা তাদের সরিয়ে রাস্তা খালি করে দেয়। এ সময় টার্মিনালের কেন্দ্রীয় মাইক ও পুলিশের এপিসি থেকে কর্মবিরতি প্রত্যাহার এবং রাস্তায় কোনো ঝামেলা নেই বলে ঘোষণা দেয়া হয় বার বার। অ্যদিকে হাইকোর্ট এক রিট আবেদনের শুনানি করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সারা দেশে স্বাভাবিক যান চলাচল নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল, অবরোধ বা ধর্মঘট কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং যারা আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে ধর্মঘট ডাকবে, তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট।

উল্লেখ্য, মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেন আদালত। এর প্রতিবাদে গত রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেন শ্রমিকেরা। এরপর ঢাকার সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এক চালকের মৃত্যুদ-াদেশ দেন আদালত। এরই প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) থেকে পরিবহন শ্রমিকেরা ধর্মঘটের ডাক দেন।

সূত্র মতে, দুই চালকের সাজার রায়ের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ করে সারা দেশে পরিবহন শ্রমিকদের এই ধর্মঘট শুরু হলে দুই দিনে ব্যাপক ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। গাবতলীতে শ্রমিকরা পুলিশের সাথে সংঘর্ষেও জড়ায়। এই প্রেক্ষাপটে বুধবার সকালে সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার দপ্তরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়ত উল্লাহকে নিয়ে বৈঠক করেন। এরপর দুপুরে শাহজাহান খান, রাঙ্গা ও এনায়েত উল্লাহ মতিঝিলে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি কার্যালয়ে গিয়ে মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেন।

বেঠক শেষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বৈঠকে বসেছিলাম। ধর্মঘটের বিষয়ে আলোচনা করেছি। এখন শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ জন্য আমরা পরিবহন মালিক নেতা খন্দকার এনায়েতুল্লাহ খানের অফিসে একটি বৈঠক করবো। তিনি আরও বলেন, ধর্মঘট নিয়ে নানা ধরনের ঘটনা ঘটছে। সবকিছু আমাদের নলেজে আছে। আমরা আশাবাদী আজকের মধ্যেই এ ধর্মঘট প্রত্যাহার হবে। ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে আজকের বৈঠকে আমরা নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এ ঘোষণা এখান থেকে দিতে চাই না। শ্রমিকদের সঙ্গে বসেই সেখান থেকে ঘোষণা দেয়া হবে।

পরে সাংবাদিক সম্মেলনে নৌমন্ত্রী বলেন, এখন থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য মালিক ও শ্রমিক ভাইদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। আশা করছি, সারা দেশে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হবে। শাজাহান খান দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলোর শীর্ষ ফোরাম বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি। আর প্রতিমন্ত্রী রাঙ্গা বাস ও ট্রাক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি। ওই সাংবাদিক সম্মেলনের পর দুদিন ধরে টার্মিনালে দাঁড়িয়ে থাকা দূর পাল্লার বাসের চাকা সচল হতে শুরু করে।

মতিঝিলের পরিবহন ভবনের ষষ্ঠ তলায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির কার্যালয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে শাজাহান খান বলেন, শ্রমিকদের এই কর্মসূচি ধর্মঘট ছিল না। এটা ছিল কর্মবিরতি। আদালতের রায়ের পর শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্র ঝুকিপূর্ণ মনে করে এই কর্মবিরতি শুরু করে। আমাদের এই আহ্বানের পর তারা তাদের কর্মস্থলে ফিরে যাবে। আমাদের বিশ্বাস, আমাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে দেশের সর্বত্র সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হবে।

তাকে নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা কার কর্মসূচি ছিল? সেটা আপনাদের (বিএনপি) উপর আঘাত আসছে আপনারা বুঝতেন। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন কোন কর্মসূচি দেই নাই। এটা শ্রমিকদের স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি ছিল।

ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্বাস উদ্দিন বলেন, আইনি লড়াইয়ে যেতে চাই আমরা। চালকদের সাজার বিষয়ে আইনি সহায়তা দেয়ার আশ্বাস পাওয়ায় আমরা কর্মবিরতি তুলে নিয়েছি। ঢাকা জেলা বাস মিনিবাস সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ সদু বলেন, শ্রমিক নেতারা চালকদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন। এ কারণে শ্রমিকরা পরিবহন চালাতে রাজি হয়েছেন। আমাদের শ্রমিক নেতারা কর্মবিরতির বিষয়ে আইনের মাধ্যমে সমাধানের ব্যাপারে আমাদের আশস্ত করেছেন। আমরাও এখন চাই, আইনের মাধ্যমে এর সমাধান হোক।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা সব টার্মিনালে গাড়ি চালু করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছি। মালিকদের আমরা নির্দেশ দিয়েছি যাতে শ্রমিকেরা গাড়ি চাইলে তারা দিয়ে দেন। মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি তারেক মাহমুদ বলেন, টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ আন্তজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, ট্রাক চলাচল শুরু হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে পুরোপুরি ট্রাক চলবে।

জানা গেছে, ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গাবতলীতে পুলিশের সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয় পরিবহন শ্রমিকরা। সংঘর্ষে ৭টি অ্যাম্বুলেন্সে আগুণসহ ২০-৩০টি যানবাহন ভাঙচুর করে পরিবহন শ্রমিকরা। সকাল থেকেই সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বাস না পেয়ে অফিসগামী যাত্রীরা অটোরিকশা-রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়লে পরিবহন শ্রমিকরা তাদের নামিয়ে দিয়েছে। সড়কে বাসানো ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সিসিটিভি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এসময় তারা পুলিশ বক্স ও রেকারেও আগুণ ধরিয়ে দেয়। গতকাল বুধবার আবারও শ্রমিক-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকা। সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শ্রমিকরা। থেমে থেমে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ফাঁকা গুলী ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে শাহিন আলম (৩২) নামে এক বৈশাখী পরিবহনের এক হেলপার গুলীবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। আহতাবস্থায় তাকে স্থানীয় সেলিনা ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালীতে বাসের জন্য শত শত নারী-পুরুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে বিফল হয়ে ফিরতে হয়েছে। টেকনিক্যাল, কল্যাণপুর, আরামবাগ, কলাবাগানসহ দূরপাল্লার বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির কাউন্টারের সামনে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেছে। পরিবহন শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে কার্যত সারা দেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল রাজধানী ঢাকা।

নৌমন্ত্রীর অপসারণ দাবি: দুই বাসচালকের কারাদ-ের প্রতিবাদে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে সমর্থন দেয়ায় নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খানের অপসারণ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ খানের বরাবর স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে। গতকাল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. ইউনুস আলী আকন্দ রেজিস্ট্রি ডাকযোগে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি বরাবর এ স্মারকলিপি পাঠান। স্মারকলিপিতে তিনি বলেন, সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের একজন মন্ত্রী হয়ে তিনি এ ধরনের কর্মসূচিতে সমর্থন দিতে পারেন না। তাই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

ধর্মঘট অবৈধ: পরিবহন ধর্মঘটকে অবৈধ বলে এর সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংগঠনের নেতা কর্মীদের সমালোচনা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল রাজধানীর এক কলেজের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে এলে তিনি এ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এ ধরনের পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। এভাবে জনগণকে দুর্ভোগে ঠেলে দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ধর্মঘট অবৈধ।

হাইকোর্টে রিট: আদালতের রায়ের প্রতিবাদে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সড়কে গণপরিবহন চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে। রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রিট আবেদনে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্মঘট প্রত্যাহারের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, আজ দুপুর ২টায় বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

সপ্তাহের খরচ এক দিনেই: ঢাকার চানখার পুলের বাসা থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে প্রতিদিন ১০-২০ টাকা খরচ হয় জাকারিয়া খানের, কিন্তু গতকাল তাকে রিকশায় যেতে হয়েছে, ফিরতেও হয়েছে রিকশায়। কারণ পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে ছিল না বাস। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই শিক্ষার্থী বলেন, এক সপ্তাহ যাওয়া-আসা করতে যে টাকা খরচ হয়, তা আজ একবারেই খরচ হয়ে গেল। কারণ ক্লাস তো করতে হবে।

জাকারিয়ার মতো বিপাকে ছিলেন রাজধানীর অনেকে, যাদের নির্দিষ্ট আয়ের মধ্যে চলতে হয়। মঙ্গল ও বুধবার বাস না থাকায় তাদের কাউকে রিকশা কাউকে অটো রিকশায় চড়তে হয়েছে, পকেটও খালি হয়েছে অনেক। রাজধানীতে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় রিকশা ও অটোরিকশাই একমাত্র অবলম্বন হওয়ায় সুযোগ বুঝে তারা ভাড়া বাড়িয়ে দেন অনেক বেশি, গন্তব্যে পৌঁছতে পথে নামা মানুষদের কোনো বিকল্প ছিল না বলে বাড়তি ভাড়াই গুণতে হয়েছে তাদের।

বুধবার সকালে মিরপুরে পুরান ঢাকার গাড়ির খোঁজ করছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আশরাফুল ইসলাম। তিনি জানান, আগের দিন চার বার গাড়ি বদলে কর্মস্থলে গিয়েছিলেন তিনি, তাতে খরচ হয়েছিল ৫০০ টাকা। মঙ্গলবার থেকে যে কী ভোগান্তিতে আছি তা বলে বোঝানো যাবে না, এভাবে চললে তো দিনের বেতনের চেয়ে গাড়ি ভাড়াই বেশি পড়বে, বলেন তিনি। পল্লবীর বাসিন্দা সৌরভ রায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফার্মগেইটে সিটিং বাসে যেতে ১৫ টাকা লাগত, কিন্তু আজ ২০০ টাকায় যেতে পারব কি না সন্দেহ। এই অতিরিক্ত খরচটা সাধারণ পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করবে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ভাড়া গুণেই যেতে হয়েছে। অনেকে আবার চেপে বসেন মালবাহী ভ্যানে। ফার্মগেইট এলাকায় দুপুরে কথা হয় তেজকুনীপাড়ার মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে, ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসক দেখাতে বেরিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েন তিনি। মোজাম্মেল বলেন, সিএনজি-রিকশা তো কয়েকগুণ বেশি ভাড়া চাচ্ছে। খামারবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মিরপুরের জন্য দুইশ' থেকে তিনশ', শ্যামলীর জন্য একশ' থেকে দেড়শ' টাকা ভাড়া হাঁকছেন রিকশাচালকরা। অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে রিকশাচালক ফরিদ মিয়া বলেন, গাড়ি নাই, চাহিদা বেশি, তাই ভাড়া একটু বেশি। সবসময় তো এমন সুযোগ আসে না। শাহবাগে ব্যবসায়ী রতন পাল জানান, বংশাল যেতে তাকে অন্যদিনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি ভাড়া গুণতে হচ্ছে। এভাবে তো দেশ চলতে পারে না। গাড়ি বন্ধ থাকায় এমনিতে সিএনজি-রিকশা চালকরা বেশি ভাড়ার সুযোগ পাচ্ছে। কিন্তু এরপরও ভাড়া বাড়িয়ে দেয়াটা অমানবিক। দূরের যাত্রায়ও ছিল রিকশা, কিন্তু ভাড়া ছিল কয়েকগুণ বেশি।

শাহবাগে পথচারী ফরিদ হোসেন বলেন, গলাকাটা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পুরান ঢাকা থেকে দেড়শ' টাকা রিকশা ভাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে। অথচ বাস থাকলে ১৫ টাকা লাগতো। গরিবের কষ্ট দেখার কেউ নেই। বড় লোকরা তো গাড়িতেই যায়। সব সমস্যা কেবল আমাদের উপর দিয়েই যায়। অতিরিক্ত ভাড়ার সঙ্গে নিরাপত্তাহীনতার শঙ্কার কথাও বলেছেন যাত্রীরা।

http://www.dailysangram.com/post/273927