২৫ নভেম্বর ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:২৫

চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের সহযোগী সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সহযোগী নয়, আল-কুরআনের কর্মী হয়েই জান্নাত পানে ছুটে চলতে হবে

-ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরীর উদ্যোগে বর্ণাঢ্য ও ঐতিহাসিক সহযোগী সদস্য সম্মেলন মহানগরী আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ শাহজাহান এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমীরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান।

মহানগরী সেক্রেটারি ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য অধ্যক্ষ নুরুল আমিন এর সঞ্চালনায় দশ সহস্রাধিক সহযোগী সদস্যের উপস্থিতিতে আয়োজিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি ডা: শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াত রাজনীতির জন্যই শুধু রাজনীতি করেনা বরং কুরআন সুন্নাহর আলোকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও শোষণহীন মানবিক সমাজ গঠনের লক্ষ্যেই আমাদের রাজনীতি এবং সে লক্ষ্যেই আমাদেরকে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। যদিও বা এই দেশের মানুষ আজ গুম, খুন, দূর্নীতি, অশ্লীলতা ও নানান অশান্তিতে নিমজ্জিত। সাধারণ মানুষ আজ এই অবস্থার পরিবর্তন চায়। তাই জামায়াত কর্মীরা জুলুম অত্যাচারের সামনে কোন অবস্থাতেই চুপ থাকতে পারেনা। আপনাদেরকে এই পরিবর্তনের গুরু দায়িত্ব পালন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এই দেশের মানুষকে দীর্ঘদিন নানান মত ও পথের মাধ্যমে মুক্তির স্বপ্ন দেখিয়ে আসছিল। কিন্তু সারা দুনিয়ার সব তন্ত্র মন্ত্র আজ মানুষকে শান্তি ও মুক্তি দিতে ব্যর্থ। সেই পথে ওরা সৎ, চরিত্রবান ও আদর্শ মানুষ তৈরি করতে পারেনি। অসৎ মানুষ কখনোই সত্য, ন্যায় ও শান্তির পতাকাবাহী হতে পারেনা। জামায়াত কর্মীদেরকেই তাকওয়ার পোশাকে সজ্জিত হয়ে এ দেশের মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রামে সক্রিয় ভুমিকা পালন করতে হবে। শত জুলুম নির্যাতন পেরিয়ে, সহযোগী হতে নিজেদেরকে উত্তরণ করে একজন সক্রিয় কর্মীর ভুমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার মাধ্যমেই আমরা এটা অর্জন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। সমগ্র জাতি আজ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। বাতিলের চোখ রাঙ্গানিকে উপেক্ষা করে নেতৃত্বের এই মহান জিম্মাদারী আমাদেরকেই পালন করতে হবে। মনে রাখবেন এই পথে মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী ও বন্ধু।

আমীরে জামায়াত সহযোগী সম্মেলনে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে আরও বলেন “এই দেশে পরিবর্তন হবে”এবং তা কুরআনের মাধ্যমেই হবে। আমরা সেই পথেই আপনাদের ডাকছি। অশান্তি কবলিত এই বিশ্বকে নির্মল মুক্তির স্বাদ দেয়ার জন্য, মানুষকে মানুষের গোলামী হতে মুক্ত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে শুধুমাত্র সহযোগী নয় আল-কুরআনের কর্মী হয়েই আমদের সেই জান্নাতের পানে ছুটতে হবে, যার ব্যাপ্তি আসমান ও জমীনের সমান, যেখানে আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে রয়েছে অকল্পনীয় এক মহা পুরস্কার।

মহানগরী আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, আজ দেশের মানুষ অধিকারহীন, আধিপত্যবাদীদের দ্বারাই মানুষ শোষিত হচ্ছে। ক্রমাগতভাবে আলেম-উলামাদের নির্যাতন করে দমিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। গুম খুনের সয়লাবে আজ দেশ বিপর্যস্থ। এই অবস্থায় শহীদি তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে, শহীদ নেতৃবৃন্দের রেখে যাওয়া কাজকে আমাদের এগিয়ে নিতে হবে। কারণ দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজই হলো একজন মুমিনের অপরিহার্য কর্তব্য, এটিই মহান রবের কাছে সবচেয়ে বেশী মর্যাদার।

নগর আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান আরও বলেন, বাতিলেরা চেয়েছিল সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে হত্যা করে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে রুখে দিতে, জামায়াতকে জনবিচ্ছিন্ন করতে, কিন্তু আজ দেখুন তারাই জনগন থেকে বিচ্ছিন্ন। এ কারনেই নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। ভোটারদের অংশগ্রহণ এতই কম যে বিজয়ী প্রার্থী পর্যন্ত জামানত হারাচ্ছে। তিনি সহযোগীদের উদ্দেশ্য বলেন, আমাদের চুড়ান্ত ডেস্টিনেশন হলো “জান্নাত” সেই পথে সব জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন মোকাবেলা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এই দেশ ও জাতিকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ ও নির্মল সমাজ উপহার দেয়ার জন্য কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে ইসলামের দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছাতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে শীর্ষ নেতৃত্বের রক্তে রঞ্জিত এই ময়দান ও সংগঠনের জিম্মাদারী, সাধারণ মানুষের যে আস্থা ও বিশ্বাস জামায়াত নেতৃত্বের প্রতি তা রক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব।

ঐতিহাসিক এ সহযোগী সদস্য সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহানগরীর নায়েবে আমীর ও সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আজম ওবায়দুল্লাহ, মহানগরী নায়েবে আমীর মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, মহানগরী এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খায়রুল বাশার, মুহাম্মদ উল্লাহ ও এফ এম ইউনুস, মহানগরী সাংগঠনিক সেক্রেটারি এম এ আলম চৌধুরী ও মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী প্রমুখ। আরো উপস্থিত ছিলেন মহানগরীর সম্মানিত কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দ, থানা আমীরগণ ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন পেশাজীবি ও ব্যবসায়ী বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

বিশাল এ সহযোগী সদস্য সম্মেলনে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা পরিচালনা করেন বিশিষ্ট গীতিকার ও সুরকার শিল্পী অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মানসুর। উপস্থিতির উদ্দেশ্যে কবিতা আবৃতি করেন- কবি শরীফ বায়োজিদ মাহমুদ। সংগীত পরিবেশন করেন ডা: আতাউল হক ওসমানী, শিল্পী ওবায়দুল্লাহ তারেক, সাইমুম শিল্পী গোষ্ঠী ও চট্টগ্রামের কালচারাল একাডেমির শিল্পীবৃন্দ।