সকল প্রকার দুঃশাসনের অবসান এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা সংরক্ষণ, অর্থনীতি পুনর্গঠন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সংবাদ পত্রের স্বাধীনতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির অবসান, মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া, সর্বোপরি গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া ও জনগণের অবাধ ভোটাধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তির সমন্বয়ে চার দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয় এবং একসাথে আন্দোলন, একসাথে নির্বাচন ও একসাথে সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। ২০০১ সালের নির্বাচনে দেশবাসী প্রকৃত অর্থে ব্যালট বিপ্লব ঘটায় এবং চারদলীয় জোটকে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী করে।
ঘোষণা অনুসারে চারদলীয় জোট-সরকার গঠিত হয়। জোটের শরীক হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রথম বারের মত সরকারে অংশ নেয়। জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনের মধ্যে জামায়াতের আসন ছিল ১৭টি, আর মন্ত্রী ছিলেন ২ জন। পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে ৪ জন সদস্যা নির্বাচিত হন। পাঁচ বছর সফলভাবে সরকার পরিচালনার পর মেয়াদ পূর্তিতে বিগত ২৯ অক্টোবর জোট-সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে।
জোট সরকারের সাফল্য
> জোট সরকারের আমলে দেশ থেকে সন্ত্রাস দূর করার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
> রাজনৈতিক ময়দানে একটি স্থিতিশীল ও সহাবস্থানের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চালানো হয়।
> জাতীয় আয় বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ৭% উন্নীত হয়।
> খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে অর্জিত হয় ব্যাপক অগ্রগতি।
> মাথা পিছু আয় ৩৪০ মার্কিন ডলার থেকে ৪৮২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়।
> নিজস্ব সম্পদ দিয়ে উন্নয়ন-ব্যয় শতকরা ৪২ ভাগ থেকে ৫৮ ভাগে উন্নীত করা হয়।
> দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে দারিদ্র্যের হার শতকরা ৯ ভাগ কমানো হয় এবং অতি দারিদ্রের হার ২৪% থেকে ১৮% নামিয়ে আনা হয়।
> বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ব্যবস্থা করা হয়।
> নারী শিক্ষার প্রসারকল্পে বিভিন্ন প্রকার বৃত্তি, উপবৃত্তি চালুসহ মহিলাদের জন্য পৃথক কারিগরি ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়।
> প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের জন্য ভাতা ও বিনা সুদে ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়।
> শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সুবিধা সম্প্রসারণ করা হয়।
> সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন পে-স্কেল প্রদান করা হয়।
> টেলিফোন ও মোবাইল ফোনের ব্যাপক বিস্তৃতিসহ তথ্য-প্রযুক্তির মহাসড়কে প্রবেশের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তিকে সহজলভ্য করা হয়।
> স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জনগণ, বিশেষ করে ওলামায়ে কেরামের সহযোগিতায় বোমাবাজদের গ্রেফতার, তাদের নেটওয়ার্ক ভেঙ্গে দেয়া এবং দ্রুত বিচারে সোপর্দ করা হয়।
> শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া এবং নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা নেয়ার ব্যবস্থা করে যথার্থ যোগ্য নাগরিক তৈরীর ব্যবস্থা করা হয়।
> মাদরাসা শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে ফাজিল ও কামিলকে ডিগ্রী ও মাস্টার্সের সমমান প্রদান করা হয়।
> কওমী মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
> বিপুল সংখ্যক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসা কায়েম করা হয়।
> অবকাঠামোগত উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্য অর্জিত হয়।
> গ্রামীণ অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হয়।
এ ছাড়া আরও বহু কল্যাণধর্মী ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে জোট সরকার দেশকে একটি উন্নয়নমুখী স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়েছে।