বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক বৈঠক সংগঠনের আমীর ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দেশব্যাপী তীব্র তাপদাহ এবং প্রচণ্ড গরমে বিপর্যন্ত পরিবেশ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আলোচনার পর নিম্নোক্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়।
“বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, বাংলাদেশে তীব্র তাপদাহ, প্রচণ্ড গরম ও উত্তপ্ত আবহাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত। অপরিকল্পিত নগরায়ন ও চাহিদামতো বনায়ন না হওয়ায় দেশে তাপমাত্রা ৭৬ বছরের রেকর্ড ভঙ করেছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় মানুষ, পশু-পাখি, জীব-জন্তু ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে। দেশে ভয়াবহ খরা দেখা দিয়েছে। মাঠ-ঘাট ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। গাছ-পালা ও মৌসুমি ফল-মূলসহ সব ধরনের শস্য মরে যাচ্ছে। সর্বত্রই এক ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তদুপরি বিদ্যুতের লোডসেডিং জনজীবনকে আরও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে জামায়াতে ইসলামী দেশের আলেম-ওলামা, ও জনগণকে সাথে নিয়ে ইস্তিস্কা নামাজ আদায়ের আহ্বান জানায়। মানুষ তীব্র গরম ও অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তির জন্য মহান রবের নিকট সাহায্য চেয়ে ইস্তিস্কার নামাজ আদায়ের জন্য উপস্থিত হলে রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয় ও অনেককে গ্রেফতার করে। সরকারের এ পদক্ষেপ যারপরনাই অমানবিক, অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত। দেশবাসীর প্রশ্ন সরকার কী চায় না দেশের মানুষ স্বস্তিত্বে থাকুক, শান্তিতে থাকুক। সর্বোপরি সরকারের এই ঘটনা তাদের ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সরকারের এই ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ আরও লক্ষ্য করছে যে, সরকার দেশে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছে। বনায়নের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ থাকলেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। বিপরীত পক্ষে অপরিকল্পিত ও লাগামহীনভাবে গাছপালা কেটে দেশের বনাঞ্চলসমূহ ধ্বংস করা হচ্ছে। নিয়মবহির্ভূতভাবে ও বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনই প্রধানতম দায়ী। সেই সাথে অপরিকল্পিত নগরায়ন, জলাধার কমে যাওয়া, বনভূমি সংরক্ষণ না করা, যত্রতত্র গাছ-পালা কেটে ফেলা, নদী-নালা, খাল-বিল ভরাট করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ ইত্যাদি দায়ী। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য জনগণকে সচেতন হতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। পরিকল্পিত নগরায়ন কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। বেদখল হওয়া জলাধার তথা নদ-নদী, ও খাল-বিল পুনরুদ্ধার করে তা সংরক্ষণ করতে হবে। সবুজ বনায়ন কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। প্রতিটি বাড়িতে গাছ লাগাতে হবে।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ দেশকে তাপদাহসহ সকল প্রকার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য মহান রবের খাস রহমত কামনা করছে। সেই সাথে মানব সৃষ্ট সংকট নিয়ন্ত্রণ, বৃক্ষরোপন কর্মসূচি গ্রহণ, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য সরকার ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।”