বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের এক সভা সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় দেশে বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় এবং জামায়াতে ইসলামীকে সভা-সমাবেশ করতে না দেয়া, কর্মসূচিতে বাধা প্রদান এবং হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে নিম্নোক্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ লক্ষ্য করছে যে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৫ মাস বাকী। জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। সরকার জনগণের এই দাবি বাস্তবায়নের পরিবর্তে ২০১৪ ও ২০১৮ স্টাইলে আরেকটি সাজানো ও প্রহসনের নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে। এ লক্ষ্যে সরকার প্রশাসনকে ঢেলে সাজাচ্ছে। আরপিও সংশোধনের নামে কার্যত নির্বাচন কমিশনকে আরো আজ্ঞাবহ করে তুলছে। সরকারের কতিপয় মন্ত্রী ও এমপি সংবিধানের দোহাই দিয়ে একটি প্রহসনের নির্বাচনের কথাই বারবার ঘোষণা করছেন।
তারা আরো বলছেন যে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলেই হবে, অংশগ্রহণমূলক না হলেও চলবে। এ সব কথার দ্বারা তারা মূলত সাজানো ও প্রহসনের একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্রের কথাই ব্যক্ত করছেন। জনগণ সরকারের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দিবে না, ইনশাআল্লাহ।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দধীয় কর্মপরিষদের গৃহীত প্রস্তাবে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি বৈধ রাজনৈতিক দল। অতীতে প্রায় প্রত্যেক জাতীয় সংসদে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব ছিল। প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতের ঐতিহাসিক অবদান রয়েছে। অথচ বর্তমান সরকার জামায়াতে ইসলামীকে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে দিচ্ছে না। প্রশাসনের নিকট বারবার লিখিতভাবে সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করা সত্ত্বেও কোনো সহযোগিতা
পাওয়া যায়নি। উল্টো জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে।
২৬ জুলাই মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর থানা পুলিশ পবিত্র কুরআন ক্লাস থেকে ৮ জন নারীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে এবং চুয়াডাঙ্গা জেলা আমীরসহ জেলা ও উপজেলা জামায়াতের নেতাকর্মীদের বাড়িতে পুলিশ রাত ও দিনভর অভিযান চালিয়ে জিনিসপত্র তছনছ করে এবং অভিযানকালে ৭ জন নেতাকর্মীকে বিনা কারণে ও অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ এসব জুলুম-নিপীড়ন ও হয়রানিমূলক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং গ্রেফতারকৃত ৮ নারীসহ সকল নেতাকর্মীকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের অভিমত হচ্ছে যে, জামায়াতে ইসলামী নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিশ্বাসী একটি দল। জামায়াতে ইসলামী গত ১০ জুন শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ পালন করে আবারো তা প্রমাণ করেছে। আগামী ২৮ জুলাই মহানগরী ও ৩০ জুলাই জেলা সদরে মিছিল এবং ১ আগষ্ট ঢাকা মহানগরীতে সমাবেশের যে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে, প্রশাসনের সহযোগিতার মাধ্যমে জামায়াত ঘোষিত সকল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে বা বায়ন করবে, ইনশাআল্লাহ।
কেন্দধীয় কর্মপরিষদ রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোনো দলের পক্ষে কাজ না করে নিরপেক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছে। সেই সাথে ঘোষিত প্রোগ্রাম শান্তিপূর্ণভাবে সফল করে তোলার জন্য প্রশাসন ও দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করছে এবং কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে।”