২৪ জুলাই সোমবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে অবিলম্বে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ও জামায়াতে ইসলামীকে সভা-সমাবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে বক্তব্য রাখেন ও ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ-এর সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি জনাব হামিদুর রহমান আযাদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব আবদুর রহমান মুসা, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. রেজাউল করিম ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসালাম। দেশবাসীর উদ্দেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের প্রদত্ত বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলোঃ-
“প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
আপনারা জানেন, আর মাত্র ৫ মাস পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। সরকার জনগণের এই দাবি বাস্তবায়নের পরিবর্তে ২০১৪ ও ২০১৮ স্টাইলে আবারো নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে। এ লক্ষ্যে সরকার প্রশাসনকে ঢেলে সাজাচ্ছে। আরপিও সংশোধনের নামে কার্যত নির্বাচন কমিশনকে আরো আজ্ঞাবহ করে তুলছে। জামায়াতে ইসলামীকে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে দেয়া হচ্ছে না। প্রশানের নিকট বারবার লিখিতভাবে আবেদন জানানো সত্ত্বেও প্রশাসন সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতার পরিবর্তে সিলেট ও চট্টগ্রামে গ্রেফতার ও হয়রানি করে যাচ্ছে। দেশে যাতে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হয়, সেজন্য জামায়াতের আমীরসহ শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক করে রেখেছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বর্তমান সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। এ সরকারের আমলে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ হয়নি। গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে সরকারের আচরণ প্রমাণ করেছে- এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে পারেনা। নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য জাতিকে হতাশ করেছে। জামায়াতে ইসলামী বারবার বলে আসছে কেয়ারটেকার সরকার ব্যতীত জনগণ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের পছন্দমত প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারবে না। সরকারের মন্ত্রী ও এমপিগণ সংবিধানের দোহাই দিয়ে মূলত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে একটি প্রহসনের নির্বাচনের কথাই বারবার ঘোষণা করছেন। তারা আরো বলছেন যে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলেই হবে, অংশগ্রহণমূলক না হলেও চলবে। এ সব কথার দ্বারা তারা একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্রের কথাই ব্যক্ত করছেন। জনগণ সরকারের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দিবে না, ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনারা লক্ষ্য করেছেন যে, সরকারের দুর্নীতি-দুঃশাসন, জুলুম-নিপীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, হত্যা, গুম-খুন ও বিরোধী দলকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের সাংবিধানিক রাজনৈতিক অধিকার বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় দেশের জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হয়েছে। জনগণের মধ্যে এ সরকারের কোনো জনপ্রিয়তা নেই বললেই চলে। তারা রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সিলেট মহানগরীতে জামায়াতের সমাবেশ ঠেকানোর জন্য ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন, চট্টগ্রাম মহানগরীতে বাড়িতে বাড়িতে হানা, ১৭ জুলাই গুলশানে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর হামলা, ২২ জুলাই কুয়াকাটা থেকে জামায়াতের ১১ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার, ১৮ ও ১৯ জুলাই বিএনপির কর্মসূচিতে হামলা, বাধাদান ও মামলা দায়ের এবং জামায়াতকে সমাবেশ করতে না দেয়ার পুলিশি ঘোষণায় স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে যে, রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রজাতন্ত্রের সেবক হিসেবে ভূমিকা রাখার পরিবর্তে আওয়ামীলীগের দলীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ব্যস্ত। আমি রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনো দলের হয়ে কাজ না করে তাদেরকে নিরপেক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও সাবেক এমপি জনাব শাহজাহান চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য জনাব সেলিম উদ্দিন যাতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন, সেজন্য সরকার তাদেরকে কারাগারে আটক রেখেছে। বারবার জামিন পাওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে মুক্তি না দিয়ে নতুন নতুন মামলায় গ্রেফতার দেখানো ও বিরোধীদলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীদেরকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়ার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সরকার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকা করে রেখেছে। নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণকে আটক রেখে শূন্য মাঠে নির্বাচন করার প্রস্তুতি প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়।
প্রিয় সাংবাদিক বন্দুগণ,
দেশে দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্দ্ধগতিতে মানুষের জীবনে ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে এসেছে। চাল, ডাল, তেল, শাক-সব্জি, কাঁচা মরিচ ও মসলাসহ প্রত্যেকটি জিনিসের দাম কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকার গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের মূল্য কয়েক দফা বৃদ্ধি করেছে। ভোজ্য তেল ও জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়িয়েছে কয়েক বার। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি চক্র বাজার ব্যবস্থাকে অসৎ উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করছে।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জনগণের নির্বাচিত সরকার ব্যতীত সমস্যার সমাধান হতে পারে না। তাই সর্বাগ্রে সংসদ ভেঙে দিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। অবিলম্বে আমীরে জামায়াতসহ গ্রেফতারকৃত সকল নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি দিতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। জামায়াতে ইসলামীকে তার সাংবিধানিক অধিকার মিছিল ও সভা-সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে করার সুযোগ দিতে হবে।
এসব দাবি আদায়ের লক্ষ্যেঃ
২৮ জুলাই সকল মহানগরীতে এবং ৩০ জুলাই সকল জেলা সদরে আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। সেই সাথে ১ আগষ্ট ঢাকা মহানগরীতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করছি। এসব কর্মসূচিকে সফল করার জন্য জামায়াতের সকল জনশক্তি ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সাথে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি।
আল্লাহ হাফেজ।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ
জামায়াতে ইসলামী জিন্দাবাদ।”