বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের এক সভা ২২ মে ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়া সত্তে¡ও তাদের মুক্তি না দিয়ে বারবার মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে অন্যায়ভাবে আটক রাখার তীব্র নিন্দা এবং কারাগারে আটক সকল নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়ে নিম্নোক্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়:-
“বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমানকে গত বছর ১২ ডিসেম্বর তাঁর নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সাবেক এমপি জনাব শাহজাহান চৌধুরীকে প্রায় দুই বছর যাবত কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে জামিন লাভের পর মুক্তির পূর্ব মুহূর্তে বারবার তাদেরকে নতুন নতুন মিথ্যা ও সাজানো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে আটক রাখা হচ্ছে। জামিন লাভের পর মাওলানা শামসুল ইসলামকে দুইবার, মিয়া গোলাম পরওয়ারকে চারবার, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খানকে দুইবার মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে, ‘যে কেউ উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলে কারাগারে আটক থাকাবস্থায় তাকে অন্য মামলায় গ্রেফতার দেখানো যাবে না। এমনকি সরকার পক্ষ নতুন মামলায় গ্রেফতারের আবেদন করলে ম্যাজিষ্ট্রেট বা জজ সে আবেদন গ্রহণ করবেন না।’ কিন্তু সরকার জামায়াত নেতৃবৃন্দ জামিন লাভের পর কারাগারে থাকাবস্থায় বারবার গ্রেফতার দেখানোর ব্যবস্থা করে উচ্চ আদালতের নির্দেশকে অবমাননা করছে। বিষয়টি আদালতের নজরে আনা সত্তে¡ও কোনো প্রতিকার হচ্ছে না। এটা সংবিধান, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের চরম লঙ্ঘন।
আমরা লক্ষ্য করছি যে, সরকার দেশের সংবিধান, আইনের শাসন ও ন্যায় বিচারকে তছনছ করে দিয়েছে। এটি সরকারের চরম বাড়াবাড়ি ছাড়া আর কিছু নয়। আদালতের নির্দেশ লঙ্ঘনের মাধ্যমে সরকার অব্যাহতভাবে আদালত অবমাননা করে দেশকে বিচারহীনতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটা কারো জন্য মঙ্গলজনক হবে না।
আমরা অত্যন্ত বিস্মিত যে, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ২০২১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর গ্রেফতার হন। তিনি উচ্চ আদালত থেকে সকল মামলায় জামিন পাওয়ার পর গত ৭ মার্চ ২০২৩ মুক্তির পূর্বে তাকে ২০২২ সালের একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হয়। অথচ ঐ সময়ে তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন। বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিতে আনা হলে কোনো আদেশ ছাড়াই আদালতের কাজ শেষ হয়। পরবর্তীতে পেছনের তারিখের দুটো মামলায় তাঁকে গ্রেফতার দেখানো হয়। ঐ মামলা দুটোতে জামিন পাওয়ার পর তার সকল জামিন নামা কারাগারে পৌঁছলে তাঁকে মুক্তি না দিয়ে আদালতে ২১ মে ২০২৩ তারিখে হাজির করার তথ্য জানানো হয়। ২১ মে ২০২৩ তারিখে আদালতে হাজির করার পর তাঁকে ২০২৩ সালের জানুয়ারী মাসের ঘটনার একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালতকে প্রশ্ন করা হয় ২০২১ সাল থেকে যিনি এখনো কারাগারে আটক রয়েছেন, তিনি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ঘটনার আসামী হন কিভাবে? এটাও জাতির প্রশ্ন যে, সকল মামলায় জামিন পাওয়া এবং জামিন নামা কারাগারে পৌঁছানোর পরও তাঁকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে না কেন? এটা কি আইন, আদালত ও সংবিধানের চরম লঙ্ঘন নয়?
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ আরো লক্ষ্য করছে যে, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ডান্ডাবেরী ও হেলমেট পড়িয়ে আদালতে হাজির করা হচ্ছে, যা এ সরকারের পূর্বে আর কখনো করা হয়নি। এসব ঘটনায় প্রতীয়মান হচ্ছে দেশে ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন বলতে কিছু নেই।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সকল হয়রানি ও বাড়াবাড়ি বন্ধ করে অবিলম্বে আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমান, নায়েব আমীর মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য জনাব শাহজাহান চৌধুরী, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব সেলিম উদ্দীন ও সিরাজগঞ্জ জেলা আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা শাহীনূর আলম, মাদারীপুর জেলা আমীর মাওলানা আব্দুস সোবহানসহ আটক সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও আলেম-উলামাদের নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছে।”