১১ জানুয়ারি ২০২৩, বুধবার

১১ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’

জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে দেশের সকল মহানগরীতে ১১ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত

১১ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। আজ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে দেশের সকল মহানগরীতে ১১ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। আলোচনা সভার সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরা হলোঃ-

ঢাকা মহানগরী উত্তর

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে
-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর, সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলছে, চলবে। যারা গণতন্ত্র মানতে চায় না, তাদের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী যুগপৎ আন্দোলন চালিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।

ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, যারা গণতন্ত্র হত্যা করেছে, তাদের সাথে জনগণ নেই। বর্তমানে দেশের সকল বিরোধী দল গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে যুগপৎ আন্দোলন করছে। জনগণ এখন তাদের সাথে রয়েছে। তাই আমি সরকারকে বলব, জনগণের দাবি মেনে নিন। মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিন। তাহলে শান্তি বিরাজ করবে।

১১ জানুয়ারি বুধবার গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহনগরী উত্তর আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও মহানগরী সেক্রেটারী ড. রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগরীর সহকারী সেক্রেটারী নাজিম উদ্দিন মোল্লা ও ডা. ফখরুদ্দিন মানিক।

তিনি আরো বলেন, জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম কেয়ারটেকার সরকার ফর্মূলার প্রবর্তক। আওয়ামী লীগ সেই পদ্ধতির দাবিতে আন্দোলন করেছে। আবার তা হাইজ্যাক করে সেই ফর্মূলাকে নিজেদের দাবি করছেন। আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, যদি তাই হয়, তাহলে এখন তা মেনে নিচ্ছেন না কেন?

তিনি জামায়াতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, হত্যা, ধর্ষণ ও সন্ত্রাস ইসলামে হারাম। আমাদের কর্মসূচি- যে কোনো সন্ত্রাস ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে। জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান গত ১০ ডিসেম্বের ১০-দফা ঘোষণার পর তাঁকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়। জামায়াত আমীরসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের সকল নেতাকর্মীকে মুক্তি দিতে হবে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কে কখন জেলে যাবে, তা বলা যায় না।

নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ-পত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষ কষ্টে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের লোকজন কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়, ট্রাস্ট, স্কুল, কলেজ ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দখল করে দখলবাজ সরকারে পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর চলছে। কিন্তু গণতন্ত্র, ভাতের অধিকার, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মাঝে মাঝে গণতন্ত্রের দেখা মিললেও এদেশের মানুষ বেশিরভাগ সময় গণতন্ত্রের সুফল পায়নি। এজন্য সরকারকে গণতন্ত্র পুনপ্রতিষ্ঠা আহবান জানান তিনি।

মুজিবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, সরকারের কাছে বিক্রিত কিছু মিডিয়া সাম্প্রতিক একটি মিছিলের ফুটেজ দেখিয়ে জামায়াতের একটি কর্মস‚চি পালনের সময় বাড়াবাড়ি করছে এমন তথ্য পরিবেশন করছেন যা সত্য নয়। বরং মিছিলে পুলিশের কিছু অতি উৎসাহী সদস্য হামলা চালিয়েছে। মিছিলের ব্যানার ধরে পুলিশের টানাটানির সমালোচনা করেন তিনি।

ভারপ্রাপ্ত জামায়াত আমীর বলেন, দেশ স্বাধীনের পর দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করে বাকশাল কায়েম করে দেশে নৈরাজ্য কায়েম করা হয়েছিল। এখনো তা করা হচ্ছে। আওয়াম লীগ ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড চালিয়ে লাশের ওপর নৃত্য করেছিল। তারা মূলত সেদিন গণতন্ত্রকেই দাফন করেছিল।

তিনি বলেন, সাবেক সেনাপ্রধান মঈন উ. আহমেদের মতো কিছু উচ্চাভিলাষী সেনাকর্মকর্তার যোগসাজশে চক্রান্ত করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল। মঈন উ. আহমেদ ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি অবস্থা জারি করেছিল। সেদিন থেকেই এই দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করে জামায়াতসহ অন্যান্য অনেক রাজনৈতিক দল।

জামায়াত আমীর বলেন, আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ শাসন করলে শান্তি আসবে। কারণ আল্লাহর আইনে কোনো ভুল নেই। কিন্তু মানুষের তৈরি আইনে ভুল আছে। আমরা দেশের ১৮ কোটি মানুষকে সুখে-শান্তিতে রাখতে সৎ লোকের শাসন ও আল্লাহর আইন কায়েম করতে চাই।

জনাব মোঃ সেলিম উদ্দিন বলেন, সরকার বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। এমনকি তারা কওমী আলেমদের ওপরও হাত তুলেছে। জামায়াত এদেশে অপরিচিত কোনো দল নয়। আন্দোলন সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস আছে জামায়াতের। নিরপেক্ষে নির্বাচন দেন জনগণ দেখিয়ে দিবে। মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের নামে দুর্নীতির কথা বলে তিনি বলেন, মেট্রোরেল উদ্বোধনের প্রথম দিনেই মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। উত্তরায় ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে পড়ে নবদম্পতি নিহত হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে সত্য কথা বলা যায় না। গলা টিপে ধরে যা স্বৈরশাসন। এরশাদের শাসনামলকেও ¤øান করে দিয়েছে। তিনি ৩০ ডিসেম্বরের জামায়াতের শান্তিপূর্ণ গণমিছিলে হামলার নিন্দা জানান। জনগণকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

 

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ
ন্যায়-বিচার, গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য আমরা সংগ্রাম করে যাচ্ছি
-ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহের

★ বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন দেশপ্রেমিক যোগ্য নেতৃত্বের।
★ যারা দেশ শাসন করার সুযোগ পেয়েছেন তারা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহের বলেছেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি আইএমএফ অর্থাৎ ইয়াজউদ্দিন-মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন এই তিনজনের নেতৃত্বে বাংলাদেশে মিলিটারি ‘ক্যু’ এর মাধ্যমে একটি সিভিল এ্যাক্ট বাই আর্মি নামীয় সরকার দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়। যার অস্তিত্ব বা কাঠামো রাজনৈতিক কোনো তত্তে¡ বিশ্ববাসী দেখেনি। পলিটিক্যাল সাইন্সে যে ধরনের সরকার পরিবর্তনের নীতি-নিয়ম বলা আছে তার কোনোটির সাথেই ১১ জানুয়ারির ঐ অবৈধ সরকারের কোনো মিল এর আগে কখনো প্রত্যক্ষ করেনি। বিশ্বাসঘাতকতা বাংলাদেশে নতুন কিছু না। এ অঞ্চলের অতীত রাজনৈতিক ইতিহাসেও অনেক বিশ্বাসঘাতকের নাম জানা যায়। এ ভূ-খন্ডের মানুষ হিসেবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে, জাতি হিসেবে আমরা কখনোই ষড়যন্ত্রের বাহিরে থাকার সুযোগ পাইনি। ব্রিটিশদের হাত থেকে স্বাধীনতা লাভের পরেও পশ্চিম পাকিস্তানিদের জোর খবরদারির কারণে এই ভূ-খন্ডের জনগণ নানাবিধ বঞ্চনা ও অধিকার হারা ছিলো। আবারও দীর্ঘ স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে অনেক ত্যাগ কুরবানীর বিনিময়ে আজকের বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর অতিক্রান্ত হলেও এদেশে এখনো সুষ্ঠু চিন্তা বা রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ন্যায়-বিচার, গণতন্ত্র, মানুষের কথা বলার অধিকার আদায়ের জন্য, ভোট ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য এখনো দেশের জনগণ সংগ্রাম করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে ১১ই জানুয়ারী গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে আজ রাজধানীর একটি মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জননেতা নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ- এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য প্রদান রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য আব্দুস সালাম, হাফিজুর রহমান-সহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহম্মাদ তাহের বলেন, যারা দেশ শাসন করার সুযোগ পেয়েছেন, তারা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি। অথবা হয়তো তারা তা করতে চাননি। তারা বাংলাদেশের মানুষের অধিকার, গণতন্ত্র, আমাদের কৃষ্টি-কালচার ও স্বকীয়তা রক্ষায় বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেননি। সুতরাং বাংলাদেশের জন্য আজকে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন দেশপ্রেমিক আদর্শবাদী যোগ্য নেতৃত্বের। যারা জনগণের আশা পূরণ করতে পারবে। জনগণের এই প্রত্যাশা পূরণের জন্য বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাজ করে যাচ্ছে। জামায়াতের ইতিহাস বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সব সময়ে সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত আছে। আমরা কোনো দলের সাথে লেজুড় বৃত্তি করি না। যখন যে দল অন্যায় করেছে, আমরা তাদের সমালোচনা করেছি। যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে আমরা তাদের বিরোধিতা করেছি। দেশের মানুষ যখন অধিকার হারা হয়েছে, আমরা তাদের দাবি আদায়ে লড়াই সংগ্রাম করেছি। কারণ আমাদের মূলনীতি যারা দেশের গণতন্ত্র হরণ করবে, অন্যায় করবে, লুটপাট করবে, দুর্নীতি করবে, সেখানেই জামায়াত তার আদর্শের বলে বলীয়ান হয়ে সংগ্রাম করবে। কোনো একটি ষড়যন্ত্র একদিনে বুঝা যায় না, দীর্ঘ দিন ধরে পরিকল্পনা করে ১১ই জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২৮ অক্টোবর রাজপথে লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ পিটিয়ে হত্যা করে যাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তা আজ দিবালোকের মতো পরিষ্কার। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ঘোষণা দিয়ে বলেছে ১১ জানুয়ারির সরকার তাদের আন্দোলনের ফসল। এই দলটি সব সময়ে ফ্যাসিবাদী আচরণ করে এসেছে। তারা ক্ষমতা গ্রহণের জন্য যেকোনো কিছুকেই গ্রহণ করতে পারে। আজকে যদি সেই দিনের ঘটনাটি না ঘটতো তাহলে দেশের ইতিহাস আরও সুন্দর হতে পারতো। পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে যারা ১১ জানুয়ারিতে দেশের গণতন্ত্র হত্যা করেছিল তাদের বিচার হওয়া দরকার। জামায়াতে ইসলামী এই দিনটিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস হিসেবে পালন করছে। আমরা জাতিকে এই কলঙ্কজনক দিনটি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। দেশ পরিচালনায় একটি সঠিক ধারার সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চার ক্ষেত্র গড়ে তুলতে চাই।

নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ষড়যন্ত্রকারীরা সেদিন তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্যই ক্ষমতা দখল করেছিল। মূলত ২৮ অক্টোবরের ধারাবাহিকতায় সন্ত্রাসী কায়দায় দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে ১১ জানুয়ারির মঈন উদ্দিন ফখরুদ্দিনের সরকার ক্ষমতায় বসে। সেই সাথে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘এটা তাদের আন্দোলনের ফসল।’ আজ জনগণের ভোটাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নেয়া হয়েছে। দুর্নীতি-দুঃশাসন গোটা জাতিকে গ্রাস করেছে। মানুষের জান-মাল ও ইজ্জতের কোনো নিরাপত্তা নেই। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে আজ দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক। আওয়ামী লীগ পর পর তিন মেয়াদে সরকারে থেকে লুটপাট, অনিয়ম, দুর্নীতি করে দেশকে নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। তারা আবারো অবৈধ পন্থায় ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। আগামী দিনে বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সৎ, যোগ্য ও দক্ষ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করা। তাই দেশের গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে এবং জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, এদেশে সাংবিধানিক পদ্ধতিতে বরাবরই আমরা জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য নানাবিধ কার্যক্রম করে থাকি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়, নিয়মতান্ত্রিকভাবে এবং আল্লাহ তায়ালার দেওয়া বিধানের আলোকে একটি সুখী-সমৃদ্ধ দেশ গঠনে কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। জনগণের এসব অধিকার আদায়ের আন্দোলনে একটি মহল সব সময়ে জামায়াতের বিরোধিতা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। যারা গণতন্ত্রের কথা মুখে বললেও বাস্তবায়নে নেই, কেবল তারাই আমাদেরকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য এসব ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন। স্বাধীনতার মূল অর্জন গণতন্ত্রকে হারিয়ে দেশ আজ এক অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে যাত্রা শুরু করেছে। বিরোধী মতের লোকজনকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার ও হয়রানি করা হচ্ছে। আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরাধীনতার শিকল থেকে জাতিকে মুক্ত করে সুষ্ঠু ধারায় রাজনৈতিক চর্চা করতে হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষা এবং দেশ গড়ার প্রয়োজনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে ভূমিকা পালন করার আহবান জানাই।

 

কুমিল্লা মহানগরী

গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে- মাওলানা এটিএম মা’ছুম

জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা মহানগরী আয়োজিত ১১ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ -এর আলোচনা সভায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেছেন, বর্তমান সরকার এখন একদলীয় শাসন চালাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় চলছে গ্রেফতার-রিমান্ড, খুন-গুমের মহোৎসব। আজ দেশে গণতন্ত্র বলতে কিছুই নেই। সরকার দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, ভোটাধিকার ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। আদালতের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। তারা দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে সবাইকে ঐক্যবন্ধভাবে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা পালন করতে হবে।

তিনি ১১ জানুয়ারি কুমিল্লা মহানগরী জামায়াত আয়োজিত গণতন্ত্র হত্যা দিবসের ভার্চ্যুয়ালি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।

জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও কুমিল্লা মহানগরী জামায়াতের আমীর কাজী দ্বীন মোহাম্মদ এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, পরপর দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ তার দলীয় স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাকে অগ্রাহ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেশে এক মহাসঙ্কট সৃষ্টি করেছে। ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে দেশে যে রাজনীতিহীন ও গণতন্ত্রহীনতার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা থেকে জাতি মুক্তি চায়। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

লুটপাট করে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করা হচ্ছে। চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। বিদেশে পাচার করা হচ্ছে আমাদের সম্পদ। অর্থনীতি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশের মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশাহারা। লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত গোটা বাংলাদেশ। তিনি আগামী দিনে দেশ বিরোধী সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার আহবান জানান।

কুমিল্লা মহানগরী জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি কামারুজ্জামান সোহেল এর পরিচালনায় এসময় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমীর মোছলেহ উদ্দিন, নগর সেক্রেটারি অধ্যাপক এ কে এম এমদাদুল হক মামুন।

সিলেট মহানগরী
দেশের গণতন্ত্র হত্যার মূলে রয়েছে কথিত ১/১১-এর ফখর-মঈন সরকারের গণতন্ত্রহীনতার রাজনীতি
-এ্যাডভোকেট জুবায়ের

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেছেন, দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে কথিত ওয়ান-ইলেভেনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্রহীনতার একটি ঘৃণ্য ধারা সৃষ্টি করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় গণতন্ত্রকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেশে একদলীয় স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র চলছে। দেশে আজ মানবাধিকার ও ভোটাধিকার বলে কিছু নেই। বিচারের বানী আজ সর্বত্র কাঁদছে। গণতন্ত্রকে এক ব্যক্তির মন-মর্জিমাফিক কাজে পরিণত করা হয়েছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ঐ দিন দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে একটি অগণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। আওয়ামী লীগ সেই সরকারকে তখন নিজেদের আন্দোলনের ফসল বলে দাবি করেছিল। অথচ তখন দেশের সব রাজনৈতিক দল অগণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে সোচ্ছার ছিল। সেনাসমর্থিত সেই বিতর্কিত সরকার নিরাপদ প্রস্থানের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতা করে ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর একটি নির্বাচনের আয়োজন করে। সমঝোতার এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসনে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের ধারাবাহিকতায় দেশকে রাজনীতিহীন ও গণতন্ত্র হীনতার দিকে নিয়ে যায়। যা আজো অব্যাহত আছে।

তিনি বুধবার বিকেলে জামায়াত কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ১১ জানুয়ারি গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষ্যে সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথা বলেন। জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে, সেক্রেটারী মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, মহানগর নায়েবে আমীর মাওলানা সোহেল আহমাদ, সহকারী সেক্রেটারি এডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব, ড. নূরুল ইসলাম বাবুল ও জাহেদুর রহমান চৌধুরী, জামায়াত নেতা মুফতী আলী হায়দার, মাওলানা আব্দুল মুকিত ও এডভোকেট জামিল আহমদ রাজু প্রমুখ।

সভায় বক্তারা বলেন, বিতর্কিত অগণতান্ত্রিক ১/১১ এর ফখর-মঈন সরকার দেশকে রাজনীতিহীন করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ক্ষমতায় গিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার শুরু করে। তারা নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে নিজেরাই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু দুর্নীতি ও অন্যায় কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ায় তারা জনগণের সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়নি। ফখর-মঈন উদ্দিনের সমঝোতার ফসল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার তাদের দেখানো পথে হাঁটছে। তারা দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায়বিচার, ভোটাধিকার ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আদালতের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। অথচ দেশের সব রাজনৈতিক দল, সুশীলসমাজ, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। আদালতের যে রায়ের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়, সে রায়েও পরপর দু’টি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ তার দলীয় স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাকে অগ্রাহ্য করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে দেশে এক মহাসঙ্কট সৃষ্টি করে। এই সঙ্কট থেকে জাতিকে মুক্ত করতে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিকল্প নেই। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে দেশপ্রেমিক জনতাকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তারা।

রাজশাহী মহানগরী
১/১১ এর ফসল আওয়ামী সরকার গণতন্ত্র হত্যা ও দেশপ্রেমিক নেতৃত্ব ধ্বংসের চক্রান্তে লিপ্ত
-এ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ

১১ জানুয়ারি বুধবার সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রাজশাহী মহানগরীর উদ্যোগে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে এক ভার্চ্যুয়ালি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক এ্যাড. মতিউর রহমান আকন্দ উপরোক্ত কথা বলেন।

রাজশাহী মহানগরী আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. মাওলানা কেরামত আলীর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জনাব ইমাজ উদ্দিন মন্ডল-এর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন রাজশাহী মহানগরীর নায়েবে আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য অধ্যক্ষ সিদ্দিক হোসেন, নায়েবে আমীর এ্যডঃ আবু মোহাম্মদ সেলিম, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাহবুবুল আহসান বুলবুল, অধ্যাপক আব্দুস সামাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ্যডঃ আকন্দ বলেন, ২০০৭ সালের ১/১১ এর মাধ্যমে যে অগণতান্ত্রিক শাসক জাতির উপর চেপে বসেছিল তা ছিল বাংলাদেশর বিরুদ্ধে এক গভীর চক্রান্ত। সেই চক্রান্তের বেড়াজালে আক্রান্ত জাতি আজও তা থেকে মুক্তি লাভ করতে পারেনি। জামায়াতে ইসলামী এই দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে, যা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর রাষ্ট করা, অর্থনৈতিকভাবে দেশকে পঙ্গু করা, দেশেকে বিদেশী মদদপুষ্ট তাঁবেদার পুতুল সরকার কায়েম করা ছিল এক-এগারোর মূল লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য সেই সময় শুধু দেশেই নয়, বিদেশের মাটিতেও অনেক যড়যন্ত করা হয়েছিল। দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্তের সফল বাস্তবায়নে দেশী-বিদেশী চক্রান্তকারীরা আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে একটি যড়যন্তের নির্বাচন আয়োজন করেছিলেন। বিদেশী পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ২৯ জানুয়ারীর নির্বাচনে দেখা যায় অনেক কেন্দ্রে মোট ভোট কাস্ট হয়েছে শতকরা ১০৫% যা পৃথিবীর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এমন একটা নির্বাচন হবার পরও দেশের মানুষ গণতান্তিক ব্যবস্থার স্বার্থে সেটা মেনে নিয়েছিলো। কিন্ত দেশের জনসাধরণ তখন উপলব্ধি করতে পারেনি যে, এটাই হবে দেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে হত্যার সূচনাপর্ব।

আমাদেরকে ইতিহাস বিশ্লেষণ করে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। যদি আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হই, তবে জাতির জন্য আগামীতে আরো দুর্ভাগ্য অপেক্ষা করছে। তখন থেকেই রাজনীতির ময়দান থেকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছিল। এই পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় জামায়াতকে নির্বচন থেকে সরানোর জন্য জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।

১/১১ এর ফসল আওয়ামী সরকার দেশের গণতন্ত্র ও আইনের শাসনকে হত্যা করে দেশের দেশপ্রেমিক গণতন্ত্রকামী নেতৃত্বকে শূন্য করার যড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। তারা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর, জননন্দিত বর্ষিয়াণ জননেতা ডাঃ শফিকুর রহমানকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করেছে। দীর্ঘদিন যাবৎ অন্ধকার কারাগারে বন্দী করে রেখেছে কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা আনম শামছুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দকে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মুক্তিকামী সাধারণ মানুষ এ সরকারের ষড়যন্ত্র আর কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে আজীবন ক্ষমতার মসনদে ঠিকে থাকার দিবাস্বপ্ন বাস্তবায়ন অতীতের জুলুমবাজ স্বৈরাচারী কোনো সরকার কখনো পারেনি, এখনো পারবে না ইনশাআল্লাহ।

জামায়াতে ইসলামীর উপর যত জুলুম-নির্যাতন আসুক না কেন, বাংলাদেশে জামায়াতের জনপ্রিয়তা দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতের নেতা-কর্মীদের ইসলাম ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আরো অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে এ দেশের স্বাধীনতা রক্ষা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে জামায়াত একটি পরীক্ষিত ও বৃহৎ শক্তি। তিনি আজকের ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’-এ জনগণকে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে ড. মাওলানা কেরামত আলী বলেন, দেশের এই ক্রান্ত্রিকালে রাজশাহী মহানগরীর পুলিশসহ দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। তিনি জনগণের স্বার্থে পুলিশ প্রশাসনকে এ ধরনের আচরণ থেকে ফিরে এসে মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকার অনুরোধ জানান।

বরিশাল মহানগর
গণতন্ত্র হত্যাকারী আওয়ামীলীগকে দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না
-জহির উদ্দিন মুহাঃ বাবর

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বরিশাল মহানগরীর উদ্যোগে গণতন্ত্র হত্যা দিবস পালিত হয়। এদিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বরিশাল মহানগরী জামায়াতের আমীর ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ জহির উদ্দিন মুহাঃ বাবর। সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মোঃ মতিউর রহমান, এ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন মাসুম ও এ্যাডভোকেট মুহাঃ শাহে আলম প্রমুখ।

সভায় সভাপতির বক্তব্যে জহির উদ্দিন মুহাঃ বাবর বলেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তৎকালীন সেনা শাসিত অগতান্ত্রিক সরকার গঠন করে দেশকে গণতন্ত্রহীন করা হয়। আজও দেশ সে গণতন্ত্র ফিরে পায়নি। বর্বরোচিত ২৮ অক্টোবর-২০০৬ রাজধানীর ঢাকায় নারকীয় পল্টন হত্যার মধ্যে দিয়ে ১/১১ এর সূচনা হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় আওয়মীলীগ দেশী-বিদেশী সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ১/১১ নামক কলঙ্কিত দিবস সৃষ্টি করেছে। সেনা সমর্থিত অগণতান্ত্রিক সরকারের সকল কর্মকান্ডের আইনি বৈধতার দাসখত দিয়ে এই আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে। ভোটার বিহীন অগণতান্ত্রিক এই স্বৈরাচারী সরকার আজ প্রায় ১৪ বছর ধরে জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। অবৈধ এই সরকার ক্ষমতা ধরে রাখতে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী এই জালিম সরকার দেশের মানুষের ওপর এখন এক জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছে। এই জালিম ও খুনি সরকারকে দেশের মানুষ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না।

তিনি বলেন, দেশে আজ কোনো গণতন্ত্র নেই। বিনা ভোটের এই এই খুনি সরকার আমাদের চার শতশত নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। আমাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা দায়ের করে অন্যায়ভাবে দেশব্যাপী গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে সারাদেশকে একটি করাগারে পরিণত করেছে। গুম করেছে অসংখ্য নেতাকর্মীকে। সম্প্রতি বিনা অপরাধে আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমানকে সরকার অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করেছে। গণমিছিলকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে শতশত নেতাকর্র্মীর বিরুদ্ধে সরকারের লেলিয়ে দেয়া পুলিশ গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আমরা অবিলম্বে আমীরে জামায়াতসহ সকল নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবী করছি।

তিনি এসময় আরো বলেন, এই সরকার এবং তার বিদেশী দোষররা ষড়যন্ত্র করে দেশ থেকে গণতন্ত্র বিদায় দিয়েছে। আজ সেই কলঙ্কিত ১১ জানুয়ারি যেই দিন দেশ হতে গণতন্ত্র নির্বাসনে দেয়া হয়েছিল। দেশের মানুষ আজও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পায়নি। খুনি সরকার রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্র ব্যবহার করে বিরোধী মত ও দলের নেতাকর্মীদের দমন করে চলছে। রাজপথের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে সরকারি বাহিনীকে কাজে লাগাচ্ছে। তাদের দিয়ে সরকার মিথ্যা মামলা ও নানা ধরনের পরিকল্পিতি হয়রানির মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করে চলছে। দেশের মানুষ আজ মৌলিক অধিকার বিহীন এক কঠিন পরিস্থিতি অতিক্রম করছে। জনগণের কথা বলার অধিকার, সভা-সমাবেশ করার অধিকার এবং ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এই অগণতান্ত্রিক সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে জনগণের হরণ করা অধিকার আমাদেরকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে।

তিনি এসময় আরো বলেন, আমীরে জামায়াত যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে ১০ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। আমরা রাজপথে থেকে এই ১০ দফা কর্মসূচী বাস্তবায়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। নির্বাচনে এই ভোটার বিহীন সরকারকে হটিয়ে দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তানা হলে দেশের গণতন্ত্র আর ফিরে আসবেনা। তাই আসুন মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার বাস্তবায়নে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে মাঠে থেকে এই জালিম সরকারে পতন নিশ্চিত করি। হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে সকলকে শামিল হওয়ার আহব্বান জানিচ্ছি।

চট্টগ্রাম মহানগরী
১১ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে এবং কেয়ারটেকার সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবীতে চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের প্রতিবাদ সমাবেশ
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী আয়োজিত কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহাল, অবিলম্বে দুর্নীতিবাজ ও ব্যর্থ সরকারের পদত্যাগ, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আমীরে জামায়াতসহ নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবীতে এবং ১১ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজকের এই প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর নায়েবে আমীর আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ। এছাড়া উক্ত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগরীর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ নূরুল আমীন, নগর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ, নগর সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী এবং নগর শূরা সদস্য ফখরে জাহান সিরাজী সবুজসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সভাপতির বক্তব্যে আ জ ম ওবায়দুল্লাহ বলেন, ২০০৭ সালের আজকের এই দিনে দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ধ্বংস করে জরুরী অবস্থা জারি করে অগণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা দখল করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দিন ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। সেদিন আওয়ামী লীগ ছাড়া সকল রাজনৈতিক দল এই ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ জানায়। দেশকে রাজনীতিহীন করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করে। তারা নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করে নিজেরাই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। দুর্নীতি ও অন্যায় কাজে জড়িয়ে পড়ায় সেই সরকার জনসমর্থন পায়নি। অথচ এই সরকার সেদিন দখলদার ক্ষমতাসীনদের তাদের আন্দোলনের ফসল বলে দাবী করে। সেনা সমর্থিত সেই সরকার আওয়ামী লীগের সাথে সমঝোতার মাধ্যমে ২০০৮ সালে ৩১ ডিসেম্বরের প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে দুই তৃতীয়াংশ আসনে তাদেরকে বিজয়ী করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে দেশকে রাজনীতিহীন ও গণতন্ত্রহীনতার দিকে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায় বিচার, ভোটাধিকার ও নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়, আদালতের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়, অথচ যে রায়ের দোহাই দিয়ে তা বাতিল করে এই রায়েই আরো দু’বার এর মাধ্যমে নির্বাচনের বিধান রয়েছে। দেশের

সকল শ্রেণী পেশার মানুষ, সুশীল সমাজ, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি ও শিক্ষাবিদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেয়। আওয়ামী লীগ দলীয় স্বার্থে আদালতের নির্দেশনাকে অগ্রাহ্য করে দেশকে মহাসংকটে ফেলে দেয়। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন, ন্যায় বিচার ও আইনের শাসন, বাকস্বাধীনতা, ভোটাধিকার, সভা-সমাবেশের অধিকার নেই, দলের অফিসগুলো বন্ধ, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নেই, খুন, গুম, অপহরণ, লুটপাট, চাঁদাবাজি, ব্যাংক দখল, বিশ্ববিদ্যালয় দখল, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, অর্থ পাচার, সীমাহীন দুর্নীতি করে এ সরকার দেশকে দেউলিয়াত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ অবস্থা থেকে দেশ ও জাতিকে উদ্ধার করার জন্য জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। এ লক্ষ্যে দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য, অবাধ অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

নগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নূরুল আমীন বলেন, জনগণ আজ তাদের ভোটাধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার দাবীতে ঐক্যবদ্ধ। এ পরিস্থিতিতে ১০ ডিসেম্বর’২২ আমীরে জামায়াত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১০ দফা কর্মসূচী ঘোষণা করে। এ কর্মসূচী গণতান্ত্রিক, নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ। জামায়াতের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ঘোষণায় দিশেহারা হয়ে সরকার আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে। আমরা অবিলম্বে আমীরে জামায়াতসহ সকল নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবী জানাই।

খুলনা মহানগরী
অবৈধভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের
পরিবর্তে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে- মুহাদ্দিস আবদুল খালেক

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক বলেন, বর্তমানে আওয়ামীলীগ ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রের পরিবর্তে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। গণতন্ত্রকে নির্বাসিত করেছে। তাই সরকারের সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। কারণ সরকার আইনের শাসনের পরিবর্তে রাজনৈতিক হয়রানির মাধ্যমে বিরোধী দলকে কোণঠাসা করছে। বর্তমানে আইনের মোড়কে বেআইনী কাজের মাধ্যমে প্রশাসনিক সুব্যবস্থাকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। এদেশে রাজনীতির ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য বাকশালী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার এবং জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান।

গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী খুলনা মহানগরী উদ্যোগে আজ মঙ্গলবার নগরীতে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও খুলনা মহানগরী আমীর অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান।

এসময় আরো বক্তব্য রাখেন মহানগরী জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক নজিবুর রহমান, মহানগরী সেক্রেটারি এ্যাডঃ শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, সহকারী সেক্রেটারি এ্যাডঃ মুহাম্মদ শাহ আলম, বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন খুলনা মহানগরী সভাপতি আজিজুল ইসলাম ফারাজী, ইসলামী ছাত্রশিবির খুলনা মহানগরী সভাপতি মোঃ জাহিদুল ইসলাম নাঈমসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

প্রধান অতিথি আরো বলেন, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রেফতার-রিমান্ড, খুন-গুমের মহোৎসব চলছে। খুন ও গুমের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। খুনিদের বিচারের পরিবর্তে এই সরকার বিরোধী দলের নেতাদের ফাঁসানোর জন্য তৎপরতা চালাচ্ছে। সরকার জামায়াত-শিবিরসহ বিরোধী দলের ওপর দোষারোপ করে নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে চায়। বর্তমানে দেশে আজ অরাজক অবস্থা বিরাজ করছে। তিনি আরো বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় মুক্তিকামী আপামর জনগণের আস্থার প্রতীক জামায়াতে ইসলামী ঘোষিত কেয়ারটেকার সরকারের দাবীসহ ১০-দফা বাস্তবায়নে দেশের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।

গাজীপুর মহানগর
গণতন্ত্র হত্যা করে অগণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে আছে
-অধ্যাপক মুহাম্মাদ জামাল উদ্দীন

গণতন্ত্র হত্যা করে অগণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে আছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গাজীপুর মহানগর আয়োজিত ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমীর অধ্যাপক মুহাম্মাদ জামাল উদ্দীন। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও গাজীপুর মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মোঃ হোসেন আলীর পরিচালনায় তিনি আরো বলেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে এবং ওই সরকারকে নিজেদের আন্দোলনের ফসল বলে দাবি করে আওয়ামী লীগ। অথচ আওয়ামী লীগ বাদে দেশের সকল রাজনৈতিক দল অগণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ জানিয়েছিল। তিনি আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্রের হত্যাকারী উল্লেখ করে বলেন, সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমীরে জামায়াত ডাঃ শফিকুর রহমানসহ জামায়াতের অসংখ্য নেতা কর্মীকে আটক করে রাখা হয়েছে।

অধ্যাপক মুহাম্মাদ জামাল উদ্দীন আরো বলেন, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জেগে উঠছে মানুষ। দেশ প্রেমিক জনতা এই স্বৈরাচার সরকারের দুঃশাসন থেকে মুক্তি চায়। দেশকে মেধা শূন্য রাজনীতিবিদ করার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার করা হচ্ছে। সরকার নির্বাচনের নামে প্রহসন করছে। তারা দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার, ন্যায় বিচার, ভোটাধিকার ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আদালতের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিয়েছে। অথচ দেশের সকল রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, লেখক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে জোর দাবি জানাচ্ছে কিন্তু সরকার গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। অবৈধ সরকার আদালতের দোহাই দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে জনগনের হৃদয়কে চুরমার করে দিয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও গাজীপুর মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি মোঃ খায়রুল হাসান বলেন, মানুষ আর বসে থাকবে না। সরকার যত আগ্রাসী হবে, জনগণ তত প্রতিবাদী হয়ে উঠবে। জনগণ প্রয়োজন হলে ১৪৪ ধারা ভেঙে রাজপথ দখল করবে। জনগণ একবার ফুঁসে উঠলে এই জালেম সরকার পালানোর সময় পাবে না।

উক্ত আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও গাজীপুর মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মোঃ আফজাল হোসেন, সাবেক ছাত্রনেতা ও সহকারী সেক্রেটারি আ স ম ফারুকসহ বিভিন্ন থানা আমীর ও স্থানীয় জামায়াত নেতৃবৃন্দ।

ময়মনসিংহ মহানগরী
গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ময়মনসিংহ মহানগরী শাখা। আজ সকালে মহানগর জামায়াতের আমীর মাওলানা কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন মহানগর সেক্রটারি অধ্যাপক শহীদুল্লাহ কায়সার, সহকারী সেক্রটারি আনোয়ার হাসান সুজন। সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আমীর মাওলানা কামরুল আহসান এমরুল বলেন, পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস করার জন্য, দেশের উন্নয়ন থামিয়ে দেওয়ার জন্য দেশী-বিদেশি শক্তি ষড়যন্ত্র করে ১/১১ এতে অগণতান্ত্রিক সরকার গঠন করেছিল। যার খেসারত জাতিকে এখনো দিতে হচ্ছে।

রংপুর মহানগরী
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রংপুর মহানগরী উদ্যোগে ওয়ান এলেভেন ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মহানগরী সেক্রেটারী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সালাফির পরিচালনায় উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেব বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও রংপুর মহানগরী আমীর উপাধ্যক্ষ মাওলানা এ টি এম আজম খান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহানগরী সহকারী সেক্রেটারি আনোয়ারুল হক কাজল ও ফরহাদ হোসেন মন্ডল, তাজহাট থানা আমীর মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, জামায়াত নেতা রবিউল ইসলাম, খালেকুজ্জামান রাশেদ প্রমুখ।

প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে মইন উদ্দিন, ফখরুদ্দিন গংরা গণতন্ত্রকে হত্যা করে অগণতান্ত্রিকভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে সরকার গঠন করে এবং এই সরকারকে আওয়ামী লীগ নিজেদের আন্দোলনের ফসল বলে দাবি করে। তখন আওয়ামী লীগ বাদে দেশের সকল রাজনৈতিক দল অগণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ জানায়। এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় আওয়ামী লীগ এদেশের গণতন্ত্রের হত্যাকারী দল।