★ এক দফার সংগ্রাম আরও বেগবান করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করুন
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, জামায়াতের দায়িত্বশীল হিসেবে সংগঠনের প্রতিটি পরিকল্পনাকে অনুধাবন করে ময়দানে তা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। এজন্য নিজেদের যোগ্যতা অর্জন ও দক্ষতা বৃদ্ধি করতে হবে। কোয়ানটিটির চেয়ে কোয়ালিটি সম্পন্ন অর্থাৎ যোগ্য জনশক্তি সকলক্ষেত্রে নিশ্চিত করতে হবে। গতদিন আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়েছে। যে পরিমাণ মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন তারচেয়ে বেশি মানুষ বাংলাদেশে আজ হত্যার শিকার হয়েছে। আইন ও সাংবিধানিক অধিকারের কোনো রূপ তোয়াক্কা না করে পরিকল্পিতভাবে এসব হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। গুম হচ্ছে খুনের চেয়েও বেশি মারাত্মক। এটা জঘন্যতম একটি অপরাধ অথচ আওয়ামী সরকার বিরোধী দল ও মতকে দমনের হাতিয়ার হিসেবে গুমকে ব্যবহার করছে। বিগত এক যুগে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, ব্যারিস্টার, জনপ্রতিনিধি, তরুণ, যুবক, ছাত্র, সাংবাদিক সহ প্রায় ছয় শতাধিক মানুষ গুমের শিকার হয়েছেন। গুম-খুনের সাথে জড়িতদের একদিন মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার করা হবে।
তিনি বৃহস্পতিবারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত থানা আমীর-সেক্রেটারি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আবদুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, মাওলানা আবু সাদিক। আরও উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারী যথাক্রমে দেলাওয়ার হোসাইন, কামাল হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান সহ ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্যবৃন্দ।
ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গুম হচ্ছে একটি মানুষকে প্রতিদিন হত্যা করার সমান। গুম একটি পরিবারকে মূহুর্তের মধ্যে তছনছ করে দিয়ে দিক-হারা করে ফেলে। একটি স্বাভাবিক মৃত্যু পরিবার সহজেই মানিয়ে নিতে পারে কিন্তু কোনো ব্যক্তির গুম হয়ে যাওয়া পরিবারের জন্য সারাক্ষণ যন্ত্রণার কারণ হয়ে থাকে। গুম হয়ে যাওয়া মানুষ গুলোকে ফিরে পাওয়ার আকুতি আহাজারি আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবসে আরও বেশি জোর দাবি হয়ে সামনে এসেছে। বাংলাদেশে গুম ও অবৈধ খুনের কালচার দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেই একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে শুরু করেছিল। জহির রায়হান আজও গুম হয়ে আছে, সাবেক এমপি আব্বাস গুম হয়েছে। স্বাধীনতার পরেই অসংখ্য মানুষকে গুম করে ফেলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত যাদের খোঁজ মেলেনি। আর অবৈধ খুন তো অহরহই আমরা দেখেছি, সিরাজ শিকদারসহ অসংখ্য জাসদ নেতা-কর্মীদের খুন করতে দেখেছি, ইসলামপন্থি ব্যক্তিদের খুন করতে দেখেছি। সুতরাং আজকে যারা ক্ষমতায় আছে এটা তাদের সব সময়ের চরিত্র। এটা তাদের দেশ শাসনের ও বিরোধীদের দমন করার একটি স্থায়ী অস্ত্র। বিগ্রেডিয়ার আব্দুল্লাহহিল আমান আযমী, ব্যরিস্টার আরমান, শিবির নেতা ওয়ালিউল্লাহ, আল মুকাদ্দাস ও জাকিরকে দীর্ঘ দিন ধরে গুম করে রাখা হয়েছে। আমরা এখনো দাবি জানায় যতো মানুষকে আপনারা গুম করে রেখেছেন সবাইকে নিজ নিজ পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিন। পরিবারের কাছে ফেরত দিতে না পারলে তাদের সবাইকে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে রেখে যান, নামাজ শেষে মুসল্লিরা তাদের বাড়িতে পৌঁছিয়ে দিবে। প্রত্যেকটি খুন-গুম ও অন্যায়ের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে এর জবাবদিহি করতে হবে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সর্বোত্তম বিচারক তিনি প্রতিটি অন্যায়ের সূক্ষ্ম বিচার করবেন ইনশাআল্লাহ। আজকে এই অবৈধ সরকারের কাছে দাবির চেয়ে উত্তম হবে এই জুলুমবাজ, স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদকে দেশের ক্ষমতা থেকে সরিয়ে ফেলা।
তিনি আরও বলেন, জনগণের ঐক্যগড়ে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে দেশের মানুষের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আজ দেশের জনগণ নানাবিধ সমস্যায় আজকে জড়জড়িত হয়ে পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে আজ জনগণ দু’বেলা দু’মুঠো ভাতের অধিকার থেকেও বঞ্চিত। জনগণের কোনো বিষয়ে কথা বলার অধিকার নেই, ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। দেশে গণতন্ত্র আছে বলা হলেও আসলে তা দৃশ্যমান নেই। দেশের সংস্কৃতি পরিকল্পিত ভাবে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। আজ দেশের স্বাধীনতাকে বিকিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এই দখলদার গোষ্ঠীর হাত থেকে দেশকে রক্ষার একমাত্র পথ হচ্ছে এই স্বৈরাচার ফ্যাসিবাদকে অবিলম্বে পরাজিত করে বিদায় জানানো। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সমর্থনের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সকল বিরোধী দল ও মতের প্রতি আহ্বান জানাই, এই অবৈধ সরকারের পতন নিশ্চিত করতে রাজপথে ভূমিকা পালন করুন। এক দফার যে সংগ্রাম তা আরও বেগবান করে তুলুন। সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কর্মসূচি প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন করুন। সকল ছাত্র সংগঠন নিয়ে ছাত্র ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সকল রাজনৈতিক দল গুলো নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ ফোরাম গঠন করুন। আসুন এই সরকারের পতন নিশ্চিত করতে আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করি।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আগামীর বাংলাদেশ সুষ্ঠুধারায় পরিচালনার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামীর থানা পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী ও বিজয়ী আন্দোলনে পরিণত করতে হলে গণমুখি হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সহ সমাজের সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের কাছে জামায়াতের দাওয়াত পৌঁছাতে হবে। একইসাথে ন্যাচারাল লিডার হিসেবে যারা গড়ে ওঠে তাদেরকে ইসলামী আন্দোলনে সম্পৃক্ত ও আন্দোলনের নেতৃত্বে নিয়ে আসতে হবে। শক্তিশালী ও মজবুত সংগঠন গড়ে তুলে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পুরণে কাজ করে যেতে হবে। এই বছর নির্বাচনের বছর সেটা মাথায় রেখে গণ-আন্দোলনকে আরও গতিশীল করতে হবে। জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সম্মুখে থেকে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে।