অতীতে আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি। আওয়ামী সরকার জনগণের ভোটাধিকার ও বাকস্বাধীনতাসহ সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছে। বর্তমান সরকারের প্রতি জনগণের কোনো আস্থা নেই। জনমত আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে। তাই তারা কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে। আওয়ামীলীগ বুঝতে পেরেছে দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতায় আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। এই আশঙ্কা থেকেই আওয়ামীলীগ অতীতের ন্যায় এবারও ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
৮ জুলাই শনিবার জামায়াতে ইসলামী বগুড়া অঞ্চলের উদ্যোগে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও অঞ্চল পরিচালক মাওলানা আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে এবং অঞ্চল টিম সদস্য মাওলানা আবদুল হক ও অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এর যৌথ সঞ্চালনায় ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত অঞ্চলের উপজেলা আমীর, নায়েবে আমীর ও সেক্রেটারিদের নিয়ে দিনব্যাপী শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান উপরোক্ত কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমরা চাই কেয়ারটেকার সরকার। বর্তমান জালিম সরকারের পতন ঘটিয়ে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে। কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা পুনপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আয়োজন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন চলছে জুলুমতন্ত্র। মানুষ জুলুমের স্বীকার হয়ে হাপিয়ে উঠেছে। জালিম সরকারের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলা বড় জিহাদ। হক্ব ও ন্যায়ের পথে সংগ্রাম ঈমানের দাবি। জালিমের হাত থেকে দেশবাসীকে উদ্ধার করতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে জামায়াত নেতাকর্মীদের সর্বোচ্চ ত্যাগের নজরানা পেশ করতে হবে।
তিনি দায়িত্বশীলদের উদ্দেশে বলেন, শিক্ষাশিবির হলো কুরআন-হাদীসের জ্ঞানের প্রশিক্ষণ এবং সুশৃঙ্খল কাজের পদ্ধতিগত প্রশিক্ষণ, ভুল সংশোধনের প্রশিক্ষণ। ভুলের চিকিৎসা হলো আল্লাহর দরবারে তাওবা করা। সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি সে, যে আল্লাহর দরবারে তাওবা করে। দায়িত্বশীল হিসেবে আমাদের বেশি বেশি অর্থ ও সময়ের কুরবানি দিতে হবে।
নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, ১৯৭৩ সালে প্রথম গোঁজামিলের নির্বাচন হয়েছিল। সে নির্বাচনে শুধু আওয়ামীলীগ অংশ গ্রহণ করেছিল। বাকশাল গঠনের আগে ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল যার ব্যালট বাক্স হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ছিনতাই করা হয়েছিল। ৯০-এর গণঅভ্যূত্থানে এরশাদের পতন হলে জামায়াতের আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম প্রদত্ত কেয়ারটেকার সরকারের ফর্মুলায় ৯১ তে নির্বাচন হয়। পরবর্তীতে আন্দোলন-সংগ্রামের ফলে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত হয়। আওয়ামীলীগ সরকার উদ্দেশ্যমূলকভাবে ২০১১ সালে সেই কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে জুলুমবাজ হাসিনা সরকার ক্ষমতায়। দেশের মানুষ হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন কল্পনাও করতে পারে না। মানুষ এই জালিম সরকারের পতন চায়। এ জন্য আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি দিতে বাধ্য করা হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, ইসলাম মানতে হবে পরিপূর্ণভাবে। রাসূল সা. ও খুলাফায়ে রাশেদার যুগে রাষ্ট্র চলতো কুরআন দিয়ে। ১৯২৪ সালে ওসমানীয় সাম্রাজ্যের পতনের পর খিলাফত শাসনের অবসান ঘটে। ১৯২৮ সালে ইখওয়ানুল মুসলিমিন, ১৯৪১ সালে জামায়াতে ইসলামী প্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের মাধ্যমে পুনরায় খিলাফত শাসন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সেই আন্দোলনেরই একটি ধারাবাহিকতা মাত্র। এই আন্দোলনকে কুরআনে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ বলা হয়। আজ মুসলমানদের দুর্গতির মূল কারণ হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন ছেড়ে দেয়া। আমাদের কাজ হবে দেশের মানুষকে বুঝিয়ে ঐক্যবদ্ধ করে দ্বীন কায়েমের পক্ষে জনমত তৈরি করা।
সভাপতির বক্তব্যে মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে উপজেলা দায়িত্বশীলগণকে বুদ্ধিমত্তা, বিচক্ষণতা ও সাহসীকতার সাথে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে হবে। সাথে সাথে কেন্দ্র ও জেলা সংগঠনের নির্দেশনা সঠিকভাবে অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষাশিবিরে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মাদ সাহাবুদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা ও অঞ্চল টিম সদস্য মাওলানা আবদুর রহীম এবং সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহের আমীর, নায়েবে আমীর ও সেক্রেটারিবৃন্দ।