গাইবান্ধা জেলা আমীর ও সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জনাব মোঃ আব্দুল করিমের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মাওলানা জহুরুল হক সরকারের পরিচালনায় সদস্যদের(রুকন) নিয়ে ০২ জুন শুক্রবার দিনব্যাপী শিক্ষাশিবির (পুরুষ)-২০২৩ ভার্চুয়ালভাবে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের পরিচালক মাওলানা আবদুল হালিম। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বেলাল, গাইবান্ধা জেলা শাখার সাবেক আমীর ও বিশিষ্ট চিকিৎসক-সমাজসেবক ডা. আব্দুর রহীম সরকার, দারসুল হাদিস পেশ করেন মাওলানা আব্দুল হাকিম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন- “আজকের এই গুরুত্বপুর্ণ আলোচনার বিষয়গুলোর সাথে নিজের জীবনের সম্পৃক্ততা আছে কি না ? তা আমাদের চিন্তা করতে হবে। অধ্যয়ন অনুশীলনের ক্ষেত্রে আমাদের আরও সক্রিয় হতে হবে। কোরআনের আয়াত ও হাদিস মুখস্ত করতে হবে। আমাদের সংগঠনের সকল স্তরের মানুষ আজ সম্পৃক্ত রয়েছে। সমাজের ইমামতি করার যোগ্যতা থাকতে হবে। উপজেলা আমীরগণকে জনশক্তিকে জ্ঞানগত যোগ্যতা বৃদ্ধির ব্যাপারে চেষ্টা চালাতে হবে। জ্ঞানগত যোগ্যতা না থাকলে আমরা পিছিয়ে পড়বো। রুকনদের জ্ঞানগত যোগ্যতা বৃদ্ধি করে নেতৃত্বের ঘাটতি পুরন করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী জেল জুলুম নির্যাতনের ব্যাপারে পরীক্ষিত সংগঠন।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের মনে রাখতে হবে যে, দেশের পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মত জনগনকে ধোকা দেয়ার পরিবেশ এখন আর নাই। মানুষের কল্যাণ ও মুক্তির জন্য যে ডাক আসবে তাতে সকলকে সম্পৃক্ত থাকতে হবে। নির্বাচনী বৈতরনী পার হতে হলে রুকনদেরকেই মুল ভুমিকা পালন করতে হবে। রুকনদের আর্থিক কুরবানীর ক্ষেত্রে মডেল হতে হবে। ইউনিটগুলো সক্রিয় রাখার জন্য যথাযোগ্য ভুমিকা পালন করতে হবে। আমাদের জাতীয় নেতৃত্ববৃন্দকে মুক্তি দিতে হবে। আমরা গাইবান্ধা জেলার পাশে আছি ভবিষ্যতেও থাকবো ইনশাআল্লাহ।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন-
আন্দোলনের পথ কখনও ফুল বিছানো হয় না। যুগে যুগে যারাই এই দায়িত্ব পালন করেছে তাদেরকেই এইভাবে নির্যাতনের স্বাীকার হতে হয়েছে। আমরা আল্লাহর দ্বীন কায়েমের কাজ করি আল্লাহর দাসত্বের দিকে মানুষকে আহ্বান জানাই। সমাজ থেকে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় কল্যান মুলক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা আমাদের দায়িত্ব। নবীগণ সমাজ থেকে অসৎ ও খোদাদ্রোহী শক্তিকে অপসারন করে সৎ ও খোদাভীরু নেতৃত্ব কায়েম করতে হবে। রাসুলগণ প্রেরনের উদ্দেশ্যই তাই। মুশরিকরা, জালেম ও ফাসিকরা এই কাজ সবচেয়ে বেশী অপছন্দ করে।
তিনি আরও বলেন, আমরা মুসলমানরা আমাদের লক্ষ থেকে বিচ্যুত হয়েছি দুনিয়ার কাজে ডুবে আছি। আমরা যে আন্দোলন করি তাই মুলত কুরআনের বর্ণিত জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ কাজ। কুরআনের জিহাদ করতে বলা হয়েছে জীবন ও সম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে। জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজ করলে আল্লাহ জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। সীসা ঢালা প্রাচীরের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। মহান আল্লাহ তার বান্দাদের বাছাই করে এই আন্দোলনের সাথী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। দ্বীনকে ভালোবেসে আল্লাহর জন্য ত্যাগ ও কুরবানী করে সাহাবীগণ অনন্য দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছেন। আমাদের জনশক্তিকেও হাসি মুখে জেল জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করতে হবে।
জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য ইসলামী আন্দোলন একমাত্র পথ। নবী রাসুলগণ ও তাদের সাহাবীগণ আজীবন এই সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। আন্দোলনের জন্য প্রয়োজনে কারাবরণ করতে হবে এটি নবী রাসুলদের সুন্নাত। মুসা আ. এবং তার ভাই হারুনকে এক বিরাট ফেরআউনের বিরুদ্ধে দাওয়াতি কাজের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমাদেরকেও সেই মানে তৈরী হতে হবে। হিজরত হলো শ্রেষ্ঠ কুরবানী। জীবনের পেশা,ব্যবসা, বাড়িঘর, স্ত্রী -পুত্র সব ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন সাহাবীগণ। বদরের যুদ্ধে, উহুদের যুদ্ধে আবারও হারিয়েছে প্রিয়জনকে। তবুও তারা ধৈর্য্যহারা হননি। শহীদ আব্দুল মালেক আমাদের মাঝে আজ দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। আল্লাহর রাসুল তার সাহাবীদের ব্যপারে ছিলেন রহমদিল আর কাফিরদের ব্যাপারে ছিলেন কঠোর। তাই ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন বলেন-
পৃথিবীতে আমরা যা করছি তা আখিরাতে প্রতিফল পাওয়ার জন্যই করছি। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করার জন্যই করছি| নারীর প্রতি আসক্তি, সন্তানের জন্য ভালোবাসা, জমানো অর্থ সম্পদ-এগুলো মুমিনের জন্য পরীক্ষা| দুনিয়ার এ জীবনটা পরীক্ষা ক্ষেত্র| অনন্ত জীবনে যাওয়ার প্রস্তুতি পর্ব ছাড়া আর কিছুই নয়| দুনিয়ার জীবনের পর এমন একটি জীবন থাকা উচিত যে জীবনে একটি নিরপেক্ষ আদালত থাকতে হয় তাই সঠিক বিচার ও পুরষ্কার এর জন্যই আখিরাতের জীবন | সেই দিন একমাত্র কর্তৃত্ব আল্লাহর জন্যই থাকবে। এবং সেদিন কারও প্রতি জুলুম হবে না সবাই ন্যায়বিচার পাবে। হিসাব নেয়ার জন্য সেদিন আল্লাহই যথেষ্ট হবেন | সেদিন শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য সাধারন কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সুপারিশ গ্রহন করা হবে না। সেদিন মানুষের হাত, পা, শরীরের চামড়া, কান, চোখ সাক্ষী দিবে| মহান আল্লাহর বিরুদ্ধাচারীদের ঘাঁটি হলো জাহান্নাম।আল্লাহ দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ করলে কুরআন ও হাদিসে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে| নামাজের ব্যাপারে আমাদের আরও যত্নবান হতে হবে। জান্নাতে যাওয়ার জন্য আমাদের সঠিক সময় সঠিক আমল করার তৌফিক দিন (আমিন)|
বিশেষ অতিথি অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বেলাল বলেনঃ-
সমাজের সকল স্তর থেকে খোদাদ্রোহী শক্তির নেতৃত্ব পরিবর্তন করাই কল্যাণমুলক সমাজ বিনির্মানের পুর্ব শর্ত। আমরা নিয়মতান্ত্রিক ভাবে এই পরিবর্বত করতে চাই- আমরা আশাবাদী সামনে বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আমরা এগিয়ে যাবো ইনশাআল্লাহ| জামায়াতের দিকে আমাদের মজবুত আদর্শিক জনমত তৈরী করতে হবে| প্রশিক্ষণ মুলক কাজ বেশী বেশী করতে হবে।
সমাজসেবা মুলক কাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করতে হবে| নির্বাচনের সকল কাজ যথাযথভাবে আনজাম দিতে হবে। নির্বাচনের প্রার্থীর পরিচয় দানের ক্ষেত্রে সকল ভালো বিষয় তুলে ধরতে হবে। জেলা/উপজেলায় আমাদের ততপরতা মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচনী কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে হবে। নির্বাচনী বাজার কমিটি করতে হবে। দৈনিক সংগ্রাম ও সোনার বাংলার গ্রাহক বৃদ্ধি করতে হবে। কর্মী পরিচালনা ও কার্যক্রম পরিচালনায় সময় বেশী দিতে হবে। কর্মী সমাবেশ করে সমস্যা শুনে তার সমাধান করতে হবে। নির্বাচনী সার্কুলারসমুহ যথাযথ অনুসরন করতে হবে। নির্বাচন পরিচালকদের একটি নির্দিষ্ট সময় অফিসে থাকতে হবে। ভোটের দিনে যথাসময়ে পোলিং এজেন্ট সেট করতে হবে। আগামী দিনে যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার যোগ্য একদল কর্মী তৈরি করতে হবে।
ডা. আব্দুর রহিম সরকার বলেন-
এতায়াত মানে হলো আনুগত্য করা, মা’ছিয়াত অর্থ আনুগত্যহীনতা, নাফরমানি করা। আনুগত্য হলো আন্দোলনের বুনিয়াদ। মহান আল্লাহর আনুগত্য সবকিছুর উপরে। তারপরই রাসুলের আনুগত্য করতে হবে। আল্লাহর আনুগত্য হবে রাসুল সা. এর মাধ্যমে আর আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য হবে উলিল আমরের মাধ্যমে। স্রষ্টা বাদে সৃষ্টির আনুগত্য হয় না। নেতার আদেশ শোনা আনুগত্য করা, সত্য বলার ক্ষেত্রে নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় পায় না। আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে কেয়ামতের দিন শুপারিশ পাওয়া যাবে না। সেদিন কথা বলার শক্তিও নষ্ট করে দেয়া কবে। আন্দোলন ও সংগ্রামের প্রাণশক্তি হলো পরামর্শ ও মুহাসাবা- আল্লাহর রাসুল সা. বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরামর্শ করলে পরস্পরের চিন্তার আদান প্রদান হয়। মুহাসাবা - সংশোধনের উদ্দেশ্যে সমালোচনা। ব্যক্তি কেন্দ্রীক মুহাসাবা, সামষ্টিক মুহাসাবা। এটার চর্চা থাকলে তাহলে তাজকিয়া হবে। মুহাসাবা না হলে গীবত হবে এবং সমস্যা থেকে যাবে। এজন্যই নিঃসংকোচে পরামর্শ দিতে হবে। নিজের ভুল স্বীকার করা মহত্ত্বের লক্ষণ। সকলের সাথে পরামর্শ হলে দায়িত্বশীলের নিরাপত্তা বেস্টনী তৈরী হবে।