৪ মার্চ ২০২৩, শনিবার

নরসিংদী জেলা জামায়াতের পৌরসভা-ইউনিয়ন আমীর ও সেক্রেটারিদের শিক্ষাশিবির অনুষ্ঠিত

সংবিধান দেশের নাগরিককে রাজনীতি করার যে অধিকার দিয়েছে তা কেউ কেড়ে নিতে পারে না: হামিদ আযাদ

দেশের সংবিধান দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার কবচ, দেশের স্বাধীনতার গ্যারান্টি। আওয়ামী লীগ বারবার নিজেদের স্বার্থে সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করেছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জনগণের মত প্রকাশের সুযোগ কেড়ে নিয়েছে। ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে গণতন্ত্র এদেশের মানুষ অর্জন করেছিল, আওয়ামী লীগ তা ধ্বংস করেছে। লুটপাট, দুর্নীতি দুঃশাসনে, অর্থপাচার ও পুলিশি রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করে বাংলাদেশকে বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। ইসলামের বিরুদ্ধে তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করে সরকার ধর্মের নামে হিন্দুয়ানি ধর্ম ও তাদের সংস্কৃতি চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে । এ অবস্থায় জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই । তাই দেশের মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের জন্য আজ ঐক্যবদ্ধ। তত্ত্বাবধায়কের দাবি আদায় ছাড়া বাংলাদেশে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।

নরসিংদী জেলা জামায়াত কর্তৃক ভার্চুয়ালি আয়োজিত পৌরসভা ও ইউনিয়নের আমির ও সেক্রেটারিদের শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ উপরোক্ত কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, জনগণ আজ সংকটে নিমজ্জিত। এই সংকট দুঃশাসনের সংকট। অর্থ পাচার, লুটপাট দুর্নীতির সংকট। যা আজ তীব্র আকার ধারণ করেছে। দ্রব্য মূল্যের পাগলা ঘোড়ার কবলে পরে সাধারণ মানুষের আজ বেহাল দশা। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি সংসদে জামায়াত প্রতিনিধিত্ব করেছে। দেশের কল্যাণে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। রাজনীতিতে জামায়াত গুণগত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। সততা ও ন্যায় নীতির ভিত্তিতেও যে রাজনীতি করা যায় বাংলাদেশের জনগণের সামনে জামায়াত নজির সৃষ্টি করেছে। চার দলীয় জোট সরকারের আমলে জামায়াতের দুইজন মন্ত্রী দুর্নীতিমুক্ত হয়ে দক্ষতার সাথে মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে পৃথিবীর সামনে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।

তিনি বলেন, রাজনীতিতে জামায়াত সহ-অবস্থানের নজির সৃষ্টি করেছে। সকল স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রেখেছে। ইতিবাচক রাজনীতিকে জামায়াত পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। সততা পূর্ণ রাজনীতির চর্চা করছে। হিংসা-বিদ্বেষ, বিভেদ ও অনৈক্যের বদলে দেশগড়ার রাজনীতি চালু করেছে। দেশের দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন ও প্রাকৃতিক বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।

তিনি আরো বলেন, এদেশের মানুষ ইসলাম প্রিয়। ইসলামকে ভালবাসে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী রাজনীতি করে বলেই দেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে বড় জনপ্রিয় ইসলামী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সক্ষম হয়েছে। আর এ কারণেই জামায়াতকে দমন করার জন্য সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে। পুলিশ দিয়ে জামায়াতের কর্মসূচিতে হামলা করছে। আবার গায়েবী মামলা দিয়ে জামায়াতকে দমনের অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

কিন্তু এত কিছুর পরও জামায়াত জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। জামায়াতের অনুকূলে জনমত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী নির্বাচনে জনগণের দাবি আদায় না হলে জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। এ জন্য জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

জেলা আমির মাওলানা মোছলেহুদ্দীনের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি মাওলানা আমজাদ হোসাইনের পরিচালনায় শিক্ষা শিবিরে বিশেষ অতিথি হিসেবে যুক্ত থেকে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য জনাব মোবারক হোসাইন অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ ও জেলা নেতৃবৃন্দ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনাব মোবারক হোসেন বলেন, ব্যাপক দাওয়াতি কাজের মাধ্যমে সংগঠনকে প্রতিটি জনপদে ছড়িয়ে দিতে হবে। লক্ষ্য অর্জনে অটুট ও অবিচল থাকতে হবে। ইসলামের যে গণজোয়ার বাংলাদেশে শুরু হয়েছে তা গণ বিপ্লবের পরিণত করতে হবে। ইসলামপন্থীদের প্রতি মানুষের আস্থার প্রতিদান ইসলামী সমাজ কায়েমের মাধ্যমে দিতে হবে। নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে এগিয়ে আসতে হবে। দেশের মানুষকে উদ্ধার করতে হবে এবং আমাদেরকেও মুক্ত হতে হবে ।

বিশেষ অতিথি অধ্যক্ষ ইজ্জত উল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, জামায়াতের মূল লক্ষ্য দেশের মানুষকে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র উপহার দেয়া। আর এই কল্যাণ রাষ্ট্র হতে পারে কেবল সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে। জনগণকে সার্ভিস দেয়ার মাধ্যমে যত বেশি জনসেবা করা যাবে, জনগণ ততই কল্যাণ রাষ্ট্রের ধারণা পাবে। জামায়াতকে তারা গ্রহণ করবে এবং ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসবে। তাই প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে সমাজসেবা টীম, সাধারণ সেবা টীম এবং নির্বাচনী টিম থাকা জরুরী। ইনসাফপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে হলে নির্বাচনের প্রস্তুতি থাকতে হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে হবে। এজন্য তিনি সবাইকে গণতান্ত্র ও অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।