বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে জেলা ও মহানগরী আমীর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে গণআন্দোলন আরো জোরদার করার লক্ষ্যে নিম্নোক্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়:-
বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী সরকারের অধীনে বিগত ১৪ বছরে কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়নি। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাথে সমঝোতা করে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় আসার পর ২০১১ সালের ১০ মে উচ্চ আদালতের রায়ের দোহাই দিয়ে তারা কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। অথচ ঐ রায়ে পরপর দুটো নির্বাচন কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে করার কথা বলা হয়েছিল। মূলত এর মাধ্যমে বর্তমান আওয়ামী সরকার এদেশে একদলীয় বাকশালি কর্তৃত্ববাদী শাসন কায়েম করে।
দেশবাসী প্রত্যক্ষ করে আসছে যে, বর্তমান আওয়ামী সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি একটি ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক না হওয়ার আশঙ্কায় জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর কেউই অংশগ্রহণ করেনি। জনগণ বিরোধী দলের ডাকে সাড়া দিয়ে এ নির্বাচন বয়কট করে। নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীগণ বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হয়। যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা।
পরবর্তীতে প্রবল সমালোচনার মুখে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘এটি একটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। দ্রুতই আরো একটি নির্বাচন হবে।’ কিন্তু তিনি তার সে কথা সম্পূর্ণরূপে ভুলে যান এবং ক্ষমতা আরো পাকাপোক্ত করার সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন।
২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তথা ভোটের আগের দিন রাতেই সরকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অবৈধভাবে ব্যবহার করে তাদের মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে সিল মেরে বাক্স ভর্তি করে রাখে। ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে অনেক রাষ্ট্রদূত মন্তব্য করেন যে, এ ধরনের নির্বাচন তারা পৃথিবীর কোথাও দেখেননি।
বর্তমান সরকারের গত ১৪ বছরের শাসনামলে প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে ১৯৯১, ’৯৬ ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হওয়ায় সে নির্বাচনগুলো দেশে-বিদেশে সকলের নিকট প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্য হয়। জামায়াত কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যে দাবি জানিয়ে আসছে আওয়ামী সরকারের আমলে তা আবারও সঠিক প্রমাণিত হয়েছে।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক করার জন্য কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গোটা জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। জনগণের ন্যায্য ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সকল রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন এবং এ দেশের সর্বস্তরের জনগণকে ঐক্যবদ্ধভাবে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর ‘জেলা ও মহানগরী আমীর সম্মেলন’ উদাত্ত আহবান জানাচ্ছে।