যারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে, তাদেরকে নানাভাবে জুলুম-নির্যাতন করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার এ দেশের মানুষের মন-মগজ থেকে ইসলামকে মুছে ফেলার জন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। সমাজে অনৈতিকতা ও দ্বীনহীন শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে ইসলামপ্রিয় মানুষ ও রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া হচ্ছে। যারা ইসলাম প্রচারে অবদান রাখছেন, তাদেরকে নানাভাবে জুলুম-নির্যাতন করা হচ্ছে। তবুও ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে ময়দানে ভূমিকা রাখতে হবে।’
শুক্রবার বিকেলে জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর রুকন (সদস্য) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সম্মলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও রাজশাহী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ সাহাবুদ্দিন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
বক্তব্য রাখেন জামায়াতের রাজশাহী মহানগরী নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ সিদ্দিক হুসাইন, আবু মোহাম্মাদ সেলিম, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক শাহাদাত হোসাইন, অধ্যাপক আব্দুস সামাদ প্রমুখ।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরী আমীর ড. মাওলানা কেরামত আলী। আর সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল।
অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের শিরকমুক্ত জীবন গঠন করতে হবে। মহান আল্লাহ আখেরাতে সকল গুনাহ মাফ করবেন। কিন্তু শিরকের গুনাহ মাফ করবেন না। এজন্য জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই যেন আমরা শিরকের সাথে জড়িয়ে না পড়ি।
তিনি আরো বলেন, একজন মুমিনের জন্য দুনিয়াতে ঋণ রেখে মৃত্যু বরণ করা উচিত নয়। ঋণের বোঝা নিয়ে আখেরাতে গিয়ে কোনো লাভ হবে না। আপনার ঋণ আপনার সন্তান বা অন্য কেউ পরিশোধ করবে না। এজন্য কারো ঋণ থাকলে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে দু’এক কাঠা জমি বিক্রি করে হলেও তা পরিশোধ করে যাওয়া উচিত।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর আরো বলেন, মানুষকে ক্ষমা করে দেবেন। ক্ষমা করা বড় ও মহৎ কাজ। আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেছেন, ক্ষমা করার মাধ্যমে জান্নাতপ্রাপ্তি সম্ভব। দিন শেষে ঘুমানোর সময় সকলকে ক্ষমা করে ঘুমাবেন। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের নিয়মিত বেশি বেশি কুরআন-হাদিস অধ্যয়ন করতে হবে। কুরআন-হাদিসের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। নিজেদের সন্তান, পরিবার-পরিজনকেও কুরআন-হাদিস অধ্যয়নের তাগিদ দিতে হবে। সন্তানেরা যেন কোনো নষ্ট পথে পা না বাড়ায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধমে যে অ্যাপস আছে, এগুলো সব ইহুদিদের তৈরি। পরিকল্পিতভাবে এখানে নগ্নতা ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে। এগুলো থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, মহান আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা প্রত্যেক মুমিনের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে আমাদের জীবন ও অর্থ দিয়ে কাজ করতে হবে। যারা মুমিন-মুত্তাকি, তাদের মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে বেড়ানোর সুযোগ নেই। মৃত্যুর পর আল্লাহ তা'য়ালার কাছেই ফিরে যেতে হবে। দুনিয়াতে যদি আল্লাহ তা'য়ালার সন্তষ্টি ও তাঁর দ্বীনের ওপর মৃত্যু হয়, তা কাফের মুশরিকরা দুনিয়াতে যা অর্জন করেছে, তার চেয়ে হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ।
অধ্যক্ষ সাহাবুদ্দিন বলেন, ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজে আরো বেশি সময় দিতে হবে। সংগঠনের কাজ নিয়ে বেশি বেশি চিন্তা করতে হবে। দ্বীনের কাজকে যথাযথভাবে করার জন্য প্রথম কাজ পরিকল্পনা গ্রহণ করা এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দুনিয়ার কোনো কাজের চেয়ে দ্বীনের কাজকে গুরুত্বহীন মনে করার সুযোগ নেই। বেশি বেশি দাওয়াতি কাজ করতে হবে। পাড়া-মহল্লা ও কর্মস্থল সব স্থানে মহান আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের পরিবারের প্রয়োজনে আমরা যেমন অত্যন্ত গুরুত্ব ও আন্তরিকতা সহকারে কাজ করি, ঠিক তেমনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যও গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে।
নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, গোটা বিশ্বে ইসলামবিরোধী শক্তিদের যে ষড়যন্ত্র, তা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। বর্তমানে ইসলাম বিদ্বেষীরা বাংলাদেশেও ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এ ব্যাপারে তারা পরস্পর ঐক্যবদ্ধ। এর মধ্যেও আমাদের হেকমতের সাথে মানুষের মাঝে দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যেতে হবে। নিজেদের নৈতিক মান ধরে রাখা এবং মান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালাতে হবে। শুধু নিজেদের নয়, আমাদের কর্মীদের নৈতিক মান বৃদ্ধির জন্য কাজ করতে হবে। আমাদের পরিবারকে আদর্শিকভাবে গঠন করতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি আমাদের জানা। এ পরিস্থিতিতে ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে সাহসিকতার সাথে কাজ করতে হবে। যত বিপদ মুসিবত আসুক না কেন, দ্বীন প্রতিষ্ঠার এ কাফেলা থেকে বিরত থাকার সুযোগ নেই।
সভাপতির বক্তব্যে ড. মাওলানা কেরামত আলী বলেন, সদস্য ভাই-বোনদের সকল প্রকার দুর্বলতার ঊর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে। নিজেদের জীবন গঠনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে।