২ সেপ্টেম্বর ২০২২, শুক্রবার

ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ জামায়াতের সদস্য (রুকন) সম্মেলন অনুষ্ঠিত

ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে সকলকে সাথে নিয়ে যুগপৎ দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা: সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার জনগণের উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে আছে। অত্যাচারি জালেম শাসকের বিরুদ্ধে সত্য কথা বলাই সর্বোত্তম জিহাদ। জামায়াত, বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী ডান বাম, জোট সকলকে সাথে নিয়ে যুগপৎ দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এর মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতিকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে হবে। সংগ্রাম করে জাতিকে মুক্ত করার মহান দায়িত্ব পালনে আগামী দিনে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনে জামায়াতের সদস্যদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন নয়।

আজ শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা'ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ। কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর মঞ্জুরুল ইসলাম ভূইয়া, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর আবদুস সবুর ফকির। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি ড. এডভোকেট হেলাল উদ্দিন, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য মোকাররম হোসেন খান প্রমুখ।

ডা: তাহের বলেন, দুনিয়াব্যাপী জুলুম নিপীড়নের মধ্য দিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চলছে। এই সংগ্রামের জন্য সব সময় একদল ডেডিকেটেড, একনিষ্ট ও ত্যাগী মানুষের প্রয়োজন। যারা সব কাজে আল্লাহ ও তার রাসূল (সা:) এর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে জামায়াতে ইসলামীর সদস্যরাই সেই ত্যাগের জন্য নিজেদের উপস্থাপন করছেন। তিনি কুরআনের উদ্বৃতি দিয়ে সদস্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যে দিন আল্লাহর সাথে শপথবদ্ধ হয়েছেন, সে দিন পূর্বের সব পরিচয় ছেড়ে দিয়ে এক পরিবর্তিত মহান মুজাহিদে পরিণত হয়েছেন। যাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মধ্য দিয়ে মনজিলে মকসুদে উপনীত হওয়া। তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলনের পূর্নতার জন্য ঈমান, ইসলাম, হিজরত, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ, শাহাদাত প্রয়োজন। জামায়াতে ইসলামী এমন একটি কাফেলা, যারা সবগুলোর নজরানা পেশ করতে সক্ষম হয়েছে।

ডা: তাহের আরো বলেন, ইসলাম শুধুমাত্র একটা তত্ত্বই নয়। এটা মানুষের পরিপূর্ণ জীবন বিধান, সংবিধান। এর বাস্তব রূপ হচ্ছেন জামায়াতের সদস্যরা। তাই ইসলাম যেন সঠিকভাবে মানুষের সামনে উপস্থাপিত হয়, সেজন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। তিনি বলেন, প্রত্যেক সদস্যদের মানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করতে হবে। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে বিপদগ্রস্থ মানুষের পাশে দাড়াতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা এটিএম মা'ছুম বলেন, আল্লাহর সাথে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার শপথ হচ্ছে বাইয়াত। আলমে আরওয়াহতে আমরা মহান রবের কাছে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, তার বাস্তব অভিব্যক্তি হচ্ছে রুকনিয়াতের শপথ। এই শপথ সমাজ পরিবর্তনের শপথ। এই শপথ আনুগত্যের শপথ। তিনি বলেন, আনুগত্যের অপরিহার্য দাবী হচ্ছে, এমন সমাজ হবে যেখানে আল্লাহ ও তার রাসূল (সা:) এর বিধান পালনে কোন বাধা থাকবে না। সমাজে শান্তি বিরাজ করবে। তিনি আরো বলেন, আমরা এই দেশকে আল্লাহ ভীরু সমাজে পরিণত করতে চাই। কিন্তু এই পথ কর্ন্টকাকীর্ণ, বাধা আসবেই, প্রতিবন্ধকতা আসবেই, তা মোকাবেলা করে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, সকল কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। আমলে অকৃত্রিমতা থাকতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ইসলামী আন্দোলনের জন্য কোন ব্যক্তি অপরিহার্য নয়। ব্যক্তির নিজের মুক্তি ও সফলতার জন্য ইসলামী আন্দোলন করা অপরিহার্য। ঈমানের দাবী হিসেবে আমৃত্যু আল্লাহর পথে সংগ্রাম করে যেতে হবে। তিনি বর্তমান সময়ের প্রয়োজনে রাজধানীর সদস্যদের যথাযথ ভূমিকা পালনে নিজেদের প্রস্তুত করার আহবান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ শপথের গুরুত্বাপরোপ করে বলেন, বাইয়াতের হক আদায়ে সকলকে সচেষ্ট হতে হবে। প্রত্যেকটা মুর্হুত তওবার মধ্যে থাকতে হবে। আল্লাহর দেয়া সীমা রক্ষা করতে হবে। বাইয়াত নেয়ার পর কোন ব্যক্তির সময় নস্ট করার সুযোগ নেই। তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠায় মহানগরীর সদস্যদের অগ্রনী ভূমিকা পালনের আহবান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, লুটপাট, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের মাধ্যমে সরকার দেশকে দেউলিয়াত্বের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। দেশের রাজনীতি অচল করে দিয়ে, মানুষের ভোটাধিকারকে পদদলিত করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। বিরোধী মতের কারো কথা বলার সুযোগ নেই। দেশকে বিরোধী দল শূন্য করতে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। ১৫০টি আসনে ইভিএম এ নির্বাচন আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজীবন ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশন তারই তল্পিবাহক হিসেবে কাজ করছে। এইভাবে চলতে দেয়া যায় না। তিনি বলেন, এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। জনগনের পছন্দের সরকার যেন ক্ষমতায় আসতে পারে, দেশে যেন রাজনীতির সুস্থ ধারা গড়ে উঠতে পারে, জনগনের দাবী পূরণে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এর মাধ্যমে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসা ফ্যাসিবাদী সরকার যতই শক্তিশালী হউক না কেন, তার পতন ঘটানো সম্ভব হবে।

মঞ্জুরুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, জামায়াতে ইসলামী খোদাভীরু নেতৃত্ব তৈরির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এই নেতৃত্বকে দরদ ভরা মন নিয়ে সবাইকে কাছে টানতে হবে। পেশাগত দক্ষতা যোগ্যতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আত্মিক ও নৈতিক মান উন্নয়ন ও সংরক্ষণে দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসতে হবে।

আবদুস সবুর ফকির বলেন, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর জন্য ইনফাক ফি সাবিলিল্লাহ প্রয়োজন। আত্মত্যাগের আগে অর্থনৈতিক কুরবানী অপরিহার্য। সংগঠনকে শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করতে সকলকে যার যার অবস্থানে থেকে ভূমিকা পালনের জন্য তিনি আহবান জানান।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, ইসলামের দাওয়াত রাজধানীর ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। সংগঠনকে গতিশীল ও মজবুত সংগঠনে পরিণত করতে জনশক্তিকে কাংখিত মানে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সদস্যদের এগিয়ে আসতে হবে।