১৬ এপ্রিল ২০২২, শনিবার

চট্টগ্রাম মহানগরী জামায়াতের দায়িত্বশীলদের দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আমীরে জামায়াত

যেকোন পরিস্থিতিতে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দায়িত্বশীলদের আপসহীন ভূমিকা পালন করতে হবে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম মহানগরী শাখার উদ্যোগে দায়িত্বশীলদের দিনব্যাপী এক প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান। কেন্দ্রীয় এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর মুহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে উক্ত শিক্ষাশিবিরে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘মানুষকে এই দুনিয়া ছেড়ে একদিন পরপারে পা রাখতে হবে। সেদিন মানুষকে তার জীবনের সমস্ত হিসাব দিতে হবে। তখন তাকে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। বলা হবে কে কতটুকু হক আদায় করেছেন। তাই নিজেদের শপথের আলোকে আমাদের পরিবার, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, এলাকাবাসী ও সংগঠনের জনশক্তিদের হক যথাযথ ভাবে আদায় করতে হবে।’

প্রধান অতিথি আরো বলেন, ‘আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, জামায়াতে ইসলামীর প্রাণ হচ্ছে ইউনিট সংগঠন। একটি এলাকায় শুধু একটি ইউনিট নিয়ে আমাদের সন্তুষ্ট থাকলে হবে না, প্রতিটি ঘরকে, প্রতিটা পরিবারকে ইউনিটে রুপান্তর করতে পারলে আমরা শীঘ্রই বিজয় অর্জন করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, অশ্লীলতা, অশালীনতা, বখাটেপনা থেকে নিজ পরিবারকে উদ্ধারের জন্য পারিবারিক ইউনিটই সবচেয়ে উপযুক্ত।'

থানা শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্যরা হচ্ছেন সেতু, কেন্দ্রের সকল সিদ্ধান্ত আপনারাই তৃণমূলে পৌঁছান। তাই আত্মগঠন, পরিবার গঠন, এলাকা গঠনের জন্য আপনাদেরকেই অগ্রগামী হতে হবে।

এই মাসে যারা তাকওয়ার সাথে রোযা রাখবে তাদের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। কারণ রমজান এসেছে আমাদের গুণাহ মাফ করে সাফ করে দেয়ার জন্য। তাই আল্লাহর কাছে আমাদের চোখের পানি ঝরিয়ে খালিস তাওবা করতে হবে। যেকোন পরিস্থিতিতে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে দায়িত্বশীলদের আপসহীন ভূমিকা পালন করতে হবে, আরো ওয়াদা করতে হবে আমরা কখনোই সত্য ছাড়া অন্য কিছুর আশ্রয় নেব না, তাকওয়ার সাথে সত্যবাদিতা ওতপ্রোতভাবে ভাবে জড়িত। সত্যবাদী ব্যক্তি মাত্রই তাকওয়াবান। সত্যবাদীরা কখনো কায়দা-কানুনের আশ্রয় নেবে না।'

পরিশেষে তিনি সকলকে যার যার দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন ও দেশবাসীর জন্য অবিরত কাজ করে যাওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানান।

জামায়াতের নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, 'এতিম মিসকিন মুসাফিরদের সাহায্যে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকেই অগ্রগামী হতে হবে। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে ধৈর্য ধারণ করতে হবে, সকলের প্রতি ইহসান করতে হবে।' তিনি বলেন, আনুগত্য ও শৃংখলা হচ্ছে এ সংগঠনের প্রান। সবাইকে এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম হচ্ছে ইসলামের প্রবেশদ্বার। কাজেই এই এলাকায় ইসলামী আন্দোলনের কাজকে এগিয়ে নিতে শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্যদেরকে মূখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।

ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাসুম বলেন, 'আংশিক নয়, পরিপূর্ণ ভাবে আমাদের ইসলামকে অনুসরণ করতে হবে। থানা শুরা ও কর্মপরিষদ সদস্যদের সবসময় লক্ষ্য রাখতে হবে জনশক্তি যেন দ্বীন পালনে উদাসীন না হয়। পাশাপাশি কর্মীদের উদ্দেশ্য তিনি নির্দেশনা দিতে গিয়ে বলেন- আমাদের যাবতীয় কাজের কেন্দ্রবিন্দু রাজনীতি না হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা দরকার। আমাদের রাজনীতিও হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আমাদের নেতৃত্বকে অনাড়ম্বর জীবনের পাশাপাশি কর্মীদের প্রতি রহম দিল, নম্র ও জনগণের প্রত্যাশার দিকে আন্তরিক খেয়াল রাখতে হবে। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের জন্য পরিবার হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা। পরিবারের সদস্যদের মাঝে দ্বীনের দাওয়াত, দ্বীনি জ্ঞান ও সমগ্র পরিবারে দ্বীনের পবিত্র পরিবেশ ও জযবা সৃষ্টির প্রয়াস নিতে হবে। তাছাড়া সমস্ত প্রকার রাজনৈতিক অস্তিরতা, অনৈক্য, প্রবৃত্তির পূজা থেকে দূরে থেকে সম্পূর্ণ দ্বীনি প্রয়োজন থেকে আমাদের সম্পর্কগুলো এগিয়ে নিতে হবে যেন আমাদের ভ্রাতৃত্ব কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির নিমিত্তেই হয়।

বিশেষ অতিথি কেন্দ্রীয় এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ সামাজিক কাজের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, 'বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশ্য হচ্ছে, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা। তাই আমাদেরকে গণভিত্তি বাড়াতে অবিরত কাজ করে যেতে হবে। কারণ দ্বীন প্রতিষ্ঠা ও গণভিত্তি অর্জনে অনেকগুলো পন্থার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হচ্ছে সামাজিক কাজ। পৃথিবীর প্রতিটি বিপ্লবে গণভিত্তি খুবই জরুরী। সামাজিক কাজ মানে শুধু মানুষকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করার নাম নয়। এছাড়া ভোট পাওয়ার উদ্দেশ্যে মানুষকে সাহায্য করাও সামাজিক কাজ নয়। সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ - কুরআনের এই আয়াতটি সামাজিক কাজের মৌলিক বার্তা। মানুষকে শুধু দুনিয়ায় উপকার করলে হবে না, তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোও সামাজিক কাজের অন্তর্ভুক্ত।'

দিনব্যাপী শিক্ষা শিবিরের পরিচালক কেন্দ্রীয় এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরী আমীর মুহাম্মদ শাহজাহান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই আমাদের যাবতীয় কাজের মূল লক্ষ্য। সংগঠনকে আরো মজবুত করার লক্ষ্যে তৃণমূলের হক আদায় করে আমাদের গণভিত্তি অর্জন করতে হবে। তিনি মানব কল্যাণমূলক কর্মসূচীর মাধ্যমে জনগনের কাছাকাছি পৌঁছার আহ্বান জানান।

উক্ত প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও নগর নায়েবে আমীর আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ ও মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, নগর সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীন, নগর এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা খায়রুল বশর, মুহাম্মদ উল্লাহ, এফ এম ইউনুছ, এম এ আলম চৌধুরী। এছাড়া কর্মশালার ডেলিগেটদের মধ্য থেকে অনেকেই বক্তব্য রাখেন।