১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:৩১

প্রশ্নবিদ্ধ ভুমিকায় ইসি

‘সেন্টার ফর গভর্নেন্স’ আয়োজিত সেমিনারে বিশেষজ্ঞরা

নির্বাচন কমিশনের ‘ভূমিকা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তুলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সাবেক সচিব, সাবেক পুলিশ কর্মকতা, রাজনীতিবিদ ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন আয়োজনে কমিশনের সক্ষমতা এবং সদিচ্ছার অভাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত হচ্ছে না। সিইসি’র নতজানু কর্মকান্ড সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ইসিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। গতকাল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে এই সেমিনারের আয়োজন করে ‘সেন্টার ফর গভর্নেন্স’। সেমিনারে অংশ নিয়ে বক্তারা আরো বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ‘টেস্ট কেস’ পরীক্ষায় ফেল করছে।

রাজধানীর পুরাতন এলিফ্যান্ট রোডে সংস্থাটির কার্যালয়ে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা নির্বাচন আয়োজনে কমিশনকে আন্তরিক ও সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের আহŸান জানান। নয়তো ভোটকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। সেমিনারে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাবচন আয়োজন আমরা টেস্ট কেস হিসেবে নিয়েছি। ভেবেছি হয়তো সুষ্ঠু একটি নির্বাচন হবে। তবে এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। এখন ক্ষমতাসীনদের নির্বাচন হচ্ছে। নির্বাচন সময়ে ৩৫০ জন সংসদ সদস্যকে যে বেতন-ভাতা দিতে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় হচ্ছে এটা রাষ্ট্রের অপচয়।

এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত যে কার্যক্রম দেখিয়েছে, এখনই বলা যায় এই নির্বাচন কমিশন টোটালি ফেইলর। এটা নির্বাচন হওয়ার আগেই বলা যায়। তারা নাকি কিছু দেখে না, তারা বøাইন্ড। মাঠে-ঘাটে কী হচ্ছে তা তারা কিছুই দেখেন না। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন আমাদের ডেকেছিলেন। আমি সেখানে বলেছিলাম প্রধানমন্ত্রী যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই তিনি নির্বাচনি বক্তব্য দিয়ে ভোট চাচ্ছেন। অন্যান্য দলতো রাস্তায় বের হতেই পারে না। তাহলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে হবে। তখন নির্বাচন কমিশন বললো শিডিউল ঘোষণার আগে আমাদের বলার কোনও ক্ষমতা নেই।

বর্তমান ইসি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে দায়িত্ব পালন করছেন না মন্তব্য করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিভিন্ন এলাকায় এই যে মারামারি, একজন প্রার্থী গুলিবিদ্ধ, এটা বিবেচ্য না তিনি কোন দলের। তবে নির্বাচন কমিশনের যে দায়িত্ব, সেটি তারা প্রয়োগ করেননি। সিইসির কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে এটা করবেন বলেও মনে হয় না। নির্বাচন কমিশন একচুয়ালি ডোন্ট নো, হাউ টু হ্যান্ডেল অ্যান্ড হাউ টু গো। মোদ্দা কথা আমরা কী দেখছি, যেটা দেখছি তা ভালো দেখছি না।

সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মুহাম্মদ জমির বলেন, যে দলই জিতুক, নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পরিস্থিতি ক্রিটিক্যাল। নির্বাচন কমিশনের কিছু দায়িত্ব আছে, তাদের উচিত ছিল সেগুলো পালন করা। কিন্তু তারা সম্পূর্ণভাবে পালন করেননি। নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল আরও সক্রিয়ভাবে সব কিছু করা। শুধু বললেই হবে না, যেখানেই ঘটনা ঘটুক দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
সাবেক সচিব এ এইচ মোফাজ্জল করিম বলেন, নির্বাচন কমিশনের আচরণ পক্ষপাতমূলক। খুব আশা করেছিলাম রাজনীতিতে সুবাতাস বইবে। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে যে ঘটনা ঘটেছে, এটা সহজে দমন করা যায়। এর দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন কমিশনকে কাজ করে দেখাতে হবে। এ নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থা কি করে থাকবে। নির্বাচন কমিশনের নির্লিপ্ততা পক্ষপাতমূলক অবস্থানে চলে গেছে।

সেন্টার ফর গভর্নেন্সের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠানে ‘কী নোট’ উপস্থাপন করেন সেন্টার ফর পিচ অ্যান্ড জাস্টিসের নির্বাহী পরিচালক ব্যারিস্টার মানজুর হাসান। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ও সেন্টার ফর গভর্নেন্সের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম আতাউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ডালি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ, ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, পুলিশের সাবেক মহাপরির্দশক এম ইনামুল হক, সেন্টার ফর গভর্নেন্সের ভাইস চেয়ারম্যান ড. মানজুর আহমেদ চৌধুরী, গণ সংহতির জোনায়েদ সাকী, বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সহকারী সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ড. মামুন আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল লতিফ মাসুম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাহাব এনাম খান প্রমুখ।

https://www.dailyinqilab.com/article/173403