১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:২৫

বিভিন্ন স্থানে বিজিবি মোতায়েন সেনা ২৪ ডিসেম্বর থেকে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই সারা দেশে শুরু হয়েছে প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, সংঘর্ষ ও ভাঙচুর। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও অন্যান্য দলের দাবি এবং পরিস্থিতি উত্তরণ ও নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) প্রথমে জানিয়েছিল ১৫ ডিসেম্বরের পর সেনা মোতায়েন করবে। এরপর বলা হয়েছিল ২২ ডিসেম্বর। কিন্তু এখন ইসি কি সেই সেনা মোতায়েন থেকে পিছিয়ে এসেছে কি না সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে নির্বাচন কমিশনার মো: রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচন সামনে রেখে ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সেনা মোতায়েনের দাবির কারণে আগাম বিজিবি নামানো হয়েছে। বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ২২ ডিসেম্বর নামানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু শঙ্কা থাকায় আগাম নামালাম।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এখনই সেনা নামানোর জন্য বলেছিল সোমবার। সেনা না নামিয়ে বিজিবি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন, সেনা ২৪ ডিসেম্বর নামবে। এ জন্য তাদের যে প্রস্তুতি রয়েছে, তা সময়সাপেক্ষ। এখনই তাদের নামানো যাবে না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলসহ সবাই অভিযোগ করছেন, মাঠের পরিবেশ-পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে দিন দিন। তাই আমরা আপনাদের শঙ্কা কাটাতে মাঠে বিজিবি নামিয়েছি। বিজিবি নামালে যদি মাঠের পরিবেশ ঠিক থাকে তাহলে নামাব না কেন? তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে মাঠে বিজিবি নামানো হয়েছে। তবে কত আসনে নামানো হয়েছে তা আমি জানি না। পরিস্থিতি বিবেচনায় আগে পরে মাঠে নামানো হবে বিজিবি। যে স্থানে আগে দরকার সেখানে আগে নামানো হবে। আর যেখানে পরে নামালেও চলবে সেখানে পরে নামানো হবে।
এ দিকে নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঢাকাসহ সারা দেশে ১৬ প্লাটুন বা ৩৫ হাজার ৫৬০ জন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবি সদর দফতরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মহসীন রেজা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মাঠে নামানোর অংশ হিসেবেই বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, নির্বাচনের সাত থেকে দশ দিন আগে নির্বাচনী এলাকায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। একই সময়ে এসব এলাকায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও র্যাব মোতায়েন করা হবে।
প্রসঙ্গত গত ২২ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছিলেন, নির্বাচন সামনে রেখে ১৫ ডিসেম্বরের পরই স্বল্প পরিসরে সেনাবাহিনী মাঠে নামানো হবে। সিইসি বলেন, প্রতিটি জেলায় সেনাসদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। জেলা পুলিশের সহযোগিতায় কাজ করবেন। সেনাবাহিনী মূলত পর্যবেক্ষকের ভূমিকা পালন করবে। তবে সেনা মোতায়েন করার কোনো সুনির্দিষ্ট তারিখ জানাননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লা ও চাঁদপুরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় বিজিবি অবস্থান নিয়েছে বলে বিজিবি সূত্রে জানানো হয়েছে।
১০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন জানান, কুমিল্লার ১১টি ও চাঁদপুর জেলার ৬টি সংসদীয় আসনে বিজিবি প্লাটুন সমূহ স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে।
তিনি আরো জানান, সরকার অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ভোটকেন্দ্রে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার নিমিত্তে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয়পূর্বক নির্বাচনী এলাকায় বিজিবি টহল পরিচালনা করবে।
চাঁদপুর সংবাদদাতা জানান, চাঁদপুরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
চাঁদপুর সদরসহ ৮টি উপজেলায় ১২ প্লাটুন বিজিবি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে। তাদের নেতৃত্বে রয়েছেন মেজর আব্দুল্লাহ আল ফারুকী।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে প্রায় ২৫ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল সকাল ১০টা থেকে বিজিবি সদস্যরা টহল শুরু করেছেন। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সমন্বয় করে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাঠে থাকবেন বিজিবি সদস্যরা। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-১ রাজশাহী ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিজিবি জানায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজশাহীতে ২০ থেকে ২৫ প্লাটুন বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা রাজশাহী মহানগরী এবং ৯টি উপজেলায় থাকা ৬টি সংসদীয় আসন এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এ ছাড়া কয়েক প্লাটুন বিজিবি সদর দফতরে রিজার্ভ রাখা হবে। তারা বিশেষ প্রয়োজনে বের হবেন। গতকাল সকাল থেকে বিজিবি সদস্যরা টহল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।


http://www.dailynayadiganta.com/first-page/373679