১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:২৪

আচরণবিধির লঙ্ঘন

ইসির নিষ্ক্রিয়তায় টিআইবির উদ্বেগ

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী প্রচারণায় প্রকাশ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের উপর্যুপরি বাধাদান, হামলা-মামলার মাধ্যমে হয়রানি, ভীতি প্রদর্শনসহ বিভিন্নভাবে নির্বাচনী আচরণবিধির ব্যাপক লঙ্ঘন সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশনের দৃশ্যমান নিষ্ক্রিয়তায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি নির্বাচনী মাঠে সমান প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র ও পরিবেশ নিশ্চিতে নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে সক্রিয় হয়ে আত্মসম্মানবোধ ও সৎসাহসের সাথে নিরপেক্ষভাবে তৎপর ও দৃশ্যমান কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। মঙ্গলবার সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনী কার্যক্রমে বিঘœ সৃষ্টি হওয়ার অজুহাতে নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে ভোটের খবর সরাসরি সম্প্রচার না করতে গণমাধ্যমকে অনুরোধ এবং ভোটকেন্দ্রে মোবাইল ফোন ব্যবহার নিয়ে কমিশনের স্ববিরোধী অবস্থান জনমনে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থার সঙ্কট আরো বাড়াবে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, গণমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত সংবাদ অনুযায়ী, বহু প্রতীক্ষিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার শুরু থেকেই প্রকাশ্যে প্রতিপক্ষের প্রার্থীদের নির্বাচনী কার্যক্রমে উপর্যুপরি মামলা-হামলার মাধ্যমে বাধাদান, হয়রানি, ভীতিপ্রদর্শন মোকাবেলায় নির্বাচন কমিশনের ক্রমাগত ব্যর্থতা ও উদাসীনতা উদ্বেগজনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। বিরোধী পক্ষের প্রার্থীরা শুধু ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের হাতেই লাঞ্ছিত ও নিগৃহীত হচ্ছেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাদের সাথে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করছে বলে প্রতিদিনই সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে হতাশা ও উদ্বেগ প্রকাশ করা সত্ত্বেও প্রকাশ্যে, এমনকি ঘোষণা দিয়ে আইনশৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমের মাধ্যমে নির্বাচনী পরিবেশ কলুষিত করার হীন প্রচেষ্টা কঠোরহস্তে দমনের পরিবর্তে নির্লিপ্তভাব নির্বাচন কমিশনকে পাথরের মূর্তিতে পরিণত করেছে। যেমনটি নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের প্রত্যাশিত ভূমিকা সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইসি থেকে বলা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের কার্যকরতার এ ধরনের দৃষ্টান্ত লজ্জাজনক ও অগ্রহণযোগ্য।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্বাচন কমিশনের অধীনে বিধায় নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে তাদের ব্যর্থতার দায় কমিশনের উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, নির্বাচনে সমান প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে কিছু ফাঁকা বুলি ছাড়া কোনো প্রকার ইতিবাচক দৃষ্টান্ত এখনো কমিশন স্থাপন করতে পারেনি, যা অত্যন্ত বিব্রতকর। অন্য দিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিও আমরা আহ্বান জানাই নিজেদের পেশাগত দায়দায়িত্বের ওপর শ্রদ্ধাবোধে সচেতন হয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে জনগণের আস্থা অর্জন করার।

ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে গণমাধ্যমের সরাসরি সংবাদ প্রচার না করার অনুরোধ সম্পর্কে ড. জামান বলেন, বিগত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে এ প্রথা চালু থাকলেও এবার নির্বাচনী কার্যক্রমে বিঘœ ঘটাবে এ ধরনের পরামর্শের পেছনে কী যুক্তি থাকতে পারে তা বোধগম্য নয়। ভোটকেন্দ্রে ফোন ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কমিশনের স্ববিরোধী অবস্থান কমিশনের দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। ফোন ব্যবহার করার মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত হতে পারে এই যুক্তিতে ফোনের ব্যবহার বন্ধ করা মাথাব্যথার কারণে মাথা কেটে ফেলার সমতুল্য। তদুপরি ফোন ব্যবহার বন্ধ করা বাস্তবে কোনো বিশেষ মহলের কার্যক্রম বিশেষ করে কারচুপি ও সহিংসতামূলক তৎপরতাকে সুরক্ষা প্রদানের নামান্তর কি না এ প্রশ্ন ওঠাও স্বাভাবিক। পাশাপাশি, নির্বাচনকালে গণমাধ্যমকর্মীদের স্বাধীন ও নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় গাইডলাইন প্রণয়নে অংশীজনদের সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান ড. জামান।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/373680