জাতীয় স্বার্থেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ছবি: যুগান্তর
১৯ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:২০

জাতীয় স্বার্থেই নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন প্রয়োজন

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার প্রকাশ করেছে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ও জোট। জাতীয় পার্টির ইশতেহারে অঙ্গীকারকৃত কিছু বিষয় আমার বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করায় আজ সেগুলো বিশ্লেষণ করতে চাই। আগামী দিনে প্রধান দুই দল/জোটের ইশতেহার নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা রইল।
১৪ ডিসেম্বর ঘোষিত ইশতেহারে আগামী দিনের সরকার পরিচালনায় জাতীয় পার্টির প্রথম অঙ্গীকার হচ্ছে দেশে সব ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা, সুষ্ঠু গণতন্ত্রের বিকাশ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠা। এ লক্ষ্য সামনে রেখে দলটি ১৮টি অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে।

ইশতেহারে ঘোষিত প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে রয়েছে- দেশের বর্তমান এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থা পরিবর্তন করে দুই স্তরবিশিষ্ট অর্থাৎ ফেডারেল ও প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা; দু’স্তরে অর্থাৎ কেন্দ্রে ও প্রদেশে সংসদ চালু করা; নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধান করা; পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন করা; বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ও প্রদেশ গঠন করা হলে প্রাদেশিক রাজধানীতে হাইকোর্ট বেঞ্চ বসান; শিক্ষাপদ্ধতির সংশোধন করা; শিল্প ও অর্থনীতির অগ্রগতি সাধন করা; কৃষিব্যবস্থার উন্নয়ন এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা; স্বাস্থ্যসেবা খাতের সম্প্রসারণ করা; সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; সন্ত্রাস দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া; ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করা; ধর্মীয় মূল্যবোধ জোরদার করা; পল্লী রেশনিং চালু করা; শান্তি ও সহাবস্থানের রাজনীতি প্রবর্তন করা; গুচ্ছগ্রাম ও পথকলি ট্রাস্ট পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা করা।
সরকারব্যবস্থা পরিবর্তন, দুই স্তরবিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তন, নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তন, উপজেলা ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও প্রদেশ পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ বসানোর মতো সুদূরপ্রসারী প্রতিশ্রুতিগুলো নিয়ে এ নিবন্ধে আলোচনা করা হল।

প্রথমে ইশতেহারের সরকারব্যবস্থা পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা যাক। বলা হয়েছে, দেশের বর্তমান ৮টি প্রশাসনিক বিভাগকে ৮টি প্রদেশে উন্নীত করা হবে। ৮টি প্রদেশের নাম হবে- উত্তরবঙ্গ প্রদেশ, বরেন্দ্র প্রদেশ, জাহাঙ্গীরনগর প্রদেশ, জালালাবাদ প্রদেশ, জাহানাবাদ প্রদেশ, চন্দ্রদীপ প্রদেশ, ময়নামতি প্রদেশ এবং চট্টলা প্রদেশ। দুই স্তরবিশিষ্ট সরকার কাঠামো চালু করা হবে।
দুই স্তরবিশিষ্ট সরকারব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হবে ফেডারেল সরকার। রাজধানী ঢাকা থেকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ সদর দফতর প্রাদেশিক রাজধানীতে স্থানান্তরিত হবে। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন, সরকার ও শাসনব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হল রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া।
এ বিষয়টি স্মরণে রেখে আমাদের পাশের প্রায় সব দেশসহ পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে ফেডারেল ও প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা চালু রয়েছে। ১৬ কোটির বেশি মানুষের বাংলাদেশে এককেন্দ্রিক সরকারব্যবস্থার রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো নিশ্চিত করা মোটেই সম্ভব নয়। ফেডারেল পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনে কেউ কেউ ব্যয় বৃদ্ধির যুক্তি তুলে ধরতে পারেন।
কেন্দ্রীয় তথা ফেডারেল সরকারের অনেক ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের কাছে হস্তান্তর এবং সংশ্লিষ্ট অফিসগুলো প্রাদেশিক সরকারের অধীনে ন্যস্ত করা হলে সাকুল্যে ব্যয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা খুবই কম। প্রবৃদ্ধির হার বাংলাদেশের তুলনায় কম এমন দেশেও ফেডারেল ও প্রাদেশিক সরকার পদ্ধতি চালু রয়েছে। নেপাল এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
জনসংখ্যা, ভৌগোলিক অবস্থান প্রভৃতি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশেও একাধিক প্রদেশ গঠন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রশাসনিক বিভাগ বহাল রাখার কোনো প্রয়োজন হবে না। প্রশাসনিক বিভাগগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় সরকারের তেমন কোনো ক্ষমতা হস্তান্তরিত না হওয়ায় এতে জনগণ খুব একটা উপকৃত হয়নি। প্রশাসনিক বিভাগগুলোর সংখ্যা বৃদ্ধি মূলত সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি ও পদোন্নতির সুযোগ বৃদ্ধি করেছে।
দুই. ইশতেহারে দু’স্তরে অর্থাৎ কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ে আলাদা আলাদা সংসদ চালুর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় তথা ফেডারেল সরকারে থাকবে ৩০০ আসনবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ। দ্বিতীয় স্তরের প্রাদেশিক সরকারে থাকবে প্রাদেশিক সংসদ। প্রতিটি উপজেলা কিংবা থানা প্রাদেশিক সরকারের এক একটি আসন হিসেবে গণ্য হবে।

এটি আসলে পাকিস্তান আমলের সংসদীয় ব্যবস্থার মতো, যেখানে জাতীয় সংসদসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য আলাদা আলাদা প্রাদেশিক সংসদ বিদ্যমান ছিল। তবে বর্তমানে দেশের অন্য দুটি বড় দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ এ বিষয়ে পরস্পরবিরোধী মত পোষণ করে।
বিএনপি রাষ্ট্রের এককেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ণ রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে বিভিন্ন সম্প্রদায়, প্রান্তিক গোষ্ঠী ও পেশার জ্ঞানীগুণী ও মেধাবী ব্যক্তিদের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করার পক্ষপাতী। ২০১৭ সালের মে মাসে ভিশন-৩০ ঘোষণার সময় বিএনপি এ অবস্থান নেয়।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ ব্যবস্থা চালুর বিপক্ষে। জাতীয় পার্টি কর্তৃক থানাকে উপজেলা এবং মহকুমাকে জেলায় পরিণত করার সুবিধা জনগণ ভোগ করছে। এখন সময় এসেছে দেশে একাধিক প্রদেশ এবং সংসদীয় ব্যবস্থা পুনর্বিন্যাস করে কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় সংসদ এবং প্রদেশে প্রাদেশিক সংসদ গঠনের।
তিন. জাতীয় পার্টির ইশতেহারে বলা হয়েছে, নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কার করে আনুপাতিক ভোটের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিধান করা হবে। আনুপাতিক ভোট ব্যবস্থার ফর্মূলা থেকে জানা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে জনগণের সামনে নিজ নিজ ইশতেহার উপস্থিত করবে।
একজন ভোটার যে দলের ইশতেহারে তার আশা-আকাক্সক্ষার প্রতিফলন দেখতে পাবে, সে দলের মার্কায় ভোট দেবে। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সে দল জাতীয় সংসদে তত শতাংশ সংখ্যক প্রতিনিধি পাঠাবে। অর্থাৎ ৩০০ আসনের সংসদে কোনো দল ৫০ শতাংশ ভোট পেলে ১৫০ আসনে প্রতিনিধি পাঠাবে, কোনো দল ১০ শতাংশ ভোট পেলে ৩০টি আসন পাবে ইত্যাদি।
রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহার ঘোষণার পাশাপাশি সংসদে আসন নেয়ার জন্য তাদের দলের প্রতিনিধিদের তালিকা অগ্রাধিকারক্রম অনুসারে নির্বাচনের আগেই দেশের জনগণকে জানিয়ে দেবে। নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোট অনুসারে যে কয়টি আসন সে দলের প্রাপ্য, তালিকার ক্রমানুসারে সে কয়জন সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত বলে গণ্য হবেন।

গণতন্ত্র চর্চায় সব শ্রেণীর মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব সিস্টেম একটি কার্যকর পন্থা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কেননা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের সুযোগ থাকলে ছোট ছোট দলের অনেক অভিজ্ঞ নেতাও জাতীয় সংসদে আসার সুযোগ পেতে পারেন। ইউরোপ ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশে এবং জাপান ও অস্ট্রেলিয়ায় এ সিস্টেম অনুসরণ করা হয়।
চার. ইশতেহারে বলা হয়েছে, উপজেলা আদালত ও পারিবারিক আদালতসহ পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা চালু করা হবে। স্থানীয় সরকার কাঠামো শক্তিশালী করে এবং নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের কাছে উপজেলার ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। উল্লেখ্য, আশির দশকে রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ কর্তৃক উপজেলা পদ্ধতির প্রবর্তন ছিল একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
১৯৮২ সালে একাধিক মহৎ উদ্দেশ্য সামনে রেখে স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন পুনর্গঠন) অধ্যাদেশের মাধ্যমে এর যাত্রা শুরু হয়। উদ্দেশ্যাবলির মধ্যে ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে গ্রামীণ স্থানীয় সরকারব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তরটিকে শক্তিশালী করে তৃণমূলে উন্নয়নের গতি সঞ্চার করা, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের ভিত্তি রচনা করা।
সরকারের বিভিন্ন অফিস ও আদালত স্থাপনের ফলে উপজেলাগুলো প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে এইচএম এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলে উপজেলা পদ্ধতি অকার্যকর হয়ে পড়ে। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার উপজেলা পদ্ধতি আবার চালু করলেও উপজেলা আইনে ২৫ ধারা অন্তর্ভুক্তির কারণে উপজেলা পরিষদ ঠুঁটোজগন্নাথে পরিণত হয়েছে।
ওই ধারায় বলা হয়েছে, স্থানীয় সংসদ সদস্য উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টা হবেন এবং পরিষদ তার পরামর্শ গ্রহণ করবে। ফলে পরিষদের কাজের ওপর স্থানীয় সংসদ সদস্যের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা আদালত ও পারিবারিক আদালতসহ পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা চালু করা হলে তা গ্রামীণ জনগণের জন্য বিরাট সুফল বয়ে আনবে।

পাঁচ. ইশতেহারে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা দেয়া হবে এবং প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে প্রত্যেক প্রদেশের রাজধানীতে হাইকোর্টের বেঞ্চ বসানো হবে। বাংলাদেশে বিচার বিভাগ কতটা স্বাধীন, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
অধস্তন আদালতে বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তিদের এবং বিচার বিভাগীয় দায়িত্ব পালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা নির্বাহী বিভাগের ওপর ন্যস্ত থাকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, যদিও সংবিধানে বলা হয়েছে, বিচার-কর্মবিভাগে নিযুক্ত ব্যক্তি এবং ম্যাজিস্ট্রেটরা বিচারকাজ পালনের ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকবেন। উচ্চ আদালতে, বিশেষ করে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের প্রবেশ পদ অতিরিক্ত বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো আইন না থাকায় এ পদে নিয়োগ ক্ষমতাসীন দলের খেয়াল-খুশির ওপর নির্র্ভরশীল।
উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগে দলীয়করণ রোধে উদ্যোগ গ্রহণ করে সেনা সমর্থিত বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন অর্ডিন্যান্স ২০০৮ জারি করেন। এতে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন গঠনের বিধান করা হয়।
আইনমন্ত্রী, আপিল বিভাগে কর্মরত বিচারকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে তিনজন প্রবীণতম বিচারক, হাইকোর্ট বিভাগে কর্র্মরত বিচারকদের মধ্য থেকে জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে দু’জন প্রবীণতম বিচারক, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিকে এ কমিশনের সদস্য করা হয়।
আপিল বিভাগে বিচারক পদে এবং হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারক পদে নিয়োগের জন্য নাম সুপারিশ করার জন্য এ কমিশনকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সুপ্রিমকোর্টের জনৈক অ্যাডভোকেট সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন গঠনকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন (রিট পিটিশন নং ৩২২৮/২০০৮) দাখিল করেন।

২০০৮ সালের ২৮ এপ্রিল হাইকোর্ট ব্যাখ্যা চেয়ে সরকারের ওপর রুল জারি করেন এবং সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশনের কার্যকারিতা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন। রিট পিটিশনটি চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নবম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং ওই নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে সরকার গঠন করে। ওই সরকার সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন অর্ডিন্যান্স-২০০৮ অনুমোদনের জন্য সংসদে উপস্থাপন করা থেকে বিরত থাকে। ফলে সেটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।
সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী আইন ১৯৮৮-এর দুটি মূল বিষয় ছিল- রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতি দান এবং ঢাকার বাইরে ৬টি জেলায় হাইকোর্র্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন। প্রজাতন্ত্রের এককেন্দ্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সুপ্রিমকোর্ট ঢাকার বাইরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করলেও রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতিদান বহাল রাখে। প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে প্রত্যেক প্রদেশের রাজধানীতে হাইকোর্টের বেঞ্চ বসানো গেলে তা জনগণের বিশেষ উপকারে আসবে। সুদূর টেকনাফ বা তেঁতুলিয়ার কোনো বিচারপ্রার্থীকে উচ্চ আদালতে বিচার পাওয়ার জন্য ঢাকা আসতে হবে না।
উপর্যুক্ত প্রতিশ্রুতিগুলো জাতীয় পার্টির ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত হলেও দলমত নির্বিশেষে এগুলোর বাস্তবায়নে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা হওয়া প্রয়োজন। এগুলোর বাস্তবায়ন দেশ ও জাতির জন্য সুফল বয়ে আনবে।
আবদুল লতিফ মন্ডল : সাবেক সচিব, কলাম লেখক, latifm43@gmail.com

 

https://www.jugantor.com/todays-paper/window/123542