১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, সোমবার, ১১:২২

বিভিন্ন স্থানে অবরুদ্ধ ধানের শীষের প্রার্থীরা

ভোটে হানাহানির শঙ্কা

নির্বাচন দোরগোড়ায়। অথচ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। উপরন্তু নানামুখী শঙ্কা ও ভয়ভীতি বাসা বাঁধছে। এখনো ভোট হবে কিনা এই অনিশ্চয়তা জোরালো হচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি সঙ্ঘাতপূর্ণ। হানাহানির আশঙ্কা প্রবল। চারিদিকে ধ্বণিত হচ্ছে অশনি সঙ্কেত। ভোট রাজনীতির আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। ভোটযুদ্ধ হয় উপভোগের। তা না হয়ে দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে স্নায়ুচাপ ও উদ্বেগ-উৎকন্ঠা বাড়ছে। পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ মারাত্মক। ধরপাকড় বন্ধ হয়নি।
দেশের বিভিন্নস্থানে গুলি, বোমা, হামলা, ভাঙচুর, মারপিটসহ অসংখ্য ঘটনা ঘটেছে একের পর এক। সাধারণ মানুষ এসব পছন্দ করছেন না। তাদের প্রত্যাশা, ভোটের ময়দান হবে সমতল, সমান সুযোগের এবং স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দের পরিবেশ বিরাজ করবে। সবাই চায় সঙ্ঘাতমুক্ত একটা নির্বাচন। মাঠের বর্তমান অবস্থায় একতরফা ব্যাটিংয়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবার আশঙ্কাকে উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। দেশের সিংহভাগ এলাকায় ভোট উৎসবের মাপক যন্ত্রে পারদ একেবারেই নিম্নমুখী। বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে সতর্কবার্তা। ভোটের দিনের পরিবেশ কোনদিকে মোড় নেবে তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল।

সচেতন ও বোদ্ধা ভোটাররা পরিস্থিতি তীক্ষè দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছেন। ভোটারদের কথা, এবারের ভোট নিয়ে মানুষের প্রচন্ড আগ্রহ। বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো তারা ভোটকেন্দ্রে ছুটে যাবেন। বিশেষ করে নির্দল ও নতুন তরুণ ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ভোট পন্ডিত ও সচেতন মহলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক সংস্কৃতি, শিষ্টাচার, সহনশীলতা, সহমর্মিতার সঙ্গে অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইসিকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের ব্যুরো ও অঞ্চলিক অফিস থেকে পাঠানো তথ্যে দেশের সামগ্রিক চিত্র উঠে এসেছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, নির্বাচন নিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলে জনমনে শঙ্কা-নিরাপত্তাহীনতা এবং সন্দেহ-সংশয় বেড়ে যাচ্ছে। বিএনপি জোটের প্রচারণাসহ নির্বাচনমুখী কর্মকান্ড কৌশলে সীমিতকরণ ও নিয়ন্ত্রণের টার্গেট রেখে পুলিশি হয়রানি চলছে। বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনগুলোর কর্মীদের বাধা-বিপত্তি, হামলার ঘটনা ঘটছে। এতে করে দ্বিমুখী আতঙ্ক ও ভীতিকর অবস্থা তৈরি হয়েছে।
ড. কামাল হোসেন, মির্জা ফখরুলের গাড়িতে হামলা, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনায় শাসক জোটের প্রতি চট্টগ্রামের মানুষও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। তবে জনমনে ভয়-ভীতিও বেড়েছে। বিএনপি জোটের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা হয়রানি ও ভীতির মুখে এখনো পুরোদমে মাঠে নামতে পারেনি। অনেকেরই ধারণা, ২০ ডিসেম্বরের পর (এমনকি তা ২৪ বা ২৫ ডিসেম্বরের পরও হতে পারে) যদি বিএনপি জোট তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে গণজোয়ার বা ‘টেম্পু’ ওঠে তাহলে নারী-পুরুষ ভোটাদের ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। স্বতঃস্ফূর্ত ও ব্যাপক হারে ভোটাধিকার প্রয়োগ হলে তাতে ব্যালট বিপ্লব ঘটতে পারে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন আলামত পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১৯টি আসনে ভোটের মাঠে বাধাহীন প্রচারণা ও গণসংযোগে এগিয়ে আওয়ামী লীগের মহাজোট। তা সত্তে্ব ও ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের ঠিক আগেভাগেই বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে সম্ভাব্য গণজোয়ারের ভয় করছে ক্ষমতাসীন জোট। অনেক আসনে জয়লাভের ব্যাপারে নিজেরাই সন্দিহান।

অন্যদিকে বিএনপি জোটের প্রার্থী ও কর্মীরা ভয়-ভীতির মধ্যেই সংগঠিত হয়ে প্রচারণা, গণসংযোগে তৎপর হয়ে উঠছেন। তবে গায়েবি মামলা, হুলিয়া, ধরপাকড়, তল্লাশি, বাড়িঘর ও ব্যবসায়-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানে হানা, গোয়েন্দা নজরদারিসহ বিভিন্ন উপায়ে পুলিশ তাদের হয়রানি করছে। তাছাড়া জেলার ৬টি আসন ও পার্বত্য খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা বিএনপি জোটের প্রচারসভা-মিছিলে বাধা, কর্মীদের ওপর হামলা করছে। চট্টগ্রামের অর্ধেক আসনে পুলিশি হয়রানি, আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের হুমকি-ধমকি ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এক্ষেত্রে পুলিশসহ প্রশাসন সার্বিকভাবে দলবাজির ভূমিকায়। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা এবং প্রশাসনের ওপর নিয়ন্ত্রণ দৃশ্যমান নয়।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী অঞ্চলে নির্বাচনী সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে। প্রতিদিনই বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর, ব্যানার পোস্টার কেটে ফেলা, বিএনপির প্রচার প্রচারকর্মীদের হুমকি ধামকিতে নির্বাচনী পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রচারণার শুরুতেই রাজশাহী সদর আসনের প্রার্থীর নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে দেয়া হয়। ছিঁড়ে ফেলা হয় পোস্টার ব্যানার, যা অব্যাহত রয়েছে বলে বার বার নির্বাচনী এজেন্ট রিটার্নিং অফিসারের নিকট অভিযোগ করছে। কোন প্রতিকার না হওয়ায় দুর্বৃত্তরা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। রাজশাহীর পবা মোহনপুর এলাকায় পোস্টার ছিঁড়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ব্যানার কেটে ফেলেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। নওহাটা ব্রীজের ওপর এ ঘটনা ঘটে। এই অবস্থায় যদি ঐক্যফ্রন্ট রুখে দাঁড়ায় তাহলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ।
রাজশাহীর পুঠিয়ায় বিএনপি প্রার্থী নাদিম মোস্তফার নির্বাচনী অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়। রাজশাহীর বাঘা চারঘাটে পোস্টার ছেঁড়া ছাড়াও প্রচারণার মাইক পুকুরে ফেলে দেয়া হয়। বাগমারায় শুরুতেই জি-২০ গ্রুপের হামলার শিকার হয় বিএনপিকর্মীরা।
নাটোরের অধিকাংশ এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঠে নামতে গেলে হামলার শিকার হতে হচ্ছে। পোস্টার ব্যানার ঝোলাতে বাধা দেয়া হচ্ছে। বিএনপি সদর আসনের প্রার্থী সাবিনার প্রচারণার অটোরিক্সা মাইক ভাঙচুর করা হয়। নাটোর এ আসনে বিএনপির নেতাকর্মীদের হাতুড়িপেটা করা হয়। খড়মপুর, শাহবাজপুর, বাহাদুরপুর গ্রামে প্রচারণার মাইক ভাঙচুর করে আওয়ামীলীগ কর্মীরা। বড়াইগ্রামের জোনাইল এলাকায় আব্দুল মজিদ গণসংযোগ করতে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হন। তাকে বহনকারী মাইক্রোবাসের চাবি কেড়ে নেয়া হয়। বাগডোবা ও রোগভা বাজারে নিজ দোকানে বসা অবস্থায় দুই বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে আহত করে। নওগার রাণীনগরে পারইল ইউপির বাগারবাড়ি বাজারে বিএনপির নির্বাচনী ক্যাম্পে হামলার ঘটনা ঘটে। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে সহিংসতা। যা মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলেছে।

যশোর ব্যুরো জানায়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মোট ৩৬টি আসন এলাকায় এখনো সার্বিক পরিস্থিতি খুব একটা সুখকর নয়। ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে, চলছে ধর-পাকড়। বিরোধী প্রার্থীর লোকজনকে ভোটের মাঠে নামতে বাধা দেয়া হচ্ছে। এ অঞ্চলের ১০ জেলার অধিকাংশেই একতরফা হামলা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। যশোরে ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলামকে হত্যা প্রচেষ্টা, তার পথসভার ১শ’ গজ দূরে বোমা হামলা করে ত্রাস সৃষ্টি, নির্বাচনী কার্যালয়, প্রচার মাইক ভাঙচুর ও পোস্টার ছিঁড়ে পোড়ানোর একাধিক ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভয়-ভীতি দেখনো হচ্ছে।

যশোর ছাড়াও চৌগাছা, কেশবপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ, চুয়াডাঙার জীবননগর ও সাতক্ষীরার প্রায় সবখানে ত্রাস সৃষ্টি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, ধরপাকড়, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে। একতরফা ব্যাটিং রুখে দেওয়ার মানসিকতা তৈরী হচ্ছে, যাতে ভয়াবহ পরিস্থিতি দাঁড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিরোধী প্রার্থীরা দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের উদ্দেশে বলতে শুরু করেছেন ‘আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, আর ঘরে থাকলে চলবে না, প্রতিরোধ ড়ড়ে তুলতে হবে’। ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের কথা, ‘ডু অর ডাই মানসিকতা নিয়ে আমরা আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নামছি’। মহাজোটের নেতাকর্মীদের কথা, ‘আমরা মাঠে আছি, কমে ছেড়ে দেব না’। অধিকাংশ মানুষই সঙ্ঘর্ষ-সঙ্ঘাতের দিকে ধাবিত হওয়া ভোট রাজনীতির বর্তমান পরিবেশ উত্তরণ ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির ব্যবস্থা কীভাবে করা যায় তার উপায় খুঁজে বের করতে বলেছেন। একজন সরকারী কর্মকর্তা বললেন, ‘টোটাল সিচুয়েশন ইজ এলার্মিং’।

যশোর, খুলনা, কুস্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গত কয়েকদিন বিভিন্ন পন্থায় খোঁজখবর নিয়েছি। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে চায়ের দোকানে ভোট রাজনীতি নিয়ে আলোচনা চলছে। কোথাও একপক্ষীয় প্রচার হচ্ছে আবার কোথাও বা পক্ষে-বিপক্ষে তর্কবিতর্ক হচ্ছে সমানে। তবে শহর গ্রাম মহল্লায় অধিকাংশ ভোটারদের মাঝে একরকম নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। পরিষ্কার ধারণা পাওয়া গেছে, তারা যা কিছু করবেন নীরবে। বেশ কিছু তরুণ নতুন ভোটার ও মহিলা ভোটারের সঙ্গে আলাপ করে তাদের মানসিকতা জেনেছি। তারা বলেছেন, আমরা ভোটকেন্দ্রে যাব। ভয়-ভীতি উপেক্ষা করেই যোগ্য প্রার্থীকে দেখেশুনে ভেবেচিন্তেই ভোটটা দেব।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার ২১টি সংসদীয় আসনের ভোটারসহ সাধারণ মানুষ একটি নিষ্কলুষ ও অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সেনাবাহিনীর অপেক্ষায়। গত কিছুদিন ধরে দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকাতেই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনী পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিপর্যস্ত। এ অঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকাতেই পুলিশ ক্ষমতাসীন মহাজোটের বিরোধী দলকে তাদের প্রতিপক্ষ ধরে নিয়ে কাজ করছে বলে অভিযোগ। প্রশাসনও অনেক ক্ষেত্রে নির্বিকার। বিরোধী জোটের কর্মীদের ওপর মহাজোটের কর্মী বাহিনীর হামলা আর পুলিশ প্রশাসনের মামলায় নির্বাচনী পরিবেশ ক্রমশ একতরফা হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক এলাকার প্রার্থীরা পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায়।
ফলে বিরোধী জোটের নেতাকর্মী থেকে সাধারণ মানুষ দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর প্রতীক্ষায় রয়েছেন। কারণ সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি না হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা বাড়ছে। ভোটের মাত্র ১২ দিন বাকি থাকলেও এখনো বেশ কয়েকটি এলাকায় সব প্রার্থী যেতেই পারেননি। অনেক এলাকার প্রার্থীরা নিজ গ্রামে ও বাড়ীতে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এসব প্রার্থীর অবাধ চলাফেরাসহ ভোট প্রচারণায় পুলিশ প্রশাসন কোন সহায়তা করছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। ভোলা-২ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী হাফিজ ইব্রাহিম গতকাল রোববার পর্যন্ত এলাকায় যেতে পারেননি। অনেক বাধা বিপত্তির পরে গত শনিবার ভোলা-৩ আসনের প্রার্থী মেজর(অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম লালমোহনে পৌঁছার পর দফায় দফায় তার বাড়ীতে হামলা হয়েছে। তিনি এখনো তার বাড়ীতে অনেকটাই অবরুদ্ধ হয়ে আছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

বরিশাল-১ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জহিরুদ্দিন স্বপন মাত্র পাঁচ দিন আগে এলাকায় ফিরে শরিকলের নিজ বাড়ীতে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। কর্মীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে রাতের আঁধারে মুখোশধারীরা সতর্কবার্তা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। পটুয়াখালী-১ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী অলতাফ হোসেন চৌধুরীর পক্ষে যারাই কাজ করছেন তাদের ওপর হামলা চলছে। এমনকি ঐসব কর্মীর বাসা-বাড়ীতে পর্যন্ত হামলার অভিযোগ রয়েছে। বাউফলে পটুয়াখালী-২ আসনের প্রার্থী ভোটের চেয়েও ভোটার ও তার কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। পটুয়াখালী-৩ আসনে গোলাম মাওলা রনির গাড়ীসহ তার পরিবারের ওপরও হামলার ঘটনা ঘটেছে। পটুয়াখালী-৪ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। তাকে বিভিন্ন এলাকাতে সভাসহ নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে দেয়া হচ্ছে না।
ঝালকাঠী-২ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী জেবা আমীন খান ঢাকা থেকে আকাশ পথে বরিশাল বিমানবন্দর হয়ে নিজ এলাকায় পৌঁছেন। তার নির্বাচনী এলাকাতেও প্রতিদিনই তার গাড়ী বহরে হামলার ঘটনা ঘটছে। এ নারী প্রার্থী অনেকটাই নিরাপাত্তাহীন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঐক্যফ্রন্টের এ প্রার্থীর ওপর লাগাতর হামলা চালিয়ে তার গুরুত্ব বৃদ্ধিসহ জনসমর্থনও বৃদ্ধি করছে মহাজোটের কর্মীরা। এ মন্তব্য রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলসহ এলাকার সাধারণ ভোটারদের।
নোয়াখালী ব্যুরো জানায়, যাদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হবে, সেই ভোটাররা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। তাদের প্রশ্ন, নির্বাচনী প্রচারণার নামে কী হচ্ছে? আগামী কয়েকদিন পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? জনসাধারণ নিশ্চিন্তে নির্বিঘে্ন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি? এসব প্রশ্ন উঠেছে। দলীয় প্রতীক বরাদ্দের দিন থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সহিংসতা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতদিন নোয়াখালী-১ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ি একাংশ) আসনে নির্বাচনী পরিবেশ মোটামুটি ভাল ছিল। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বর সকালে বিএনপি প্রার্থী জয়নুল আবদীন ফারুকের গাড়ি ও বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর এবং উপজেলা চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন হামলায় আহত হওয়ার মাধ্যমে সেনবাগের ভোটাররাও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।

নোয়াখালী-৫ (কোম্পানীগঞ্জ-কবিরহাট) আসনে বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ শুরু থেকে অবরুদ্ধ রয়েছেন বলে গত শনিবার জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনের সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, সরকারী দলের প্রার্থী রাজকীয়ভাবে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে, অথচ কোথাও বিএনপির পোস্টার, মাইকিং কিংবা নির্বাচনী অফিস নেই। একাধিক মামলায় ইতোমধ্যে ২৫ জনকে আটক করা হয়েছে। কবিরহাটসহ বিভিন্ন স্থানে হামলায় দুই শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে আহত ও ৪০টি গাড়ি, ঘরবাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, সরকারী দলের সন্ত্রাসীরা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে আগেকার ক্রুসেড তীব্রতর করেছে। শনিবার বিকেলে নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ি একাংশ) আসনের বিএনপি প্রার্থী বারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন গুলিবিদ্ধ হন। তার পিঠে ৫টি ও উরুতে ১টি গুলি লেগেছে। বর্তমনে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এর আগে উক্ত আসনে দুইবার প্রতিপক্ষের হামলার শিকার হন ব্যারিস্টার খোকনসহ প্রচারকর্মীরা। হামলায় বেশ কয়েকটি দোকানপাট ভাঙচুর হয়।
নোয়াখালী-৪ (সদর-সূবর্ণচর) আসনের সদর পশ্চিমাঞ্চলের এওজবালিয়ায় সন্ত্রাসী হামলায় যুবলীগের এক স্থানীয় নেতা নিহত ও দুই জন আহত হয়। এ ব্যাপারে ৩৬৪ জনসহ অজ্ঞাত সংখ্যককে আসামী করে সুধারাম থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ আসনে বিএনপিপ্রার্থী মোহাম্মদ শাহজাহান অভিযোগ করেন যে, তিনি এবং তার নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্থ হচ্ছেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন, স্থানীয় যেসব নেতা তার সাথে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন, তাদের অনেকেকে পুলিশ আটক করেছে। হামলা, মামলা পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে শত শত নেতাকর্মী এলাকাছাড়া। এসব বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং অফিসার এবং পুলিশ সুপারকে অবহিত করলেও ফলোদয় হচ্ছে না বলে তিনি জানান।

বগুড়া ব্যুরো জানায়, নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে বগুড়ায় এ পর্যন্ত ৩টি নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ২ জন এমপিপ্রার্থীর দুটি গাড়ি ও তাদের সমর্থকদের ২০টি মোটর বাইক ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপির একটি দলীয় কার্যালয়ে রাতের আঁধারে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়া-৫ সংসদীয় আসনের ধুনট পৌরসভা এলাকায়। ওই আসনের এমপি পদপ্রার্থী জিএম সিরাজ নির্বাচনী প্রচারণা বহর নিয়ে ঘটনার দিনে ধুনট বাজারে পৌঁছানোর সাথে সাথেই প্রতিপক্ষের একদল অস্ত্রধারী শত শত মানুষের সামনে গাড়িবহরে হামলা করে ১টি জীপ, ১টি মাইক্রো, ২০টি মোটর বাইক ভাঙচুর করে। হামলকারীরা দুটি মোটর বাইক আগুনে পুড়িয়ে দেয়। ঘটনার এক সপ্তাহ পরও পুলিশ কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ জিএম সিরাজের। অন্য ঘটনায় বগুড়া-১ সংসদীয় আসনের সারিয়াকান্দী পৌর বিএনপির কার্যালয়ে রাতের আঁধারে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এছাড়াও অন্য একটি ঘটনায় ধুনট উপজেলা যুবদলের কর্মী মুরাদ হোসেনের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। এই ঘটনাবলীর পর বগুড়া ১ ও ৫ সংসদীয় সংসদীয় আসনের ভোটারদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে।

সিলেট ব্যুরো জানায়, শাসক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে বড় কোন টেনশন গায়ে মাখে না বিরোধী দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ ভোটাররা। তাদের একটিই মাথাব্যথা প্রশাসনের ভূমিকা। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেই বাস্তবতা দেখছে আপামর ভোটার। সুরক্ষার স্থানে নির্ভরতা হারায়, চরম নিরাপত্তাহীন হয়ে উঠেছিল মানুষ। প্রশাসনের সামনে বেপরোয়া ছিল নৌকার ক্যাডাররা। ব্যালটবাক্স ছিনতাই, বিরোধী এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার ঘটনায় পুরোদমে কোণঠাসা ছিল তারা। সেই ঘটনা নিয়ে অভিযোগ দেয়ার কোন সুযোগ পায়নি বিতাড়িত এজেন্টরা। পরিকল্পনা অনুযায়ী কেন্দ্রে কেন্দ্রে একচ্ছত্র আধিপত্য গড়ে তুলেছিল শাসক দলের নেতাকর্মীরা। তারা বিরোধী ভোটারদের কোন পাত্তাই দেয়নি। একই পেক্ষাপট জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ঘটনার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না সাধারণ ভোটারদের পাশাপাশি বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা। বিরোধী দলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের কেন্দ্র টার্গট করে গ্রেফতর চলছে দেদারসে। প্রতিনিয়ত টেনশনে রাখা হচ্ছে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের। যেখানে ধানের শীষের অবস্থান সুসংসত, সেই সেন্টারে নৌকার পক্ষে সুযোগ সৃষ্টি করতে বিরোধী নেতাকর্মীদের চাপে রাখার চেষ্টা চলছে। নৌকার নির্বাচনী ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটির আহবায়কদের পক্ষ থেকে ইনফরমেশন তুলে দেয়া হচ্ছে প্রার্থীদের কাছে। এমনকি প্রশাসনের নিকট তুলে ধরে কেন্দ্রে নিরঙ্কুশ আধিপত্য গড়ে তোলার জন্য বিরোধী নেতাকর্মীদের এলাকাছাড়া বা গ্রেফতার করানোর চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপি সমর্থিত বা সক্রিয় স্থানীয় একাধিক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে, মনোবল ভাঙার চেষ্টা চলছে। এছাড়া মহাজোটের নেতাকর্মীরা ভোটারদের নিকট ভোটের চেয়ে আবার ক্ষমতায় আসছে মহাজোট সেই ম্যাসেজ প্রকাশ্যে তুলে ধরছে। যাতে করে, মনস্তাত্তি¡ক চাপে ভূগছে ভোটাররা। এর মধ্যে দিয়ে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা চলছে ভোট কেন্দ্রে গমনে। সব মিলিয়ে, নির্বাচনী আমেজ কালো মেঘের ঘনঘটায় ঢাকা পড়ছে। কী হচ্ছে, কী হবে এই ভাবনা কুরে কুরে খাচ্ছে সাধারণ ভোটারদের। শঙ্কা, আশঙ্কা কত প্রকার ও কী কী সব এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে বিরোধী দলের ভোটারদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটাররাও। মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি সালেহ আহমদ খসরু বলেন, ভোট উৎসব এখন অজানা আশঙ্কায় পড়েছে। ঘরে ঘুমাতে পারি না, কখন গ্রেফতার হই। আমাদের নিয়ে পরিবার পরিজনের চরম টেনশন। এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছি আমরা। ভোটের আগে সরকার দলের নেতাকর্মীদের মন-মেজাজে গরম ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। সেই ভাব ভোটের দিন থাকলে প্রতিরোধ করার বিকল্প নেই। সেই বিকল্প নিয়ে আমরা পকিল্পনায় আছি।
ব্যবসায়ী আব্দুল মজিদ বলেন, কাস্টমারদের জিজ্ঞেস করলেই বলেন, ভোট তো দিমু, কিন্তু নৌকার লোকজনের মারমুখী ভাব ট্যাকল দিবে কে। এই মুহূর্তে নির্বাচন নিয়ে নতুন এক নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে সিলেটে আপামর মানুষের মধ্যে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে খুলনাঞ্চল জুড়ে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একদিকে যেমন প্রচার জমে উঠেছে, অন্যদিকে চলছে সহিংসতাও। নির্বাচনের যতই দিন ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে উত্তাপ। খুলনা ৩, ৪, ও ৫ আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি-ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর ছুঁড়ছে। এতে করে ভোটারদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে শঙ্কারও। নিরাপদে ভোটদান করতে পারবে কি না তা নিয়ে ভোটারদের মনে জাগছে শঙ্কা।
বিএনপিপ্রার্থী ও সমর্থকদের ওপর প্রায় প্রতিদিনই হামলা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি কর্মীদের প্রচারে দেখলেই মারধর করা হচ্ছে। তবুও বিএনপি মাঠ ছাড়েনি। চালিয়ে যাচ্ছে প্রচারণা। এদিকে, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট ডাকাতির নায়কেরা আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এবং নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার স্বাভাবিক পরিবেশ বিনষ্ট করছে বলে অভিযোগ করেছেন খুলনা মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ। ধানের শীষ প্রতীকের কর্মীদের বাধা প্রদান, মারপিট, পোস্টার কেড়ে নেয়া, ছিঁড়ে ফেলা, ঘরবাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকিসহ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অসংখ্য ঘটনায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার মিলছে না বলে তাদের অভিযোগ। এসব কারণে বিএনপির মনোভাব তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন রুখে দাঁড়ানোর।
খুলনা মহানগর বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেন, খুলনা-২ আসনের ২১, ২২, ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩০ নং ওয়ার্ডে চিহ্নিত আওয়ামী ক্যাডাররা প্রতিনিয়ত বিএনপির কর্মীদের হুমকি প্রদান ও মারপিট করে পোস্টার লিফলেট বিনষ্ট করছে। ২৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির এক কর্মীকে মারপিট করলে রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। এ অপরাধে তাকে দ্বিতীয় দফায় মারপিট করে সন্ত্রাসী রাজু মল্লিক ও রব। ৩০ নং ওয়ার্ডের টুটপাড়া খালপাড় এলাকায় এক বিশেষ সন্ত্রাসী বহু মামলার আসামী যার নামের অদ্যাক্ষর ‘ব’, তার বাহিনী নিয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। শুক্রবার জুমার পর টুটপাড়া হাজীবাগ মসজিদ ও তালতলা মসজিদের সামনে ধানের শীষের লিফলেট বিতরণের সময় কেড়ে নেয়া হয়। এখানে সজীব মোল্লা নামে এক বিএনপির কর্মীকে মারপিট করা হয়।
দিনাজপুর আঞ্চলিক অফিস জানায়, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মনোনয়ন ফিরে পেলেও নির্বাচন কমিশনের আপিলের কারণে দিনাজপুর, নীলফামারী ও পঞ্চগড়ে শেষ মুহূর্তে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন হলেও আপিলের মাধ্যমে আসনগুলিকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীশূন্য ঘোষণার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ট একটি সূত্র বলছে, এবারের নির্বাচন করবে পুলিশ ও প্রশাসন। দলীয়ভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানোর মাধ্যমে আন্তজার্তিক মহলে প্রতিদ্বদ্বন্বিা তাপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের চিত্র ফুটিয়ে তোলার দায়িত্ব দলের। এ কারণে মাঠে আওয়ামী লীগের ব্যাপক প্রচারণা চললেও পুলিশি নির্যাতন অব্যাহত রয়েছে। আওয়ামী লীগ নেতারা সরাসরি নির্দেশনা দিচ্ছেন ওসিকে। যাকেই মনে হচ্ছে তাকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে দলীয় নির্দেশে। দিনাজপুর কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বদলি দাবি করেছে ঐক্যফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ। এছাড়া দিনাজপুর-১ ও দিনাজপুর-৬ আসনে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করা জামায়াত নেতাদের প্রচারণা চালাতে দেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।

দিনাজপুর-২, ৩, ৪ ও ৫ আসনের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা সংবাদ সম্বেলন করে অভিযোগ করেছেন যে, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে আমাদের প্রতিপক্ষ পুুলিশ। অফিসের সামনে, বাড়ীর সামনে এমনকি নির্বাচনী প্রচারণা ও সমাবেশে হঠাৎ পুলিশের উপস্থিতি। এর মাধ্যমে কেবল কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। তবে তাদের বিশ্বাস ২০ ডিসেম্বরের পর পুলিশও পরিস্থিতি বুঝে এই ভুলগুলো করবে না।
এদিকে পুলিশ ও প্রশাসনের নিপীড়নমূলক আচরণে ভোটারদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ভোট আদৌ হবে কি না। শেষ মুহূর্তে সরকারই সু-কৌশলে ভোট বানচাল করে দেয় কি না। ঐক্যফ্রন্ট সাবধানে পা বাড়াচ্ছে। নেতাকর্মী এমনকি ভোটাররাও মনে করছে, সেনাবাহিনী মাঠে নামলে পরিস্থিতি পাল্টে যাবে। গড়ে উঠতে পারে পুলিশের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। তবে প্রতিরোধ গড়ে উঠলে সার্বিক পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে চিন্তিত সচেতন মহল।
পঞ্চগড়-২ আসনে শেষ মুহূর্তে মরহুম শফিউল আলম প্রধানের কন্যার জায়গায় ফরহাদ আজাদকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ প্রচারণা চালালেও ধানের শীষের প্রচারে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সহিংস ঘটনা ঘটেনি। ঠাকুরগাঁও-১ আসনে মির্জা ফকরুলকে শত কারচুপি করেও ঠেকানো যাবে না। মির্জা ফকরুলের গাড়ীবহরে হামলার পর বিএনপি কর্মীদের প্রতিরোধের পর থেকে হামলা বন্ধ রয়েছে। তবে নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ধানের শীষের গণজোয়ার ততই বাড়ছে। রংপুরের ৬টি আসন মূলত মহাজোটের নিয়ন্ত্রণে থাকায় এই জেলায় সেরকম কোন সহিংস ঘটনা ঘটছে না। তবে ভোটারদের মধ্যে আদৌ ভোট হবে কিনা এ ব্যাপারে ব্যাপক আশঙ্কা বিরাজ করছে। নীলফামারীর অবস্থা ‘দিলে বাধা আসবে প্রতিরোধ’ স্লোগানে পুলিশ কিছুটা নিরপেক্ষ অবস্থানে রয়েছে বলে সচেতন মহল মনে করছে।

কক্সবাজার আঞ্চলিক অফিস জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যতই ঘনিয়ে আসছে কক্সবাজারের শান্ত পরিবেশ ততই অশান্ত হয়ে উঠছে। এতে করে ভোটারদের বাড়ছে উদ্বেগ উৎকন্ঠা, বাড়ছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে মাঠ, ঘাট, শহর-বন্দর সর্বত্রই শুরু হয়েছে জমজমাট প্রচারণা। কিন্তু নৌকার প্রার্থীরা দাপটের সাথে প্রচারণায় নামলেও ধানের শীষের কর্মীরা আছেন এখনো হামলা, মামলা ও ধরপাকড়ের ভয়ে। এতে করে প্রতিপক্ষের আঘাত রুখে দাঁড়ানোর মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। গত এক সপ্তাহে কক্সবাজারের চারটি নির্বাচনী এলাকায় নৌকা-ধানের শীষ সঙ্ঘাত সঙ্ঘর্ষে আহত হয়েছে ধানের শীষের তিন শতাধিক নেতা-কর্মী। ভাঙচুর হয়েছে অর্ধশত ধানের শীষের অফিস। পুলিশ একতরফা গ্রেফতার করেছে ধানের শীষের শ’খানেক কর্মী-সমর্থককে।
বিভিন্ন স্থানে প্রাচারণায় ধানের শীষের প্রার্থী ও কর্মীদের বাধা দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এ যেন ধানের শীষের জোয়ার ঠেকাতে মরিয়া নৌকা সমর্থকরা। রামু উপজেলার খুনিয়াপালং ইউনিয়নে বিএনপি দলীয় প্রার্থী লুৎফুর রহমান কাজলের প্রচারগাড়ি ও মাইকের গাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। হামলায় প্রচারকাজে থাকা দুই কর্মী আহত হয়েছে বলেও জানা গেছে।
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিস জানায়, ময়মনসিংহের ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে কমপক্ষে ১০টিতে এখন পর্যন্ত সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থীরা। হামলা-হুমকি সত্তে¡ও সাহস করেই ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। বেশ কয়েকটি আসনে রীতিমতো ধানের শীষ প্রতীকের জোয়ার উঠেছে। মূলত এতে করে বেসামাল হয়ে উঠেছেন প্রতিপক্ষের প্রার্থীরা, এমন অভিযোগ ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের। হুমকি উপেক্ষা করে মাঠে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী-কর্মী-সমর্থকরা।

ফেনী আঞ্চলিক অফিস জানায়, ফেনীর ৩টি আসনে বিরোধী পক্ষের লোকজনকে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। ফেনী-২ সদর আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি নির্বাচন করছেন। তিনি প্রার্থী হওয়ার পর থেকে বিভিন্নভাবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি ও হুমকি ধামকির শিকার হচ্ছেন। তার বাড়ীতে নিজাম হাজারীর নেতাকর্মীরা প্রতিদিন ইট পাটকেল নিক্ষেপ, গুলি ছুড়ে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে বলে এবং তার বাসায় নেতাকর্মীরা এলে তাদেরকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে বলে সংবাদ সম্মেলন অভিযোগ করেন ভিপি জয়নাল। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গেলে আ’লীগপ্রার্থী নিজাম হাজারীন নেতাকর্মীরা তাকে বিভিন্নভাবে বাধা দিচ্ছেন। একদিকে দলীয় নেতাকর্মীরা, অন্যদিকে প্রশাসন মিলে বিএনপি প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করছেন। প্রতিপক্ষের আঘাত রুখে দাঁড়ানোর চিন্তা-ভাবনা করছেন বলে জানান ধানের শীষের কর্মী-সমর্থকরা।

 

https://www.dailyinqilab.com/article/172958