১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, সোমবার, ১১:১৯

নির্বাচনের আগে টান পড়েছে রিজার্ভ-রেমিট্যান্সে

দেশে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রধান দুই সূচক রিজার্ভ ও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে টান পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নভেম্বর মাসে প্রবাসীরা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স ৩ শতাংশ কম পাঠিয়েছে। সর্বশেষ গত নভেম্বর মাসে ১১৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছে, যা ২০১৭ সালের একই সময়ে ছিল ১২১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার। এ ছাড়া এ বছরের অক্টোবরের চেয়েও নভেম্বরে প্রবাসী আয় কমেছে ৫.১৬ শতাংশ। রেমিট্যান্সসহ অন্য খাতেও ধীরগতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়নেও (রিজার্ভ) টান পড়েছে। গত সপ্তাহে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩০.৯৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬ সালের পর রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামেনি।
সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১.৩৫ বিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ১৩৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। আমদানি বাড়ার কারণেও রিজার্ভে চাপ পড়েছে বলে মনে করেন অনেকেই।
অর্থনীতিবিদরা জানান, জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যবসায়ীরা পর্যবেক্ষণে আছেন। অনেকে উৎপাদনে যাচ্ছেন না। এ কারণে রেমিট্যান্স ও রির্জাভে প্রভাব পড়েছে। তবে, গত অর্থবছরের মতো এবার ভালো প্রবৃদ্ধি হবে না বলে আশঙ্কা করছেন তারা। জানা গেছে, বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস হচ্ছে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়। এখন বৈদেশিক মুদ্রার ভিত দাঁড়িয়ে আছে এই দুটি উৎসের ওপর ভর করে।
রেমিট্যান্সে ঋণাত্মক: বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিট্যান্স সংক্রান্ত তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ৬২৮ কোটি ৬৩ লাখ (৬.২৯ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে অক্টোবর মাসে এসেছে ১১৭ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বাংলাদেশে ৫৭৬ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। এই হিসাবে ৫ মাসে রেমিট্যান্স বেড়েছে ৯ শতাংশ। তবে, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে অর্থাৎ গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে ৩ শতাংশ কম রেমিট্যান্স বাংলাদেশে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, গত কয়েক বছর ধরেই রেমিট্যান্স ১৩ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেমিট্যান্সে ভালো প্রবৃদ্ধি হলেও তা আগস্টে থাকেনি। সেপ্টেম্বরে ভালো প্রবৃদ্ধি হলেও অক্টোবর-নভেম্বরে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তাদের মতে, চলতি অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি হবে। তবে, গত অর্থবছরের মতো ভালো প্রবৃদ্ধি এবার নাও হতে পারে। রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা ধরে রাখতে হলে আমাদের শ্রমিকদের অবশ্যই দক্ষ করে বিদেশে পাঠাতে হবে। দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি রেমিট্যান্সের নিম্নগতির কারণে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা ছিলেন উদ্বিগ্ন। ওই সময়ে রেমিট্যান্স বাড়াতে মাশুল না নেয়াসহ নানা ঘোষণাও দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বর্তমানে এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তাদের পাঠানো অর্থ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে। বাংলাদেশের জিডিপিতে রেমিট্যান্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।
রিজার্ভে টান: রেমিট্যান্সের ধীরগতির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও টান পড়েছে। দেশের ৯৪ ভাগ রেমিট্যান্স আসে বিশ্বের ১৮টি দেশ থেকে। এর মধ্যে ১২টি দেশ থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের ৭টি দেশের ছয়টি থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। ফলে রিজার্ভেও টান পড়েছে। গত সপ্তাহে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩০.৯৯ বিলিয়ন ডলার। ২০১৬ সালের পর রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামেনি। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১.৩৫ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ১৩৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। আমদানি বাড়ার কারণেও রিজার্ভে চাপ পড়েছে বলে মনে করেন অনেকেই। গত বছরের ২৮শে নভেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২.৫১ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের ৩০শে জুন শেষে তা বেড়ে প্রায় ৩৩ বিলিয়ন ডলারে ওঠে। ৩১শে অক্টোবর তা কমে ৩২.০৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২৭ কোটি ডলার। স্বাধীন বাংলাদেশের এক দশক পরে ১৯৮০ সালে এই রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারে, যা ক্রমেই বৃদ্ধি হতে থাকে। ১৯৯০ সালে তা দাঁড়ায় ৬২ কোটি ৮০ লাখে, ২০০০ সালে ১৪৮ কোটি ৬০ লাখ, ২০১০ সালে ১ হাজার ৫৬ কোটি ৪০ লাখ ও ২০১৬ সালে তা দাঁড়ায় ৩ হাজার ১৭৭ কোটি ৬০ লাখ ডলারে। সামপ্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ২০১৭ সালের আগস্টে। তখন রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ৩৬০ কোটি ডলার। তারপর থেকে রিজার্ভ নিম্নমুখী।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=150108