১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১১:৩১

উত্তেজনাকে আরো উত্তপ্ত করে তুলছে হামলা

রয়টার্সের প্রতিবেদন

বিরোধী দলীয় একজন বর্ষীয়ান নেতার ওপর শুক্রবার হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। বিরোধীরা এ অভিযোগ করে বলছে, ওই হামলায় তাদের প্রায় ১২ জন সমর্থক আহত হয়েছেন। একই সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র দু’সপ্তাহের সামান্য সময় বাকি থাকতে এ ঘটনা উত্তেজনাকে আরো উত্তপ্ত করে তুলছে।
অক্সফোর্ডে শিক্ষিত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বর্ষীয়ান আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বর্তমানে বিরোধী দলীয় একটি জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার গাড়িবহরে লাঠিসোটা ও ইটপাথর দিয়ে আঘাত করলেও তিনি আহত হন নি। বিরোধী দলীয় মুখপাত্র বলেছেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে ফেরার পথে তার গাড়িবহরে ওই হামলা হয়।
রয়টার্সকে বিরোধী দলীয় মুখপাত্র লতিফুল বারি হামিম বলেছেন, ওই হামলায় কমপক্ষে ১২ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে সিনিয়র নেতাদের বেশ কয়েকটি গাড়ি।
তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা মাহবুব-উল আলম হানিফ তার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আনা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। পুলিশ বলেছে, তারা এ ঘটনা খতিয়ে দেখছে। তাতে কোন অবাঞ্ছিত কিছু পাওয়া যায় নি। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ করা হলে তারা তদন্ত করে দেখবে। বাংলাদেশের নির্বাচনগুলো মাঝে মাঝেই সহিংস হয়ে ওঠে। ব্যালটবাক্স ছিনতাই ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের কারণে নির্বাচন বিঘ্নিত হয়। অনেক বছর ধরে এখানে রাজনীতি সংজ্ঞায়িত করা হয় প্রচন্ড প্রতিদ্ব›দ্বী দুই নারী- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যে। খালেদা জিয়া প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতৃত্বে রয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফিরতে চাইছেন। ২০১৪ সালে বিএনপি নির্বাচন বর্জন করার পর তিনি টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসেন।
খালেদা জিয়াকে ফেব্রুয়ারিতে জেল দেয়ার পর দু’মাস আগেও বিএনপি ছিল বিশৃঙ্খল। খালেদার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সে সম্পর্কে তিনি বলেন- এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে অক্টোবরে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি নতুন জোট গড়ে উঠেছে ছোট ছোট দলগুলোকে নিয়ে। তাতে যোগ দিয়েছে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে তারা অধিক প্রতিদ্ব›দ্বীতাপূর্ণ করে তুলেছে নির্বাচনকে। এ রিপোর্ট করার সময় ড. কামাল হোসেনের মন্তব্য পাওয়া যায় নি।

বাংলাদেশে সহিংসতায় যোগ হল আরও এক হামলা
দ্য ডিপ্লোম্যাটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ৩০শে ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজধানী ঢাকায় একটি অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে বিরোধী দলীয় এক নেতার গাড়িবহরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশটিতে নির্বাচনের সঙ্গে ঘন ঘন যে সহিংসতা ঘটে, এটা তার সর্বশেষ উদাহরণ।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র লতিফুল বারি বার্তা সংস্থা এপি’কে বলেছেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ঢাকায় শ্রদ্ধা জানিয়ে ফিরছিলেন বিরোধী দলীয় নেতা ড. কামাল হোসেন। এ সময়ই তার ওপর ওই হামলা হয়। লতিফুল বারি বলেছেন, হামলাকারীরা বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেছে। কিন্তু অক্ষত আছেন ড. কামাল হোসেন। পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিমুজ্জামান বলেছেন, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে এবং তারা তদন্ত করছেন। গত সোমবার নির্বাচনী প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর পরে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে এরই মধ্যে কমপক্ষে দু’জন নিহত হয়েছেন।
আহত হয়েছেন কয়েক ডজন মানুষ। প্রচারণা শুরুর পর প্রতিদ্ব›দ্বী গ্রুপের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের দু’জন সমর্থক। নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ শুক্রবার একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আহ্বান জানানো হয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলীয় নেতাদের গ্রেফতার, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে হুমকিতে ফেলার জন্য বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের সমালোচনা করেছে ওই সংগঠনটি।

দেশের ভিতরকার ও দেশের বাইরের অধিকারকর্মীরা নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের বিরুদ্ধে জোরপূর্বক গুম ও অপহরণের অভিযোগ করে যাচ্ছেন। বলা হচ্ছে তারা শুধু সরকারবিরোধীদের টার্গেট করছেন। তবে বাংলাদেশী কর্মকর্তারা এসব অভিযোগ জোর দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
বিরোধীরা বলছে, তাদের হাজার হাজার নেতা ও কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, বিরোধী দলীয় নেতাদের রাজনৈতিক উদ্দেশে গ্রেফতার করা হয় নি। বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বর্তমানে দুর্নীতির অভিযোগে জেলবন্দি। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিপক্ষ তিনি। কিন্তু স¤প্রতি আপিল আদালত প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্ব›দ্বীতার ক্ষেত্রে অযোগ্য ঘোষণা করেছেন খালেদা জিয়াকে।
বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা একটি সাধারণ বিষয়। এই সংঘর্ষ সাধারণত প্রতিদ্ব›দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হয়ে থাকে। কিন্তু মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পরে স্ব স্ব দলের ভিতরেও এ সংঘর্ষ হয়ে থাকে। এখন পর্যন্ত আগের বছরগুলোর তুলনায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সহিংসতা কমই ঘটেছে।
বিরোধীরা বলছে, নির্বাচন সামনে রেখে তাদেরকে দুর্বল করে দেয়ার জন্যই এসব হামলা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের অভিযোগ, তাদের প্রতিদ্ব›দ্বীরা পরাজিত হওয়ার ভয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শক্তিধর চ্যালেঞ্জার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন ড. কামাল হোসেন, বিশেষ করে তার জোটে বিএনপি যোগ দেয়ার পর থেকে। বাংলাদেশের ইসলামপন্থি সবচেয়ে বড় দল জামায়াতে ইসলামীও যোগ দিয়েছে তার ফ্রন্টে। কামাল হোসেন একজন প্রসিদ্ধ আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী। তিনি নির্বাচনে নিজে প্রতিদ্ব›দ্বী করছেন না। কিন্তু তার দলীয় কর্মকান্ড শেখ হাসিনার জন্য বিবেচ্য চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

https://www.dailyinqilab.com/article/172806