১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১১:২২

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

কমিয়ে আনা হচ্ছে দেশি পর্যবেক্ষক

৮১টি দেশীয় সংস্থার ৩৪৬৭১ জনের আবেদন, অনুমোদন দেয়া হতে পারে ২৫৯২০ জনকে * আগ্রহ দেখিয়েছে ১৬টি দেশ ও সংস্থার ১৭৮ বিদেশি পর্যবেক্ষক

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশি পর্যবেক্ষকের সংখ্যা কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ পর্যন্ত নিবন্ধিত ৮১টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৩৪ হাজার ৬৭১ জন অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছেন। তবে তা কমিয়ে ২৫ হাজার ৯২০ জনকে অনুমোদন দেয়া হতে পারে। এ ৮১টি সংস্থার মধ্যে ১৪টির বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার আপত্তি এবং একই এলাকার জন্য অতিরিক্ত আবেদন পড়ায় ৮ হাজার ৭৫১ জনকে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে না। বর্তমান নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা রয়েছে ১১৮টি।
এছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ দেখিয়েছে ১৬টি দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার অন্তত ১৭৮ পর্যবেক্ষক। এর মধ্যে বিদেশ থেকে আসবেন ৯৭ এবং বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশন ও সংস্থার ৮১ জন পর্যবেক্ষক রয়েছেন। আর ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করতে ৮ বিদেশি সাংবাদিক আবেদন করেছেন।

ইসি সূত্রে জানা গেছে উল্লিখিত সব তথ্য। দেশীয় পর্যবেক্ষক সংস্থা কমিয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, এ রকম কিছু বিষয় আছে। আমাদের হাতে ২৫ হাজার আবেদন রয়েছে। সব সংস্থার পর্যবেক্ষক তালিকা পেলে পুরো তালিকা কমিশনে পেশ করব। এরপর কমিশন যে সিদ্ধান্ত দেবে সে অনুসারে পদক্ষেপ নেয়া হবে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে কিছু আবেদন পেয়েছি। এর মধ্যে মার্কিন দূতাবাসের ৩০-৩৫ জন রয়েছেন।

জানা গেছে, এবার নির্বাচনে ৯টি দেশের কূটনৈতিক মিশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশগুলো হচ্ছে- ফ্রান্স, জাপান, স্পেন, ডেনমার্ক, নরওয়ে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও সুইজারল্যান্ড। এ নির্বাচনে প্রস্তুতির পর্যাপ্ত সময় না থাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের পর্যবেক্ষকদের পাঠাচ্ছে না। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দু’জন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ দেশে অবস্থান করছেন। তারা এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। আরও জানা গেছে, শনিবার অনুষ্ঠিত কমিশনের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে দেশি ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বৈঠকের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা জানান, পর্যবেক্ষকেরা ভোটকক্ষে সরাসরি সম্প্রচার করতে পারবেন না। তারা বেশিক্ষণ ভোট কেন্দ্রে অবস্থান করতে পারবেন না।
ইসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, এবারের নির্বাচনে পর্যবেক্ষকের সংখ্যা কম দেখা যাচ্ছে। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চসংখ্যক পর্যবেক্ষক এসেছিলেন। ওই নির্বাচনে ৫৯৩ বিদেশি পর্যবেক্ষক ও ১ লাখ ৫৯ হাজার দেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। সবচেয়ে কম পর্যবেক্ষক ছিলেন ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে। বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলের বর্জনের মুখে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন চারজন ও দেশীয় ৩৫টি সংস্থার পর্যবেক্ষক ছিলেন ৮ হাজার ৮৭৪ জন। এর আগে ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি ২২৫ ও ২ লাখ ১৮ হাজার দেশি পর্যবেক্ষক ছিলেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবার দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আগ্রহ কম দেখা যাচ্ছে।

জানা গেছে, দেশীয় ও বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে চায় নির্বাচন কমিশন। পর্যবেক্ষণের আড়ালে কেউ যাতে নির্বাচন প্রভাবিত বা কোনো রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর পক্ষে কাজ করতে না পারে সেদিকে নজর রাখছে কমিশন।
এছাড়া চারটি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থা- ডেমোক্রেসি ওয়াচ, খান ফাউন্ডেশন, লাইট হাউস ও বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদের বিষয়ে আপত্তি রয়েছে আওয়ামী লীগের। দলটির অভিযোগ, এ চার পর্যবেক্ষক সংস্থার বিএনপির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। অপরদিকে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ) সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনে আপত্তি জানিয়েছে বিএনপি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আপত্তিতে থাকা পাঁচটি সংস্থা এবারের নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগের অনুমোদন চেয়ে ইসির কাছে আবেদন জানিয়েছে।
আরও জানা গেছে, শনিবারের কমিশন বৈঠকে দেশীয় পর্যবেক্ষকের সংখ্যা কমিয়ে দেয়ার বিষয়টি কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ইসিতে নিবন্ধিত ১১৮টি সংস্থার মধ্যে ৮১টি সংস্থা থেকে ৩৪ হাজার ৬৭১ পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদন জানিয়েছে। কোনো কোনো আসনে অধিক সংখ্যক পর্যবেক্ষণের জন্য আবেদন করায় তা কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
সারা দেশে কেন্দ্রীয়ভাবে ২৫ হাজার ৯২০ পর্যবেক্ষক মোতায়েনের পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে ১৪টি পর্যবেক্ষক সংস্থার বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট রয়েছে। জানা গেছে, যেসব সংস্থার বিষয়ে গোয়েন্দা রিপোর্ট রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- পলাশীপাড়া সমাজ কল্যাণ সমিতি, রূপান্তর, ডেমোক্রেসি ওয়াচ, খান ফাউন্ডেশন, লাইটহাউস ও বাংলাদেশ মানবাধিকার সমন্বয় পরিষদ।

আগ্রহী ১৭৮ বিদেশি পর্যবেক্ষক : জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৬৫ জন পর্যবেক্ষক পাঠানোর আগ্রহ প্রকাশ করেছে মার্কিন দূতাবাস ও ইউএসএআইডি যৌথভাবে। এর মধ্যে ৩২ বিদেশি পর্যবেক্ষক ও ৩৩ জন এ দেশে অবস্থানকারী দূতাবাসের কর্মকর্তা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আন্তর্জাতিক এনজিও নেটওয়ার্ক-এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশন (এএনএফআরইএল)। এ সংস্থার আওতায় ৩২ বিদেশি পর্যবেক্ষক আসার আবেদন করেছে। এছাড়া নেপালের বেসরকারি সংস্থা ডিপেন্দ্র ইনিশেয়েটিভ কেন্দ্র থেকে তিনজন আবেদন করেছেন। এসব পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে নিরাপত্তা ক্লিয়ারেন্সের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে ইসি।
আরও জানা গেছে, বাংলাদেশের ৯টি কূটনৈতিক মিশন থেকে ১০০ জন আবেদন জানিয়েছেন। এর মধ্যে ফ্রান্স ৪, জাপান ৯, স্পেন ১, ডেনমার্ক ৩, নরওয়ে ২, জার্মান ৮, নেদারল্যান্ডস ৪ ও সুইজারল্যান্ড ৬ জন পর্যবেক্ষকের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছে। এছাড়া ৪টি বিদেশি সংস্থা থেকে ৩২ জন আবেদন জানিয়েছেন।
পর্যবেক্ষণে ৮১টি দেশীয় সংস্থা : নির্বাচনে সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৮৪২ পর্যবেক্ষকের জন্য আবেদন করেছেন জানিপপ। ডেমোক্রেসি ওয়াচ ২ হাজার ৪৩০ জন, আদর্শ পল্লী উন্নয়ন সংস্থা (আপউস) ৩ হাজার ৫৯৮ পর্যবেক্ষক নিয়োগের আবেদন করেছে। এছাড়া ৮১টি পর্যবেক্ষক সংস্থার পক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে ১ হাজার ৫৬৭ ও স্থানীয়ভাবে ৩৩ হাজার ১০৪ জন আবেদন করেছেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/122526