১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১১:২০

মূলধন হারিয়ে পথে বসেছেন বাদামতলীর বৈধ ব্যবসায়ীরা

অবৈধ পথে ফল আমদানির কারণে রাজধানীর বাদামতলীর বৈধ ফল ব্যবসায়ীরা মূলধন হারিয়ে পথে বসেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাদামতলীর কয়েকজন ফলের আড়তদার ও কিছু অবৈধ ব্যবসায়ী সিলেট বিভাগের করিমগঞ্জ এবং ভারতের সুতার কান্দি স্থল বন্দরের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবৈধ উপায় প্রতিদিন শত শত ফলের ট্রাক প্রবেশ করাচ্ছে বাংলাদেশে। এসব ফল কালোবাজারে তুলনামূলক কম মূল্যে বিক্রি করে ফলের বাজার অস্থির করে তুলছে।

এতে বিপাকে পড়েছে বৈধ ফল ব্যবসায়ীরা। তারা চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর এবং সোনা মসজিদ, হিলি, ভোমরা ও বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে সরকারকে রাজস্ব পরিশোধের মাধ্যমে ফল আমদানি করায় তাদের আমদানি মূল্য বৃদ্ধি হয়, এ কারণে তারা অসাধু ব্যবসায়ীদের সাথে পেরে উঠছেন না । যে কারণে তারা গত কয়েকমাস ধরে ব্যবসায়ে লোকসান দিয়ে পথে বসতে শুরু করেছেন। ঢাকার দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুর নীচ সংলগ্ন বাদামতলী ফলের আড়ৎ এলাকায় ঘুরে এ তথ্য পাওয়াগেছে।
কয়েকটি ফলের আড়তে খবর নিয়ে দেখা যায়, কিছু ব্যবসায়ী উৎফুল্লভাবে হাক-ডাকের মাধ্যমে ফল বিক্রি করছে, আবার অনেকের চোখে-মুছে বিষাদের কালো ছাপ। তাদের মঝে রীতিমত অসন্তোষ বিরাজ করছে। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে আল আমিন, আনোয়ার, মনির, ইউনুসসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে তাদের ব্যবসা মন্দ যাওয়ার কথা বলেন। তাদের কাছ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে যে সকল তাজা ফল আমদানি হয় তার ৮০-৮৫ শতাংশ ফল আমদানি হয় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে এবং ১৫-২০ শতাংশ আমদানি হয় ভোমরা, সোনা মসজিদ ও বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে। কিন্তু বিগত ৩/৪মাস ধরে সিলেটের করিমগঞ্জ এবং ভারতের সুতার কান্দি স্থল বন্দরসহ সিলেটের অন্যান্য স্থল বন্দর ব্যবহার করে রাজস্ব ফাকি দিয়ে আপেল, কেনু/ওরেঞ্জ, আনার, আঙ্গুর ফল আমদানি করা হচ্ছে। যেখানে অন্যান্য স্থল বন্দর দিয়ে এক ট্রাক ফল আমদানি করতে ৭ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ টাকা শুল্ক প্রদান করতে হয়, সেখানে সিলেট বিভাগের করিমগঞ্জ এবং ভারতের সুতার কান্দি স্থল বন্দরের মাধ্যমে এক ট্রাক ফল আমদানি করতে ৩ লক্ষ থেকে ৩.৫ লক্ষ টাকা খরচ হয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এবং রাজস্ব বিভাগের অসৎ কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ২০ মেট্রিক টন পন্য আমদানি করে মিস ডিকলার এর মাধ্যমে তা ৭ থেকে ৮ মেট্রিক টন ডিকলার করে পণ্য খালাস করে। এরপর ফল কালোবাজারে তুলনামূলক দামের চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করে। যার ফলে যেসব ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ও অন্যান্য স্থল বন্দর ব্যবহার করে তাজা ফল আমদানি করে আসছে তাদের আমদানি খরচ বেশি হওয়ায় কোনভাবেই এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের সাথে টিকে থাকতে পারছে না।
বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট্স ইমপোর্টার এসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, যেখানে অন্যান্য স্থল বন্দর দিয়ে ভারতের দিল্লি, কাশ্মীর থেকে ফল আমদানি করতে ৫ থেকে ৬ দিন সময় প্রয়োজন হয় সেখানে সিলেটের করিমগঞ্জ স্থল বন্দর দিয়ে ফল আমদানি করতে ১০ থেকে ১২ দিন সময় লাগে। তিনি বলেন,আপেল কাশ্মিরে, কেনু পাঞ্জাবে এবং কমলা ও আঙ্গুর নাসিক, মহারাষ্ট্র উৎপাদন হয়, আর এসব এলাকার নিকটবর্তী স্থল বন্দর হচ্ছে সোনা মসজিদ, হিলি, ভোমরা ও বেনাপোল স্থলবন্দর। কিন্তু সিলেটের বিভিন্ন স্থলবন্দরে মিস ডিকলার এর মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া যায় বলে অসাধু ব্যবসায়ীরা বর্তমানে তাজা ফল আমদানিতে সিলেটের করিমগঞ্জ স্থল বন্দর ব্যবহার করছে। এতে পরিবহন সময় বেশি লাগে তেমনি পন্যের গুণগত মানও নষ্ট হয়ে যায়। তিনি বলেন এক বছর আগেও এরকম সমস্যা হয়েছিল তখন তারা এফ.বি.সি.সি.আই এর সহযোগিতায় এন.বি,আর এর সাথে মিটিং করে এর সমাধান করেছেন। এবারও তারা গত ৫ডিসেন্বর এফ.বি.সি.সি.আই ও এন.বি,আর চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কিন্তু এ দুটি প্রতিষ্ঠান এখনো পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
এফবিসিসিই-এর মহাসচিব হোসাইন জামিল বলেন, ব্যবসায়ীদের লিখিত একটি অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। তিনি এবিষয় নিয়ে বাদামতলী ব্যবসায়ীদের সাথে আলোচনায় বসবেন এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন।

http://www.dailysangram.com/post/357353