১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১১:০৬

ওরা কামাল হোসেনকেও রেহাই দেয়নি সারাদেশে শ্বেত-সন্ত্রাস

গত সপ্তাহ থেকে আত্মীয়স্বজনসহ আমার অনেক বন্ধুবান্ধব এবং শুভানুধ্যায়ী আমাকে প্রশ্ন করছেন, দেশে কি আদোতেই নির্বাচন হবে? আমি পাল্টা জিজ্ঞেস করি, নির্বাচন হবে কি হবে না এ ব্যাপারে আপনাদের সন্দেহ কেন? তিনি সরাসরি উত্তর দেন, প্রতিদিন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিশেষ করে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীদের জনসংযোগকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন বিরোধী দলের ওপর যে হামলা হচ্ছে সেগুলো দেখে এই সন্দেহ হচ্ছে। তিনি আরও যোগ করেন, আমাদের মতো অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে রাজনীতি নিয়ে তর্কবিতর্ক বা মারপিট হয়েই থাকে। তবে ইলেকশনের আগে বিশেষ করে ইলেকশনের শিডিউল ঘোষণা করার পর সংঘাত বা হানাহানি আর হয় না। রাজনৈতিক দলগুলো এই মিনিমাম ভদ্রতাটুকু অথবা নির্বাচনী আচরণ মেনে চলে। কিন্তু আমাদের দেশে এবার দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক আচরণ। তফসিল ঘোষণার পরে তো বটেই, নির্বাচনী ফরম সংগ্রহ করতে গিয়েও মারামারি, ফরম দাখিল করতে গিয়েও মারপিট, ফরম যাচাই বাছাই করতে গিয়েও গাড়ি-ঘোড়া ভাংচুর। এমনকি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে গিয়েও মারপিট। এখন দেখা যাচ্ছে এই সবগুলো বালাই চুকে গেছে। অর্থাৎ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা, ফরম সংগ্রহ, ফরম জমাদান, যাচাই বাছাই, প্রত্যাহার, প্রতীক বরাদ্দ ইত্যাদি সব কাজ কম্পিলিট। প্রতীক পাওয়ার পর প্রার্থীরা এখন জনসংযোগে নেমেছেন। অথচ কি আশ্চর্য, যে দিন থেকে বিরোধীরা জনসংযোগে নেমেছেন সে দিন থেকেই প্রায় প্রতিটি বিরোধীদলীয় প্রার্থীর প্রতিটি জনসংযোগ সমাবেশে হামলা করা হচ্ছে। কারা হামলা করছে সেটি আর বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নাই। এই হামলা থেকে কেউই রেহাই পাচ্ছেন না। বর্তমানে সরকার বিরোধী শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির অত্যন্ত সিনিয়র নেতা এবং স্ট্যান্ডিং কমিটির নেতা, প্রাক্তন মন্ত্রী ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ, স্ট্যান্ডিং কমিটির মেম্বার এবং প্রাক্তন মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান, স্ট্যান্ডিং কমিটির মেম্বার এবং প্রাক্তন মেয়র মির্জা আব্বাস, তার পতœী আফরোজা আব্বাস, আওয়ামী লীগ থেকে ঐক্যফ্রন্টে আসা প্রাক্তন প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইদসহ কেউই সরকারের এই হামলা থেকে রেহাই পাননি।

প্রতিদিন যে দুই চারটি করে হামলা হচ্ছে তার প্রত্যেকটির খুঁটিনাটি খবর রাখা সম্ভব নয়। তবে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রিকায় বিক্ষিপ্তভাবে যেসব খবর এসেছে সেসব খবর সংকলন করলে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি দাঁড়ায় সেটি মোটামুটি নিম্নরূপ।
যারা হামলার শিকার হয়েছেন তারা হলেন (১) নড়াইল-২ থেকে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ফরিদুজ্জামান (২) বগুড়া-৫ থেকে বিএনপি প্রার্থী সাবেক এমপি ধনাঢ্য ব্যক্তি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ (৩) চুয়াডাঙ্গা-১ থেকে শরিফুল আলম (৪) নাটোর-১ থেকে ২০ দলীয় প্রার্থী মঞ্জুরুল আলম বিমল (৫) জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে পাবনা-১ এর প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইদ (৬) ঝালকাঠি-২ থেকে বিএনপি প্রার্থী জেবা আমিন (৭) নারায়ণগঞ্জ-৩ থেকে বিএনপি প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্না।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর মোতাবেক সিরাজগঞ্জ শহরে পুলিশের গুলি ও লাঠিচার্জে জেলা বিএনপি সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-২ আসনের বিএনপি প্রার্থী রুমানা মাহমুদসহ অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। নেত্রকোনায় বিএনপি প্রার্থীর বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা। শরীয়তপুরে বিএনপি অফিসে হামলা-ভাংচুর, ৯ হাজার পোস্টারে আগুন। হাতীবান্ধায় ধানের শীষের প্রচার মাইক ভেঙে দেয়ার অভিযোগ। কুমিল্লা কারাগারে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হকের আমরণ অনশন উল্লেখযোগ্য। এগুলোই শেষ নয়। ঝালকাঠিতে বিএনপি প্রার্থীর গাড়ি বহরে হামলা ভাংচুর, আহত ১০। রুমানা ও সাবিনার নিরাপত্তায় রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ চেয়েছে বিএনপি। সুব্রত চৌধুরীর প্রচার মিছিলে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলা। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় বিএনপি প্রার্থীর জিডি। বিএনপির প্রচারণায় যাওয়ায় যুবদল নেতাকে কুপিয়েছে যুবলীগ। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ধানের শীষে ভোট চাওয়ায় যুবক আটক।
॥দুই॥

প্রতিদিনই এক বা একাধিক কাহিনী ঘটছে। বরিশালে লিফলেট বিতরণকালে হাতপাখার কর্মীর ওপর হামলা। সাতক্ষীরায় বিএনপির প্রচারণায় হামলা, প্রার্থীসহ আহত ৭। জামালপুরে বিএনপির গাড়িবহরে আ’লীগের হামলা, আহত ৮। বিকেলে উদ্বোধনের পর রাতেই বিএনপির নির্বাচনী অফিসে আগুন। বিএনপির দলীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বিএনপির একাধিক নির্বাচনী কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ। রাজশাহীতে জামায়াতের জেলা আমীরসহ গ্রেফতার ৭০। বরগুনা জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার। মুরাদ নগরে বিএনপি প্রার্থীকে স্বাগত জানাতে নেতাকর্মীদের ঢল। নারায়ণগঞ্জে জামায়াতকর্মী সন্দেহে নারীসহ ১০৩ জনকে আটক। যশোরে ধানের শীষের সব পোস্টার ছিঁড়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। সিরাজগঞ্জে বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ ২ নেতা গ্রেফতার। নেত্রকোণায় বিএনপি প্রার্থীর বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা। সিরাজগঞ্জে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সহ ২ নেতা গ্রেফতার আহত ১০। সাতক্ষীরায় বিএনপি প্রার্থীর ওপর হেলমেটধারীদের হামলা। ধানের শীষের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আটক। সিরাজগঞ্জে পুলিশ বিএনপি সংঘর্ষে এমপি প্রার্থীসহ ৪৪ জন গুলিবিদ্ধ। জীবননগরে বিএনপির থানা কার্যালয়সহ ২০টি নির্বাচনী অফিসে অগ্নিসংযোগ। গোসাইরহাটে বিএনপি অফিসে হামলা ভাংচুর ৯ হাজার পোস্টারে আগুন। নেত্রকোনায় ধানের শীষের পোস্টারে আগুন বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর। ঢাকা-৪ আসনে ধানের শীষের পোস্টার লাগানোয় বেধড়ক মারধর। নির্বাচনী প্রচারে বাধা হামলা ভাংচুর আহত ৬৫। মুন্সীগঞ্জে বিএনপির কার্যালয়ে হামলা ভাংচুর আহত ১০। দাগনভূঞায় বিএনপি সম্পাদকসহ ৬ নেতাকর্মী গ্রেফতার। চৌদ্দগ্রামে বাধার মুখে ধানের শীষের পূর্বঘোষিত গণসংযোগের সিদ্ধান্ত বাতিল সাবেক এমপি ডা তাহেরের নিন্দা। এলাকায় যেতে পারছেন না মেজর হাফিজ। নির্বাচনকে সামনে রেখে বেপরোয়া পুলিশ বিরোধী জোটের ৮৭ নেতাকর্মী গ্রেফতার। যশোরে ধানের শীষ প্রার্থী অমিতকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ। কুলিয়ারচরে বিএনপি প্রার্থীর পা ভেঙে দিয়েছে পুলিশ। খাগড়াছড়িতে বিএনপির নির্বাচনী প্রচার গাড়ীতে আ.লীগের হামলা। মনোহরদীতে বিএনপি প্রার্থী বকুলের নির্বাচনী সভায় ব্যাপক হামলা। গাজীপুরে বিএনপির এমপি প্রার্থী ফজলুল হক মিলন গ্রেফতার। ঐক্যফ্রন্টের পথসভার মাইক ও চেয়ার টেবিল নিয়ে গেল পুলিশ। প্রচারণার তৃতীয় দিনেও দেশজুড়ে বিরোধীদের ওপর ব্যাপক হামলা।

॥তিন॥
প্রিয় পাঠক, এমন যদি হতো যে, একটি দেশের সাধারণ নির্বাচনে দু চারটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত কিছু সংঘর্ষ হচ্ছে তাহলে সেটিকে ইগনোর করা যেতো অথবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বলা যেতো তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে প্রতিদিন ঘটনা ঘটেই চলেছে। যদি সরকারের সর্বোচ্চ মহলে এসব দমনের সদিচ্ছা থাকতো তাহলে ২৪ ঘন্টার ভেতর এগুলো সব দমন করা যেতো। দেশের সবগুলি ওসিকে সংগে সংগে নির্দেশ দিলে এক দিনের মধ্যে তারা সারাদেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতো। কিন্তু যেখানে সরিষার মধ্যে ভূত সেখানে সেই ভূত তাড়াবে কে? দেখুন নির্বাচনের আর মাত্র ১৪ দিন বাকি আছে। এই ১৪ দিন আগেও সারাদেশে কি ঘটছে। নীচে কয়েকটি নমুনা দিলাম।
নোয়াখালী-১ চটাখিল-সোনাইমুড়ী আসনে বিএনপি প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের গাড়িতে হামলা। লক্ষ্মীপুরে ধানের শীষের প্রার্থীর সভায় হামলা-ভাংচুর, ২ নারীসহ আহত ১০। খাগড়াছড়িতে বিএনপি প্রার্থীর গাড়ি বহরে হামলা। ঝালকাঠিতে বিএনপি প্রার্থীর গাড়ী ভাঙচুর, মারধর। নিতাই রায় চৌধুরীর নির্বাচনী অফিসে হামলা-ভাংচুর। বাগেরহাটে ধানের শীষের প্রার্থীর ওপর হামলা, আহত ৪। কুয়াকাটায় বিএনপির নির্বাচনী প্রচার মাইক ভাংচুর। কুলিয়ারচরে পথসভায় আ’লীগের হামলা, বিএনপির প্রার্থী আহত। খুলনায় হাতপাখার প্রচারে ছাত্রলীগের হামলা, প্রার্থীসহ আহত ৫। নেত্রকোনায় যুবলীগের মিছিলে বোমা, বিএনপি প্রার্থীর বাসায় হামলা। নারায়ণগঞ্জে বিএনপি প্রার্থীর গাড়িবহরে হামলা। সেগুন বাগিচায় মির্জা আব্বাসের ওপর আবার হামলা।
সর্বশেষ খবরে প্রকাশ, সেগুনবাগিচায় মির্জা আব্বাসের ওপর আবার হামলা হয়েছে। ঢাকা-৮ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মির্জা আব্বাসের নির্বাচনি গণসংযোগে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেগুনবাগিচা মসজিদ এলাকায় দুপুর ১টার দিকে হামলার ঘটনা ঘটে। গণসংযোগে থাকা বিএনপির এক কর্মী জানান, মির্জা আব্বাস ১৫-২০ জনের একটি টিম নিয়ে এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছিলেন। এ সময় তার গণসংযোগ পরিচালনাকারী টিমটি সেগুনবাগিচা মসজিদ এলাকায় এলে লাঠিসোঁটা নিয়ে একদল যুবক তাদের ওপর হামলা চালায়।
শনিবার আরও অনেক ঘটনা ঘটেছে। গোলাম মাওলা রনির স্ত্রীর ওপর হামলা হয়েছে। এ সময় তার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া রনির স্ত্রী এবং বোনের স্বর্ণালংকারও লুট হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গোলাম মাওলা রনি।

কনকচাপা একজন মহিলা কন্ঠশিল্পী। তিনি রাজনীতির ধারে পাশেও ছিলেন না। কিন্তু যে মুহূর্তে তিনি ধানের শীষ নিয়ে ইলেকশনে দাঁড়ালেন সেই মুহূর্তেই তিনি আওয়ামী ঘরানার চক্ষুশূল হয়ে গেলেন। সিরাজগঞ্জ-১ আসনের বিএনপির প্রার্থী কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা বলেছেন, আমাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমি পালিয়ে যাওয়ার মানুষ নই। কনকচাঁপা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্র রক্ষায় ধানের শীষে ভোট দিতে হবে। দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। এই সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের গুম,খুন করছে, নির্বাচনী সভায় বাধা দিচ্ছে। মানুষ এগুলো দেখতে চায় না। তিনি আরও বলেন, আমাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু আমি পালিয়ে যাওয়ার মানুষ নই। দলের নেতাকর্মী ও কাজিপুরের জনগণ আমার সঙ্গে থাকলে ধানের শীষের বিজয় হবেই।
বর্তমান এবং প্রাক্তন- বিএনপির কোনো নেতাকেই আওয়ামী লীগ ছাড়ছে না। তাই জনাব আব্দুর রউফ গফুর ভূইয়া ইলেকশন না করলেও তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও কুমিল্লা জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল গফুর হাইকোর্টে একটি মামলায় হাজিরা শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় শনিবার দুপুর ২টার দিকে তাকে আটক করা হয়। এরপর ডিবি কার্যালয় ঘুরে তাকে কুমিল্লায় নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, বিএনপি বলে পরিচয় দেওয়াও এখন বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএনপি পরিচয় জানলেই পুলিশ ধরে নিয়ে জেল খানায় ঢুকাচ্ছে। নির্বাচনের দিন বিএনপি’র সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে পুলিশ। এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারি ছত্রছায়ায় থেকে আওয়ামী এমপিরা ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। এখন বিরোধী দলকে শুধু হুমকি ধামকি দেয়াই নয়, তাদের চোখ উপড়ে ফেলারও হুমকি দেয়া হচ্ছে। সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই শাল্লা) আসনের নির্বাচনী এক সমাবেশে দিরাই পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোশাররফ মিয়া হুমকি দিয়ে বলেন, নৌকার পক্ষে আসনের সবগুলো ভোট কেন্দ্র দখল করা হবে এবং এতে বিএনপি নেতাকর্মীরা বাধা দিলে তাদের চোখ উপড়ে ফেলা হবে। তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘বিএনপিকে কোনো সেন্টারে আধিপত্য বিস্তার করতে দেয়া যাবে না, ওদের প্রত্যেকটি সেন্টার আমাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে হবে।
সুতরাং যারা ছাত্রলীগে আছ, তোমাদের পড়াশুনা করেই এবার নির্বাচন করতে হবে। কোনো সেন্টার বিএনপিকে দেয়া যাবে না। এতে বিএনপির কোনো কর্মী, কোনো নেতা যদি চোখ রাঙায় তাহলে তার চোখ তুলে দেবে। বিএনপির কোনো নেতা কোনো কর্মীকে একটা কথা বললে তার চোখ উপড়ে ফেলা হবে। সুতরাং নির্বাচনে সবকটি সেন্টার আমাদের দখলে থাকবে। উল্লেখ্য, তার এই ভিডিও এখন লক্ষ লক্ষ লোকের কম্পিউটার এবং মোবাইলে সংরক্ষিত রয়েছে।

আমি প্রথমেই বলেছি যে, বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চিতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বত্রই তারা এই ধরনের রক্ত হিম করা হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী যথার্থই বলেছেন যে, শনিবার, ১৫ই ডিসেম্বর আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনেই বিএনপি প্রার্থীর সমর্থক ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। এরমধ্যে ধানের শীষের দেড়শ প্রার্থীই হামলার শিকার হয়েছে। তিনি বলেন, দু’জন প্রার্থীকে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। আইনি জটিলতা সৃষ্টি করে বেগম খালেদা জিয়াসহ বেশ কয়েকজনের প্রার্থী হওয়া অনিশ্চিত করে রাখা হয়েছে।
রিজভী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক প্রার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণ করা হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামালসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দের ওপর হামলা হয়েছে। হামলার পর গতকাল বর্ষিয়ান জননেতা ড. কামাল হোসেনের নামে ষড়যন্ত্র মূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলা দায়েরের মাধ্যমে সরকার যে বার্তাটি দিল তা নি¤œ রুচির। তিনি বলেন, সরকারের কাছে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসররা ছাড়া আর কারও কানাকড়ি মূল্য নেই।

বিএনপির এই নেতা বলেন, জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনেই বিএনপি প্রার্থীর সমর্থক ও নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতিতেই এই হামলাগুলো সংঘটিত হয়। সকল আসনেই বিএনপি প্রার্থীর পোস্টার লাগাতে বাধা দেয়া হয়েছে, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। প্রচারণার মাইক ভাঙচুর করা হয়েছে, ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। ৩০০ আসনেই গণগ্রেফতার চলছে। এই সমস্ত হামলা, আক্রমণ, গ্রেফতার সিইসির ইঙ্গিতে অথবা প্রশ্রয়ে হয়েছে, এসবের জন্য তার দায় এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
শরীরের রক্ত হিম করা আওয়ামী লীগের এই শ্বেত সন্ত্রাসের একটি মাত্র উদ্দেশ্য হলো প্রধান প্রধান বিরোধী দলকে নির্বাচনের মাঠ থেকে তাড়িয়ে দেয়া। বিরোধী দল নিয়েছে সঠিক পলিসি। তারাও ৩০ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থাকবে।
Email: asifarsalan15@gmail.com

 

http://www.dailysangram.com/post/357374