১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১০:২১

ধানের শীষের প্রচারণা ঠেকাতে ক্ষমতাসীন আ’লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একাট্টা!

ধানের শীষ প্রতীকের প্রচারণা ঠেকাতে একাকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এমন অভিযোগ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। অভিযোগে প্রকাশ, প্রচারণার চতুর্থ দিন গতকাল জুমাবারেও দেশের প্রায় সব স্থানে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। ধানের র্শীষের গাজীপুর-৫ আসনের প্রার্থী ফজলুল হক মিলনসহ বিরোধী দুই শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালানো হয়েছে বিএনপি কার্যালয়সহ ধানের শীষ প্রতীকের নির্বাচনী অফিস। গতকালের হামলায় প্রার্থীসহ তিন শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে বিএনপি জানিয়েছে। গতকাল এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএিনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, পুলিশ এখন আওয়ামী লীগের লাঠিয়াল বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, এই সরকার মাত্র ১৫/১৬ দিন ক্ষমতায় আছে। যারা এই সরকারের অন্যায় নির্দেশ মানবে তাদের ভবিষ্যতে বিচারের আওতায় আনা হবে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেছেন, এই সরকার চায় না বিরোধী জোট নির্বাচনে থাকুক। কিন্তু আমরা নির্বাচনে আছি এবং থাকবো। জনগণই এই সরকারের বিরুদ্ধে গণরায় দিবে।

শরীয়তপুর: শরীয়তপুর-৩ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা বিএনপি প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দিন আহম্মেদ অপুর নির্বাচনী ও উপজেলা বিএনপির কার্যা য়ে হামলা চালিয়ে চেয়ার-টেবিল ভাংচুর ও ৯ হাজার পোস্টার ছিনিয়ে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় হামলাকারীরা পোস্টার সাঁটানোর সামগ্রীসহ নগদ ৩৬ হাজার টাকা নিয়ে যায় বলেও অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ বিষয়ে শরীয়তপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তার বরাবরে লিখিত অভিযোগ করার কথা জানিয়েছন বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
গোসাইরহাট উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল জানান, শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা-ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট) আসনের বিএনপি প্রার্থী ও তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী মিয়া নুরুদ্দিন আহম্মেদের পোস্টার সাঁটানোসহ অন্যান্য নির্বাচনী কাজ করছিল উপজেলা বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দ। তিনি জানান, শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ৫০/৬০জন সমর্থক হঠাৎ করে বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও গোসাইরহাট উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মামুন মিয়া, সাবেক দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল, ইদিলপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান পরাগ, সামন্তসার ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ইকবাল আকন ও সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিনসহ অন্তত ১০জন নেতাকর্মীকে মারধর করে ধানের শীষের ৯ হাজার পোস্টার ছিনিয়ে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। এ সময় হামলাকারীরা পোস্টার সাঁটানোর সামগ্রীসহ নগদ ৩৬ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে বলে জানা যায়। এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করার কথা জানিয়েছন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

এ বিষয়ে গোসাইরহাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কামাল সরদার বলেন, আমরা দুপুরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় শুনতে পাই ছাত্রদলের ছেলেরা বিএনপির পার্টি অফিসে ছাত্রলীগের দুইজন ছেলেকে ডেকে নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। এই কথা শুনে আমরা তাদেরকে সেখান থেকে নিয়ে আসি। এ সময় অনেক লোকজনের মাঝে উত্তেজিত ছেলেরা কিছু পোস্টার নিতে পারে। কোনো পোস্টার পোড়ানো হয়েছে কিনা এটা আমার জানা নেই। আমাদের লোকজন কোনো পোস্টার পোড়ায়নি।
জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও গোসাইরহাট উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মামুন মিয়া বলেন, আমরা জু’মার নামাজ শেষে বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে বিভিন্ন এলাকার নেতাকর্মীদের কাছে পোস্টার পাঠিয়ে দিয়ে ৪টি ইউনিয়ন ও গোসাইরহাট পৌরসভায় পোস্টার টানানোর জন্য কাজ করছিলাম। দুপুর আড়াইটার দিকে গোসাইরহাট পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মিন্টু বেপারী, যুবলীগের আহ্বায়ক কামাল সরদার, ছাত্রলীগ নেতা সোহাগ ও উজ্জল মাদবরসহ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ৫০/৬০ জন সমর্থক আমাদের কার্যালয়ে হামলা চালায়। এরপর তারা কার্যালয়ের চেয়ার-টেবিল ভাংচুর করে ধানের শীষের ৯ হাজার পোস্টার আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। পাশাপাশি হামলাকারীরা অফিসে রক্ষিত নগদ ৩৬ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, হামলার বিষয়টি গোসাইরহাট থানা পুলিশকে জানানোর পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। আমরা আমাদের প্রার্থীর সাথে পরামর্শ করে নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করবো।
এদিকে গোসাইরহাট থানার ওসি মোঃ সেলিম রেজা বলেন, বিএনপি অফিসে হামলার কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি। অভিযোগ পেলে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ছাত্রলীগের হামলার শিকার হওয়ার মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের ২০ দলীয় জোট তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী ও বিএনপি নেতা মেজর (অবঃ) আবদুল খালেক পিএসসি। শুক্রবার সকালে স্থানীয় বিএনপি, জোট নেতৃবৃন্দ ও ওলামাদের নিয়ে তিনি বাঞ্ছারামপুর উপজেলার প্রবেশদ্বার করিকান্দি ফেরিগাটে পথসভার মাধ্যমে প্রচারণা শুরু করেন। এসময় ফেরিঘাট এলাকায় গণসংযোগ করতে গিয়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হন ধানের শীষের প্রার্থী, নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এতে উপজেলা কৃষকদলের নেতা মোঃ বকুল আহত হয়েছেন। বিএনপি নেতারা জানান, এরপরও দ্বন্দ্বে না জড়িয়ে ধৈর্য্যের সাথে দিনভর প্রচারণা চালিয়ে যান ধানের শীষের প্রার্থী, নেতাকর্মী ও সমর্থকরা।
পথসভায় বক্তৃতাকালে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মেজর (অবঃ) আবদুল খালেক বলেন, সারাদেশে আজ ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সরকার চাইলেও এই জোয়ার থামাতে পারবে না। আগামী ৩০ ডিসেম্বর সারাদেশে ধানের শীষের বিপুল বিজয় হবে বুঝতে পেরে সরকার হামলা-মামলার পথ বেছে নিয়েছে। তাই ধৈর্য্য ধরে ও বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, তরুণ সমাজ আজ দেশ রক্ষায় এগিয়ে এসেছে। তারা সব অন্যায় প্রতিহত করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ। আব্দুল খালেক তরুণদের জীবনের প্রথম ভোটটি জালিম শাসকের বিরুদ্ধে ধানের শীষে দেয়ার আহ্বান জানান।

বরিশাল: জুমআর নামাজ শেষে মসজিদের সামনে গণসংযোগকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করিমের এক কর্মীর ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। বরিশালের রূপাতলী আছালত খান জামে মসজিদের সামনে এ ঘটনা ঘটে। আহত ওই যুবকের নাম শাকিল হোসেন। সে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রশিক্ষণ সম্পাদক। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বরিশাল-৫ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখার প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণায় হামলার অভিযোগ উঠেছে। হামলায় বিএনপি প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৭ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে কলারোয়া উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহতরা কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহতরা হলেন- বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনের ধানের শীষের প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিব, কলারোয়া উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি তৌফিকুর রহমান সঞ্জু, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মমতাজুল ইসলাম চন্দন, কলারোয়া পৌর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোজাফ্ফর হোসেন, ছাত্রদল নেতা রুবেল ও যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন।
বিএনপি প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, আমার নিজ বাড়িতে মতবিনিময় সভা শেষে কলারোয়া সদরে গণসংযোগকালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কলারোয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহম্মেদ স্বপনের নেতৃত্বে হেলমেট পরে লোহার রড, হাতুড়ি নিয়ে আতর্কিত হামলা চালায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী।
ঘটনার বিষয়ে কলারোয়া থানার ওসি মারুফ আহম্মেদ বলেন, ঘটনা শুনে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থলে কাউকে পায়নি। নিজেদের দুই পক্ষের হামলায় কেউ কেউ সামান্য আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।
জামালপুর : জামালপুরে বিএনপি প্রার্থীর গাড়িবহরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোজাফফর হোসেনের সমর্থকরা হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে কেন্দুয়া কালিবাড়ি বাজারে ঘটনাটি ঘটেছে বলে জানা গেছে। এতে বিএনপির ৮ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়েছে।
বিএনপির প্রার্থী জানান, তিনি কালিবাড়ি বাজারে গণসংযোগে যাওয়ার পথে আওয়ামী লীগের কর্মীরা তার গাড়িবহরে হামলা করে এবং কর্মী-সমর্থকদের মারধর করে।
তার অভিযোগ, গত কয়েকদিন ধরে সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপির প্রচারে বাধা ছাড়াও হুমকি-ধামকি, কেন্দ্র বন্ধ, পোস্টার ছেড়া ও প্রচার কাজে বাঁধা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন। জেলা রিটার্নি অফিসারের কাছে একাধিক লিখিত অভিযোগ দিলেও কোনও প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
তবে এ বিষয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুর রহমান শেলীর দাবি, বিএনপি
মেহেরপুর: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাভেদ মাসুদ মিল্টনের নির্বাচনী অফিস পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
বৃহস্পতিবার দিনগত রাতের কোনো এক সময় গাংনীর মটমুড়া ইউনিয়নের বাওট গ্রামে স্থাপিত এ অফিসটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হামিদুল হক। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী এ অফিসটি উদ্বোধন করা হয়। রাতের আঁধারে দুর্বৃত্তরা অফিসটি পুড়িয়ে দিয়েছে।

এদিকে, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জাভেদ মাসুদ মিল্টন অভিযোগ করে বলেন, কয়েকদিন আগে গাংনীর সাহারবাটিতে নির্বাচনী প্রচারণায় গেলে আওয়ামী লীগ সমর্থকরা আমার মাইক ভাঙচুর ও প্রচার ম্যানকে মারধর করে। এছাড়া উপজেলা শহরের প্রধান অফিসেও হামলা ও ভাঙচুর করেছিল ছাত্রলীগ।
বগুড়া: বগুড়ায় বিএনপির দলীয় কার্যালয় পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের সারিয়াকান্দি সদরের প্রধান সড়কে উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। আগুনে দলীয় কার্যালয়ের আসবাব ছাড়াও পাশে থাকা দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ধানের শীষের প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, আগের রাতে পুলিশ এসে কার্যালয়টি বন্ধ করার মৌখিক নির্দেশ ও হুমকি দিয়ে যায়। আজ রাতে তাতে আগুন লাগানো হয়েছে। রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই পোস্টার লাগাতে বাধা, ছিঁড়ে ফেলা, কর্মীদের ভয়ভীতি দেখানোসহ ধানের শীষের প্রচারণায় নানাভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন ও পুলিশকে এসব জানিয়ে কোনো প্রতিকার মিলছে না। উল্টো পুলিশ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করছে। ধানের শীষের কর্মীদের মাঠশূন্য করতে সারিয়াকান্দি থানায় একটি ‘গায়েবি মামলা’ করা হয়েছে। বিএনপির প্রতি একই আচরণ করছে সোনাতলা থানা পুলিশও।
সারিয়াকান্দি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, পুলিশের বিরুদ্ধে যে কেউ অভিযোগ করতেই পারে, তবে পুলিশ কোনো দলীয় কার্যালয় বন্ধের নির্দেশ বা হুমকি দেয়নি। বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে আগুন লাগার বিষয়টি তদন্ত করে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজশাহী: রাজশাহীর পুঠিয়ায় নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে জেলা (পূর্ব) জামায়াতের আমির মকবুল হোসেনকে (৫৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে জেলা ও নগর পুলিশের বিশেষ অভিযানে আরও ৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে জেলা পুলিশ ৩২ জন ও নগর পুলিশ ৩৮ জনকে গ্রেফতার করে।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রাজ্জাক খান জানান, শুক্রবার ভোরে পুঠিয়া থানা পুলিশ উপজেলার জামিরা গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে জামায়াত নেতা মকবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে। নির্বাচন ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত বিভিন্ন থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে আরও ৩১ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে গোদাগাড়ী থানায় একজন, তানোরে পাঁচজন, মোহনপুরে তিনজন, পুঠিয়ায় তিনজন, বাগমারায় তিনজন, দুর্গাপুরে ছয়জন, চারঘাটে তিনজন ও বাঘা থানায় সাতজন।
এদিকে নগর পুলিশের বিশেষ অভিযানে ৩৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আরএমপির মুখপাত্র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম।
যশোর: যশোরের চৌগাছা শহরে ধানের শীষ প্রতীকের সব পোস্টার ছিড়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। শহরের বিভিন্ন সড়কে টানানো এসব পোস্টার বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা ছিড়ে ফেলে বলে অভিযোগ করেছেন যশোর-২ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ও জামায়াত নেতা মুহাদ্দিস আবু সাঈদ মোহাম্মদ শাহাদৎ হুসাইন।
এ বিষয়ে তিনি জেলা রিটার্নিং অফিসার ও যশোরের জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের অনুলিপি সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারুফুল আলমের কাছেও দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারুফুল আলম বলেন, ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে আমাকে মোবাইল ফোনে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। আমি তাদেরকে লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অভিযান চালিয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদকসহ দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে উপজেলার শ্রীফলতলায় বিএনপি প্রার্থী ড. এমএ মুহিতের বাড়ির পাশে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন হীরু ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরিফ।
শাহজাদপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাজা গোলাম কিবরিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, গ্রেপ্তারকৃতরা গত ১১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি।
মুরাদনগর: কুমিল্লা-৩ মুরাদনগর আসনে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনিত প্রার্থী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের ছোট ভাই কে এম মজিবুল হক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচর-প্রচারণা শুরু করেছেন। শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে মজিবুল হক ঢাকা থেকে গাড়ি বহরযোগে মুরাদ নগর উপজেলা সদরে পৌঁছলে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। এসময় হাজারো নেতাকর্মী মিছিল-শ্লোগানে তাকে স্বাগত জানান। তবে মজিবুল হক মুরাদনগরে পৌঁছার আগে দেশি অস্ত্র রামদা হাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ব্যাপক মহড়া দিতে দেখা গেছে। দুপুর ১টায় নহলচৌমুহনী এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থীকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষমান নেতা-কর্মীদের উপর হামলা হয়েছে। এতে ৪ বিএনপি কর্মী আহত হয়েছেন। এরা হলেন নেছার উদ্দিন খোকন, আবুল কালাম আজাদ, আলী হাসান ও মো: লিটন। তবে ধানের শীষের প্রার্থী পৌঁছার পর কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। কে এম মজিবুল হক উপস্থিত নেতাকর্মীদের বলেন, ৩০ ডিসেম্বর সকল বাধা অতিক্রম করে নির্ভয়ে আপনারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। দিনটি যেন ঈদ উৎসবের মতো হয়। বাধা আসতে পারে সেগুলোকে আপনাদের দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই সরকার মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করে রেখেছে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ের মধ্য দিয়ে আমরা দেশনেত্রীকে মুক্ত করবো। আপনারা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুন। বিজয় আমাদেরই হবে। বিকেল ৫ টায় বিএনপির মনোনিত প্রার্থী কে এম মুজিবুল হক মুরাদ নগর থানার সামনে পৌছালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে,পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তাদেরকে ধাওয়া করে।এসময় পুলিশ এসে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
গাজীপুর: গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ২০ নং ওয়ার্ড বিএনপি নেতা মোঃ শহীদকে পুলিশ মামলা না থাকা সত্ত্বেও তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। গাজীপুর-১ নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষ মনোনীত প্রার্থী চৌ: তানভির আলম সিদ্দীকির নির্বাচনী প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশন্ত্র ক্যাডারা মিছিলের উপর হামলা চালিয়ে ৪/৫ টি গাড়ী ভাংচুর করে এবং বেশকয়েকজন নেতাকর্মীকে মারধর করে গুরুত্বর আহত করে। হামলা করলো আওয়ামী সন্ত্রাসীরা অথচ মামলা হয়েছে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে। গাজীপুরের ২টি মামলায় জাতীয় নির্বাহী কমিটির শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ন কবির খান, কেন্দ্রীয় সদস্য ও পৌর মেয়র মবিবর রহমান সহ মোট ৮০ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ২টি মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নেত্রকোনা: সাবেক পৌর মেয়র মাহাবুব নবী শেখ, মদন পৌরসভার কমিশনার মাসুদ, পৌর ছাত্রদল নেতা সামি, আতিকুর রহমান রুমন, মানিক ও রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, এন আলমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়াও কেন্দুয়া থানায় বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ড. রফিকুল ইসলাম হিলালীকে প্রধান আসামী করে ২৫০ জন নেতাকর্মীর নামে দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্য বাড়ি বাড়ি পুলিশ হানা দিচ্ছে। তাদের না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের নিপীড়ন চালাচ্ছে পুলিশ। এছাড়াও একই থানায় আরও তিনটি গায়েবী মামলা দায়ের করেছে ২০৭ জন নেতাকর্মীর নামে। আটপাড়া থানায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির তালুকদার, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সহ ১০৯ জনকে আসামী করে আরও একটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। আটপাড়া উপজেলায়ও নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ তান্ডব চালাচ্ছে বলে বিএনপি অভিযোগ করে।
ঢাকা মহানগর: রমনা থানা বিএনপি নেতা আব্দুল কাদের, লিটন, হানিফ, ইমরান, ইলিয়াস, জহিরুল ও রুবেলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
নওগাঁ: নওগাঁ-১ নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের প্রার্থীর কর্মিসভা চলাকালীণ সাপাহার থানা বিএনপি’র সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আব্দুল্লাহ আনসারীকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায় এবং সাপাহার থানা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আঃ রহিমের বাড়িতে ওসি শামসুদ্দিন নিজেই তল্লাশির নামে বাড়ির আসবাবপত্র ভাংচুর ও পরিবারের সদস্যদের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শণ করছে। নির্বাচনী এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশী গ্রেফতারী অভিযান অব্যাহত আছে।
টাঙ্গাইল: গোপালপুর ও ভুয়াপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্রায় ২০ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে এবং প্রচার মাইক ভেঙ্গে ফেলেছে।
বান্দরবান: থানচি উপজেলাধীন তিন্দু ইউনিয়ন বিএনপি নেতা প্রেম থাং খুমি (হেডম্যান) কে আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি করে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। রেমাক্রি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা সন্ত্রাসী আমু মং মারমার নেতৃত্বে ধানের শীষের পোস্টার ব্যানার ছিড়ে ফেলে। প্রতিবাদ করতে গেলে বিএনপি নেতা অং সিং মারমা এবং উইক্ষাৎ অং মারমাকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। তাদের অবস্থা আশংকাজনক।

বিএনপি গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে জানায়, বরিশাল গৌরনদী পৌর বিএনপি’র সভাপতি ও জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মনিরুজ্জামানসহ অন্যান্য নেতাকর্মীদের বাসায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালাচ্ছে। হবিগঞ্জ-২ নির্বাচনী আসনের বালিয়াচং থানার ১নং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়ন বিএনপি কর্মী সাদেক হোসেন সহ ২জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঠাকুরগাঁও জেলায়বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এর গাড়ী বহর হামলায় উল্টো মামলা দেয়। সেই মামলায় ওয়ার্ড বিএনপি নেতা নুরুল আলমকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পটুয়াখালী-১ আসনে এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) আলতাফ হোসেন চৌধুরীর গনসংযোগে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সশস্ত্র হামলায় ২০/২৫ জন বিএনপি নেতাকর্মী গুরুত্বর আহত।
সুনামগঞ্জ-২ নির্বাচনী আসনে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও দিরাই পৌরসভার মেয়র মোশারফ মিয়া আওয়ামী প্রার্থী জয়া সেন গুপ্তার নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে হুমকি দিয়ে বলেন যদি নির্বাচনের দিন বিএনপি’র কোন কর্মী, ভোটার ভোট দিতে আসে তাহলে তাকে চোখ উপরে ফেলা হবে। হবিগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঝিকে জলক, ছাত্রদল নেতা শাওন, মোজাম্মেল হোসেন, সাজন মিয়া, তেগড়ীয়া ইউপি বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইয়াস উদ্দিন, যুবদল নেতা মোঃ আলম মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। নরসিংদীর রায়পুরা পৌরসভা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সোহেল ও সদস্য গুলজার মেম্বারকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ৫০/৬০ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা করেছে।
বরিশাল-২ আসনে বানাড়ী পাড়ায় গণসংযোগ কালে পথে পথে পুলিশী বাধা এবং ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করছে। কিশোরগঞ্জ জেলা বাজিতপুর উপজেলায় ৫টি ধানের শীষের নির্বাচনী অফিসে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পৌর মেয়র আশরাফের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। সন্ত্রাসীদের হামলায় ৩০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে বিএনপি নেতা আসাদ ও কালাম এর অবস্থা আশংকাজনক। বাগেরহাট জেলা সদর উপজেলায় নাগেরবাজার এলাকা থেকে ধানের শীষের নির্বাচনী পোস্টার নিয়ে যাওয়ার পথে যুবদল নেতা কামরুল শিকদারকে তার মটর সাইকেল সহ আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে। এখন পর্যন্ত তার হদিস পাওয়া যায়নি। এছাড়া ছাত্রদল নেতা জুয়েলকে তার বাসায় না পেয়ে তার বড় ভাই মামুনকে পুলিশ থানায় নিয়ে জুয়েলকে হাজির করার জন্য অত্যাচার চালাচ্ছে পুলিশ।

নরসিংদী বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতিকের পোস্টার ব্যানার আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ছিড়ে ফেলে দেয়। আওয়ামী লীগ এমপির নির্দেশে বেলাবো থানায় ১২ ডিসেম্বর ৯০ জন বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি বানোয়াট মামলা দায়ের করে। ইতিমধ্যে হাজী খুসু ভূইয়া, মস্ত মেম্বার, যুবদল নেতা রাহাত সহ ৬ জনের অধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ফেনী জেলা ছাত্রদলের সহ সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম সুমন, যুগ্ম সম্পাদক রহমত উল্লাহ জিংকু, দপ্তর সম্পাদক আরিফুল ইসলাম সুমন, ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রনেতা সাইফুল ইসলাম বাবলু, বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম বাদলকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলা শৈলকুপা থানা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল দীপু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন এবং পৌর ছাত্রদলের সভাপতি আকুলসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিশোরগঞ্জ বাজিতপুর উপজেলায় ৫টি ধানের শীষের নির্বাচনী অফিসে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পৌর মেয়র আশরাফের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে। সন্ত্রাসীদের হামলায় ৩০ জনের অধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে বিএনপি নেতা আসাদ ও কালাম এর অবস্থা আশংকাজনক।

চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা : চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের জীবননগর উপজেলায় নির্বাচনী হাওয়া শুরু হওয়ার সাথে সাথে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মাহমুদ হাসান খান বাবুর ধানের শীষের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করে অগ্নি সংযোগসহ নানা আপত্তিকর অভিযোগ উঠলেও তার প্রতিকার মিলছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিএনপির অফিসগুলোতে প্রকাশ্যে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। অন্যদিকে এসব ঘটনায় উল্টা বিএনপির নেতাকর্মীর নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
গত চারদিনের ব্যবধানে জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপির নেতাকর্মীদের মারধর ও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা এবং পোস্টার টাঙাতে না দেওয়ার অভিযোগ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে উঠলেও বুধবার রাতে সুটিয়া বাজারে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা আওয়ামীলীগের নির্বাচনী অফিসে হামলা চালিয়ে অফিস ও অফিসের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে আওয়ামীলীগের এ অভিযোগের কোন প্রত্যক্ষদর্শী খুঁজে পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি পারিবারিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের একপর্যায়ে অসুস্থ বিএনপি নেতা ডাঃ মিজানুর রহমানের ঘরে হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
এদিকে একই দিন রাতে বাঁকা বাজার মোড়ে বিএনপির নির্বাচনী অফিস রাতের আঁধারে উধাও করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। বিএনপি নেতা রাজা মালিতা জানান- আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীকে আতঙ্কিত করতে রাতের আঁধারে সামিয়ানার সমস্ত কাপড় ও পোষ্টার কেটে উধাও করে দেয়।

উপজেলা বিএনপির স¤পাদক অনোয়ার হোসেন খান খোকন বলেন, নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের পর পরই আমাদের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর ভয়ভীতি ও হামলার ঘটিয়ে আসছে প্রতিপক্ষ নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর কর্মী সমর্থকেরা। অনেক ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের নিজেদের অফিস ভাংচুর করে উল্টা বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। বৃহ¯পতিবার গভীর রাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হাতে বড় বড় দা, জিআই পাইপ নিয়ে জীবননগর পৌর এলাকায় মহড়া দেয়। আওয়ামী লীগের ওই সব নেতাকর্মীরা জীবননগর পৌর এলাকায় থাকা থানা বিএনপির কার্যালয় ও ওয়ার্ড বিএনপির নির্বাচনী অফিসসহ উপজেলায় ২০ টি নির্বাচনী অফিস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে।
এদিকে জীবননগর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ অমল বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীরা পৌর এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডে থাকা নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী অফিস বৃহ¯পতিবার রাত ১০ টার দিকে ভাংচুর করে ক্ষতি সাধন করে। অন্যদিকে একই সময়ে উপজেলার হাসাদহ ইউনিয়নের কন্দর্পপুর নির্বাচনী অফিসেও বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এ সব নেতাকর্মীদের ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এসব ঘটনায় লিখিত অভিযোগ থানায় দেয়া হয়েছে।
দিলওয়ার খান, নেত্রকোনা সংবাদদাতা : নেত্রকোণা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও নেত্রকোণা বারহাট্টা আসনের ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষের প্রার্থী অধ্যাপক ডাঃ আনোয়ারুল হক এর বাসভবনে সাড়ে ১১ টায় সাংবাদিক সম্মেলনের পরপরই দুবৃত্তরা বাসাসহ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে হামলা ও ব্যাপক ভাংচুর করে।। ঘটনার পরে পুলিশ অধ্যাপক ডাঃ আনোয়ারুল হকের বাসভবন ঘেরাও করে বিএনপির ৩২জন নেতা কর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
সাংবাদিক সম্মেলনে অধ্যাপক ডাঃ আনোয়ারুল হক বলেন, মাঠে কাজ করার মতো কোন পরিবেশ নেই। একদিকে যেমন পুলিশী হয়রানী ও ধরপাকড় চলছে অন্যদিকে সরকারি দলের লোকজন হামলা ও ভাংচুরসহ বাধাগ্রস্থ করছে নির্বাচনকে। তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রচারণার শুরুর দিন থেকেই নেত্রকোণা সদরে ১টি, বারহাট্টায় ২টি, দুর্গাপুরে ৩াট, কলমাকান্দায় ৩টি, আটপাড়ায় ১টি, কেন্দুয়ায় ৩টি মামলা হয়েছে। গতকালকে সদর উপজেলার আমতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শফিউল্লাহ্ শফি, মোহগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র মাহাবুবন্নবী শেখ, বারহাট্টা ইউনিয়ন বিএপির সভাপতি কামাল হোসেন কে পুলিশ গ্রেফতার করে। এমনাবস্থায় নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করতে ব্যহত হচ্ছে। সাংবাদিক সম্মেলনে এসময় উপস্থিত ছিলেন এড.নুরুজ্জামান নুরু, সানাউল হক মাসুম, সালাউদ্দিন খান মিলকী, আজিজুল হক। সাংবাদিক সম্মেলনের পরপরেই কিছু দুবৃত্তকারীরা ডাঃ আনোয়ারুল হকের বাসভবনে ঢুকে মোটর সাইকেসহ ব্যাপক ক্ষতি ও অপরদিকে নাবিলা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রবেশ করে ভাংচুর করে। পুলিশ এসময় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর বাসা থেকে ৩২ জন নেতাকর্মীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। নেত্রকোণা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ বোরহান উদ্দিন খান জানান নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য ৩২জনকে আটক করা হলেও ২২ জনের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলার প্রস্তুতি চলছে।

কলারোয়া (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা : গতকাল বেলা ১২ টায় সাতক্ষীরা-১ আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থী সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব কলারোয়া উপজেলা সদরে গণসংযোগের সময় ক্ষমতাসীন দলের হামলার শিকার হন। ক্ষমতাসীন দলের দফায় দফায় হামলায় প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক বজলুর রহমান সহ ৭ জন আহত হয়েছে। প্রতক্ষ্যদর্শী ও বিএনপি সুত্র জানায়, বিএনপি দলীয় প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে ঢাকা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের কলারোয়া পুলিশ ষ্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় গনসংযোগ কালে আকস্মিক ভাবে হামলার শিকার হন। কয়েক দফা হামলার সময় উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি অধ্যাপক বজলুর রহমানকে রক্তাক্ত অবস্থায় শহিদ মিনারের পাশের রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। হামলার সময় দৌড়ে বাড়ির দিকে পলায়নরত এমপি প্রার্থী হাবিবুল ইসলামকে উপজেলা মোড়ে ধরে বেধড়ক মারপিট করা হয়। এছাড়া হাবিবুল ইসলামের ভাগ্নে রোমেল, বিএনপি নেতা আনিছ, সাংবাদিক রিপন সহ ৭ জন আহত হয়। এসময় আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার জন্য আগত এ্যাম্বুলেন্স হামলাকারীরা ফেরত পাঠায় বলে প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানায়।
ঝিকরগাছা (যশোর) সংবাদদাতা : গতকাল শুক্রবার যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক তার কাউন্সিলে এক জামায়াত কর্মীকে ডেকে এনে বেধড়ক মারপিট করেছে বলে জানা গেছে। সুত্রে জানা যায় কায়েমকোলা গ্রামের জামায়াত কর্মী অহিদুল ইসলাম কে ডেকে পাঠান ইউপি চেয়ারম্যান, অহিদুল সেখানে গেলে চেয়ারম্যান তাকে নির্বাচনের আগে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন এতে সে অস্বীকৃতি জানালে চেয়ারম্যানের নিন্দেশে তার বন্ধু ইউনূস আলী তাকে লাঠিপেটা করে মারাত্মক আহত করে। সেখানে থাকা লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। অন্য দিকে পাচপোতা গ্রামের জামায়াত কর্মী ইলেকট্রনিক্স মিস্ত্রি মোঃ শাহীনকে গুন নগর মোড়ে তার দোকানে যেয়ে হামলা করেছে আওয়ামী লীগ কর্মীরা। হামলা কারীদের মধ্যে ছিলেন একই গ্রামের সবুজ, সাইফুল, মাসুদ, হেমায়েত, আশিকসহ অন্যান্য আওয়ামী লীগ কর্মীরা। অন্য একটি সুত্রে জানা গেছে শংকরপুর ইউনিয়নের ওলাকুল বাজার থেকে ইউপি সদস্য ফয়জুর রহমান, ঝিকরগাছা বাজার থেকে বস্ত্র ব্যবসায়ী মোঃ খায়রুল আলম, বাকুড়া শুকুর খোলা গ্রাম থেকে আব্দুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে ঝিকরগাছা থানা পুলিশ। ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন জেলা ও থানা বিএনপির-জামায়াত নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে তারা বলেছেন পুলিশ জামায়াত বিএনপির নেতা কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চলিয়ে গ্রেফতার, হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে যাতে জাতীয ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী মুহাদ্দীস আবু সাঈদের পক্ষে কেউ কাজ করতে না পারে,এবং যশোর ২ আসনে ধানের শীষের প্রথীর পক্ষে গণজোয়ার উঠায় তারা দিশেহারা হয়ে মাইক ভাংচুর, হামলা, মামলা, পেশী শক্তি ব্যবহার করছে।

http://www.dailysangram.com/post/357270