১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১০:১৬

নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় বেড়েছে দমনপীড়ন সৃষ্টি হয়েছে ভীতিকর পরিস্থিতি

৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও ভয় প্রদর্শনের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে হুমকিতে ফেলেছে। গতকাল শুক্রবার নিজেদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ কথা জানিয়েছে। বিবৃতিতে সংস্থাটি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন ও অন্যান্য রাষ্ট্রের প্রতি প্রচারণাকালীন সহিংসতা বন্ধ এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিতের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপর চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানায়।

এ বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা চালায়। এতে নিরাপত্তাবাহিনী নির্বিচারে আন্দোলনকারী ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও আটক করছে এরকম প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে শাসকদল আওয়ামী লীগের ছাত্র ও যুব সংগঠনের হুমকি প্রদান ও সহিংসতার কথাও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। এসব ধরপাকড় এখানে একটি ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করছে। বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো প্রচারণা ও নির্বাচনবিষয়ক বিরোধগুলো নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে সমাধান করতে পারছে না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, রাজনীতিতে নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সরকার পর্যায়ক্রমে বিরোধী মত ও স্বাধীনতাকে দমিয়ে দিচ্ছে।
প্রধান বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার, খুন ও গুমের শিকার হচ্ছে। এতে এখানে একটি দমন ও ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যা একটি নির্ভরযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বাংলাদেশের নাগরিকদের নিজেদের সরকার বেছে নেয়ার অধিকার রক্ষার্থে সরকারের উচিত, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বিরোধী দলের বিরুদ্ধে চলমান দমনপীড়ন বন্ধ করা। বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের মিডিয়া স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং সংগঠন, সমাবেশ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনে দমনমূলক আইন প্রণয়ন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
সেপ্টেম্বর মাস থেকে দমনপীড়ন তীব্র রূপ ধারণ করে। বিরোধী দল বিএনপি দাবি করেছে, সরকার তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩ লাখেরও বেশি মামলা দায়ের করেছে এবং তাদের হাজার হাজার কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিরোধী জোট ঐক্যফ্রন্টকে টার্গেট করা হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচন থেকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে এবং তাদের সদস্যরাও গ্রেপ্তারের শিকার হচ্ছে। দলটির মুখপাত্রের দাবি, শুধুমাত্র নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসেই তাদের ১৮৫৮ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিরোধী নেতাদের নির্বিচারে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ৪৬টি মামলা রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪২ মামলা। বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী সাইফুল আলম নিরবের ২৬৭টি মামলা লড়ছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা সবাইকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ নির্বাচন কমিশন শাসক দলের হয়ে কাজ করছে। যেখানে মাত্র ৩ জন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছিল সেখানে বিএনপির প্রায় ১৪১ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়েছিল।

নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হতেই, প্রতিদ্বন্দ্বী দলের সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সকল দলের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে তাদের সমর্থকরা সহিংস আচরণ থেকে বিরত থাকে। তারা বলছে, সরকারের উচিত মৃত্যু বা গুরুতর আহত হওয়া এড়াতে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃংখলা বাহিনী যেন নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখে এবং এসব ঘটনার গ্রহনযোগ্য তদন্ত করতে।
ইন্টারন্যাশনাল কভোন্যান্ট অন সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইট্স (আইএসএসপিআর) এর ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার ও সুযোগ রয়েছে ভোট দেয়ার এবং পছন্দসই প্রার্থীকে বিজয়ী করা।
অ্যাডামস বলেন, পাঁচ বছর আগে আওয়ামী লীগ সরকার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ক্ষমতায় বসে। দলটি তারপর থেকে গণতান্ত্রিক অধিকারগুলোকে উপহাসে পরিনত করে। এখন দাতা দেশগুলোর উচিত বাংলাদেশে মানবাধিক প্রতিষ্ঠায় সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করলেও, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি আসন্ন ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যদিও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন আয়োজনের জন্য তাদের দাবি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর বেশিরভাগ একইরকম। নাম, তারিখ ও স্থানভেদে কিছু পার্থক্য থাকলেও একই বিন্যাসে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এ ধরনের প্রায় ৩০ হাজার ‘মিথ্যা ও সাজানো’ মামলায় তাদের প্রায় ৩ লাখ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিছু কিছু মামলায় অভিযোগগুলো থাকে একদমই ভিত্তিহীন। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে তিনি হয় মৃত নয়তো অপরাধ সংগঠনের সময় তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ১৭ই অক্টোবর, মারা যাওয়ার এক বছর পর বিএনপি সমর্থক জসিম উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে একটি গ্যাস বোমা হামলার অভিযোগে মামলা দেয়া হয়। ২০০৭ সালে মারা যাওয়া মিন্টু কুমার দাস নামের এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে গত ১১ই সেপ্টেম্বর রাস্তা অবরোধের মামলা দেয়া হয়। মৃত, বিদেশে অবস্থানরত, পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষের বিরুদ্ধে হওয়া এ ধরনের মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল মোহাম্মদ জাভেদ পাটওয়ারি তদন্তের নির্দেশ দেন।
এছাড়াও গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন বিরোধী নেতা হামলার শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন, মানিকগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী আফরোজা খানম রিতা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগীর এবং আরেক বিএনপি প্রার্থী শরীফুজ্জামান শরীফ। বিরোধী নেতা-কর্মীদের টার্গেট করে সহিংসতার খবর ক্রমাগত বেড়েই চলেছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। সংস্থাটি দাবি করে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পুলিশ এ ঘটনা সম্পর্কে অবগত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষণায় উঠে এসেছে, গ্রেপ্তারের শিকার অনেকেই কারাগারে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। নির্যাতিত বন্দিরা অভিযোগ করেছেন, তাদের ঘুষিসহ প্লাস্টিক পাইপ কিংবা আঁখের কান্ড দিয়ে মারা হয়েছে। ৫ই মার্চ বিএনপি নেতা জাকির হোসেন মিলন (৩৮) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন শেষে ফেরার সময় গ্রেপ্তার হন। তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে আসা হয়। ১১ই মার্চ তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেসময় তিনি তার স্বজনদের জানান, তাকে ব্যাপক নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি তার দুই সন্তানকে দেখে রাখার অনুরোধ করে বলেছিলেন, আমি জানিনা আমার কি হবে। তার পরদিনই তিনি জেলে মারা যান। তার পরিবার জানিয়েছে, তার মরদেহে কালো দাগ দেখতে পেয়েছেন এবং তার আঙুলের নখগুলো তুলে ফেলা হয়েছিল। ইসলামী ছাত্র শিবিরের এক সদস্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে জানিয়েছেন, ডিবি পুলিশের কারাগারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার কানে স্ট্যাপলার ব্যবহার করা হয়েছিল। একইসঙ্গে, লাঠি দিয়ে তার হাত ও পায়ের সন্ধিস্থলে পেটানো হয়েছে, পানিতে চুবানো হয়েছে এবং তাকে গুলি করার হুমকি দেয়া হয়েছে বলেও জানায় ওই শিবির কর্মী।
মিডিয়ার স্বাধীনতা নিয়ে সুশীল সমাজের একজন সদস্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেছেন, আমি মনে করি না আমরা কখনো এত খারাপ অবস্থায় ছিলাম। এমনকি আগের সেনাশাসন চলাকালীনও মানুষের কথা বলার অধিকার ছিল। সাংবাদিকদের রুদ্ধ এবং সাধারণ নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ ও সরকারের বিরোধী ও সমালোচকদের দমনে কর্তৃপক্ষ নানা আইনের ইচ্ছামতো ব্যবহার করছে। সরকার সমালোচকদের গ্রেপ্তারে তথ্য প্রযুক্তি আইন ব্যবহার করা হয়েছে। নিরাপদ সড়কের দাবিতে হওয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ফেসবুকে প্রকাশ করায় চিত্রগ্রাহক ও অধিকারকর্মী শহিদুল আলমকে ৫ই আগস্ট গ্রেপ্তার করা হয়। ১০৭ দিন আটক থাকার পরে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, কারাগারে পুলিশ তাকে নির্যাতন করেছে। ফেসবুক পোস্টের কারণে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মইদুল ইসলামও।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে সরকারের সমালোচনা এমনকি পোস্ট শেয়ারের কারণেও গ্রেপ্তারের শিকার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। অক্টোবর মাসে তথ্যপ্রযুক্তি আইন বাতিল করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়। যা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য আরো বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হুমকির মুখে পরেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সম্পাদক পরিষদ। সাংবাদিকরা মানহানি মামলা, এমনকি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তারের ভয়ে সেলফ-সেন্সরশিপের দিকে ঝুঁকছে। একটি সংবাদপত্রের সম্পাদক জানিয়েছেন, প্রকাশিত খবরের অর্ধেকই ‘সেলফ-সেন্সরড’ হচ্ছে। একজন সাংবাদিক হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, ভয়ের চাদর দেশজুড়ে ছেয়ে যাচ্ছে। আমি জানিনা আমরা কবে এখান থেকে মুক্তি পাব। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ভয়, হুমকি ও নজরদারির বর্ণনা দিয়েছেন প্রফেসররা। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের টার্গেটের শিকার হওয়া একজন বলেছেন, আমার বন্ধু ও পরিবার আরো হামলার আশঙ্কা করছে। এটি একটি ভয়ের রাষ্ট্র। এখনো কিছু মানুষ কথা বলছেন, কিন্তু আমি জানিনা আরো কতদিন তারা পারবেন।

৯ই অক্টোবর সরকার ঘোষণা করেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে গুজব শনাক্ত করতে ৯ সদস্যবিশিষ্ট পর্যবেক্ষণ সেল তৈরি করা হয়েছে। এই সেলটি বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে মিলে ইন্টারনেট সেন্সরের কাজ করছে। একইসঙ্গে, তারা অনলাইন যোগাযোগ পর্যবেক্ষণ করছে এবং ‘গুজব রটনাকারী ও রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রমে’ জড়িতদের গ্রেপ্তার করছে। একটি গণমাধ্যম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশের সাইবারক্রাইম ইউনিটের নিয়ন্ত্রণে ১০০টি পুলিশ দল দেশজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পর্যবেক্ষণের জন্য তাদের ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণের সবধরনের প্রযুক্তি দেয়া হয়েছে। ১০ই ডিসেম্বর ৫৮টি সংবাদ ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, এটি একটি পরীক্ষামুলক শুরু। মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে এরকম আরো ওয়েবসাইট বন্ধ করা হবে। একটি সংবাদপত্রের সম্পাদক হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেন, গোয়েন্দা বিভাগ ও পুলিশ পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে।

২০১৪ সালে নির্বাচন কমিশনের অবস্থান ও কার্যক্রমের প্রতি উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের উন্নয়নের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে দেয়া অনেক আর্থিক সাহায্য বাতিল করা হয়েছিল। এতে অর্থায়ন করেছিল ‘ইউকে ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’। সংস্থাটি জানায়, ২০১৩-এর পর থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন তার বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এবারও, নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণ নিয়ে বিএনপির তোলা অভিযোগের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থাগুলো নির্বাচন কমিশনের প্রতি তাদের অর্থনৈতিক সাহায্য বাতিল করে।
২০১৭ সালে অধিকার নামে ঢাকাভিত্তিক একটি মানবাধিক সংস্থা ৮৬টি গুমের ঘটনা রেকর্ড করে। এ বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত এরকম ঘটনা ছিল আরো ৭১টি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ দাবি করেছে, কখনো গুম হওয়া কাউকে ছেড়ে দেয়া হয় বা কখনো আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তাদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। অধিকার নভেম্বর মাসে ১২টি জোরপূূর্বক গুমের ঘটনা রেকর্ড করেছে। ১৮ই নভেম্বর ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সোহাগ ভুঁইয়া নামের এক ছাত্রদল নেতাকে আটক করা হয়। ২৮শে নভেম্বর, একই পরিচয় দিয়ে রবিউল আউয়াল নামের আরেক অনলাইন এক্টিভিস্টকে আটক করা হয়। এরপর থেকে তাদের আর কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের বিচার বিভাগের উপর রাজনৈতিক চাপ এবং নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার হুমকির অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত নিজের আত্মজীবনীতে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা দাবি করেন, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল মামলাগুলো প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন।

http://www.dailysangram.com/post/357282