১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৫৬

দেশি মাছের দাম লাগামছাড়া

রাজধানীর কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট। চালের দোকানগুলোর ভেতর দিয়ে মাছের বাজারে ঢুকতেই প্রথম মাছের দোকানটিতে চোখ পড়ল। কারণ এই দোকানের সব মাছই তাজা, সারাক্ষণই নড়ছে। সতর্ক না থাকলে মাছের পানি শরীরে লাগার শঙ্কা রয়েছে। এ দোকানে বিক্রিই হয় শিং ও মাগুর মাছ। দেশি মাছের স্বাদ নিতে চায় এমন মানুষগুলোর জন্য ভালো লাগার বিষয় হলো এখানে দেশি শিং ও মাগুর মাছ পাওয়া যায়। দাম কিন্তু লাগামছাড়া। প্রতি কেজি দেশি মাছ ৬৫০-৭০০ টাকার নিচে বিক্রি হয় না, যেখানে চাষের শিং ও মাগুর মাছ বিক্রি হয় ৪০০-৫০০ টাকার মধ্যে। এই শীতে অনেকেরই নতুন আলু-বেগুন দিয়ে দেশি শিং মাছের ঝোল খাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও দামের কারণে তা আর হয়ে ওঠে না। আবার অনেকে বেশি দাম দিয়ে হলেও শুধু এই মাছ কেনার জন্যই দোকানটিতে আসে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে দোকানটির সামনে দাঁড়িয়ে দেখা গেল, অনেকেই আগ্রহভরে মাছের দাম জানতে চাইছে। তবে বেশি দামের কারণে অনেকেই বাজারের ভেতরে চলে যায়। অনেকে দরাদরি করে যখন দেখে বিক্রেতা নাছোড়, তখন আর কিনছে না।

এমন এক ক্রেতা আমিনুর রশিদ। তিনি বলেন, ‘বেশি দাম, তাই পছন্দ হলেও উপায় নেই। সারা মাস হিসাব করে চলতে হয়। অন্য মাছ কিনব।’
তবে সুমন নামের এক ক্রেতা এই দোকান থেকেই শিং মাছ কেনেন ৬৫০ টাকা কেজি দরে। তিনি বলেন, ‘সব সময় দেশি মাছ খাওয়া হয় না। মাঝেমধ্যে কিনি, সেটাও শুধু বাড়তি স্বাদের আশায়।’
ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে মাছগুলোর উৎপাদন প্রাকৃতিক উৎসগুলোতে সেগুলোকেই দেশি মাছ হিসেবে মনে করা হয়। নদী-নালা, খাল-বিল থেকেই এসব মাছ পাওয়া যায়। আর যে মাছগুলো বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সেগুলো ‘চাষের মাছ’ হিসেবে পরিচিত। ভোক্তাদের মধ্যে একটি ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে দেশি মাছের স্বাদ বেশি। তুলনামূলকভাবে চাষের মাছের স্বাদ কিছুটা কম। তবে দেশে বাণিজ্যিকভাবে প্রচুর পরিমাণ মাছ চাষ হয় বলে বাজারে এখন চাষের মাছেরই আধিক্য। ভোক্তারাও বাধ্য হয়ে এতেই মানিয়ে নিয়েছে। কারণ ঢাকার এলাকাভিত্তিক বাজারগুলোর মধ্যে অনেকগুলোতে দেশি মাছ পাওয়াই যায় না।
রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে টেংরা মাছ পাওয়া যায়। এগুলোর বেশির ভাগই চাষের। যদিও একসময় নদী বা বিলের প্রচুর টেংরা মাছ পাওয়া যেত। এখনো কিছুটা দেশি টেংরা পাওয়া যায়। তবে সেগুলোর দামও একটু চড়া।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি চাষের টেংরা যেখানে প্রকারভেদে ৩৫০-৪৫০ টাকায় বিক্রি হয় সেখানে দেশি টেংরা মাছ ৫০০-৫৫০ টাকার কমে কেনা যায় না। রামপুরা বাজারে কয়েকজন দোকানি পাবদা মাছ বিক্রি করছিলেন ৪০০-৪৫০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু বিক্রেতা আনিছ প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা করে পাবদার দাম চাইছিলেন। ক্রেতারাও অনেকে দাম শুনে বিরক্ত হচ্ছিল। বেশি দামের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মামা, দেশি পাবদা। চেহারাই তো আলাদা। না খাইলে কি আর স্বাদ বোঝা যায়।’
শুক্রাবাদ কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি কই মাছ বিক্রি হচ্ছিল ১৬০-১৮০ টাকার মধ্যে। এদের মধ্যে এক বিক্রেতা সাইফুল দেশি কই বলে প্রতি কেজি ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি করছিলেন।
বিক্রেতারা জানান, বাজারে বিভিন্ন সাইজের রুই মাছ বিক্রি হয়। বিক্রেতাদের কাছে এটা মোটামুটি কমন মাছ। ছোট ও মাঝারি মানের রুই মাছই বিক্রি হয় বেশি। বেশি বড় আকারের রুইগুলো মোটামুটি অবস্থাসম্পন্ন মানুষ ছাড়া বিক্রি কম হয়। ঢাকায় বেশির ভাগ ছোট ও মাঝারি মানের রুই মাছই এখন চাষের বলে জানায় বিক্রেতারা। এর বাইরে কিছু কিছু ছোট দেশি মাছ বিক্রি করতে দেখা যায়, যেগুলো ৪৫০-৫০০ টাকা কেজির কমে পাওয়া যায় না। দেশি কাজুলি মাছ প্রতি কেজি ৬০০-৬৫০ টাকার নিচে পাওয়াই মুশকিল। সুপারশপগুলোতে এই মাছের দাম ৭০০ টাকারও বেশি।

তবে কিছু অভিযোগও রয়েছে। অনেক ক্রেতা জানায়, বিক্রেতারা দেশি দেশি বললেও আসলে চাষের মাছই বিক্রি করে। তারা মিথ্যা বলে গ্রাহককে ঠকায়। রামপুরায় বাজার করতে আসা এমন এক ক্রেতা শাহিনুর রহমান বলেন, ‘কত বিক্রেতাই তো বলে দেশি দেশি। বাসায় নিয়ে যখন রান্না করা হয় তখন স্বাদ বলে দেয় এগুলো দেশি নয়। কয়েক দিন আগে এ রকম করে রুই মাছ কিনে আমি ঠকেছি।’
শুধু মাছ নয়, এখন আসলে দেশি মুরগি নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছে। ঢাকায় দেশি মুরগির জায়গা অবশ্য দখল করেছে সোনালি। ব্রয়লারের পর সোনালিই বেশি বিক্রি হয় বলে জানায় ক্রেতারা। তবে বিভিন্ন মহল্লার ভেতরে বিক্রেতারা যেসব মুরগি দেশি বলে ডেকে ডেকে বিক্রি করে সেগুলো দেশি নয়। ছোট আকারের এসব মুরগি একেকটা বিক্রি হয় ১৮০-২২০ টাকা দরে, যেখানে একই সাইজের একটি দেশি মুরগি কিনতে ২৮০-৩০০ টাকা পড়বে বলে জানায় বিক্রেতারা।

 

 

http://www.kalerkantho.com/online/business/2018/12/14/714479