১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৫৫

অব্যাহত হামলা ভাংচুর ও গ্রেফতারের মধ্যেই চলছে বিরোধী দলের প্রচারণা

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার চতুর্থদিনে গতকাল বৃহস্পতিবার সারাদেশে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের নির্বাচনী মিছিল, সমাবেশ ও নির্বাচনী অফিসে প্রতিপক্ষ আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক হামলা-ভাংচুর চালিয়ে বিরোধী দলের বহু নেতাকর্মী ও সমর্থককে করেছে আহত। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ, মিছিলে ও গাড়ি বহরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। একই সাথে পুলিশও চালিয়েছে ব্যাপক ধড়পাকড় ও গ্রেফতার। ধানের শীষের প্রর্থীরা অভিযোগ করেছেন, তাদের নির্বচনী কাজে বাধা দিচ্ছে পুলিশও। অহেতুক নেতাকর্মীদের করছে গ্রেফতার-হয়রানি। এছাড়াও আছে গায়েবি মামলা। থানায় হামলা-ভাংচুরের অভিযোগ করেও পাওয়া যাচ্ছে না কোন ফল। থানা আমলে নিচ্ছে না অভিযোগ। ফলে নির্বচনী পরিবেশ হচ্ছে নষ্ট। আমাদের জেলা ও ব্যুরো অফিস এবং সংবাদদাতারা এ খবর জানান।
খুলনা অফিস : খুলনা-৪ (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) আসনে ধানের শীষের কর্মীসমর্থকরা হামলা, নির্যাতন ও মামলার শিকার হচ্ছেন অভিযোগ করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী আজিজুল বারী হেলাল বলেছেন, এ বিষয়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার মিলছে না। প্রশাসনের দলীয় অনুগত ও চিহ্নিত দলবাজ কর্মকর্তারা দায়িত্বে বহাল থাকলে নির্বাচন কোনমতেই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হবে না বলে মনে করেন তিনি। নিরপেক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তাদের পদায়নের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়ে হেলাল বলেন, সন্ত্রাসী লেলিয়ে হামলা চালিয়ে এবং গায়েবী মামলায় কারাগারে পাঠানো হলেও বিএনপি নির্বাচনের মাঠ ছাড়বেনা। বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বিএনপি নেতা আজিজুল বারী হেলাল এ অভিযোগ করেন। বেলা সাড়ে ১১ টায় অনুষ্ঠিত জণাকীর্ণ এ সাংবাদিক সম্মেলনে হেলাল বলেন, নির্বাচনের আগে থেকেই গায়েবী মামলা দায়ের শুরু হয়। রূপসা থানায় ৪টি, তেরখাদায় ২টি ও দিঘলিয়া থানায় দুইটি গায়েবী মামলায় তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামী এবং ৫০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। যা নির্বাচনের প্রস্ততি কাজে ব্যাপক বিঘœ সৃষ্টি করে। এছাড়া প্রতীক বরাদ্দের পর ৯ তারিখ সন্ধ্যায় রূপসার আনন্দনগর গ্রামে ছাত্রদলের কর্মী সমাবেশে যোগ দেয়ার সময় সন্ত্রাসী হামলায় আমিনুল ইসলাম, নুর ইসলাম, মাসুদ ও শফিককে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। আহত আরো ৭/৮ জনকে স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা দেয়া হয়। ১১ ডিসেম্বর রাতে দিঘলিয়ার সেনহাটি ইউনিয়ন থেকে নির্বাচনী প্রচারনা শেষ করে তেরখাদার মধুপুর ইউনিয়নের মোকমপুর বাজারে আসলে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা মহসিন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ৫০/৬০ জন আওয়ামী লীগ দলীয় সন্ত্রাসী আমাদের ওপর হামলা চালায়। এ হামলায় তেরখাদা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন, যুবদল নেতা আজিজুল ইসলামসহ ৫/৭ জন গুরুতর আহত হয়। এছাড়া নাসিরপুর গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার মোঃ নাসিরকে সন্ত্রাসীরা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। স্বেচ্ছাসেবক দলের আইচগাতি ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ নির্বাচনী প্রচার মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার সময় মিন্টু মেম্বারের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা তাকে গুপ্তি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে।
আজিজুল বারী হেলাল বলেন, এ সব অভিযোগ নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে যাওয়া হলেও কোন প্রতিকার মেলেনি। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন স্বতন্ত্র সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও সরকারের ইচ্ছাপূরণে নিয়োজিত।

সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি শেখ মুজিবর রহমান, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি খান জুলফিকার আলী জুলু, শেখ আব্দুর রশিদ, এডভোকেট মোমরেজুল ইসলাম প্রমুখ।
সাংবাদিক সম্মেলনের আগে সকাল ১১টায় আজিজুল বারী হেলাল খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে আইনজীবীদের সাথে মতবিনিময় করেন। জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নুরুল হাসান রুবা, সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান নান্নুসহ সর্বস্তরের আইনজীবীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা ৩ (দৌলতপুর-খালিশপুর-খানজাহান আলী) আসনের বুধবার ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত সংসদ সদস্য পথপ্রার্থী অধ্যক্ষ মাওলানা মোজাম্মেল হক এর ১১ নং ওয়ার্ডের আওতাধীন প্লাটিনাম আবাসিক কলোনিতে নির্বাচনী গণসংযোগকালে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিত হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে প্রার্থীসহ প্রায় ১০ জন আহত হয়েছে । গুরুতর আহত প্রার্থী মাওলানা মোজাম্মেল হক (৫৫), তার ছেলে তানভীর হক (২৪), হাসিবুর রহমান (২১) ও রাকিবুল ইসলাম (২৭) কে দের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ হামলার ঘটনায় ইসলামী আন্দোলন খালিশপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। খালিশপুর পিপলস থেকে প্লাটিনাম থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। এখান থেকে অবিলম্বে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নগরীর ফেরীঘাট মোড়স্থ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের খুলনা জেলা ও মহানগর কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এ দাবি জানান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দল্লাহ ইমরান, মহানগর সহ-সভাপতি মাওলানা মুজাফ্ফার হোসাইন, শেখ মো. নাসির উদ্দিন, নগর সেক্রেটারী মুফতী আমানুল্লাহ, জেলা সেক্রেটারী, শেখ হাসান ওবায়দুল করীম, মাওলানা ইমরান হুসাইন, গোলাম মোস্তফা সজীব মোল্লা, তরিকুল ইসলাম কাবির প্রমুখ।

কুমিল্লা অফিস : কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াত নেতা ডা.তাহের এর সমর্থনে পূর্ব ঘোষিত গণমিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীর। বৃহস্পতিবার সকালে চৌদ্দগ্রাম বাজারে ধানের শীষের পক্ষে গণমিছিলের অনুমতি চেয়ে পুলিশের নিকট মঙ্গলবার আবেদন করা হয়। পুলিশ বুধবার বিকেলে জানাবে বলে রাত ১০টায় জানায়, কৃষকলীগ দুইদিন আগে আবেদন করেছে। তাই ধানের শীষের মিছিল করা যাবে না। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে কৃষকলীগের কোন প্রকার ব্যানার ছাড়াই ছাত্র ও যুবলীগের শতাধিক কর্মীকে পুলিশ পাহারায় মিছিল করতে দেখা যায়। এ যেন পুলিশ নৌকা মার্কাকে বিজয় করার দায়িত্ব নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন কুমিল্লা-১১ চৌদ্দগ্রাম আসনের ধানের র্শীষ প্রতীকের প্রধান নির্বাচন পরিচালক আবদুস সাত্তার।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, প্রতীক বরাদ্দের আগে থেকেই বর্তমান রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের নৌকা প্রতীকের সমর্থনে প্রশাসনের সহায়তায় নেতাকর্মীরা মিছিল অব্যাহত রেখেছে। অপরদিকে প্রতীক বরাদ্দের পর ধানের শীষের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার, হামলা, নির্বাচনী অফিস ভাংচুর ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে পুলিশ এবং আ’লীগের দলীয় সন্ত্রাসীরা। প্রশাসনের সহায়তায় এবং কোথাও কোথাও পুলিশের গাড়িতে করে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের ঘুরতে দেখা যায়। এতে তারা আরও উৎসাহিত হয়। আর বিভিন্ন বাজারে অবস্থানরত ধানের শীষের সমর্থক ও কর্মীদের নির্বাচনের দিন না থাকতে হুমকি দেয়া হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন ও আ’লীগ সন্ত্রাসীদের বাধার মুখে ধানের শীষ প্রতীকের পূর্ব নির্ধারিত চৌদ্দগ্রাম বাজারের গণমিছিল ও গণসংযোগ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে।
এছাড়া বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলার শুভপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা জুপুয়া, ধনিজকরায়, স্থানীয় যুবলীগ সন্ত্রাসীরা কালিকাপুর ইউনিয়নের বিজয়পুর, ছুপুয়া, আবদুল্লাহপুর, ঘোলপাশা ইউনিয়নের হাঁড়িসর্দার বাজার, নারায়নপুর, চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার ফালগুনকরা, চান্দিশকরা, কনকাপৈত ইউনিয়নের করপাটি, তারাশাইল, পন্নারা, জঙ্গলপুর, হিংগুলা, চিওড়া ইউনিয়নের ধোড়করা, চিওড়া, ঘোষতলসহ বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষের পোস্টার ছিড়ে ও পুড়ে ফেলেছে। মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ফেলনা গ্রামে অস্ত্র মামলার আসামী ইমাম হোসেনের নেতৃত্বে যুবলীগ সন্ত্রাসীরা ধানের শীষের ব্যানার-পোস্টার ছিড়ে ও পুড়ে ফেলে। কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে সাংবাদিক বেলাল হোসাইনের মোটর সাইকেল নিয়ে যায় পুলিশ। বাতিসা ইউনিয়নের চান্দকরা গ্রামে পোস্টার লাগানোর সময় ধানের শীষের কর্মী সবুজকে সন্ত্রাসীরা মারধর করে।
এদিকে পুলিশ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের অব্যাহত সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ডাঃ সৈয়দ আবদুল্লাহ মোঃ তাহের। বিবৃতিতে তিনি বলেন, চৌদ্দগ্রামের ৮০ ভাগ মানুষ ধানের শীষের পক্ষে রয়েছে। জনতার ব্যাপক সাড়া দেখে আ’লীগের মাথা খারাপ হয়ে পড়েছে। তাই পুলিশের সহায়তায় বিভিন্নস্থানে হামলা অব্যাহত রেখেছে। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে জনগণ ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ধানের শীষকে বিজয়ী করে আ’লীগের জুলুম-নির্যাতনের জবাব দিবে, ইনশাআল্লাহ। অবিলম্বে নির্বাচনের পরিবেশ শান্ত রাখতে পুলিশ প্রশাসনকে নিরপেক্ষ ভুমিকা এবং নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ ভূমিকা পালনেরও আহ্বান জানান তিনি।
মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা : মুন্সীগঞ্জ সদরের বজ্রযোগীনি ইউনিয়নে বিএনপির নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুরের ঘটনায় প্রতিবাদ সভা করেছে জেলা বিএনপি।

বুধবার সকাল ১০টার দিকে সদর উপজেলার বজ্রযোগীনি ভাংঙ্গা এলাকায় জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হাইয়ের নেতৃত্বে প্রতিবাদ সভা করে বিএনপি ও তার অংগ সংগঠনের নেতা কর্মীরা।
বজ্রযোগীনি ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তোতা জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে আওয়ামীলীগের লোকজন নির্বাচনী ক্যাম্প ভাংচুর করে। এছাড়া পোষ্টার ছেড়ে অগ্নী সংযোগ করে। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বজ্রযোগীনি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল, সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদ মাহ্বুব কামাল, বিএনপির অংগ সংগঠনের নেতা কর্মীরা।
চকরিয়া সংবাদদাতা: চকরিয়ায় নির্বাচনী সহিংসতায় পৌরসভার সাবেক মেয়রসহ ধানের শীষ প্রতীকের ১০ অনুসারি আহত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কয়েক দফা এ হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপরই পৌরশহরের চিরিঙ্গায় উত্তেজনা বিরাজ করে। ধানের শীষের প্রার্থী হাসিনা আহমদের দাবি, বিকালে গণসংযোগ ও প্রচারণা চালানোর সময় একইদিনে দু‘স্থানে আওয়ামীলীগের নেতাকমীরা হামলা চালিয়েছে। হামলাকারীরা নৌকার প্রার্থী জাফর আলমের। হামলায় চকরিয়া পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দারসহ ১০ জন আহত হয়েছে, ভাংচুর করা হয়েছে ৫টি মোটর সাইকেল। আহতদের মধ্যে সাবেক মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দারের অবস্থা আশংকাজনক বলে জানা গেছে। এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তেইশদলীয় জোটের প্রার্থী এডভোকেট হাসিনা আহমদ। অন্যদিকে নৌকা মার্কার প্রার্থী জাফর আলম অভিযোগটি সত্য নয় বলে দাবি করেন।
ঝিকরগাছা (যশোর) সংবাদদাতা : গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির অফিস ভাংচুর করেছে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মীরা।জানা গেছে ঝিকরগাছা থানা বিএনপির উদ্যোগে এক জরুরী বৈঠক বসে ঝিকরগাছা বাজারে অবস্থিত তাদের নিজস্ব কার্যালয়ে, এতে উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সাবিরুল হক সাবু, জেলা বিএনপি নেতা জনাব ইসহাক আলী, থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোরতেজা ইলাহী টিপুসহ থানা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। বৈঠকে সমবেত হন বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে আগত বিএনপির নেতারা। বিএনপির নেতারা অভিযোগ করে বলেছেন বৈঠক শুরুর পর নৌকা প্রতিকের মনোনয়ন প্রাপ্তি মেজর নাসিরের নির্দেশে তার ১০০ গুন্ডা বাহিনী বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আসবাব পত্র ভাংচুর করে ও নেতা কর্মীদের লান্চিত করে, এসময় পাশে থাকা প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জেলা ও থানা বিএনপির নেতৃবৃন্দ। এদিকে ঐক্য ফ্রন্টের প্রার্থী মুহাদ্দীস আবু সাঈদের ধানের শীষের পুলিং এজেন্টদের হয়রানি, হুমকি ও নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন তার প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট। অন্য দিকে জানা গেছে ঝিকরগাছা থানা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল আলিম ও নাভারন ইউনিয়নের জামায়াত নেতাকে কোন মামলা ও ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় এক যৌথ প্রতিবাদ বিবৃতি দিয়েছেন জেলা ও থানা জামায়াত নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে তারা বলেছেন আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ জামায়াত বিএনপির নেতা কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান চলিয়ে গ্রেফতার, হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে যাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের একক প্রার্থী মুহাদ্দীস আবু সাঈদের পক্ষে কেউ কাজ করতে না পারে এবং যশোর ২ আসনে ধানের শীষের প্রথীর পক্ষে গণজোয়ার উঠায় তারা দিশেহারা হয়ে মাইক ভাংচুর, হামলা, মামলা, পেশী শক্তি ব্যবহার করছে। জামায়াত নেতারা প্রশাসনের এ নগ্ন হস্তক্ষেপ বন্ধ ও প্রচার, গণসংযোগ, সমাবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে নির্বাচন কমিশনের নিকট জোর দাবি করেছেন।

গাজীপুর সংবাদদাতা : গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা থেকে বৃহস্পতিবার ভোররাতে গাজীপুর-৩ আসনের ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ইকবাল সিদ্দিকীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক গাজীপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির সরকার ও শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক আব্দুল মোতালেবকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শ্রীপুর থানার এসআই মাহমুদুল হাসান জানান, গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় নাশকতার মামলায় হুমায়ুন কবির সরকার ও আব্দুল মোতালেবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর শ্রীপুর উপজেলার রাজেন্দ্রপুর এলাকায় মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে নাশকতা সৃষ্টির ঘটনায় শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার তদন্তকালে হুমায়ুন কবির সরকার ও আব্দুল মোতালেবের সংশ্লিষ্টতার পাওয়া যাওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাদেরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করেন। আগামী সোমবার গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ড শুনানী হবে বলে জানান, আদালত পরিদর্শক মো. রবিউল ইসলাম।
সাঁথিয়া (পাবনা) সংবাদদাতা : ৬৮, পাবনা-১ (সাঁথিয়াÑবেড়া আংশিক) আসনের ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ড. অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। এঘটনায় ৪ জন আহত হয়েছে। উপজেলা ছাত্রলীগের সম্পাদকের নাম উল্লেখ করে কমপক্ষে ২০ জনকে আসামী করে থানায় অভিযোগ দায়ের।

অভিযোগে জানাযায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাবনা-১ আসনের ঐক্যফ্রন্টের নেতা ধানের শীষ প্রার্থী অধ্যাপক আবু সাইয়িদ নির্বাচনী প্রচারণায় বেড়ার বাসা থেকে বের হন। ১১ টার দিকে সাঁথিয়া উপজেলার সাঁথিয়া বাজারের শিমুলতলা মোড় নামক স্থানে পৌঁছালে একদল দুর্বৃত্ত তার জীপ গাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় হামলাকারীরা জীপটি বিভিন্ন অংশে ভাংচুর চালায়। যার নং ঢাকা মেট্রো-ঘ ১১-৩৯৫০। অবস্থা বেগতি দেখে ধানের শীষের প্রার্থী আবু সাইয়িদ তার ভাঙ্গা জীপ গাড়িটি নিয়ে সোজা সাঁথিয়া থানায় আশ্রয় গ্রহণ করেন।

ভাংচুরের ঘটনায় কমপক্ষে ৪ জন আহত হয়েছে বলে জানান আবু সাইয়িদ। তারা হলো জাকির হোসেন, মনোয়ার পারভেজ মানিক, নাজমুল হোসেন ও সাইফুল ইসলাম। গাড়ি বহরে থাকা তিনটি মটোর সাইকেল ছিনিয়ে নেবার অভিযোগও করেন গণফোরাম নেতা। পরে প্রথম দফায় আবু সাইয়িদ থানা পুলিশ ও সহকারী রির্টানিং অফিসার জাহাঙ্গীর আলমের নিকট মৌখিকভাবে অভিযোগ করে তার নির্ধারিত প্রচার সভায় যোগদান করেন। এ ঘটনায় পাবনা-১ নির্বাচনী এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

এদিকে হামলার ঘটনায় সাঁথিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সানাউল্লাহ ছানাকে প্রধান আসামী করে ৭ জনের নাম উল্লেখ করে প্রায় ২০ জনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বিকালে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ বাদী হয়ে সাঁথিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগের কথা স্বীকার করে বলেন, এলাকার অবস্থা বর্তমানে শান্ত রয়েছে।
এবিষয়ে বেড়া সার্কেল জিহাদুল রহমান জানান, ধানের শীষের প্রার্থীর গাড়িতে হামলা যেই করুক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সহকারী রির্টানিং অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গণফোরামের নেতা আবু সাইয়িদ এসেছিল। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দিয়েছি।
মহেশপুর (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা : আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে, ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী জননেতা মো: মতিয়ার রহমান। নৌকার প্রার্থী এ্যাড. শফিকুল আযম খাঁন চঞ্চল। নির্বাচনী প্রচারনায় নৌকার প্রার্থী চঞ্চল অবাধে, নির্বিঘেœ এলাকায় জন সংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। সমগ্র এলাকায় নৌকার পোষ্টারে ছেয়ে গেছে। অথচ ধানের শীষের পোষ্টার টানিয়ে দেয়ার সাথে সাথে তা ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। ধানের শীষের প্রার্থী মতিয়ার রহমান এখনো পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের নিয়ে মাঠে ময়দানে কাজ করতে পারছেনা পুলিশের অসহযোগীতার কারনে। বিনা কারনে প্রার্থীর বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। সরোজমিনে আমাদের-এ প্রতিনিধি এলাকার সাধারন ভোটারদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, আমরা সকল বাঁধা-বিপত্তিকে উপক্ষে করে ভোট কেন্দ্রে যাব। এব্যাপারে প্রার্থীসহ নেতা-কর্মীদের অহেতুক হয়রানি না করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকার শান্তিকামী জনগণ ও বিএনপির নেতৃবৃন্দ।

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম-১০ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে নির্বাচন কে প্রহসনে পরিণত করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার ষড়যন্ত্র করছে কিন্তুু তাতে কোন লাভ হবে না। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণের কৌশলের কাছে সরকারের অপকৌশল বুমেরাং হয়ে যাবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম-১০ আসনের শুলকবহর ওয়ার্ডে গণসংযোগ শুরু করার প্রাক্কালে আবদুল হামিদ সড়কে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী সমাবেশে সমবেত এলাকাবাসী ও বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দানকালে আবদুল্লাহ আল নোমান একথা বলেন।
মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি আশরাফ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্টিত সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপি নেতা এ.এম. নাজিম উদ্দিন, কাজী আকবর, কাজী বেলাল, মোশারফ হোসেন দিপ্তী, আহমেদুল আলম রাসেল, কাজী শামসুল আলম, হাসান ওসমান, শেখ রাসেল নেজাম উদ্দিন, শহীদুল আলম খসরু, মোহাম্মদ আজাদ, সাইফুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম বেলাল, মহসীন কবির, দেলোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ সাদেক প্রমুখ।

সমাবেশ শেষে আবদুল্লাহ আল নোমান শুলক বহর ওয়ার্ডের আবদুল লতিফ সড়ক, মির্জাপুল, নিজ শহর, শেখ বাহারুল্লাহ লেন এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ করেন। গণসংযোগকালে তিনি এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেন, ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করেন এবং ৩০ ডিসেম্বর সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান।
যশোর সংবাদদাতা : গতকাল বৃহস্পতিবার যশোরের তিনটি জাগায় ধানের শীষ প্রতীতকের প্রচারকর্মী ও নির্বাচনী কার্যালয় পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা হয়েছে । এতে সাংবাদিকসহ অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আহত ৫ জনকে গরুত্বর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় যশোর-৩ আসনের প্রাথী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত এক সাংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রিটাংনিং অফিসারের কাছে নির্বাচনী সহিংতা বিষয় লিখিত ভাবে পাঁচটি অভিযোগ দেয়া হলে এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে আওয়ামী সন্ত্রসী ও প্রশাসন একাট্ট্রা হয়ে ধানের শীষের কর্মীদের মাঠ ছাড়া করে একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিছে।
গতকাল দুপুরে প্রথম হামলাটি ঘটে যশোর সদর উপজেলার হালসা গ্রামে। সেখানে ধানের শীষের প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের সমাবেশস্থলে ককটেল হামলা ঘটনা ঘটে। হামলার পর সন্ত্রাসীরা সমাবেশস্থলে থাকা চেয়ার ভাঙচুর করেছে মাইক নিয়ে চলে যায়। এ সময় অন্তত দুটি ককটেল ছোড়া হয়।
এ ঘটনায় ধানের শীষের ২০ জন কর্মী আহত হন। এদের মধ্যে ৫ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন জুয়েল (৩৪), মহিদুল ইসলাম (৩৯), দাউদ হোসেন (৩৬), তাজু হোসেন (৩২), ইমামুল ফরহাদ (২৪)।

এ দিকে বিকেল ৪টারদিকে শহরের মুড়লী এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণার অফিস উধদ্বোধন যান বিএনপি প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। এসময় অস্ত্রধারীরা হামলা চালায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর। এতে সময় টিভির যশোর প্রতিনিধি জুয়েল মৃধা ও ক্যামেরাপার্সন আবুল কালাম আজাদ, প্রথম আলো পত্রিকার ফটোসাংবাদিক এহসানুল হক মিথুন, লোকসমাজ পত্রিকার ফটো সাংবাদিক এমআর মিলন, নগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চুসহ অন্তত ১০ জন আহত হন।
অপর হামলা ঘটনা গটেছে যশোর-২ নিবাচনী এলাকায়। সে খানে ধানেশীস প্রাতী মুহাদ্দিস আবু সাইদদের নির্বাচনী কার্যালায় তছনছ করে আওয়ামী সন্ত্রসীরা।
বিকেলে যশোরে-৩ নির্বাচনী এলাকার প্রাথী অমিত ঘটনার প্রতিবাদে যশোর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার প্রথমদিন থেকেই ধানের শীষের কর্মীদের উপর হামলা হচ্ছে। প্রচার- মাইক ভেঙ্গে দেয়া হচ্ছে। পোস্টার ছিড়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার ককটেল হামলা, নিবাচনী কার্যারয় ভাংচুরের ঘটনা ঘটলে। এ নিয়ে জেলা রিটানিং অফিসারে কাছে অনন্ত পাঁচটি আভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখনও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যার ফলে সন্ত্রাসীরা আরও বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা আমাদের মাঠ ছাড়া করে একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে।

 

http://www.dailysangram.com/post/357123