৭ ডিসেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৩৯

সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে জামায়াত প্রার্থীকে ঠেকাতে চলছে গণগ্রেফতার

আব্দুস ছামাদ খান, বেলকুচি(সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতাঃ- একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া-সলংগা) আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা, ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও বর্তমান জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ্ব মাওঃ রফিকুল ইসলাম খান ২৩ দলীয় জোটের মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হওয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ছেলে তানভীর ইমামের নির্ঘাত পরাজয় অবস্থা বুঝতে পেরে এখন তাদেরই ইঙ্গিতে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার চলছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ৩৪ জন জামায়াত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কোন ধরনের মামলা বা গ্রেফতারী পরোয়ানা ছাড়াই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও পুলিশ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশির নামে আতংক সৃষ্টি করছে বলে উল্লাপাড়া জামায়াতের আমীর ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক শাহজাহান আলী জানান।
সিরাজগঞ্জ-৪ আসনের আ.লীগ প্রার্থী তানভীর ইমামের বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠেছে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন কোনো আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে নানা শঙ্কা বিরাজ করছে। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ্ব মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সিরাজগঞ্জ সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে এক লিখিত অভিযোগে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গত ১৮ সেপ্টেম্বর নির্বাচন আচরণবিধি প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করেছে। সেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া-সলংগা) আসনের আ’লীগ প্রার্থী তানভীর ইমাম উল্লাপাড়া বিভিন্ন সড়কের মোড়ে ছবি সম্বলিত পোস্টার স্থাপন করেছেন এবং নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী সভা সমাবেশ সোডাউন বেদমছে করে যাচ্ছেন।

সাধারণ ভোটারগণ অভিযোগ করেছেন সরকারদলীয় প্রার্থী তানভীর ইমাম প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের ছেলে হওয়ায় প্রশাসন তার পক্ষে সহায়তা করছেন। যে কারণে সে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই প্রতিনিয়ত নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে যাচ্ছেন।
উল্লাপাড়া থানা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক শাহজাহান আলী বলেন, জামায়াতকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতেই পুলিশ প্রশাসন সরকারি দলের পক্ষ হয়ে দিন রাত আমাদের গ্রেফতার করতে অভিযান পরিচালনা করছে। ডিবি পুলিশ সাদা মাইক্রো গাড়ি নিয়ে গ্রেফতার করতে স্কুল কলেজেও হানা দিচ্ছে। ফলে এলাকার ভোটারদের মধ্যে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিয়ে শঙ্কা বিরাজ করছে, ভোটারগণ গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তিনি এব্যাপারে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
উল্লাপাড়া-সলঙ্গা সংসদীয় আসনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা আলহাজ্ব মাওঃ রফিকুল ইসলাম খান জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর থেকে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তল্লাশি ও অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। গ্রেফতার করা হয়েছে সাধারণ ভোটারসহ জামায়াত-শিবিরের ৩৪ জন নেতাকর্মীকে। কোন ধরনের মামলা ও গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জামায়াতের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পরিচালক জাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জ-৫(উল্লাপাড়া-সলংগা) আসনে ২৩ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দি¦তায় নেমেছেন বিধায় অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ দিতে হবে, ধরপাকর বন্ধ করতে হবে, গ্রেফতারতারকৃতদের ছেড়ে দিতে হবে। এ দাবি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি।

জামায়াত সূত্রে জানা যায়, তফসিল ঘোষণার পর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গায়েবি মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেফতারকৃতরা হলেন, কয়ড়া গ্রামের ছানোয়ার হোসেনের ছেলে মোঃ সেলিম রেজা (৩২), চড়ুইমুরি গ্রামের আজগর আলীর ছেলে জহুরুল ইসলাম (৩৮), প্রতাব গ্রামের আরমান আলীর ছেলে আমিনুল ইসলাম (৪৫), এনায়েতপুর গ্রামের জামাত আলীর ছেলে আইয়ুব আলী (৬২), গয়হাট্টা গ্রামের জিনাত আলীর ছেলে আলী আহমাদ (৫২), মাটিকোড়া গ্রামের আবুল হোসেন জোয়াদ্দারের ছেলে হায়দার জোয়াদ্দার (৪৫), মনোহারা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে হাফেজ শাহজালাল (৩০), বাবলাপাড়া গ্রামের নবাব আলীর ছেলে মাজেম হোসেন, কাইয়ুমের ছেলে আব্দুল মতিন (৪৪) ও রাজমান-দহপাড়া গ্রামের আনসার আলীর ছেলে ইলিয়াস আলীসহ ৩৪ জন নেতাকর্মীকে। গ্রেফতারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম ও উপজেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক শাহজাহান আলী।
জামায়াতের জেলা সেক্রেটারি অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম বলেন, তফসিল ঘোষণার পর প্রায় প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে ধানের শীষ মার্কার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতারকৃতদের নামে অতীতে কোন মামলা ছিল না। কিন্তু পুলিশ তাদেরকে অতিউৎসাহী হয়ে গ্রেফতার করে নতুন গায়েবি মামলায় জরিয়ে বিরোধী দলকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার সরকারি ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে লিপ্ত। তিনি আরো বলেন, উল্লাপাড়া থানার ওসি দেওয়ান কৌশিক ধানের শীষ মার্কার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছেন। তিনি সরকার দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি,জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মী নিধন করতেই নির্বাচনী মাঠে এ ঘৃন্য আচরণ চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকাবাসীরও দাবি এই ওসি'কে এখান থেকে স্থানান্তর করতে হবে। এই পক্ষপাত ওসির অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
জেলা-উপজেলার জামায়াত নেতাদের অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার হচ্ছে না। তারা অবিলম্বে আটককৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে সকলের জন্য লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

 

http://www.dailysangram.com/post/356201