৪ ডিসেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:২১

রেকর্ড বাতিলকে অস্বাভাবিক বলছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা

জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের রেকর্ড সংখ্যক মনোনয়ন বাতিল হওয়াকে স্বাভাবিক মনে করছেন না নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এভাবে বেশি সংখ্যক প্রার্থিতা বাতিল নির্বাচন কমিশনের পরিকল্পনার অভাব বা অদক্ষতা হতে পারে। আগে থেকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন উঠায় বিতর্কে থাকা নির্বাচন কমিশনের মনোনয়নের বিষয়ে আরো সতর্ক থাকা প্রয়োজন ছিল বলেও মনে করেন তারা। সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব. ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে বলেন, স্বাক্ষরের ভুলের জন্য সাধারণত প্রার্থিতা বাতিল হয় না। স্থগিত করা হয়। প্রার্থীকে বলা হয় আপনি এটা ঠিক করেন। তাছাড়া প্রার্থীতো একাধিক মনোনয়নপত্র দেয় যেটা সঠিক সেটা গ্রহণ করা হয়। এখন যদি প্রশ্নই তোলা হয় এটা মির্জা ফখরুলের স্বাক্ষর না ওইটা ওমুকের স্বাক্ষর না।
বাতিল করে দিলাম। ক্ষমতা আছে তার মানে এটা আপনি (নির্বাচন কমিশন) করতে পারেন। কিন্তু এতে ক্ষমতার অপব্যবহার হয়। তিনি বলেন, আমাদের সময় একজন রিটার্নিং অফিসারকে তাৎক্ষণিকভাবে বদলি করা হয়েছিল।

অনুসন্ধান করে দেখা গেছে ওই রিটার্নিং অফিসার শুধুমাত্র তার অথরিটি দেখানোর জন্য এটা করেছিল। কথা হলো সবকিছু এখন নির্বাচন কমিশনের কাছে। তিনি বলেন, একটি পত্রিকায় পড়লাম বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচন কমিশনকে বলেছেন যে আমার প্রার্থীদের মনোনয়নে আমার স্বাক্ষর রয়েছে। এরপর তো আর কোনো কথা থাকতে পারে না। এই ধরনের বাতিল করাতো ঠিক না। ফলে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিএনপির কোনো প্রার্থীই রইলো না। এটাতো নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই আলামতে যদি নির্বাচন হয় তাহলে এই ধরনের নির্বাচনতো আসলে গ্রহণযোগ্য হবে না। যে সরকারই থাকবে বা আসুক তাদের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, মনোনয়নপত্র বাতিলের বিষয়টি তো প্রমাণের ব্যাপার। তবে অনেক বেশি বাতিল করা হয়েছে। আবার বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরটাও বাতিল হয়েছে। এদিক থেকে আপাতদৃষ্টিতে ব্যাপারটা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। জানি না সরকারি দলের সংখ্যাটা কত। এখন দেখতে হবে কি কারণে বাতিল হয়েছে। ঋণখেলাপি অনেক রাঘব বোয়াল রয়েছে যাদের মনোনয়ন বাতিল হয়নি। হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণখেলাপি নিয়েও মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন অনেকে। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠার পরও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আসছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ ব্যাপারে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা তো ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ আগেই বলেছি। এখন পর্যন্ত নিরপেক্ষ ভাবার কারণ নেই।

স্থানীয় সরকার বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন মনোনয়ন বাতিল হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিএনপি একভাবে দেখতে পারে। কিন্তু আমি বলবো ৮ তারিখ পর্যন্ত দেখতে হবে। কারণ এখনো তো আপিল করার সুযোগ আছে। ৮ তারিখের পরই পুরো বিষয়টি পরিষ্কার হবে। দেখা যাক কি হয়। যাদের বাতিল হয়েছে ধরা যাক রেজা কিবরিয়ার বিষয়টি, তার তো সামান্য টাকার একটি বিলের বিষয়। এটা এমনিই ঠিক হয়ে যাবে। আবার অনেকের স্বাক্ষরের সমস্যা রয়েছে। সেগুলো ঠিক হতে পারে। তাই আপিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ইস্যুতে তিনি বলেন, এটা তো পুরনো অভিযোগ। নির্বাচন কমিশনের যে বিচক্ষণতা, সাহসিকতা এবং আইন সম্পর্কে পরিষ্কার হয়ে সিদ্ধান্ত দেয়ায় কিছুটা ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এটা নিরপেক্ষতার অভাব কিনা বলতে পারবো না তবে অদক্ষতা, অমনোযোগিতা, ভুল পরিকল্পনা হতে পারে।

 

http://mzamin.com/article.php?mzamin=148018