২৬ নভেম্বর ২০১৮, সোমবার, ১০:৪৩

প্রশাসনে অস্থিরতা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৩৩ দিন বাকি। আগামী ৩০ ডিসেম্বর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটের সময় কাছাকাছি আসার সাথে সাথেই প্রশাসনে বাড়ছে অস্থিরতা। সচিবালয় থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা, উপজেলা পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যন্ত চলছে এই অস্থিরতা। এত দিন প্রশাসনে বিএনপি-জামায়াত ধরপাকড়ের কারণে কর্মকর্তাদের অস্থিরতা থাকলেও এখন রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের শঙ্কায় নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে এই অস্থিরতা। সম্প্রতি গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বক্তব্যের পর এই অস্থিরতা আরো বেড়েছে।

বর্তমান সরকারকে ‘পুতুল সরকার’ আখ্যা দিয়ে গত শনিবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা বলেন, তার কথা তার সেনাবাহিনী শুনছে না। যেই পুলিশ গায়েবি মামলা দিচ্ছে হাজারে হাজারে, যাদের অত্যাচারে মাঠে নামা যায় না সেই পুলিশই আস্তে আস্তে বলতে শুরু করেছে, স্যার, আপনারা মাঠে থাকেন। আমি দেখি যে দারোগা সাহেব আগে পেটাত সেই এখন বলছে, স্যার, যাইয়েন না। এখানে থাকেন। দুই মাস আগের কথা বলছি, এখন তো আরো পরিবর্তন হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এতে গত ১০ বছরের উন্নয়নচিত্র, মেগা প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ ও ফার্স্ট ট্র্যাকভুক্ত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নের চিত্র, সরকার প্রধানের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। এগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ জনসংযোগ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ ছাড়াও মাঠ প্রশাসন যেন কোনোভাবে দুর্বল না হয় সেজন্য গত ৮ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ৪৫ জন কর্মকর্তাকে দেশের বিভিন্ন জেলার পরামর্শক হিসেবে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। পরে এই ৪৫ জন উপদেষ্টার নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেয় বিএনপি। চিঠিতে বলা হয়, উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সবাই রিটার্নিং অফিসারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের বেশির ভাগ নিজ জেলায় দায়িত্ব দেয়া হয়েছে; যা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের (জেলা প্রশাসক) নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনকে নিশ্চিতভাবে বিঘিœত ও বিব্রত করবে। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, এ ধরনের দায়িত্ব প্রদান নির্বাচনকে চরমভাবে প্রভাবিত করবে এবং রিটার্নিং অফিসারদের ওপর অযাচিত প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্র সৃষ্টি করবে।
দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি জেলায় মনোনয়ন পাওয়া একজন মেন্টর (অতিরিক্ত সচিব) নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, এটি আসলে নতুন কিছু নয়। এমন দায়িত্ব আমি গত পাঁচ বছর ধরে পালন করে আসছি। আমরা মূলত জেলা প্রশাসকদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করি। এর বাইরে কিছুই না।

সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কর্মকর্তাদের সবার আগ্রহ নির্বাচনের দিকে। একাদশ সংসদ নির্বাচন কেমন হতে যাচ্ছে। জনগণ ভোট দিতে পারবে নাকি আগের নির্বাচনের মতো কোনো কারসাজির নির্বাচন হবে।
তবে সুষ্ঠু ভোট হলে সরকার পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তারা বলছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে উৎকণ্ঠাও বাড়ছে। সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন শুধু উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছে, মাঠের রাজনীতিতে ততটা মনোনিবেশ করতে পারেনি। দলের অনেক নেতাই সরকারি সংস্থাসহ সচিবালয়ে বিভিন্ন তদবিরে ব্যস্ত থেকেছেন। নিজেদের পকেট ভারী করেছেন। ফলে রাজনীতির মাঠে সরকার সমর্থক দল কিছুটা হলেও পিছিয়ে পড়েছে। অন্য দিকে খালেদা জিয়ার জেল, বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের হয়রানির ফলে তাদের পক্ষে ভোটারদের একরকম দুর্বলতা কাজ করছে। ফলে সুষ্ঠু ভোট হলে সরকার পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।


 

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/367421