২৬ নভেম্বর ২০১৮, সোমবার, ১০:১৯

লাফিয়ে চলেছে সবকিছু : রয়েছে আশংকাও

আশিকুল হামিদ : এতদিনে সম্ভবত বলার সময় এসেছে, দেশে সত্যি একাদশ সংসদ নির্বাচন হতে চলেছে। শুরুতেই কথাটা বলার কারণ, দাবির পর দাবি জানিয়ে ব্যর্থ হলেও সরকার বিরোধী প্রধান জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ সব দলই নির্বাচনী কার্যক্রমে যাকে বলে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, সরকারের পাশাপাশি ‘স্বাধীন’ নির্বাচন কমিশনও ঐক্যফ্রন্টের কোনো দাবির ব্যাপারে হ্যাঁ না বলা সত্ত্বেও নামকাওয়াস্তে প্রতিবাদ জানিয়েই নির্বাচনী কার্যক্রমে ফিরে গেছেন নেতারা। ঘটনাপ্রবাহে চমকপ্রদ অনেক তথ্যও প্রাধান্যে এসেছে। এখনো আসছে। যেমন পুলিশ ও প্রশাসনে অফিসারদের বদলি ও প্রত্যাহারের মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীনদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। ঐক্যফ্রন্টের দেয়া তালিকা সম্পর্কেও কমিশন সোজা না করে দিয়েছে।
শুধু তা-ই নয়, ঢালাও গ্রেফতার এবং গায়েবি মামলা সংক্রান্ত গুরুতর অভিযোগের জবাবে স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা করেছেন, ‘বিনা কারণে’ পুলিশ নাকি কাউকে গ্রেফতার করছে না! এখানে ‘কারণ’ এসেছে প্রধান বিবেচ্য হিসেবে। কারণ, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, তাদের সম্ভাব্য প্রার্থী এবং কর্মীরা যাতে নির্বাচনের মাঠে না থাকতে পারেন সে জন্যই একদিকে বেছে বেছে গ্রেফতার করা হচ্ছে, অন্যদিকে মামলায় তো ফাঁসানো হচ্ছেই, পাশাপাশি গুমেরও শিকার হচ্ছেন অনেকে। এই তো মাত্র দিন কয়েক আগে ফরিদপুরের জনপ্রিয় বিএনপি নেতা আবু বকরকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল সাদা পোশাকের লোকজন। একদিন পর তাকে রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীতে ভাসমান অবস্থায় পাওয়া গেছে। অনেক দুঃখের মধ্যেও রসিকতা করে বলা হয়েছে, বেচারা আবু বকর এসেছিলেন ধানের শীষের মনোনয়ন নেয়ার জন্য। কিন্তু তাকে ওঠানো হয়েছে নৌকায়- অবশ্য মৃত অবস্থায়!
আরো অনেক বিএনপি নেতাকেও বিশেষ ‘কারণ’ দেখিয়েই গ্রেফতার করা হচ্ছে। যেমন টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুরের সাবেক এমপি এবং বিএনপি নেতা আজাদ সিদ্দিকীকে গ্রেফতার করা হয়েছে গত ৬ নভেম্বর। পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়ার পর প্রথমে কেরাণিগঞ্জের কারাগারে এবং তারপর ২৪ নভেম্বর নেয়া হয়েছে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে। ওদিকে চট্টগ্রামে হঠাৎ গ্রেফতার করা হয়েছে বিখ্যাত চৌধুরী পরিবারের গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীকে। একাত্তরের কথিত মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসিতে নিহত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই এবং সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীরও চট্টগ্রামের একাধিক আসনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার কথা রয়েছে।

গোটা দেশজুড়েই এভাবে চলছে গ্রেফতারের অভিযান। পুলিশ বলছে ‘বিনা কারণে’ কাউকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। প্রত্যেকের নামেই নাকি আগে থেকে বিশেষ ধরনের কিছু মামলা রয়েছে এবং প্রত্যেকেই নাকি ‘পলাতক’ আসামী! এদিকে সিইসির মুখেও একই কথা শোনা গেছে। তিনিও বলেছেন, কাউকেই নাকি ‘কারণ’ ছাড়া গ্রেফতার করা হচ্ছে না! সিইসি অবশ্য নাটকীয়তাও যথেষ্টই করেছেন। পুলিশের উদ্দেশে ‘কঠোর’ ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে বিনা কারণে কাউকে গ্রেফতার না করা হয়!’
বলা দরকার, এমন অবস্থার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়াও ঘটতে শুরু করেছে। বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত দলগুলো শুধু নয়, অন্য অনেক ব্যক্তি ও সংস্থাও প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার পাশাপাশি উদ্বেগ-আশংকা প্রকাশ না করে পারছেন না। যেমন গত ২৪ নভেম্বর রাজধানীতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে পরিস্থিতি হতে পারে ভয়াবহ। প্রবন্ধে তিনি গ্রেফতার ও গুম-খুন-সংঘাতসহ বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করেছেন। স্পষ্ট ভাষাতেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটার ইঙ্গিত দিয়েছেন। একই অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি এতদিনেও ইভিএম কি ধরনের মেশিন তা বুঝে উঠতে পারেন নি! ২৪ নভেম্বরের ওই সেমিনারে সাধারণভাবেই সংঘাত-সহিংসতার ব্যাপারে আশংকা প্রকাশ করেছেন সকলে।
কথার পিঠে কথা ওঠে বলে একটা কথা রয়েছে। সে কথাটাই উঠেছে ওই সেমিনারে। এ বিষয়ে কিন্তু অনেক আগেই আগাম জানিয়ে রেখেছেন বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী- যাকে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অসম্মানজনকভাবে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে প্রচারণা রয়েছে। আরো কিছু বিষয়েও বি চৌধুরীকে নিয়ে গুজব ও প্রচারণার কথা শোনা গেছে। যেমন, ১৯৮১ সালের ৩০ মে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রথম নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানকে যখন অভ্যুত্থানের নামে হত্যা করা হয় তখন চট্টগ্রামের একই সার্কিট হাউজে ডা. বি চৌধুরীও ছিলেন। কিন্তু তার শরীরে কোনো বুলেটের টোকা লাগেনি। অথচ ক্ষমতাসীন দল বিএনপির অতি ক্ষমতাধর মহাসচিব এবং একাধিকবারের মন্ত্রী হিসেবে তার বিরুদ্ধে সকল মহলেই তখন অনেক ক্ষোভ ছিল।

সে অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীই গত জুন মাসে, পবিত্র রমযানের শুরুর দিকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক বিষয়কে প্রাধান্যে এনেছিলেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের জন্য বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে দেয়া বক্তৃতায় বি চৌধুরী বলেছিলেন, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগসহ সব দলের সক্রিয় নেতা-কর্মীরাই নাকি তার কাছে গিয়ে নিজেদের ‘ভয়ের’ কথা শোনান। নির্বাচন হলে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন, দেশে নাকি রক্তের বন্যা বইবে! রাস্তায় নাকি লাশের পাহাড় জমবে! অমন ভয় ও আশংকার কারণেই বি চৌধুরী বলেছিলেন, নির্বাচন কিংবা নির্বাচিত সরকারের চাইতেও দেশে একটি সর্বদলীয় তথা ঐকমত্যের সরকার বেশি দরকার। কথাটার মধ্য দিয়ে বি চৌধুরী যা কিছুই বুঝিয়ে থাকুন না কেন, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা কিন্তু এর অন্য রকম অর্থ করেছিলেন। এখনো অন্য রকম অর্থই করা হচ্ছে। অনেকে এমনকি সাবেক রাষ্ট্রপতি হলেও বি চৌধুরী এখন আওয়ামী লীগের অধীনে মন্ত্রিত্ব চাচ্ছেন বলে ব্যঙ্গ-তামাশা করতেও ছাড়েননি।

পর্যবেক্ষকদেরই অন্য একটি গ্রুপ আবার বি চৌধুরীর মধ্যে আওয়ামী লীগের আরেক ‘সেভিয়ার’কে আবিষ্কার করেছিলেনÑ যে ‘সেভিয়ার’ এর ভূমিকা একবার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে দেখা গিয়েছিল। এটা ২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সময়কালের কথা। পাঠকদেরও মনে পড়তে পারে, ২০০৮-এর নির্বাচন পরবর্তী বহু উপলক্ষেই এরশাদ জানিয়েছিলেন, লন্ডনের সমঝোতা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ তাকে প্রেসিডেন্ট না করায় ‘তার মনে অনেক দুঃখ’। স্মরণ করা দরকার, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছিল ২০০৮ সালের জুলাই মাসে। ঘটনাস্থল ছিল লন্ডন। এ ব্যাপারে এরশাদ নিজেই ঘোষণা দিয়েছিলেন লন্ডন থেকে ফিরে আসার পর। সে সময় গুঞ্জনে শোনা গিয়েছিল, শেখ হাসিনার সঙ্গে লন্ডনে এরশাদের বৈঠক হয়েছে। সেবার ঢাকায় ফিরে এরশাদ বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে তিনি ‘বোন’ ডেকেছেন এবং জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোটে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। এরশাদ একই সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন, মহাজোট বিজয়ী হলে তিনিই দেশের প্রেসিডেন্ট হবেন। সবাইকে চমকে দিয়ে এরশাদ তখন আরো বলেছিলেন, এ শুধু তার ইচ্ছা নয়, শেখ হাসিনাও তাকে প্রেসিডেন্ট পদে মেনে নিতে রাজি হয়েছেন। প্রেসিডেন্ট বানানোর শর্তেই জাতীয় পার্টি মহাজোটে থাকবে বলেও ঘোষণা দিয়েছিলেন এরশাদ। কিন্তু সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে গিয়েছিল নির্বাচনের পর। আরেক বৃদ্ধ এবং প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা জিল্লুর রহমানের কাছে হেরে গিয়েছিলেন এরশাদ। তিনি আর প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি। সেই থেকে কথা উঠলেই নিজের মনের দুঃখের কথা শোনাতেন এরশাদ। কে জানে, এই দুঃখের কারণেই ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যাওয়া বা না যাওয়া নিয়ে তিনি নাটক করেছিলেন কি না। এখনো বলা হয়, নসিয়তের আড়ালে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং-এর ধমকের কারণেই এরশাদকে নাকি সেবার নির্বাচনে যেতে হয়েছিল। সাজানো অসুখের চিকিৎসার জন্য কম্বাইন্ড মিলিটারি হসপিটাল- সিএমএইচে ভর্তি হয়েও সুজাতা-ধমকের দুর্নাম কাটিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। সেই থেকে সুযোগ পেলেই এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুনিয়ে এসেছেন, এত বিপুল মেজরিটির ফল নাকি ‘মন্দও’ হতে পারে! কে জানে, তেমন কোনো মন্দের ব্যাপারে আগে-ভাগে জেনে গেছেন বলেই তিনি বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের বাইরে চলে আসার এবং নাম সর্বস্ব কিছু দলকে নিয়ে জোট গঠন করার পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন কি না। মুখের কথায় তো আওয়ামী লীগকে বহুবারই ‘ত্যাগ’ করেছেন এরশাদ। এবার অবশ্য এরশাদকে তেমন কিছু করতে দেখা যায়নিÑ যদিও তিনি এরই মধ্যে সিএমইচে ঘুরে এসেছেন!

ধারণা করা হচ্ছে, এরশাদ বর্ণিত ‘মন্দ’ নাকি একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় যে কোনোভাবেই ঘটতে পারে। এজন্যই বি চৌধুরী নাকি আগে-ভাগে রক্তের বন্যা এবং লাশের পাহাড়ের ‘ভয়’ দেখিয়ে রেখেছেন। বলেছেন, নির্বাচন বা নির্বাচিত সরকার নয়, ঐকমত্যের বা যে নামেরই হোক, অন্য রকম সরকারই নাকি ‘সমাধান’! বলা হচ্ছে, পর্দার অন্তরালে এমন অনেক কিছুই হয়তো ঘটে চলেছে, যার ভিত্তিতে বি চৌধুরী হঠাৎ ‘অন্য রকম সরকারের প্রেসক্রিপশন’ হাজির করে চলেছেন। তিন-তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং দু’বারের বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে সরকার যে অন্যায় ও বেআইনি কার্যক্রম চালাচ্ছে সেটাও বি চৌধুরী বর্ণিত সম্ভাব্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোনো ভ’মিকা রাখতে পারে। বেশি খোঁজ-খবর যারা রাখেন তারা আবার সতর্ক হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, কোথায় দিয়ে কারা কিভাবে কি করে বসবেন তা নাকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও বুঝে উঠতে পারবেন না! কারণ, বি চৌধুরীরা নাকি ‘গভীর জলের মাছ’! বড় কথা, বি চৌধুরী আবার একাও ‘মুভ’ করছেন না। তার সঙ্গে নাকি এমন কয়েকজনও রয়েছেন, ‘অঘটন’ ঘটানোর বিষয়ে যাদের বিশেষ দক্ষতা ও যোগ্যতা রয়েছে বলে শোনা যায়!

এখানে বি চৌধুরী প্রসঙ্গে সংক্ষেপে বলা দরকার। জাতীয় ফ্রন্ট ও ঐক্য প্রক্রিয়া থেকে যুক্ত ফ্রন্ট পর্যন্ত বেশ কিছু নাটকীয় ঘটনা এরই মধ্যে জনগণকে দেখতে হয়েছে। এগুলোর প্রতিটির সঙ্গেই কিছুদিন আগে পর্যন্তও ডা. বি চৌধুরীর নাম এসেছে। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই পিছুটান দিয়েছেন বি চৌধুরী। শোনা যায়, নতুন একটি জোট গঠনের লক্ষ্যে তিনি নাকি ‘মোচড়’ও দিয়েছেন। বিভিন্ন উপলক্ষে দেয়া ঘোষণার মধ্য দিয়ে বি চৌধুরী বোঝাতে চেয়েছেন, তিনি এবং ‘তারা’ এতটাই শক্তিশালী যে, বিএনপির মতো সবচেয়ে জনপ্রিয় দলকেও তার এবং ‘তাদের’ নির্দেশনা মেনে চলতে হবে! না হলে ‘প্রস্তুত’ থাকতে হবে লাশ এবং রক্তের বন্যা দেখার জন্য!
বিএনপির পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো জবাব না দেয়া হলেও রাজনীতির মাঠে বোমা ফাটিয়েছেন কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম। স্বাধীনতা যুদ্ধের দিনগুলো থেকে জিয়াউর রহমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠজন এবং সাবেক মন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) অলি বছর কয়েক আগে পর্যন্তও বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ছিলেন। পরবর্তীকালে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) নামে পৃথক দল গঠন করলেও তিনি এখনো ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে রয়েছেন। বিকল্পধারা ‘স্বাধীনতা বিরোধী’ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বৃহত্তর কোনো জাতীয় ঐক্যে যাবে না বলে বি চৌধুরী যে ঘোষণা দিয়েছিলেন তার তীব্র সমালোচনা করে এক অনুষ্ঠানে অলি আহমদ বলেছেন, ব্যাপারটা ‘মাংস হালাল কিন্তু ঝোল হারাম’-এর মতো হয়ে গেছে।

নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কর্নেল (অব.) অলি কিছু ঐতিহাসিক তথ্যের উল্লেখ করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন, বি চৌধুরী যখন বিএনপির মহাসচিব, পাকিস্তান আমলের মুসলিম লীগ নেতা শাহ আজিজুর রহমান তখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এই শাহ আজিজ যে স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখার জন্য পাকিস্তানের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘেও গিয়েছিলেন সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে কর্নেল (অব.) অলি আরো কয়েকজনের নাম বলেছেন, বি চৌধুরী বিএনপির মহাসচিব থাকার সময় যারা মন্ত্রিত্ব করেছেন। তিনি একথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, ফাঁসিতে ঝুলে হত্যাকান্ডের শিকার মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের দল জামায়াতও সেই চার দলীয় জোট সরকারের অংশিদার ছিলেন- যে জোটের একজন নেতা হিসেবে বি চৌধুরী প্রথমে মন্ত্রী এবং পরে দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।

সে একই ব্যক্তিরা এবং তাদের দল জামায়াত এতদিন পর হঠাৎ কেন রাজাকার ও ‘স্বাধীনতা বিরোধী’ হলো- সে প্রশ্নও তুলেছিলেন কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। কিন্তু সে প্রশ্নের জবাব না দিয়েই কেটে পড়েছেন ডা. বি চৌধুরী। তিনি এমনকি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেও যোগ দেননি। তাকে এবং তার কীর্তিমান পুত্রকে বরং নৌকা মার্কা পাওয়ার জন্য দৌড়াতে দেখা যাচ্ছে। কে জানে, তারা নৌকায় উঠতে পারবেন কি না। তবে একটি কথা বলে রাখা যায়, বি চৌধুরী যদি জেনারেল (অব.) এরশাদকে অনুসরণ করে আওয়ামী লীগের ‘সেভিয়ার’-এর ভূমিকা পালনের সুযোগ না পান তাহলে তাকে ‘অন্য কোনো কাজে’ ব্যস্ত হয়ে পড়তে দেখা যেতে পারে। একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে পর্যবেক্ষকদের আশংকার কারণটিও রয়েছে এখানেই। সুতরাং সবকিছুর সঙ্গে বি চৌধুরীর দিকে লক্ষ্য রাখা দরকার বিশেষভাবে।

http://www.dailysangram.com/post/354776