২৫ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১:২৪

দাম বেড়েছে গ্যাসে ১১৫ বিদ্যুতে ৬৩ শতাংশ

১০ বছরে বৈশ্বিক বাজারে

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী মো. আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, গত ১০ বছরে বৈশ্বিকবাজারে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বেড়েছে যথাক্রমে প্রায় ৬৩ শতাংশ ও ১১৫ শতাংশ। তিনি জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের উপর আমাদের নির্ভরশীলতা প্রায় ৯০ ভাগ এবং এক্ষেত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনের উৎসের বহুমুখীকরণ অতি জরুরী হয়ে পড়েছে।
গতকাল শনিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘এলএনজি মূল্য নির্ধারণ ঃ ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পখাতের প্রভাব’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ডিসিসিআই’র সভাপতি আবুল কাসেম খানের সভাপতিত্বে ঢাকা চেম্বার অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত সভায় গেস্ট অফ অনার হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য রহমান মুরশিদ।
মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরনের লক্ষ্যে পাশ্ববর্তী দেশগুলো হতে একই দামে বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব হলে, খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের শিল্প-কারখানা সমূহে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হবে এবং এ লক্ষ্যে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ইতোমধ্যে ভারত হতে প্রায় ১১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সার্ক অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে যৌথভাবে ‘হাইড্রো পাওয়ার’ ও ‘সোলার পাওয়ার’ ব্যবহার লক্ষ্যে একটি ‘সার্ক সোলার গ্রিড’ স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন। একই সঙ্গে এলএনজি আমদানির পর তার দাম নির্ধারনের ক্ষেত্রে দেশের ব্যবসায়িক কর্মকান্ড পরিচালনায় যেন ব্যয় অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে সরকার যত্মবান হবে।
রহমান মুরশিদ বলেন, জ্বালানী দাম বৃদ্ধিতে বিইআরসি আয়োজিত গণশুনানি সমূহে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের আরো বেশি হারে তথ্য ভিত্তিক বক্তব্য উপস্থাপনের আহবান জানান। যার মাধ্যমে বিইআরসি বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে। তিনি এলএনজি’র নির্ধারত মূল্য আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর কি ধরনের প্রভাব ফেলবে তা খতিয়ে দেখার আহবান জানান।
ডিসিসিআই’র সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, আমাদের শিল্প-কারখানার জন্য যৌক্তিক মূল্যে জ্বালানি প্রাপ্তির বিষয়টি অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমাদের শিল্প-কারখানার অগ্রগতির চাকাকে সচল রাখার ক্ষেত্রে সম্প্রতি গ্যাসের স্বল্পতার বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তিনি জানান, বর্তমানে প্রতিদিন আমাদের গ্যাসের উৎপাদন প্রায় ২ হাজার ৭০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট। যেখানে আমাদের চাহিদা রয়েছে ৩ হাজার ৪০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট এবং চাহিদার এ গ্যাপ মিটানোর জন্য প্রাথমিকভাবে ৫০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট এলএনজি আমদানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, যা আশাব্যঞ্জক।

আবুল কাসেম খান বলেন, আমাদের শিল্পখাতে এলএনজি আমদানির প্রভাব ৭২-৯৩ শতাংশ, বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে প্রায় ২০৬ শতাংশ এবং ক্যাপটিভ পাওয়ার খাতে প্রায় ৬৬ শতাংশ হবে। তিনি জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরনে সরকারকে মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তার বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন, পাশাপাশি স্থানীয় কয়লার উত্তোলন ও তার ব্যবহারের আহবান জানান।
বিদ্যুৎ বিভাগের প্রাক্তন সচিব ড. মোহাম্মদ ফওজুল কবির খান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালের পর আমরা নতুন কোন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করতে পারিনি, যার ফলে বর্তমানে যে পরিমাণ গ্যাস মজুদ রয়েছে তা আগামী ৬-৭ বছরের মধ্যে ফুরিয়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে এবং এমনই বাস্তবতায় আমাদের এলএনজি’র পাশাপাশি অন্যান্য উৎসসমূহ ব্যবহারে আমাদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রে স্থল ভিত্তিক টার্মিনাল এবং সমুদ্র এলাকায় ভাসমান টার্মিনাল স্থাপনের মধ্যে সমন্বয় সাধন আবশ্যক বলে মত প্রকাশ করেন।

https://www.dailyinqilab.com/article/167849