২৫ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১০:৪০

রাজধানীর পাশেই অপরাধ অঞ্চল

রাজধানীর পাশের নির্জন এলাকাগুলো এখন অপরাধ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, দস্যুতার পাশাপাশি ওই এলাকাগুলো এখন খুনিদেরও পছন্দের তালিকায়। প্রায় নির্জন ওই এলাকাগুলো থেকে উদ্ধার হচ্ছে লাশ। মাদক কারবারিরা ওই দুর্গম এলাকা দিয়ে মাদক ঢুকাচ্ছে রাজধানীতে। মাদকের ভাগবাটোয়ারা হচ্ছে ওই সব এলাকায় বসে।
রাজধানীর পাশের কেরানীগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা এখন অপরাধীদের স্বর্গ। খুন, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন অপরাধ সেখানকার নিত্যদিনের ঘটনা। বুড়িগঙ্গা নদী এখন লাশের ডাম্পিং জোনে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রায়ই মিলছে লাশ। কোত্থেকে আসছে এই লাশ, কোথায় বসে তাদের হত্যা করা হচ্ছে সে সম্পর্কে তথ্য দিতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ থানায় একের পর এক মামলা হলেও অধিকাংশ মামলায় খুনি শনাক্ত হচ্ছে না। থানা পুলিশের বক্তব্য, অন্য কোনো এলাকায় খুন করে লাশটি বুড়িগঙ্গায় ফেলছে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর বুড়িগঙ্গা থেকে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির গলিত লাশ উদ্ধার হয়। বুড়িগঙ্গা তীরের তরিকুল্লাহর ডক ইয়ার্ড থেকে উদ্ধার করা হয় অপর এক জনের লাশ।

ঢাকার পাশের নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন নির্জন স্পট থেকেও প্রায়ই উদ্ধার হচ্ছে লাশ। গত ২৫ অক্টোবর সকালে নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে লাশের অংশ বিশেষ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশের টুকরোগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই কিভাবে তিনি নিহত হয়েছেন। তবে পুলিশের দাবি ওই ব্যক্তি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। ২১ অক্টোবর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে আড়াইহাজারের পাঁচরুখী ঘিদিরপাড়া এলাকা থেকে চারজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তারা হলোÑ লুৎফর রহমান মোল্লা, ফারুক, জহিরুল ইসলাম ও সবুজ সরদার। তাদের মধ্যে তিনজনের মাথায় গুলির চিহ্ন ছিল। একজনকে মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে লুৎফর রহমান মোল্লার বাড়ি ফরিদপুরে। আর বাকিরা পাবনার আতাইকুলা এলাকার বাসিন্দা। ডিবি পরিচয়ে তাদের তুলে নেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে। রূপগঞ্জের ভুলতা ফাঁড়িতে ফারুকের স্ত্রী তাসলিমা লাশ পাওয়ার আগের দিন রাতে স্বামীকে খাবারও দিয়ে এসেছিলেন বলে জানান। তাসলিমা অভিযোগ করেছেন, ১৯ অক্টোবর তার স্বামীকে তুলে নেয়া হয়েছিল। ওই চারজনের লাশ পাওয়ার আগের দিন ২০ অক্টোবর ঢাকা বাইপাস সড়কের টেংরারটেক এলাকায় লাশ পাওয়া যায় আবুল হোসেন নামে অপর এক যুবকের। সেপ্টেম্বর মাসে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ এলাকা থেকে তিন যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলোÑ রাজধানীর মহাখালী এলাকার শহীদুল্লাহর ছেলে মো: সোহাগ (৩২), মুগদা এলাকার মো: আব্দুল মান্নানের ছেলে শিমুল (৩১) এবং ওই এলাকার আব্দুল ওয়াহাব মিয়ার ছেলে নুর হোসেন বাবু (৩০)। পরিবারের অভিযোগ যাত্রীবাহী বাস থেকে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্য পরিচয়ে কে বা কারা তুলে নিয়ে যায়। পরে তাদের লাশ পাওয়া যায়।
গাবতলী থেকে আশুলিয়া পর্যন্ত বেড়িবাঁধ ও আশপাশে বেশ কিছু নির্জন স্থান রয়েছে। এসব স্থানে প্রায়ই ঘটছে খুনের ঘটনা। ২০ অক্টোবর রাতে রাজধানীর তুরাগ থানার উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টরে একটি ঝোপের ভেতর থেকে দুই যুবকের লাশ উদ্ধার হয়। গত ১২ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকা থেকে এক যুবকের সাত টুকরা লাশ উদ্ধার করা হয়। ৯ নভেম্বর এক বৃদ্ধকে বাস থেকে ফেলে দিয়ে তার মেয়েকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়াও এই এলাকায় প্রায়ই ঘটছে খুন খারাবি। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, দস্যুতা এই এলাকার নিত্যদিনের ঘটনা।

টঙ্গি থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত নৌরুটের আশপাশের বেশ কয়েকটি স্থান রয়েছে যেখানে দিনেও সাধারণ মানুষের পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয়। এর কোনো কোনো এলাকায় রয়েছে বিশাল বিশাল মাছের ঘের। ওই সব এলাকায় কি হচ্ছে তা আশপাশের বাসিন্দারাও জানেন না। রূপগঞ্জের একাধিক ব্যক্তি জানান, তাদের এলাকায় মাঝে মধ্যেই রহস্যজনক নৌযান দেখা যায়। তবে তা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেন না স্থানীয়রা। তারা বলেন, এই এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও তেমন একটা দেখা যায় না। নিয়মিত টহল নেই বললেই চলে। স্থানীয় সূত্র জানায়, মাদকের একটি বড় চালান নৌরুট হয়ে এখানে এসে পরে সময় সুযোগ মতো রাজধানীতে প্রবেশ করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর ভাসমান সন্ত্রাসীদের অনেকেই পাশের ওই সব এলাকায় বসবাস করে। রাজধানীতে অপরাধ কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে ওই সন্ত্রাসীরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যায়। ঢাকা মহানগর পুলিশ মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সব সময় সোচ্চার রয়েছে। প্রতিটি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি রয়েছে। এর মধ্যেও যেসব অপরাধের ঘটনা ঘটছে তাতে জড়িতদের অনেককেই ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/367142