২৪ নভেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১১:৪৯

ধরপাকড়, নাজেহাল বিরোধী নেতাকর্মীরা

তফসিলের পর একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রচারণায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা মুখরিত করে তুলেছেন ভোটের মাঠ। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় গড়ে তোলা হচ্ছে নির্বাচনী ক্যাম্প। দেয়ালগুলো ভরে উঠছে মহাজোট প্রার্থীর রঙিন পোস্টারে । অন্যদিকে ধরপাকড়ে এখনও দিশেহারা বিরোধী নেতাকর্মীরা। তফসিল ঘোষণার পরও তাদের বিরুদ্ধে দায়ের হচ্ছে নতুন নতুন মামলা। প্রতিদিনই জেলায় জেলায় চলছে পুলিশের অনানুষ্ঠানিক অভিযান। নতুন-পুরনো মামলায় ধরপাকড়ের পাশাপাশি দেখানো হচ্ছে ভয়ভীতি। টার্গেট করা হচ্ছে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড ও ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালন করতে পারেন তৃণমূলের এমন নেতাকর্মীদের।
নির্বাচনে সম্ভাব্য পোলিং অফিসারদেরও তত্ত্ব-তালাশ করছে পুলিশ।

ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যখন ভোটের উৎসবে মেতে উঠেছেন তখনও বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীরা আগাম জামিনের আশায় ভিড় জমাচ্ছেন উচ্চ আদালত চত্বরে। ভোটারদের কাছে যাওয়ার বদলে তাদের পুরনো মামলায় হাজিরা দিতেই আদালত চত্বরে কেটে যাচ্ছে দিন। ফলে বিরোধী প্রার্থীদের দৃশ্যমান কোনো প্রচারণাও নেই। দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্তত ২০ জন নেতা জানিয়েছেন, প্রতিদিনই পুলিশ নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বা তাদের পরিবারের সদস্যদের থানায় ডেকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। নির্বিচারে আটক করে মামলায় যুক্ত করার ভয় দেখিয়ে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করছে অর্থ।

এদিকে বিএনপির মনোনয়ন চেয়ে সাক্ষাৎকার দিতে ঢাকার একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন যশোর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আবু বকর আবু। পুলিশ পরিচয়ে তাকে তুলে নেয়ার পর তার সন্ধান দাবি করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু চারদিন পর আবুর লাশ মিলেছে বুড়িগঙ্গায়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচন কমিশন এখনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারেনি। তফসিল ঘোষণার পরেও বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে। দলের শক্ত প্রার্থীদের শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে আটকে রাখার পাশাপাশি তাদের জামিন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে।

সরকারের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দুই দফা সংলাপে ফ্রন্টের তরফে যে ৭টি দাবি উত্থাপন করা হয়েছিল তার একটি হচ্ছে গায়েবি মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তার বন্ধ এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দান। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও মাঠের চিত্র ভিন্ন। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছেন- তফসিল ঘোষণার পরও বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নিম্ন-আদালতে জামিন প্রক্রিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্বের ব্যাপারে পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটেনি। প্রধানমন্ত্রীর পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিইসির কাছে মামলা, গ্রেপ্তারের তালিকা দিলেও দুপক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ আসেনি। নতুন মামলা দায়েরের সংখ্যা কমলেও পুরনো মামলাগুলোয় যে পরিমাণ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছিল তাতে বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে বেগ পোহাতে হচ্ছে না পুলিশের।

১৪ই নভেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, রাস্তা অবরোধ, পুলিশকে মারধর ও সরকারি কাজে বাধার অভিযোগে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পল্টন থানায় দায়ের হয়েছে তিন মামলা। এসব মামলায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, তার স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ, বিএনপি নেতা নবীউল্লাহ নবী, মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান ও কফিল উদ্দিনসহ ৪৮৮ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার দিন ও রাতে গ্রেপ্তার হন বিএনপি ও অঙ্গদলের ৬৫ নেতাকর্মী। পরদিন গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে হাজির করা হলে ২৭ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়। আর ৩৮ জনকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। কারাগারে পাঠানো ২৭ জনকে কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।

এদিকে ঘটনার পরদিন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পুত্রবধূ ও ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর কন্যা নিপুণ বিএনপির রাজনীতিতে অন্যতম সক্রিয় এক নারী নেত্রী। সেদিন সন্ধ্যায় নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও বগুড়ার সাবেক এমপি হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, গ্রাম সরকারবিষয়ক সম্পাদক ও গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আনিসুজ্জামান খান বাবু ও খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমির এজাজ খানকে গ্রেপ্তার করে। তিনজনই নিজ নিজ আসন থেকে বিগত সময়ে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন এবং এবারও মনোনয়ন চেয়েছেন।

একই ঘটনায় বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীনকে আটক করা হলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয়। নয়া পল্টনের ঘটনায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেত্রী ও পাবনা- আসন থেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী আরিফা সুলতানা রুমাকেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে নয়া পল্টনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৪ই নভেম্বর থেকে রাজধানীতে গ্রেপ্তার অব্যাহত রেখেছে পুলিশ। তারই অংশ হিসেবে রোববার রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান সোহাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসিন হল শাখার আহ্বায়ক মাহবুব মিয়া, তিতুমীর কলেজ ছাত্রদল সহ সভাপতি মাহাবুব রহমান, মহানগর উত্তর ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুর রহমান রবিন ও শাহজাহানপুর থানা সাধারণ সম্পাদক সোহাগ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে গণমাধ্যমে। এছাড়া সোমবার রাতে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক শেখ রবিউল আলম রবিকে রাজধানীর বসুন্ধরা থেকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। তিনি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-১০ আসনে বিএনপির অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী। এদিকে মঙ্গলবার উচ্চ আদালতে তিন বছরের সাজা ঘোষণার পর সন্ধ্যায় ইস্কাটনের বাসা থেকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য কুমিল্লা-৩ ও ঢাকা-১৬ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী জামিন নিতে গেলে বৃহস্পতিবার তাকে কারাগারে পাঠায় আদালত। বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন চাঁদপুর আদালতে হাজির হতে চাইলেও পুলিশের কড়া পাহারার কারণে পারেন নি। গুম আতঙ্কে ভোগা এ নেতাকে বৃহস্পতিবার শেষরাতের দিকে চট্টগ্রামে এক বন্ধুর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। পরে আদালত কারাগারে পাঠিয়েছেন। বুধবার চট্টগ্রাম মহানগর থেকে দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জমিরউদ্দিন চৌধুরী ও ঢাকা থেকে ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সদস্য আব্বাস আলী, ফেনী জেলা ছাত্রদল সহ- সভাপতি তৌহিদুল ইসলাম আকাশকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শুক্রবার সকালে ধানমণ্ডি থেকে ২০দলীয় জোটের শরিক ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দীন আহমেদ মনিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এভাবে তফসিল ঘোষণার পরও রাজধানীসহ সারা দেশে প্রতিদিনই পুলিশ ও সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিএনপি ও অঙ্গ দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে।

বিরোধী নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দায়ের, গ্রেপ্তার, চাঁদাবাজির ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেছেন যশোর-৪ আসনের বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ও দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব। ১৯শে নভেম্বর জমা দেয়া সে অভিযোগে বলা হয়, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর যশোর জেলার বাঘারপাড়া-অভয়নগর থানা নির্বাচনী এলাকার বহু নেতাকর্মীকে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় আসামি করেছে পুলিশ। অনেক নেতাকর্মীকে মামলা ছাড়াই আটক করে পেন্ডিং মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে। অনেক নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের কাছে আটক করে বা ভয়-ভীতি দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে পুলিশ। যার কারণে আমার নির্বাচনী এলাকার ভোটাররা মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়িছাড়া। যে কারণে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নেতাকর্মীরা নির্বিঘ্নে ভোটের মাঠে প্রচার চালাতে পারছে না।

যাদের কাছ থেকে পুলিশ অর্থ আদায় করেছে তাদের একটি তালিকা সংযুক্ত করে অবিলম্বে বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বদলি চেয়েছেন তিনি। তিনি অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন তফসিল ঘোষণার দিনই অভয়নগর থানায় একটি মামলা করা হয়েছে ৮১ জন নেতাকর্মীকে আসামি করে। এছাড়া ৩১শে অক্টোবর ১৬১ জনকে আসামি করে বাঘারপাড়া থানায় দায়েরকৃত মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। এদিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের আগ্রাসী ভূমিকা ও গায়েবি মামলায় পুলিশের হয়রানির কারণে এলাকায় যেতে পারছেন না বলে অভিযোগ করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল আলম। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও কিশোরগঞ্জ-৬ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে তার ভোটের লড়াইয়ে অংশগ্রহণ অনেকটাই নিশ্চিত।

কিন্তু সম্প্রতি দায়েরকৃত ২৮ মামলায় আসামির তালিকায় রয়েছে তার নাম। শরিফুল ইসলাম জানান, নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার দাবিতে ২০শে নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে- ‘তফসিল ঘোষণার পর থেকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর পক্ষে পুলিশের সহায়তা ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশের’ তল্লাশির বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ১৮ই নভেম্বর ভৈরব পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা ফেরদৌস মিয়ার বাড়িতে একটি ঘরোয়া মিটিং চলাকালে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১২ জনকে আহত ও ৫-৭টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর ও লুটপাঠ করে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। এ ঘটনায় উল্টো বিএনপির ৪৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ। এরপর থেকেই শরিফুল আলমসহ তার কর্মী-সমর্থকরা এলাকা ছাড়া। এমন পরিস্থিতিতে তিনি নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতা চেয়েছেন।

ওদিকে তফসিল ঘোষণার পরও বিএনপি নেতা-কর্মীদের পুলিশি হয়রানি বন্ধ হয়নি অভিযোগ করে সোমবার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামানের কাছে একটি স্মারকলিপি দিয়েছে চট্টগ্রাম বিএনপি। এতে অভিযোগ করা হয়, বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার হয়রানির কারণে নির্বাচনী পরিবেশ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। এর আগে রোববার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছেও একটি স্মারকলিপি দিয়েছে বিএনপি। সেখানে অভিযোগ করা হয়েছে, দুই মাসে মহানগরে ১৪০টি মামলা ও ২০৮ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।

হাইকোর্টের জামিনে থাকা সত্ত্বেও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে তারা বলেন, নগর যুবদল নেতা জমির উদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম হাইকোর্ট থেকে জামিনে থাকার পরও ১৪ই নভেম্বর চান্দগাঁও থানা-পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে। চট্টগ্রাম কমার্স কলেজ ছাত্রদল নেতা সাইফুদ্দিন কামরান ও নাজিম উদ্দিন সদরঘাট থানার মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বের হওয়ার সময় ১৬ই নভেম্বর কারাফটক থেকে পুনরায় গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ।


বিরোধী নেতাকর্মীদের গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার না করতে ১৮ই নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে একটি চিঠি দিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে পৌঁছে দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে স্থাপিত তথ্য সেলের কর্মকর্তা সালাউদ্দিন। ইসিকে পাঠানো চিঠির সঙ্গে ২ হাজার ৪৮টি মামলাসংবলিত একটি তালিকাও জমা দেন তিনি। এ সময় সালাউদ্দিন খান বলেছিলেন, আমরা ৭ ও ১৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুটি তালিকা জমা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিকার পাইনি। তফসিল ঘোষণার পর বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একর পর এক গায়েবি মামলা করা হচ্ছে। সরকারকে লিখিতভাবে জানানোর পরও কোনো মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। বরং নতুন করে মামলা করা হচ্ছে।

সালাউদ্দিন জানান, তফসিল ঘোষণার পর থেকে দায়েরকৃত মামলায় ৭৯১ জনকে আসামি ও ৫২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি বলেন, চলতি বছরের ১লা সেপ্টেম্বর থেকে ১৭ই নভেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে ২০৪৮টি মামলা হয়েছে সেসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১০ হাজার ৪৩৩ জন নেতাকর্মী। এসব মামলায় এখনও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। ফলে নতুন মামলার সংখ্যা কম হলেও গ্রেপ্তারের সংখ্যা কমেনি। এছাড়া মামলাগুলোয় হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এর আগে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে তফসিল পরবর্তী সময়ে গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তারের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। সেদিন সিইসি ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন- ‘তফসিলের পর যদি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে নাম-পদবিসহ সেটার তালিকা কমিশনে জমা দেন। আমরা তালিকা দেখে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’

বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী শক্ত প্রার্থীদের গ্রেপ্তার ও জামিনপ্রক্রিয়া বিলম্বিত করা হচ্ছে। দলটির কেন্দ্রীয় সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী কুমিল্লা-৬ ও ১০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হলে তাকে একজন সমন্বয়কের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ২৪শে অক্টোবর একটি পুরনো মামলায় হাজিরা দিতে গেলে কুমিল্লা জজ আদালত তাকে কারাগারে পাঠায়। সে মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেলেও তাকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হচ্ছে একের পর এক মামলায়। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও জেলা বিএনপির সাধারণ অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে ৩১শে অক্টোবর কারাগারে পাঠায় আদালত।

উচ্চ আদালতের জামিনে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও গতকাল মঙ্গলবার তাকে ফের কারাফটক থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপির কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে জানা যায়, নিম্ন-আদালতে জামিনপ্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় দীর্ঘায়িত হচ্ছে বহু বিএনপি নেতাকর্মীর। এর মধ্যে অন্তত দুই ডজন বিএনপি নেতা কারাগারে থেকেই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী চট্টগ্রাম-৪, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল ঢাকা-৮, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন হবিগঞ্জ-২, দলের শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী টাঙ্গাইল-৮, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু টাঙ্গাইল-২, ব্যবসায়ী মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়া কুমিল্লা-১০ আসন থেকে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে অংশ নিয়েছিলেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও আসনগুলোয় প্রধান প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে তাদের নাম। কিন্তু প্রত্যেকেই কারাবন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী একজন সাবেক এমপি।

কারাবন্দি বিএনপি ও অঙ্গদলের নেতাদের মধ্যে- যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান ঢাকা-১৫, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারের ঢাকা-৭, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম-৯, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্কর চট্টগ্রাম-১, বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু ঝালকাঠি-২, চারঘাট উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদ রাজশাহী-৬, অধ্যাপক কুতুব উদ্দিন চট্টগ্রাম-৭ ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক জালাল আহমেদ ফেনী-১ আসনের অন্যতম মনোনয়ন প্রত্যাশী।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=146472