২৪ নভেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১১:৪৬

পুলিশের তথ্য সংগ্রহের ফোনে খুলনার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা বিব্রত

পুলিশের তথ্য সংগ্রহের ফোনে বিব্রত খুলনার ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা। বিসিএস ক্যাডার থেকে শুরু করে সরকারি স্কুল শিক্ষক, ব্যাংক কর্মকর্তা এমনকি বেসরকারি স্কুলের সহকারী শিক্ষক পর্যন্ত সবার কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে তাদের বর্তমান ও অতীত রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছেন। মাঠ প্রশাসনের বাড়তি তদারকি, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ায় আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালনে অনীহা রয়েছে কর্মকর্তাদের। তবে, চাকরিবিধির কারণে মুখ খুলতে পারছে না কেউ।
সূত্র মতে, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি ও আধা সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া হয়। সেই তালিকা থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করেন রিটার্নিং অফিসার। খুলনার ছয়টি আসনে ১৩ হাজার ৪২১ জন কর্মকর্তা ভোটগ্রহণ কার্যে নিয়োজিত থাকবেন।

আর ৭৮৫টি কেন্দ্রে খুলনায় মোট ভোটার ১৮ লাখ ৬৫৬ জন। এবার পুলিশ ফোন করে কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইছেন কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, পুলিশ এভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন না। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত ১৫ই মে কেসিসি নির্বাচনের দিনে তিনটি কেন্দ্রে জাল ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা কঠোর পদক্ষেপ না নেয়ায় ৫৭ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জোরপূর্বক ভোটকেন্দ্র দখলের অভিযোগে তিনটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। একাধিক ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে আমরা বাধ্য, তবে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি ও সর্বশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের তিক্ত অভিজ্ঞতা মনে পড়লে ভোটগ্রহণের দায়িত্ব পালন করতে ইচ্ছা করে না। একদিকে, ক্ষমতাসীনদের চাপ অন্যদিকে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে না পারলে বিবেকের তাড়না। আযম খান সরকারি কমার্স কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলী বলেন, ‘পুলিশ ফোন করে আমার কাছে জানতে চাইলেন, আমি কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না! আমি তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলাম, সরকারি চাকরি করে আপনি কি কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন? বিসিএস ক্যাডার একজন শিক্ষকের সঙ্গে উনার ব্যবহারটা (ফোনালাপ) আমার কাছে ভালো লাগেনি। অনেকবার নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করেছি, এটা নির্বাচন কমিশনের জানা থাকার কথা। এখন কেন পুলিশ ভেরিফিকেশন? আর সত্যিই যদি তথ্যানুসন্ধানের প্রয়োজন হয়; তাহলে নির্ধারিত কর্মকর্তা জানবেন কেন?’ সরকারি দৌলতপুর মুহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম জোয়ারদার বলেন, ‘আমার স্কুল থেকে ১৪ জন শিক্ষকের নাম পাঠিয়েছিলাম। পরে পুলিশ ফোন করে জানতে চায়, কেউ কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন কি না? আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি, না। এরপরও প্রত্যেক শিক্ষকের কাছে পুলিশ কল করেছে বলে জানতে পেরেছি।’ পুলিশের এই তৎপরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম জানান, যেদিন তফসিল ঘোষিত হয়েছে, সেদিনই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিশেষ কোনো দলের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার রিটার্নিং কর্মকর্তার। পুলিশের ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ নেই। ইসি নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না। এ বিষয়ে ইসি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কোনো ধরনের নির্দেশনা দেয়ার প্রশ্নই আসে না।

http://mzamin.com/article.php?mzamin=146461