২৪ নভেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১১:৩৬

রান্নার জ্বালানি থেকে উদগত গ্যাসে প্রাণঘাতী রোগ

রান্নার জ্বালানি থেকে উদগত গ্যাসে নানা ধরনের প্রাণঘাতী রোগ হতে পারে। সাধারণভাবে ঘরে যেসব জ্বালানি ব্যবহার করে রান্না করা হয় সেসব জ্বালানি থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন ধরনের ক্ষুদ্র কণাগুলো (১০ মাইক্রন অথবা আরো ক্ষুদ্র) ফুসফুসে অথবা রক্ত প্রবাহে ঢুকে পড়ে। এই কণাগুলো কার্ডিওভাস্কোলার, সেরিব্রোভাস্কোলার এবং শ^াস-প্রশ^াসে নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। রান্না থেকে উদগত যেসব ক্ষুদ্র কণা (পার্টিকুলেট মেটার) রক্তে অথবা ফুসফুসে গিয়ে রোগ সৃষ্টি করে থাকে এগুলো হলো- সালফেট, নাইট্রেট, অ্যামোনিয়া, সোডিয়াম ক্লোরাইড, ব্ল্যাক কার্বন, খনিজ ধুলা (মিনারেল ডাস্ট) ও পানি। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) রিপোর্টে বলা হয়েছে, ক্ষুদ্র কণা প্রবেশের মাধ্যমে স্বাস্থ্যে যে ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে এটি প্রমাণিত। হু ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) ২০১৩ সালে এক গবেষণায় পার্টিকুলেট মেটারকে ফুসফুস ক্যান্সারের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কার্ডিওভাস্কোলার ও রেসপিরেটরি রোগগুলো মানুষের শরীরে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে। দীর্ঘমেয়াদি প্রভাবে ফুসফুসে ক্যান্সার সৃষ্টি করে থাকে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়েছে।
রান্নার জ্বালানি থেকে পরিবেশ দূষণকারী ও স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিকারী পার্টিকুলেট মেটার ছাড়াও, ব্ল্যাক কার্বন, পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (পিএএইচ), কার্বন মনোক্সাইড ও মিথেন গ্যাস তৈরি হয়।
রান্নার জ্বালানি থেকে উৎপাদিত ব্ল্যাক কার্বন পার্টিকুলেট মেটার (পিএম ২.৫) হিসেবে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। এটি যেমন পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী তেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি করে থাকে প্রচুর। রান্নার সাথে জড়িত ব্যক্তিটি ক্ষতিকর কার্বন কণা দ্বারা অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকেন। শ^াস নেয়ার সময় কার্বন কণা ফুসফুসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, কার্বন শ^াস-প্রশ^াসে সমস্যা ছাড়াও হৃদরোগ, ক্যান্সার এমনকি জন্ম ত্রুটির জন্য দায়ী। এ ছাড়াও ব্ল্যাক কার্বন কণা ফুসেফুসে কফ সৃষ্টি করে থাকে এবং এর ফলে চোখ, নাক ও গলায় জ্বালা-পোড়ার মতো অনুভূতি হয়ে থাকে।

রান্নার সহজ জ্বালানি অবশেষ পলিসাইক্লিক অ্যারোমেটিক হাইড্রোকার্বন (পিএএইচ) তৈরি করে থাকে। এটি কাঠ পোড়ানোর ফলে তৈরি হলেও ডিজেল ইঞ্জিন ও ওভেন থেকেও এই ক্ষতিকর পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে এবং মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘ সময় জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করলে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়ে থাকে।
কাঠ, কয়লা, কেরোসিন, পেট্রল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সলতেযুক্ত স্টোভ ইত্যাদি পোড়ানো থেকে কার্বন মনোক্সাইড উৎপাদন হয়ে থাকে। বলা হয়ে থাকে কার্বন মনোক্সাইড একটি প্রাণঘাতী গ্যাস। রঙহীন, গন্ধহীন এই গ্যাসটি বেশি তৈরি হয়ে থাকে জ্বালানির অসম্পূর্ণ দহনের কারণে। এই গ্যাসটি রক্তের অক্সিহিমোগ্লোবিন কমিয়ে দেয়। এটি শিশুদের হাঁপানি বাড়িয়ে দেয়, বাড়িয়ে দেয় ব্রঙ্কাইটিস। বয়স্কদের মধ্যে কার্ডিওভাস্কোলার ডিজিজ, কার্ডিয়াক ডিজিজ, কার্ডিয়াক ফেইলিউর, ইস্কেমিট হার্ট ডিজিজ সৃষ্টি করে থাকে।


http://www.dailynayadiganta.com/last-page/366912