২১ নভেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:১০

কবিতা খানমের সুর বদল ও কাদেরের পোয়াবারো

ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী : নির্বাচন কমিশনের কাজ-কারবার দেখে সাধারণ মানুষের মনে এমন একটা ধারণা ক্রমেই বদ্ধমূল হয়েছে যে, এই কমিশন আশা করেছিল, বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে আসবে না। তারা নির্বাচনে না এলে নির্বাচন কমিশনের কোনো দায় থাকে না, কোনো ভেজাল হয় না। কিছু নাম ঘোষণা করে দিয়ে তারা খালাস হতে পারেন। কিন্তু কমিশনের সে আশার গুড়ে বালি পড়েছে। ২০ দল তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের কথা দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয়, তারা এমনও বলেছেন যে, নির্বাচনে আছেন এবং থাকবেন। কিছুতেই তারা নির্বাচন বর্জন করবেন না। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন বলেছেন- বর্জন নয়, বরং সকলে মিলে কেন্দ্র পাহারা দিতে হবে। এই যখন অবস্থা, তখন নির্বাচন কমিশন একেবারে এলোমেলো হয়ে গেছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তাদের যে বিরাট দায়িত্ব রয়েছে এবং সে দায়িত্ব পালনে তাদের দৃঢ়তার প্রয়োজন সেটির অবলোপন ঘটেছে। যেখানে প্রশাসন পুলিশ সব কিছুই এখন নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকার কথা। সেখানে সব কিছুতে কমিশন যেন দায়সারা। নির্বাচন কমিশন ঘোষণা দিয়েছিল, সকল রকম পোস্টার, বিল বোর্ড নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে তুলে ফেলতে হবে। কিন্তু সরকারি দল তার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েছে। কমিশন দেখেও কিছু দেখছেন না, শুনে কিছু শুনছে না। দায়িত্ব যখন নিয়েছেন, সে দায়িত্ব পালনে তাদের কঠোরভাবে সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি।

এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা হুট করেই বলে ফেলেছিলেন যে, জাতীয় নির্বাচন যে শতভাগ সুষ্ঠু হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। এও এক আজব কথা। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বই হলো জনগণকে শতভাগ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উপহার দেয়া। প্রধান নির্বাচন কমিশনার যদি নিজেই বলেন যে, নির্বাচন সুষ্ঠু করার নিশ্চয়তা তিনি দিতে পারছেন না। তাহলে জনগণের ভরসার স্থল কী? বর্তমান সরকার দেশের সকল প্রতিষ্ঠান, প্রশাসন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, সব কিছুকে দলীয়করণ করে ফেলেছে। আশ্রয় নেবার জায়গা মানুষের সঙ্কুচিত হতে হতে তাদের পিঠ একেবারে দেয়ালে ঠেকে গেছে। প্রশাসন পক্ষপাতদুষ্ট, পুলিশ দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ। এমনকি নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর গাজীপুরের এক পুলিশ কর্মকর্তা আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে পোশাক পরেই বক্তৃতা দিতে গেছেন। তার সচিত্র প্রতিবেদন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন ত্বরিত কোন ব্যবস্থা নেয় নাই। একেবারেই চুপ করে থেকেছে ও দেখেছে। যদি পুলিশ প্রশাসনের এই পর্যায়ের কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে সরকারি দলকে এভাবে সমর্থন দিতে থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশন একটি অর্থহীন শিখ-ি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এবং গাজীপুরের ওসির মতো সারাদেশেই পুলিশ কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের সমর্থন করতে থাকবে ও আওয়ামী লীগের জয়ের জন্য যে কোনো অপকর্মে জড়িয়ে পড়বে। পুলিশও আমাদের একটি ভারসাস্থল। আমরা পুলিশ বাহিনীর কোনো কোনো সদস্যের সমালোচনা করে থাকি। কিন্তু গোটা পুলিশ বিভাগকে আমরা কখনো সমালোচনা করতে পারি না। কেননা, বিপদে আপদে মানুষকে পুলিশেরই দ্বারস্থ হতে হয়। কিন্তু পুলিশের দ্বারস্থ হওয়া মানে নতুন বিপদ ডেকে আনে। তার ভুরি ভুরি প্রমাণ রয়েছে। কখনও কখনও পুলিশ নানা কারণে অযৌক্তিক মামলা দায়ের করে রাখছে এবং যে কোনো সময় যে কোনো জায়গায় হানা দিয়ে গায়েবি মামলার নামে সাধারণ মানুষকে ধরে এনে চাঁদা আদায় করছে। এই প্র্যাকটিসের জন্য নির্বাচন কমিশন দায়ী, এ রকম কথা আমি বলছি না, এর জন্য দায়ী সরকার। পুলিশ বাহিনীর সকল অপরাধে সরকার চোখ বন্ধ করে থেকেছে। ফলে পুলিশ বলতে সাহস পেয়েছে যে, ‘মাছের রাজা ইলিশ, দেশের রাজা পুলিশ।’ পুলিশের সদস্যরা এমন কথাও আলোচনা করেন যে, আমরা যদি পাশে না থাকি তাহলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সরকারের পতন ঘটে যাবে। সত্যাসত্য জানি না, কিন্তু পুলিশ বাহিনীর ভেতরে এ রকমই ধারণার সৃষ্টি হয়েছে।

আর থাকে বিচার বিভাগ। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে এদেশে টানাপোড়েন চলে আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো এই যে, নিম্ন আদালত প্রশাসনের অধীনেই থেকে গেছে। সুপ্রীম কোর্টের অধীনে তাদেরকে আনা সম্ভব হয়নি। নিম্ন আদালতকে সুপ্রীম কোর্টের অধীনে নিয়ে আসা তথা বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার সর্বশেষ চেষ্টা চালিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কৃত প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। কিন্তু ভাগ্যের এমনই নির্মম পরিহাস যে, সেই সিনহাকে সরকার নানা অপবাদ দিয়ে জোর করে দেশত্যাগে বাধ্য করেছে। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা সম্প্রতি ‘এ ব্রোকেন ড্রিম’ নামে একটি বই প্রকাশ করে তাতে বাংলাদেশ থেকে তাকে বহিষ্কারে গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকার কীভাবে অপদস্থ করেছিল সেটি তুলে ধরেছেন। সে ক্ষেত্রে তার অধস্তন বিচারপতিরাও মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারেননি। তারাও সরকারের অন্যায় নির্দেশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। তার কারণ সম্ভবত এই যে, যদি আত্মসমর্পণ না করেন, তাহলে তাদেরও হয়তো এস কে সিনহার ভাগ্যই বরণ করতে হবে। এটাই বিচার বিভাগের হাল। সুতরাং নিম্ন আদালতের উপর মানুষের আস্থা কমেছে। উচ্চ আদালতও নানা রায় দিয়ে আস্থা অনেকখানি হারিয়ে ফেলেছে। এটা কোনো জাতির জন্যই শুভ সংবাদ নয়। আমাদের অবশ্যই রাষ্ট্রের এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থাবান থাকতে হবে। কোথায়ও না কোথায়ও মানুষের ন্যায় বিচার পাবার জায়গা থাকতে হবে। এ সরকার সেই জায়গাগুলো একের পর এক সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিয়েছে।

নির্বাচন কমিশনও তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান। দেশে গণতন্ত্র চর্চা ও গণতন্ত্র সুরক্ষা অর্জনে এ প্রতিষ্ঠানের বিশাল দায়িত্ব রয়েছে। সে দায়িত্ব শুধু একদিনের নয়, অর্থাৎ ভোটের দিন জনগণ ভোট দিল এবং চলে গেল নির্বাচন কমিশন যাকে খুশি তাকে নির্বাচিত ঘোষণা করল, ব্যাস, দায়িত্ব শেষ হয়ে গেল এমনটা নয়। বছরব্যাপী স্থানীয় সরকার থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন এসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনের ফল কি হবে সেটার জন্য কমিশন যদি সরকারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে তাহলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা কিংবা গণতন্ত্রের সুরক্ষা নিশ্চত করা সম্ভব হবে না। সেই কারণেই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিকাশ ক্রমেই ক্ষীয়মাণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সরকারকে এখন বিশ্বের থিংক ট্যাঙ্কগুলো নব্যস্বৈরাচার বলে আখ্যায়িত করছে। সেটি আমাদের জন্য কোনো সুখবর নয়। কার্যত সর্বব্যাপী লুণ্ঠনে দেশের অবস্থা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এখানে গণতন্ত্র নেই, মৌলিক মানবাধিকার নেই, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভুলুণ্ঠিত। একের পর এক কালাকানুন জারি হচ্ছে, লুণ্ঠন রাষ্ট্রীয়করণ হয়েছে। ব্যাংক লুট, রাস্তা লুট, ভবন নির্মাণে লুট, সড়ক নির্মাণে লুট, ফ্লাইওভার নির্মাণে লুটÑদেশ এখন লুটেরাদের রাজত্বে পরিণত হয়েছে। মানুষ যদি এর পরিবর্তন চায় তাহলে সে পরিবর্তন আনতে হবে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। তার জন্য চাই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল ভূমিকা। যতদিন যাচ্ছে আমরা ততোই দেখছি তুলনামূলকভাবে অযোগ্যরা নির্বাচন কমিশনার নিযুক্ত হচ্ছেন। ক্রমেই প্রমাণিত হচ্ছে যে, এক নির্বাচন কমিশন থেকে আরেক নির্বাচন কমিশন অধিকতর মেরুদ-হীন, অধিকতর দলকানা। সেই কারণেই গণতন্ত্র সুদূর পরাহত। নির্বাচন কমিশন বলতে পারে আমরা একা কী করবো। সরকার যদি না চায়, সরকার যদি সহযোগিতা না করে, তাহলে আমরা তো তেমন কিছু করতে পারবো না। প্রশাসন বা পুলিশের দলকানা কর্মকর্তাদের আমরা শাস্তি দিতে পারি। কিন্তু যদি কোনো কারণে বর্তমান সরকারই আবার ক্ষমতায় এসে যায়, তাহলে সেই কর্মকর্তাকে হয়তো প্রমোশন দিয়ে পুনরায় পদায়ন করা হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের শাস্তির কোনো মূল্য থাকবে না। যাহা বাহান্ন তাহাই তিপান্ন থেকে যাবে। এ কথা সত্য। কিন্তু নির্বাচন কমিশনকে জনগণের কথাও মনে রাখতে হবে। কোনো স্বৈরাচারী সরকারই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। কখনও না কখনও পৃথিবীতে সকল স্বৈরাচারী সরকারেই পতন হয়েছে। এদেরও পতন অনিবার্য, দু’দিন আগে বা দু’দিন পরে।

বাংলাদেশে যত নির্বাচন কমিশন রয়েছে নূরুল হুদা কমিশন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি মেরুদ-হীন এবং সবচেয়ে বেশি গণবিরোধী। এদের ভূমিকা সরকারের সেবাদাসের। সেই কারণে পুলিশ কর্মকর্তারা ফোন করে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের নানা অসঙ্গত প্রশ্ন করতে পারছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও পোলিং কর্মকর্তাদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। বিশেষ করে তাদের বর্তমান ও অতীত রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের নীতিমালা অনুযায়ী, সরকারি ও আধা-সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তারা প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিঠি দিয়ে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা চাওয়া হয়। সেই তালিকা থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তা চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করেন। কিন্তু তাদের সম্পর্কে পুলিশ এভাবে তথ্য সংগ্রহ করতে পারে না।

পুলিশের এ ধরনের তৎপরতা সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, যেদিন তফসিল ঘোষিত হয়েছে, সেদিনই ভোট গ্রহণ কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত থাকলে তাকে ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা হিসাবে নিয়োগ দেয়া যাবে না। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার রিটার্নিং কর্মকর্তার। পুলিশের ভূমিকা রাখার কোনো সুযোগ নেই। ইসি নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের বিষয়ে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না। এ বিষয়ে ইসি থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে কোনো ধরনের নির্দেশনা দেয়ার প্রশ্নই আসে না। এক সহযোগী সম্প্রতি সংবাদ দিয়েছেন যে, গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলায় গত ২ সপ্তাহে পুলিশের ফোন পেয়েছেন, এমন ১০ জন তাদের জানিয়েছেন পুলিশ তাদের নাম-ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, আগে কখনও নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছেন কিনা- এসব জানতে চেয়েছেন। কারো স্বামী বা পরিবারের অন্য কেউ রাজনীতি করেন কি না জানতে চেয়েছেন। জানতে চাওয়া হয়েছে নিজেদের বর্তমান ও অতীত দলীয় পরিচয় সম্পর্কে। এই ১০ জনই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা। একাধিক ব্যক্তি বলেছেন, পুলিশের এমন তৎপরতা তাদের জন্য বিব্রতকর। এর ফলে তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের আগ্রহ কমে গেছে। একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, স্কুলের শিক্ষকদের অনেকেই বলেছেন, তাদের থানা থেকে ফোন দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক পরিচয়সহ অন্যান্য তথ্য জানতে চাওয়ায় সংশয়ে আছেন তারা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, আমাকে ফোন দিয়ে বার বার জানতে চাওয়া হয়েছে আমি কোন দল করি? আমি কিছু বলিনি, পরে বাধ্য হয়ে ফোন কেটে দিয়েছি। এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আরিফুজ্জামান বলেন, নির্বাচনী কর্মকর্তা ঠিক করার দায়িত্ব রিটার্নিং অফিসার, পুলিশকে এ ধরনের কোনো দায়িত্ব দেয়া হয় নাই। কিন্তু নির্বাচন কমিশন শুধু দু’কথা বলেই খালাস পেতে পারে না। নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ব্যাপারে নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহের নামে পুলিশ যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে সেটি দ্রুত রোধ করাও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব পালনে কমিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ।

তার মধ্যে এসেছে কবিতা খানমের কথা। সিইসি যখন বলেছিলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পূর্ণ সুষ্ঠু হবে, এমন কথা বলা যায় না। তখন এই কবিতা খানমসহ অন্য চার নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, তারা শপথ নিয়েছেন সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্যই। সিইসির বক্তব্যের সঙ্গে কবিতা খানম নিজেও একমত নন। কিন্তু তিন মাসের ব্যবধানে অবস্থান বদল করেছেন কবিতা খানম। গত শুক্রবার প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সামনেই তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে শতভাগ সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। নির্বাচন ও আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কবিতা খানমের বক্তব্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য অজুহাত তৈরিতে সহায়ক হবে। তাদেরকে এক প্রকার বার্তাই দেয়া হলো যে, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে সক্ষম নয়। এমন বক্তব্য নির্বাচন কমিশনারদের নৈতিকতার পরিপন্থী। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তার উচিৎ পদ থেকে সরে যাওয়া। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, একজন নির্বাচন কমিশনার এটা কোনোভাবেই বলতে পারে না। এভাবে কথা বললে কমিশন বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। কর্মকর্তারা অজুহাত দাঁড় করাতে পারবে। মনে হচ্ছে নির্বাচন কমিশন সে অজুহাতের পথ আগে থেকেই তৈরি রাখছে। এতে প্রশ্ন জাগে নির্বাচন কমিশন আসলেই ভাল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত কি না। এগুলো নির্বাচন কমিশনের বেসামাল হওয়ার লক্ষণ কি না, তাও জানা দরকার। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, নির্বাচন কমিশনারদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য। কেউ যদি মনে করে তার পক্ষে এটা সম্ভব না, নৈতিকভাবে দায়িত্ব পালনে তার থাকা তো উচিত নয়। দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোই তার জন্য নৈতিক কাজ হবে। কবিতা খানম হঠাৎ এমন করে কেন সুর বদলালেন সেটা এক রহস্যেই থেকে যাচ্ছে। নাকি নির্বাচন কমিশন একটি খাড়া-বড়ি-থোড়, থোড়-বড়ি-খাড়া নামমাত্র নির্বাচন করতে চাইছেন এবং বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা সঙ্গে সঙ্গে সত্যে প্রমাণিত হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কবিতা খানমের এ বক্তব্য লুফে নিয়ে বলেছেন-শতভাগ স্বচ্ছ, সুষ্ঠু নির্বাচন কোনো দেশেই হয় না। বাংলাদেশে এর আগে যে নির্বাচনগুলো হয়েছে তার চেয়ে এবার আরো ভালো নির্বাচন হবে, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু হবে। অর্থাৎ কবিতা খানমের কথার প্রতিধ্বনি করলেন ওবায়দুল কাদের। নির্বাচনে কারচুপি, ভোটডাকাতির পথ আরো খানিকটা প্রশস্ত হলো। এটা রোধের একমাত্র উপায় জনতার প্রতিরোধ। ঐক্যফ্রন্টকে সম্ভবত এ প্রতিরোধই সৃষ্টি করতে হবে।

 

http://www.dailysangram.com/post/354241