রাজধানীতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে বাড়ছে মশার উপদ্রব। শনির আখড়া এলাকার কুতুবখালী খাল থেকে তোলা ছবি : আবদুল্লাহ আল বাপ্পী -
১৭ নভেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১১:০৮

১১ জনের মৃত্যু : ডেঙ্গু আতঙ্কে নগরবাসী

মশার উপদ্রব চরমে

ভয়াবহ মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নগরবাসী। অন্য সময়ে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে মশানিধন কর্মসূচি পালন করা হলেও এ বছর তেমন কোনো আলামত দেখা যাচ্ছে না। অথচ ইতোমধ্যে মশাবাহিত ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে শিশুসহ ১১ জন। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে কমপক্ষে ৩ হাজার ৪৯১ জনকে। সেই সাথে নগরবাসী আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। গত বছর চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ দেখা দিলেও তাতে মৃত্যুর সংখ্যা এতটা বৃদ্ধি পায়নি। ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রাণহানির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, বেঁচে থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি অনেকে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এতে করে শারীরিক ক্ষতির পাশাপাশি আর্থিকভাবেও ক্ষতির শিকার হচ্ছেন তারা।

বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত বছর চিকুনগুনিয়া রোগের প্রকোপ শুরু হলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নানা আয়োজনে মশানিধন কর্মসূচি শুরু হয়েছিল। ফগার মেশিনের ধোঁয়ার পাশাপাশি বিভিন্নভাবে ওষুধ ছিটিয়ে মশা নিধনের চেষ্টা করা হয়েছিল। অথচ এ বছর মশার কামড়ে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও সংস্থাগুলোর তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।

মুগদায় বসবাসকারী হাবিবুর রহমান জানান, প্রতি বছরই মশার উপদ্রব হয়ে থাকে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের নানা পদক্ষেপ ও চেষ্টায় কিছুটা হলেও তা হ্রাস পায়। তা ছাড়া মশাবাহিত রোগের প্রকোপ শুরু হলে মশানিধন সংস্থাগুলোর তৎপরতাও দেখা যায়। কিন্তু এ বছর মশার ভয়াবহ উপদ্রব হলেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না। তিনি বলেন, মশার কয়েল কোনো কাজ করে না।
মিরপুর-২ এর গৃহবধূ মাসুদা বলেন, মশার কারণে শিশুদের লেখাপড়ার খুবই ক্ষতি হচ্ছে। শুধু রাতে নয়, দিনের বেলাও টেবিল চেয়ারে বসে পড়তে পারছে না তারা। এ দিকে চারদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখে ভয়ে শিশুদের মশারির মধ্যে বসিয়ে পড়তে দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, কয়েলের ধোঁয়ায় মশা না মরলেও মানুষের নানা অসুবিধা হচ্ছে। তার ছোট ছেলে আদনান কয়েল জ্বালালে নিঃশ্বাস নিতে পারে না। তাই বাধ্য হয়ে তাকে মশারির মধ্যে বসে পড়তে হচ্ছে।
মেহেদী হাসান জানান, ঘরের মধ্যে বসে কোনো কাজ করা যায় না। এমনকি ঘরের মধ্যে হাঁটতে থাকলেও মশা পিছু আসতে থাকে। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আতঙ্কে আছি। কারণ চিকুনগুনিয়ায় মৃত্যুর ঘটনা কম ঘটলেও ডেঙ্গুতে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) সূত্র মতে, প্রতি বছরের জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকায় ডেঙ্গুরোগের বাহক এডিস মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারিতে আগাম বৃষ্টি হওয়ায় এ বছর মশার উপদ্রব আগে থেকেই বৃদ্ধি পেয়েছে। ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার সূত্র মতে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩ হাজার ৪৯১ জন ব্যক্তি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যার মধ্যে মারা গেছেন ১১ জন। আগস্ট মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ১৬৬৬ জন রোগী। আর ১ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮ দিনে ভর্তি হয়েছে ৫৭৫ জন রোগী। গত জুলাই থেকে এই রোগের প্রকোপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। মূলত ঢাকার ২২টি হাসপাতালের তথ্য সংগ্রহ করে এ রিপোর্ট দেয়া হয়ে থাকে।

 

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/365347