১৭ নভেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১০:৫৯

নির্বাচন কমিশনের ফাইনাল পরীক্ষা

বাংলাদেশে যতগুলো দুর্বল নির্বাচন কমিশন কাজ করেছে, তার মধ্যে একটি হল বর্তমান কমিশন। এ কমিশনের গঠনপ্রক্রিয়া থেকে শুরু করে পৌনে দু’বছরের কাজকর্ম ও বক্তব্য-বিবৃতি বিশ্লেষণ করে এমনটি বলা যায়। কাগজে-কলমে স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হলেও কাজকর্মের মধ্য দিয়ে কমিশন এর স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। সে কারণে কমিশনের ওপর সরকারি দল ব্যতীত অন্যান্য দল ও জনগণের আস্থা গড়ে ওঠেনি।
এ কারণে বিএনপিসহ নবগঠিত ঐক্যফ্রন্ট এর ৭ দফা দাবিতে কমিশনের পুনর্গঠন দাবি করেছিল। সাংবিধানিক পদ হওয়ায় সরকার না চাইলে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা কঠিন। কেন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা নেই? এর কারণ হল কমিশন দায়িত্বে আসার পর নিরপেক্ষ রেফারির ভূমিকা পালন করতে পারেনি। একাদশ সংসদ নির্বাচন আয়োজনেও কমিশন দলীয় সরকারের অঘোষিত ডিকটেশন অনুযায়ী কাজ করছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
দায়িত্বে আসার পর থেকে এ কমিশনের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা হয়েছে। সেগুলোর পুনরাবৃত্তি করছি না। তবে কমিশনের উচিত একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মূল পরীক্ষায় পাস করতে চেষ্টা করা। উল্লেখ্য, এর আগে অনুষ্ঠিত চার রকম স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কমিশন এর নিরপেক্ষতা যেমন প্রমাণ করতে পারেনি, তেমনি দৃশ্যমানভাবে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও ভোট কারচুপিকারীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থাও করতে পারেনি।
তবে প্রতিটি নির্বাচনের পর সিইসি বলেছেন, ‘কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ব্যতীত নির্বাচন ভালো হয়েছে।’ কিন্তু বাস্তবতা দেখে জনগণ কমিশনের মুখস্থ বক্তব্য বিশ্বাস করেননি। অতীতের উল্লিখিত নির্বাচনগুলোতে যেসব ক্যাডার ও সন্ত্রাসীরা দুর্নীতি করে শাস্তির পরিবর্তে সরকারি প্রশ্রয় পেয়েছে, তারা সংসদ নির্বাচনে আবারও সন্ত্রাস করবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে নির্বাচন দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হলে সন্ত্রাসকারীরা কিছুটা ভয় পেত।
কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন হওয়ায় এরা যেহেতু আগে এই সরকারের অধীনেই নির্বাচনে সন্ত্রাস করে ক্ষমতাসীন দলের প্রশ্রয় পেয়েছে, কাজেই এখন একই সরকারের অধীনে নির্বাচনে সন্ত্রাস করতে ভয় পাবে না। নির্বাচন কমিশন এদের সন্ত্রাস করা থেকে বিরত রাখতে পারবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়।
কমিশন এর মধ্যে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা নিয়ে সরকারি সুরে গান ধরেছে। প্রথমেই কমিশন তফসিল ঘোষণায় তাড়াহুড়ো করে ভুল করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন জোট ও দলের সঙ্গে ১ নভেম্বর থেকে যে সংলাপ করেছিলেন, সে প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই কমিশনের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার দরকার ছিল না।

প্রধানমন্ত্রী সংলাপ শেষ করে যে প্রেস ব্রিফিং দিতে চেয়েছিলেন, কমিশনের উচিত ছিল সে পর্যন্ত অন্তত অপেক্ষা করা। কিন্তু কমিশন তা করেনি। আবার সরকারি দলের গ্রিন সিগন্যাল পাওয়া মাত্রই কমিশন ঘোষিত সিডিউল এক সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ জেগেছে যে কমিশন হয়তো অঘোষিত সরকারি ডিকটেশন অনুযায়ী কাজ করছে।
সরকারের ঘনিষ্ঠভাজন যুক্তফ্রন্ট ৭ দিন নির্বাচন পিছিয়ে দিতে বলার পরপরই কমিশন ঠিক ৭ দিনই নির্বাচন পিছিয়েছে, যদিও নির্বাচনের অন্যতম স্টেকহোল্ডার ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে এক মাস নির্বাচন পিছিয়ে দেয়ার দাবি ছিল।

কমিশনকে তো খেলার মাঠের রেফারির মতো সব দলের স্বার্থ সমানভাবে দেখতে হবে। ইসি কি জানে না সরকারি দল এক-দেড় বছর থেকে জনগণের করের টাকায় সরকারি প্রটোকল ব্যবহার করে বড় বড় সমাবেশে নৌকায় ভোট চাইছে? সব রকম নির্বাচনী প্রচারণা করছে? আর অন্যদিকে বড় বিরোধী দল হামলা মামলায় পর্যুদস্ত হয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তাদের নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দিয়ে তাদের আসামি করা হয়েছে। তাদের পাইকারি হারে গ্রেফতার করা হচ্ছে।
গণভবনে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সংলাপকালে আর মামলা করা হবে না এবং ঐক্যফ্রন্টকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হবে মর্মে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও সে প্রতিশ্রুতি রক্ষিত হয়নি। কারণ, পরে ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী ও ঢাকার সমাবেশে বাধা দেয়া হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে। যানবাহন আটকে দেয়া হয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। গণভবনে দ্বিতীয় দফা সংলাপকালে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার একটি আংশিক তালিকা হস্তান্তর করা হলেও মামলা ও গ্রেফতার বন্ধ হয়নি।

পরে ১৩ তারিখ অপরাহ্নে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে ১০০২টি গায়েবি মামলার একটি অসমাপ্ত তালিকা হস্তান্তর করা হয়। কাজেই বিএনপির প্রতি যে নিপীড়ন করা হচ্ছে সে বিষয়টি সবাই বুঝতে পেরেছেন। এ কারণে ইনক্লুসিভ নির্বাচন করার স্বার্থে সব দল যাতে মনোনয়নপত্র জমাদান ও অনান্য নির্বাচনী প্রস্তুতি গ্রহণে সমান সুযোগ পায় সে বিষয়টি তো কমিশনকে দেখতে হবে। কারণ, কমিশন কেবল সরকারি দল বা জোটের নয়, তাকে সব দলের সুযোগের সমতা সুনিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু কমিশন তা করতে পারছে কই?

সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা জাঁকজমকপূর্ণভাবে মিছিলসহকারে নির্বাচনী আচরণবিধি ভেঙে শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমাদানকালে পুলিশ বাহিনী তাদের বাধা দেয়নি। তবে সেই পুলিশই বিএনপি অফিসে মনোনয়নপত্র গ্রহণকালে নেতাকর্মীদের ঢল নামলে চুপ থাকেনি। ১৩ নভেম্বর সরকারি দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদান শেষ হলে ইসি পুলিশ মহাপরিদর্শক বরাবর চিঠি পাঠিয়ে মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও জমাদানকালে শোডাউন করাকে নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন আখ্যায়িত করে এসব বন্ধের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
কমিশন সরকারদলীয় প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ শুরু হওয়ার আগে এমন নির্দেশনা দিলে জনগণ ইসিকে সরকারি দলের আজ্ঞাবহ মনে করতেন না। বিএনপির মনোনয়নপত্র গ্রহণকালে ১৪ তারিখে পুলিশ কার নির্দেশে দলটির নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জ এবং রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে সে বিষয়টি সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছেন। এটাই কি ১৪ তারিখে আগারগাঁওয়ে সহকারী রিটার্নিং অফিসারদের উদ্দেশে তাদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সিইসি মহোদয়ের বক্তব্যের প্রতিফলন?
ডিএমপি মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার জন্য পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা শান্ত পরিস্থিতিকে অশান্ত করার জন্য পুলিশের ওপর হামলা করে।’
আওয়ামী লীগ অফিসে ৩-৪ দিনব্যাপী মনোনয়নপত্র সংগ্রহকালে যান চলাচল বন্ধ থাকাকালে পুলিশ সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়নি। পুলিশ তো হুকুম তামিলকারী। কাজেই পুলিশকে নির্দেশনা প্রদানকারী ইসি এবং ইসিকে এ নির্দেশ দিতে কেউ প্রভাবিত করে থাকলে তারাই মূলত এ জন্য দায়ী।
সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা মিছিলসহকারে মনোনয়নপত্র নিতে পারলেন; আর বিএনপি নেতাকর্মীদের মনোনয়নপত্র নেয়ার ক্ষেত্রে করা হল পুলিশি আক্রমণ? ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন এ ঘটনাকে ‘সরকারি বাহিনীর উৎসাহী কাজ’ বলে আখ্যায়িত করেন। এসব গাড়ি ভাংচুরকারীদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় না আনলে এমন ঘটনা আবারও ঘটবে।

মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, পুলিশের গাড়ি ভাংচুরকারীদের ভিডিও ফুটেজ দেখে বিচার করা হবে। কিন্তু এ আশ্বাসে কি জনগণ বিশ্বাস রাখতে পারবেন? কারণ, এর আগে ২০১৩ সালে হেফাজতের শাপলা চত্বরে সমাবেশকালে যারা বায়তুল মোকাররমে পবিত্র কোরআন শরিফ পুড়িয়েছিল, তাদের ভিডিও ফুটেজ দেখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ওই সময় বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ অবধি সে বিচার হয়নি এবং এ সরকার আমলে হয়তো হবে না।
ঐক্যফ্রন্ট নেতারা ১৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনের তারিখ তিন সপ্তাহ পেছানোর দাবি জানিয়েছেন। তারা নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতাসহ সেনাবাহিনী নিয়োগের দাবির সঙ্গে নির্বাচনের আগে জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের রদবদল দাবি করেছেন।
তাছাড়া কমিশনকে তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রুজুকৃত গায়েবি মামলা সম্পর্কে অবহিত করে আর যেন কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানি না করা হয় সে দাবি করেছেন। নির্বাচন চলাকালে গণমাধ্যমকর্মীদের সরাসরি সম্প্রচার করতে না দেয়ার ইসির সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন ঐক্যফ্রন্ট নেতাগণ। কমিশন সদস্যগণ মনোযোগ দিয়ে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের দাবিগুলো শুনেছেন এবং এসব ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছেন।
তবে ইসি সিদ্ধান্ত দেয়ার আগেই আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম বলেছেন, নির্বাচন একদিনের বা এক ঘণ্টার জন্যও পেছানো যাবে না। দেখা যাক স্বাধীন ইসি কাদের কথা শোনেন।
ইসির সঙ্গে বৈঠক করার আগে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের হোমওয়ার্ক ভালো হয়নি। কারণ, গায়েবি মামলা সম্পর্কে ইসিকে অবহিত করলে তারা ওই মামলার তালিকা চেয়েছেন। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের জানা উচিত ছিল, এটা চাওয়া খুবই স্বাভাবিক। যেহেতু এ রকম ১০০২ মামলার একটি তালিকা তারা মাত্র একদিন আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা দিয়েছেন, কাজেই তার একটি প্রিন্টআউট তাদের সঙ্গে নিয়ে আসা উচিত ছিল। তাহলে তারা এ বৈঠকেই তালিকাটি ইসিকে দিতে পারতেন।
আর ইভিএমের বিষয়টি কেন তারা তাদের আলোচনায় আনেননি তাও জনগণের কাছে বোধগম্য নয়। অধিকাংশ রাজনৈতিক দল যেখানে ইভিএমে ভোটদান নিরাপদ মনে করেন না, সেখানে আলোচ্য বৈঠকে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জোরালো বিরোধিতা করা উচিত ছিল।
বলা উচিত ছিল, ইভিএম নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করার শখ থাকলে ইসির তা স্থানীয় সরকার নির্বাচনে করা উচিত; জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নয়। কারণ, এতে ডিজিটাল কারচুপির আশঙ্কা রয়েছে। প্রযুক্তিসমৃদ্ধ দেশগুলো যখন ইভিএম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তখন স্বল্পশিক্ষিত ভোটারের বাংলাদেশের নির্বাচনে এ হাইটেক প্রযুক্তির মেশিন ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ।

রংপুরে এক কর্মশালায় যোগদান শেষে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম ইভিএমের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি জানান, সংসদ নির্বাচনে স্বল্পপরিসরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ইভিএমে ভোট গ্রহণ করা হবে। ‘ভারতের জনগণকে ইভিএম বিশ্বাস করাতে ১৫ বছর লেগেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা খুব স্বল্পসময়ে ভোটারদের বোঝাতে পারব এটি একটি স্বচ্ছ ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইভিএম ব্যবহার করলে আমাদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যয় কমে আসবে।’ জনাব ইসলামের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হওয়া যায় না। ভোট কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা ঠিক করবে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো। যেখানে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএম চায় না, চায় না ঐক্যফ্রন্ট, সরকারের শরিক জাপাসহ আরও অনেক দল, এমনকি ইভিএমের প্রধান ও প্রথম সূচনাকারী সাবেক সিইসি এটিএম শামসুল হুদা, সেখানে ইভিএম ব্যবহারে ইসির এত আগ্রহ কেন? ভারতের যে উদাহরণ জনাব ইসলাম দিয়েছেন, তা সঠিক নয়। দেশটির অন্যতম বড় দল কংগ্রেসসহ অধিকাংশ দল ইভিএম চায় না।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এ বছর মার্চ মাসে বলেছেন, তারা ইভিএমের পরিবর্তে কাগজের ব্যালটে ভোট চান। এ ছাড়াও বিভিন্ন সময় বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আদভানী, বহুজন সমাজ পার্টি নেত্রী মায়াবতী, সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ সিংহ যাদবসহ অনেক নেতা ইভিএমের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন এবং আছেন।

দুই লাখ টাকা করে প্রতিটি ইভিএম ক্রয় করে জনাব ইসলাম বলছেন ইভিএম ব্যবহারে অর্থের সাশ্রয় হবে। তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে একজন ভোটার হিসেবে বলতে চাই, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কাজ অর্থ সাশ্রয় করা নয়। কমিশনের কাজ হল নির্বাচনে স্বচ্ছতা সুনিশ্চিত করা। সে জন্য যত টাকা লাগে খরচ করুন। নাগরিক সমাজ তাতে আপত্তি করবে না। দয়া করে অর্থ সাশ্রয়ের জন্য ডিজিটাল কারচুপির ঝুঁকি নেবেন না।
ইসি এখন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। এটাই ইসির ফাইনাল পরীক্ষা। রেফারির ভূমিকা পালন করে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করার এ পরীক্ষার প্রথম সেমিস্টারে মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও জমাদানের আয়োজনে বিএনপির সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করে ইসি ফেল করেছে।
এ পরীক্ষার সামনের সেমিস্টারগুলোয় ইসি অত্যন্ত সতর্ক, স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও পেশাদার ভূমিকা পালন করতে পারলেই কেবল নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে। আর সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের এ ফাইনাল পরীক্ষায় ফেল করলে দেশপ্রেমিক ভোটাররা এ ইসিকে একটি ব্যর্থ ও কালিমালিপ্ত ইসি হিসেবে বিবেচনা করবে।
ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার : অধ্যাপক, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
akhtermy@gmail.com

https://www.jugantor.com/todays-paper/sub-editorial/112464