১৮ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার, ৯:৩০

নির্বাচনী সংঘাতে মোহাম্মদপুরে দু’জন নিহতের ঘটনায় গ্রেফতার নেই ॥ পল্টনের ঘটনায় ৩ মামলায় ৩৮ জন রিমান্ডে

# জোড়া হত্যা মামলার আসামী আদাবর যুবলীগের আহ্বায়ক তুহিন গ্রেফতারের ১৪ ঘণ্টা পর জামিনে মুক্ত জানে না থানা পুলিশ
# নয়াপল্টনের ঘটনা তদন্তে চারদিনেও পুলিশকে চিঠি পাঠায়নি ইসি
তোফাজ্জল হোসেন কামাল : গত ১০ নবেম্বর শনিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ের সামনে আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং সাদেক খানের সমর্থক দুই গ্রুপের মধ্যে মনোনয়নযুদ্ধ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে সুজন (১৮) নামে এক পথচারী পিকআপের চাপায় আহত হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় আরিফ (২০) নামে আরেকজন যুবক আহত হন। পরে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। গত ৮ নবেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশীল ঘোষনার দু‘দিন পর আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সহিংসতার ঘটনায় একটি হত্যা মামলাও হয়েছে মোহাম্মদপুর থানায়। নিহত আরিফের বাবা ওমর ফারুক ঘটনার দিন রাতে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলাটি করেছেন। মামলায় আদাবর থানা যুবলীগের আহ্বায়ক আরিফুর রহমান তুহিনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন রোববার গনমাধ্যমকে এই খবর জানান মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর। তিনি বলেন, নিহত আরিফের বাবা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আদাবর থানা যুবলীগের আহ্বায়ক তুহিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল থেকে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করছি। তা পর্যালোচনা চলছে।’
ওই জোড়া হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই মুকুল রঞ্জন ১১ নবেম্বর রোববার দুপুরে আদাবর থানা যুবলীগের আহ্বায়ক তুহিনকে পাঁচদিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠান। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে তুহিনকে আদালতে হাজিরও করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী আসামির রিমান্ডের আবেদন নামঞ্জুর করে জামিনের আদেশ দেন।

ওই হত্যা মামলার তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে।এ পর্যন্ত একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।নাম জানতে চাইলে ওসি বলেন,গ্রেফতারকৃতের নাম তুহিন।আদালত থেকে তার জামিন হয়েছে,এমনটা বলা হলে ওসি জামাল বলেন.তার জামিনের বিষয়টি জানি না। তার কারন হিসেবে তিনি বললেন,আমরা অর্ডার শীট পাইনি। ওই মামলায় আর কোনো আসামী আটক বা গ্রেফতার হয় নি।
মোহাম্মদপুরের জোড়া হত্যাকান্ডের তিন দিনের মাথায় গত ১৪ নবেম্বর বুধবার দুপুরের দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।ওই সময় মুখে কালো কাপড় বেধে ও হেলমেট পরে একদল যুবক পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়ানোর সাথে সাথে দুটো গাড়িতে আগুন দেয়।ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সাথে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনায় গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে রুপ নেয়। ওই ঘটনার পর পল্টন থানা পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা দায়ের করে। যাতে আসামী করা হয়েছে বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতাসহ ৪৮৮ জনকে। ঘটনার দিনই পুলিশ বিএনপির ৬৮ জনকে গ্রেফতার করে। গত ১৪ নভেম্বর পল্টন থানায় নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা তিনটি মামলার তদন্ত কাজ পরদিন বৃহস্পতিবার মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পূর্ব বিভাগ) কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই দিনই বিএনপির ৬৫ জন নেতাকর্মীকে রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করা হয়। পরে বিচারক ৩৮ জনকে রিমান্ডে এবং ২৭ জনকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। ওই দিন রাতেই পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বাসায় ফেরার পথে কাকরাইলের নাইটিংগেল মোড় থেকে পল্টন থানার নাশকতা মামলায় গ্রেফতার হন বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের পুত্রবধূ। নিপুণ রায়ের বাবা অ্যাডভোকট নিতাই রায় চৌধুরী। তিনিও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। পরদিন শুক্রবার দুপুরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কামরুল ইসলাম নিপুন রায়সহ ৭ জনকে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে হাজির করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বিকালে ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদারের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। রিমান্ডে যাওয়া অন্য আসামিরা হলেন, ইউনুস মৃধা (৬১), আবুল হাশিম সবুজ (৪৮), মামুন আর রশিদ (৩৮), আরিফা সুলতানা রুমা, আমির হোসেন (৪০) ও মো. মহাসিন (৪৮)।
আসামি পক্ষের আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া ও নিপুণ রায়ের বাবা অ্যাডভোকট নিতাই রায় চৌধুরী আসামিদের রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন।
নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আসামি করে যে তিনটি মামলা করেছে পুলিশ,সে প্রসঙ্গে পল্টন থানার ওসি মাহমুদুল হাসান ঘটনার দিন বুধবার রাতে বলেন, “গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, রাস্তা অবরোধ, পুলিশকে মারধর, সরকারি কাজে বাধার অভিযোগে এসব মামলা হয়।”
নির্বাচন সামনে রেখে মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রমের মধ্যেই নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ দাবি করেছে, বিএনপি নেতা-কর্মীরা বিনা উসকানিতে তাদের উপর হামলা চালালে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নির্বাচন বানচালের জন্য পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাস চালিয়েছে বিএনপি।

ঢাকার পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, মির্জা আব্বাসের মিছিল থেকে এই হামলা চালানো হয়েছিল। তিনি বলেন, “স্যার, মির্জা আব্বাসকে বার বার বলা হয়েছে লোকজন নিয়ে সেখানে না আসতে। তারপরও তারা লোকজন নিয়ে আসে। মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে মিছিলটি আসার পর গন্ডগোল শুরু হয়।”
এদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, নির্বাচন বানচালের জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের যোগসাজশে বিনা উসকানিতে তার দলের নেতা-কর্মীদের উপর হামলা হয়।
মির্জা আব্বাসকে দায়ী করার প্রতিক্রিয়ায় ফখরুল বলেন, “ঘটনার পর সরকারের একটি নির্দিষ্ট মহল অভিযোগ করল যে, মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে হামলা হয়েছে।“এটা অত্যন্ত সাজানো একটা পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা হচ্ছে, এই সাজানো হামলা চালিয়ে বিএনপিকে দায়ী করে আবার বিএনপির ওপর হামলা-নির্যাতন শুরু করা।” পুলিশের গাড়িতে হামলায় হেলমেটধারী যেসব যুবকদের দেখা গেছে, তারা ছাত্রলীগের বলেও দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব।
ওই দুই ঘটনা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যা বলেছেন ....
গত শনিবার বেলা ২টায় মগবাজার টিএন্ডটি কলোনি মাঠে আয়োজিত এক সুধি সমাবেশ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদপুরে সংঘর্ষে মৃত্যুর ঘটনা নির্বাচন কমিশন খতিয়ে দেখবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার পর এটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আর দেখবে না। তবে নির্বাচন কমিশন নির্দেশ দিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্ত করবে।’
আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘নির্বাচনের সময় কিছুটা উত্তেজনা থাকে। তবে প্রাণহানি কাম্য নয়।’ নির্বাচন ঘিরে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে বলেও হঁশিয়ারি দেন মন্ত্রী।
আর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। ঘটনার দিন বুধবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন হাসপাতালে ওই সংঘর্ষে আহত পুলিশ সদস্যদেরকে দেখতে এসে মন্ত্রী বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ভিডিও ফুটেজগুলো দেখা হচ্ছে। যারা এ ঘটনায় জড়িত, তাদের নামে তো মামলা হবেই। যারা গাড়ি পুড়িয়েছেন, পুলিশের গায়ে আঘাত করেছেন, পুলিশকে হত্যার উদ্দেশ্যে লাঠিচার্জ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবেই। দোষীদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেবো।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাদের উদ্দেশ্যে ছিল প্রাণহানি ঘটিয়ে একটা আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি করে নির্বাচনকে বানচাল করা। আহতদের কথা শুনে তাই মনে হলো। এভাবে আক্রমণ করার কোনো মানে হয় না। সারাদেশের মানুষ একটি উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনটির অপেক্ষা করছিল। যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন, তারা মনের আনন্দে ফরম জমা দিচ্ছিলেন। এমন একটি সময়ে যারা নির্বাচন চায়, তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাতে পারে না। এটা নিশ্চয় উসকানি, নিশ্চয় ষড়যন্ত্র। নিশ্চয় নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরির জন্যই এ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে।
পল্টনের ঘটনার পর ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্য
ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার ডিএমপি কার্যালয়ে অনির্ধারিত এক সংবাদ সম্মেলনে নয়া পল্টনে সংঘর্ষের মধ্যে পুলিশের গাড়িতে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগে জড়িত অধিকাংশকেই শনাক্ত করা হয়েছে জানিয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, তারা সবাই বিএনপি ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।
ওই ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে সাংবাদিকদের ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, “বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে আমরা অনেকের পরিচয় পেয়েছি এবং তাদের শনাক্ত করতে পেরেছি। তারা সকলেই বিএনপি এবং তার অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মী।”তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, নাশকতায় জড়িত অন্তত ৩০ জনকে শনাক্ত করেছেন তারা। “হেলমেট ছাড়া যে দেশলাই দিয়ে পুলিশের গাড়িতে আগুন দিচ্ছে তার পরিচয় মিললেও হেলমেট পরা যে গাড়িতে লাফাচ্ছে তার পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, “অন্তত ১০ জনের পরিচয় সম্পর্কে আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছি। গোয়েন্দা পুলিশ ছাড়াও থানা পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারে কাজ করছে।”
ডিএমপি কমিশনার বলেন, “যিনি আগুন দিয়েছেন তাকে ফুটেজে পরিষ্কার দেখা গেছে, গাড়ির উপরে দাঁড়িয়ে তান্ডব যারা করেছে তাদের দেখা যাচ্ছে। বুকের কাপড় খুলে লম্বা লাঠি দিয়ে যে তান্ডব নৃত্য আমরা দেখেছি, সেটাও মিডিয়ার সুবাদে দেশবাসী দেখেছে।”
এই হামলা পূর্ব পরিকল্পিত বলে মনে করছেন পুলিশ কমিশনার।তিনি বলেন, “হামলায় পাঁচজন অফিসারসহ মোট ২৩ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। যারা এই মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। লাঠি দিয়ে, বাঁশ দিয়ে পেঠানো হয়েছে। ইট-পাটকেল ছুড়ে পেটানো হয়েছে। এটিএন নিউজে পরিষ্কারভাবে এসেছে, একজন পুলিশকে পেছন থেকে কীভাবে মারতে মারতে ধাওযা করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।“পুলিশকে শুধু মারা না, হামলা বড় ধরনের অঘটন ঘটানোর একট পূর্ব পরিকল্পনা ছিল বলে আমাদের কাছে মনে হয়েছে। ৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি যারা আছে তাদের শনাক্ত করার কাজ অব্যাহত রেখেছি।”

ডিএমপি কমিশনার বলেন, “আমরা বল প্রয়োগে যাইনি। বল প্রয়োগে গেলে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট হবে।”
নির্বাচন কমিশন সচিব যা বলেছিলেন
নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ওই ঘটনার দিন বুধবার বলেছিলেন, পল্টনে সেদিন কী ঘটেছিল তা খতিয়ে দেখা হবে। এ বিষয়ে পুলিশ বিভাগ থেকে জানতে চাওয়া হবে।
এ ঘটনার পর নির্বাচন কমিশন আরও শক্ত পদক্ষেপ নিবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন তফসিল ঘোষণা করা হয় তখন থেকে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ জনপ্রশাসন নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত হয়। “সুতরাং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত।নির্বাচন কমিশন যেভাবে তাদের নির্দেশনা দেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেভাবে কাজ করবে।”

নয়াপল্টনের ঘটনায় ইসিকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি আ’লীগের
নয়াপল্টনের ঘটনায় নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বুধবার (১৪ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশনে বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
নয়াপল্টনের ঘটনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি নির্বাচনি আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমরা আজকের সন্ত্রাসী ঘটনাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ মনে করি। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে ২০ দলীয় জোট যেভাবে আগুন সন্ত্রাস করেছে, মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, এটা তারই আলামত- আমি মনে করছি।
এইচটি ইমাম বলেন, বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নির্বাচন আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, ১১, ১৭ ও ১৮ বিধি ভঙ্গ হয়েছে। বিধিমালায় যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ন্যূনতম শাস্তি ৬ মাসের কারাদন্ড। আমার এই ঘটনাকে নির্বাচনি অপরাধ হিসেবে গণ্য করে বিএনপি’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্বাচনের কাছে দাবি জানিয়েছি।

ইসির হস্তক্ষেপ চেয়ে বিএনপির চিঠি
নয়া পল্টনে মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রমের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোকে ‘বানোয়াট’ আখ্যায়িত করে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি শুক্রবার সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে পৌঁছে দেন দলটির কেন্দ্রীয় মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন খান। গত ৮ নভেম্বর নির্বাচনের পুনঃতফসিলের পর সারা দেশে ৪৭২ জন নেতাকর্মীকে ‘মিথ্যা ও গায়েবি মামলায়’ গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে চিঠিতে দাবি করা হয়। নাম-পরিচয়সহ গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের একটি তালিকাও চিঠির সঙ্গে দেওয়া হয়।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ করে লেখা ওই চিঠিতে মির্জা ফখরুল বলেছেন, “বিএনপির পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তি দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
বিএনপি মহাসচিবের চিঠিতে বলা হয়েছে, “এ ধরনের গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।ৃ এতে আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়েও জনগণের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।”
নয়াপল্টনের ঘটনা তদন্তে চারদিনেও পুলিশকে চিঠি পাঠায়নি ইসি
নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে চারদিনেও আইজিপির কাছে চিঠি পাঠায়নি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত ১৪ নভেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সঙ্গে সংর্ঘষের পর ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, পল্টনের বিষয়টি একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনার কারণ জানতে পুলিশকে চিঠি দেয়া হবে।
ইসি সূত্র জানায়, নয়াপল্টনের ঘটনায় পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) দেয়ার জন্য গত বৃহস্পতিবারই একটি চিঠি চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু রহস্যজনক কারণে গতকাল শনিবার পর্যন্ত চিঠিটি পাঠানো হয়নি। চূড়ান্ত করা ওই চিঠিতে ‘নিরাপরাধী কাউকে যাতে হয়রানি না করা হয় সেজন্য পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া আছে।’একই সঙ্গে চিঠিতে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনা তদন্ত করতেও পুলিশকে নির্দেশনা দেয়া হয়।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, বিএনপি কার্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য প্রমাণাদিসহ একটি প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট নয় এমন কাউকে হয়রানি না করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ ঘটনায় নিরপরাধ ব্যক্তিকে কোনো মামলায় জড়িয়ে নির্বাচনি পরিবেশ যাতে নষ্ট করতে না পারে সেদিকে দৃষ্টি রাখার নির্দেশনার বিষয়টিও রাখা হয়েছে চিঠিতে।
চিঠির নির্দেশনায় বলা হচ্ছে, ‘মিডিয়ায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পল্টন কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমাদানকালে লোক সমাগমে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ রাস্তায় যানচলাচল পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পদক্ষেপ গ্রহন করে। এ নিয়ে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। উচ্ছৃঙ্খল লোকজন কয়েকটি গাড়ী ভাংচুর করে এবং পুলিশের দুইটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এতে কর্তব্যরত পুলিশসহ অনেকে আহত হয়। এ বিষয়ে ধারণকৃত স্থিরচিত্র, ভিডিও ফুটেজ ও অন্যান্য তথ্য প্রমাণাদিসহ একটি প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য মাননীয় নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা প্রদান করেছেন। ’
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার যুগ্ম সচিব ফরহাদ আহম্মদ খান বলেন, পল্টনের ঘটনায় পুলিশের আইজিপিকে আগামীকাল (রোববার) চিঠি দেবে কমিশন। তবে ইসির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ঘটনা ঘটার পর এরইমধ্যে চারদিন পার হয়ে গেছে। ইসি চিঠি প্রস্তুত করার পরেও কেনো তা পাঠানো হচ্ছে না, তা রহস্যজনক। এরই মধ্যে ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অনেকেই গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে রয়েছেন। ফলে ইসির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।

গেল বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বৈঠকে তফসিলের পর গ্রেফতার নেতা-কর্মীদের নাম-পদবিসহ তালিকা জমা দিতে বলেছিল নির্বাচন কমিশন।
পুনঃনির্ধারিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ২৮ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিন ২ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ ডিসেম্বর এবং ভোটের দিন ৩০ ডিসেম্বর।

http://www.dailysangram.com/post/353825