১২ নভেম্বর ২০১৮, সোমবার, ২:২৫

অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ঝুঁকির মুখে

ব্যাংকবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের তথ্য নেই

ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে অর্থনৈতিক লেনদেন হয় এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠানের কী পরিমাণ অর্থনৈতিক লেনদেন হয় তার সঠিক তথ্য নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে। কিন্তু লোকবলের অভাবে দীর্ঘ তিন বছরেও এ কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের তথ্য না থাকায় ঝুঁকির মুখে পড়ছে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

জানা গেছে, ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বাইরে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত রয়েছে প্রায় দুই লাখ প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বাংলাদেশ সমবায় অধিদফতরের অধীনে রয়েছে এক লাখ ৯৪ হাজার ৬৬২টি সমবায় সমিতি। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের অধীনে (আইডিআরএ) রয়েছে ৭৭টি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। ক্ষুদ্রঋণ নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (এমআরএ) অধীনে রয়েছে ৭০০টি ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম প্রতিষ্ঠান এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অন্তর্ভুক্ত ৪১টি মিউচুয়াল ফান্ড ও ৫৫টি মার্চেন্ট ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের তথ্য নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের তথ্য যাচাইয়ের জন্য তিন বছরের আগে এ প্রস্তাব করে আইএমএফ।

বাংলাদেশে ওয়াশিংটন হতে আগত আইএমএফের টেকনিক্যাল মিশন ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে ১ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের পরিসংখ্যান তৈরি করতে প্রস্তাব করে। আইএমএফের এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে গত ২৫ এপ্রিল এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই সময় আলোচ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সভায় একটি আলোচ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি অভিন্ন রিপোর্টিং ফরমেট নীতিগতভাবে অনুমোদিত হয়। গত ২৭ জুন এ-সংক্রান্ত একটি নীতিমালাভাবে চূড়ান্ত করা হয়। যদিও আইএমএফ থেকে ২০১৬ সালের ৩০ জুন থেকে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বেরের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের পরিসংখ্যানের প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, এসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের কোনো তথ্য-উপাত্তের প্রতিবেদন তৈরির কাজ গত ১৬ আগস্ট পর্যন্ত শুরু করা হয়নি। এতে আইএমএফ বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য-উপাত্ত তৈরির কাজ শেষ হওয়া নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে এসব প্রতিষ্ঠানের লেনদেনের তথ্য-উপাত্ত তৈরির কাজ শুরু করা যায়নি। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেনের জরিপ কাজ শুরু করার জন্য একটি ইউনিট গঠন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় লোকবল পেলে জরিপ কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আলোচ্য প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক লেনদেনের তথ্য না থাকায় দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক চিত্র প্রতিফলিত হচ্ছে না। এতে ঝুঁকির মুখে পড়ছে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। প্রতিবেদনে আইএমএফের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক লেনদেনের তথ্য নির্ধারণের জরিপ কাজ সম্পন্ন করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/364040