১১ নভেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১:৫৯

সংলাপ হয়েছে, সমাধান হয়নি

মীযানুল করীম

হোয়াইট হাউজে ৭ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিউজ ব্রিফিংয়ে সিএনএনের এক সাংবাদিকের সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এ কারণে সাথে সাথে হোয়াইট হাউজে তার প্রবেশের অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। এই সাংবাদিক কী প্রশ্ন করেছেন বা কী বলতে চেয়েছেন, সেটাই এ ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। ইন্টারনেটে দেখা যায়, তাকে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না এবং প্রেসিডেন্টের একজন নারীকর্মী তার মাইক্রোফোন কেড়ে নিতে চাইলেন। তবে এতে ব্যর্থ হয়ে ওই কর্মী পাশে বসে পড়েন। এ সময় খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলে ওঠেন সে সাংবাদিককে, Rude, terrible (অভদ্র ও ভয়ানক)। অথচ ট্রাম্পের কথাবার্তা ও আচরণ সম্পর্কেই এসব বিশেষণ আগে থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এখন সিএনএনের সে সাংবাদিকের পাস বাতিল করে দিয়ে অন্য একটি বিষয়কে বড় করে দেখানো হচ্ছে। কারণ, হোয়াইট হাউজ কর্তৃপক্ষের একটা অজুহাত দরকার। তাই যার চরিত্র ‘ফুলের মতো পবিত্র’, তার তথ্যমন্ত্রী আসল ঘটনা থেকে মানুষের দৃষ্টি ফেরাতে বললেন, ‘ওই সাংবাদিকের প্রবেশাধিকার প্রত্যাহার করা হয়েছে। কারণ, তিনি একজন তরুণীর ওপর হাত রেখেছেন। এমন আচরণ হোয়াইট হাউজ কখনোই সহ্য করবে না।’ সবাই টিভিতে, ইন্টারনেটে কী দেখেছেন আর মার্কিন মন্ত্রী কী বয়ান দিচ্ছেন। বোঝাই যায়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের শিকার ওই সাংবাদিক।

আমাদের বাংলাদেশে বহু প্রত্যাশিত সংলাপ হয়ে গেল। জনগণ কী চেয়েছে, বিরোধী দল কী দাবি জানিয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কী কী প্রয়োজন, তা সবাই জানেন। সরকার এর কী জবাব দিয়েছে এবং সংলাপের পরপরই নির্বাচন কমিশন কী করে ফেলেছে, তা-ও স্পষ্ট। দেশের মানুষ এসব মিলাতে পারছে না। মানুষ চাইল কী আর পেল কী? সঙ্কটের কারণ কী আর সরকারের জবাব কী। সংলাপের ফলাফল যে ডিম্ব, তা হংস না অশ্বের, সেটা ভেবে দেখার ফুরসত বোধ হয় হবে না। কেননা, সিইসি ৮ নভেম্বর নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে দিয়েছেন পরিকল্পনামতো। এখন সরকারের আশা, পরিস্থিতির মোড় ‘সংলাপ’ থেকে ‘সংসদ’-এর, মানে নির্বাচনের দিকে ঘুরবে। যারাই নির্বাচনে অংশ নিতে চান, তাদের ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তে হবে মনোনয়ন আর প্রচারণা নিয়ে। স্বদেশের এসব দেখে বিদেশের ওই ঘটনা মনে পড়াই স্বাভাবিক।

প্রধানমন্ত্রী তার পূর্বনির্ধারিত ছক মোতাবেক কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের সাথে তাল রেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনারও ইভিএম আর তফসিল নিয়ে প্লান-প্রোগ্রামমাফিক পা ফেলছেন। ঐক্যফ্রন্ট, তথা বিরোধী দলের দাবি প্রায় পুরোই উপেক্ষা করে এবং প্রধান দাবিগুলোকে গোল আলুর মতো হিমাগারে পাঠিয়ে সরকার নির্বাচনী উত্তাপ সঞ্চারে তৎপর। যে ৭ নভেম্বর বিএনপির কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিবস, সে তারিখেই ক্ষমতাসীন মহল দ্বিতীয় দফা সংলাপের নামে বিএনপিকে ‘পত্রপাঠ বিদায়’ করেছে। অতএব, এই কারণেও নভেম্বরের সপ্তম দিবস স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এখন বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট, তথা বিরোধী দল পকেট ফাঁকা দেখে কপাল চাপড়িয়ে কী লাভ?

‘খায়াপিয়া কুছ নেহি/গ্লাস তোড়া ছে আনা।’ একজন কাস্টমার হোটেলে ঢুকে কোনো কিছু খাওয়ার আগেই হঠাৎ তার হাতে লেগে গ্লাস ভেঙে গিয়েছিল। এ জন্য তাকে সে সময়ে ১টা গ্লাসের যা দাম, সে মোতাবেক ছ’আনা দিতে হয়েছিল মাশুল হিসেবে। এবার সংলাপে সরকারের সাজানো হোটেলে সংলাপের দাওয়াতে যারা গেছেন, তারা একেবারে কিছু খাননি, তা নয়। তবে মাশুলটা নিশ্চয়ই ছ’আনার চেয়ে অনেক বেশি। আর তা নিছক ব্যক্তি বা দলের নয়; জনগণ ও দেশের। ওই দুর্ভাগা খদ্দের ইচ্ছা করে গ্লাস ভাঙেননি। তেমনি সরকার ভাবছে বিরোধী দল আজ নিরুপায়। ‘খাও বা না খাও, গ্লাসের দাম দেয়া চাই।’ কিন্তু এভাবে আর কতদিন? সবকিছুরই শেষ আছে।

নির্বাচনের চেয়ে তফসিল বড়!
৭ নভেম্বর সংলাপের যবনিকা পতনের পরদিনই সংসদ নির্বাচনের শিডিউল বা তফসিল ঘোষণা; এর পরদিনই ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপত্র বিলি শুরু। সর্ব প্রথম নেয়া হলো দলনেত্রী, অর্থাৎ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জন্য মনোনয়ন ফরম। এটা নিয়ে দলের দ্বিতীয় প্রধান নেতা ও সেতুমন্ত্রীর ঘোষণা, ‘জনগণ এখন পুরোপুরি নির্বাচনমুখী।’ সে নির্বাচনটা কি একতরফা প্রহসন, নাকি দোতরফা কমেডি, তা তিনি বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আন্দোলনকে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।’ অবশ্য, বিরোধী দলের আন্দোলন কোনো দিন তাদের মেনে নেয়ার নজির নেই। বিশেষ করে ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলন নিয়ে তাদের বেজায় দুশ্চিন্তা। জনগণ মনে করছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার জন্য সিইসির ধনুর্ভঙ্গ পণের তাৎপর্য এখন স্পষ্ট। বিরোধী দলের নেতারা বলেছিলেন তফসিল পিছিয়ে দিতে। সরকার চেয়েছে ৮ নভেম্বরই তা ঘোষণা করা হোক। কারণ, এর ফায়দা তারাই পাবেন। নির্বাচন কমিশন বলেছে, ‘প্রয়োজনে সংসদ নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া যায়। তবে তফসিল পেছানো হবে না।’ কার ‘প্রয়োজনে’ নির্বাচন পেছানো সম্ভব বলে ইসি মনে করে, তা মানুষ ঠিকই বোঝে। আর কথা হলো, নির্বাচন বড় না তফসিল বড়? আমের চেয়ে আঁটি কখনো বড় হতে পারে না। তফসিল নির্বাচনের জন্যই ঘোষণা করা হয়। নির্বাচন তফসিলের জন্য নয়। এটা দেশ ও জাতির জন্য; গণতন্ত্রের স্বার্থে। তাই যারা বলেছেন, নির্বাচন পেছানো গেলেও তফসিল পেছানো যাবে না, তারা জাতিকে অবমূল্যায়ন এবং গণতন্ত্রকে গৌণ করেছেন। কারণ, এটা সাধারণ কাণ্ডজ্ঞানের কথা যে, নির্বাচনের তারিখ পেছানো গেলে অবশ্যই এর তফসিলও পিছিয়ে দেয়া সম্ভব। তবে যারা বাঙালিকে ‘হাইকোর্ট দেখা’তে চান, তাদের কথা আলাদা।

লাভ-ক্ষতি ও আমদানি-রফতানি
সর্বত্র সংলাপের লক্ষ্য সঙ্ঘাত নিরসন এবং সমঝোতা প্রতিষ্ঠা। এবার ঢাকায় সরকার দাওয়াত দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের সাথে যে সংলাপের আয়োজন করেছিল, তা কতটুকু সফল আর কতটা ব্যর্থ? সংলাপ হয়ে থাকে পক্ষ ও প্রতিপক্ষ, তথা পরস্পর প্রতিদ্বন্দ্বী দু’তরফে। কিন্তু বাংলাদেশের সর্বশেষ সংলাপে যেভাবে পাইকারিহারে প্রায় সব দল দাওয়াত পেল এবং এসে মেজবানের মেহমানদারিতে কৃতার্থ হলো, তাতে এটা ‘গণসংলাপ’-এর চেহারা নিয়েছিল। দেখা গেছে, নিরপেক্ষ ও স্বপক্ষ দলগুলোর (অধিকাংশই আনি-দু’আনি কিংবা সাইকেল ও রিকশা পার্টি হিসেবে অভিহিত খুচরা দল) ভিড়ে সংলাপের মূল ইস্যুটাই গৌণ হয়ে পড়েছে। এখন ময়দানের বিরোধী দলের লোকজন মনে করেন, তাদের দাবি-দাওয়াকে হালকা করে, সুষ্ঠু নির্বাচনের গ্যারান্টি দেয়ার দায় এড়াতে এসব করা হলো।

সংলাপ হয়েছে, কিন্তু এতে কী ফল পাবে দেশ ও জাতি? যদি আগামী নির্বাচন বিরোধী দলের দাবি, জনগণের আকাক্সক্ষা, সরকার প্রধানের আশ্বাস মোতাবেক সর্বোপরি, গণতন্ত্রের স্বার্থে সুষ্ঠুভাবে হয়, সেটা সবার জন্যই অত্যন্ত মঙ্গলজনক। কিন্তু এতে সংলাপের অবদান বোধ হয় তেমন থাকবে না। নির্বাচন যতটা ‘নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক’ হওয়ার, তা এমনিতেই হয়ে যাওয়ার কথা। এটা বলতে হচ্ছে সংলাপের ধরন ধারণ এবং এতে সরকারের যে বক্তব্য, তার ভিত্তিতে। সরকারসমর্থক পত্রিকাগুলো ইদানীং বিরোধী দলের জনসভা বিশাল হলেও সমাবেশের ছবি না দিয়ে তার বদলে নেতাদের ছবি দেখিয়ে সুকৌশলে সরকারকে খুশি রাখে। এ ধরনের পত্রিকা এবারের সংলাপ শেষে এমন হেডিং করেছে যাতে মনে হতে পারে, এই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সংলাপের উদ্দেশ্য সমঝোতার মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন নয়; নেহায়েত দাওয়াত খাওয়া আর সৌজন্য সাক্ষাৎই যথেষ্ট। তাই পত্রিকার শিরোনামÑ ‘সমঝোতা নয়, সৌহার্দ্যে শেষ সংলাপ’।

যখন সংলাপের প্রধান লক্ষ্যই অর্জিত হয়নি, তখন কথিত সৌহার্দ্য কি টেকসই হতে পারে? নিরুপায় হয়ে, মুখে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে হাত তুলে সামাল দেয়া কিংবা ভদ্রতাবশত অনুষ্ঠানে দু’এক টুকরো খাবার মুখে তুলে দেয়ার মাধ্যমে প্রকৃত সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা পায় না; গণতন্ত্র তো দূরের কথা। এই সংলাপের উদ্দেশ্য যে সঙ্কট নিরসন, তার হেরফের হয়নি। দাওয়াত দিলাম, মেহমান এলেন, হাসিমুখে সালামকালাম, কুশলাদি জেনে নেয়া, উন্নত স্ন্যাক্স কিংবা ডিনারের ভুরিভোজÑ এসব সংলাপের সাফল্যের শর্ত নয়। যারা সংলাপে যাওয়ার আগেই জানিয়ে দেন, ‘আমাদের কোনো দাবিটাবি নাই। যাবো, খাবো, চলে আসবো’, তাদের কাছে এহেন ‘সংলাপ’ মহার্ঘ হওয়ারই কথা। কিন্তু দেয়ানেয়ার মধ্য দিয়ে সমঝোতার আশায় গিয়ে যাদের হতাশ হতে হয়, ব্যর্থ সংলাপ তাদের সমস্যা আরো বাড়িয়ে দেয়।

প্রখ্যাত রসসাহিত্যিক ও সাংবাদিক, আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও মন্ত্রী মরহুম আবুল মনসুর আহমদ তার ‘রাজনীতির বিয়াকরণ’ পুস্তকে আমদানি-রফতানির সংজ্ঞা দিয়েছেন। বলেছেন, প্রচলিত ও শঠতাপূর্ণ রাজনীতির জগতে ‘আমদানি’র অর্থ ‘আমার পকেটে যাহা আসিবে’, আর ‘রফতানি’ বলতে বোঝায়, ‘তোমার পকেট হইতে যাহা যাইবে’। এমন মানসিকতা কোনো পক্ষের থাকলে ‘সংলাপ’ অর্থ, কিছু রাজনৈতিক সংয়ের লাফঝাঁপ হতে পারে, তাতে জাতির কোনো কল্যাণ হবে না।

অপলাপ ও অপনাট্য
নয়া দিগন্তে বৃহস্পতিবার একটি কলাম ছাপা হয়েছে ‘সংলাপ, প্রলাপ এবং বিলাপ’। এ সব শব্দের সাথে মিল থাকা একটা শব্দ হলো ‘অপলাপ’। বাস্তবতা হচ্ছে, এবার দেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের সুরাহার যে আশা করেছিল দেশবাসী, গণভবনের সংলাপে তা পূরণ হয়েছে বলাটা সত্যের অপলাপ। অবশ্য এ নিয়ে রাজপথের বিরোধী দল যতই বেদনা বোধ করুক, ক্ষমতাসীন দল ও জোট নির্বিঘেœ ও ছকমতো ‘সংলাপ’ নাটকের সংলাপ আওড়াতে পেরে নির্বাচনের কাজে আরো প্রেরণা অনুভব করছে। সমঝোতাহীন সংলাপের অর্থ খুঁজে না পেয়ে যতই আফসোস করা হোক, যারা বিগত এক দশক ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেন, তারা এখন পুরোপুরি দিলখোশ।

সংলাপ, প্রলাপ, বিলাপ আর অপলাপের মানে মরতবা বাংলাদেশের মানুষ ঠিকই বোঝে। সেই ব্রিটিশ আমলে কলকাতার কয়েকজন বিশেষজ্ঞের সম্পাদনায় বেরিয়েছিল সংসদ বাংলা অভিধান। আজো এর নতুন নতুন সংস্করণ কিংবা পুনঃমুদ্রণ প্রকাশিত হচ্ছে। বাংলাদেশেও এ অভিধানের চাহিদা ব্যাপক। এর ২০০৪ সালের পুনর্মুদ্রিত কপিতে জানানো হয়েছে, ‘সংলাপ’ মানে ‘আলাপ’ অথবা ‘নাটকের চরিত্রাবলির পরস্পর কথোপকথন।’ এ দিক দিয়ে আমরা হয়তো ‘সংলাপ’ নামক একটি রাজনৈতিক নাটকের মঞ্চায়ন দর্শন করেছি এবার। একই অভিধানে ‘প্রলাপ’-এর অর্থ হলো, অর্থহীন উক্তি অথবা বাক্য। আর ‘বিলাপ’ মানে, খেদোক্তি বা শোক প্রকাশ। অপলাপ-এর অর্থ দেয়া হয়েছে, গোপন, (সত্য) অস্বীকার, মিথ্যা উক্তি। দীর্ঘ দিনের কাক্সিক্ষত এবং অতিসম্প্রতি অনুষ্ঠিত সংলাপে কারা প্রলাপ আউড়েছেন, কারা অপলাপের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন; আর কাদেরই বা বিলাপের কারণ ঘটেছে- এসব কিছুই জনগণ মিডিয়ায় দেখেছে ও পড়েছে।

আলোচ্য অভিধানটি প্রায় ৮০ বছর আগে থেকে বাজারে আছে। এটি ভারতে সংকলিত, মুদ্রিত ও প্রকাশিত। এতে ‘প্রহসন’ কথাটার গতানুগতিক অর্থ এবং বাস্তব দৃষ্টান্ত দুটোই দেয়া হয়েছে। তা হুবহু তুলে ধরা হলো : ‘হাস্যরসাত্মক নাটক, বাস্তববর্জিত অনুষ্ঠান (ইহা নির্বাচন নয়, প্রহসনমাত্র)।’ এ হেন প্রহসন বাংলাদেশে প্রায় সব আমলেই মঞ্চায়িত হয়েছে নির্বাচনের নামে। ১৯৮৮, ১৯৯৬, ২০১৪ সালে এ ধরনের রাজনৈতিক প্রহসন দেখে বিবেকবান ও দেশপ্রেমিক নাগরিকেরা হাসেননি, গুমরে কেঁদেছেন। তারা মনে করেন, এমন নির্বাচন কার্যত গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠায়। ‘সুগারকোটেড কুইনিন’ তুল্য এই প্রহসনের পরিণতি জাতির ভাগ্যে ডেকে আনে ট্রাজেডি।

পাদটীকা : বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে ‘প’ কে ‘ফ’ উচ্চারণ করা হয়। যেমন, ‘পানিকে’ বলা হয় ‘ফানি’। ব্যাপারটা বেশ ফানি (মজাদার), তাই না? এমন এক জায়গার একলোক বন্ধুর সাথে সংলাপ নিয়ে আলাপ করছিলেন। বললেন, ‘সংলাফ’ তো শেষ অইয়া গেল। এ পর্যন্ত শুনেই তার বন্ধু (অন্য অঞ্চলের লোক বলে ‘প’কে ‘ফ’ বলেন না) বলে ওঠেন, সংরা লাফালাফি করেছে কি হাসির নাটকে, মানে প্রহসনে? প্রথম ব্যক্তি জবাবে জানান, আরে না, আমি সরকার, আর ঐক্যফ্রন্টের সংলাফের কথা কইতাছি। এবার তার বন্ধু বললেন, ‘ওটাও এক ধরনের প্রহসনই। আশা ছিল, কমেডি দেখব। তা আর হলো না।’

গণতন্ত্রপ্রেমী ও শান্তিপ্রিয় জনগণের প্রত্যাশা, জাতীয় রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে কমেডিই অভিনীত হবে। কখনো যেন ট্র্যাজেডি না দেখতে হয়।

পুনশ্চ : একটি আধুনিক গানের কয়েকটি কলি অনেকেই বহুবার শুনেছেন : ‘কথা নেই, কথা হলো, দেখা নেই, দেখা হলো; কথা হয়েছে; হৃদয়বীণায় তার সুর বেজেছে।’

যেখানে সরকার ও বিরোধী দলের মাঝে কথাবার্তা, দেখাসাক্ষাৎ নেই বহুদিন ধরে; সেখানে, সংলাপের সূত্রে দেখা হলো, কথা হলো (কিঞ্চিত খানাপিনাও)। কিন্তু যারা গণতন্ত্র ও সুশাসন চান আন্তরিকভাবে, তাদের হৃদয়ে কি এমন সংলাপ সাড়া ফেলেছে? জবাবটা সবার জানা।হ

http://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/363679