১০ নভেম্বর ২০১৮, শনিবার, ৪:২০

৬৪ ডিসি ও ২ বিভাগীয় কমিশনারকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ ; ইসির নিজস্ব জনবল উপেক্ষিত

সাজানো প্রশাসনে সংসদ নির্বাচন

শামছুল ইসলাম: সরকারের সাজানো প্রশাসনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ সংসদ নির্বাচন। অতীতে জাতীয় নির্বাচনের আগে মাঠ প্রশাসনে বড় ধরনের রদবদলের ঘটনা ঘটলেও এই নির্বাচনে এমন কোনো ঘটনা ঘটছে না। জনপ্রশাসনের নিয়োগকৃত দেশের ৬৪টি জেলা প্রশাসক এবং দু’জন বিভাগীয় কমিশনারকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে। ৫৭৯ জনকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে; যাদের মধ্যে ৩২ জন নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল। বাকি সবাই জনপ্রশাসনের অধীনে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, রিটার্নিং অফিসার এবং সহকারী রিটার্নিং অফিসার সবই যদি জেলাপ্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা হন তাহলে নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল কোথায়? ইসি দীর্ঘ দিন ধরে নিজেদের সক্ষমতা তৈরির চেষ্টা করছে। আগের কয়েকটি নির্বাচনে তারা রিটার্নিং অফিসার হিসেবে কাজ করেছে। তাদের কাজ কী প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি বলেন, এভাবে চলতে থাকলে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতো নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হবে। এতে মানুষ তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন। 
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে জেলা নির্বাচনী অফিসারসহ ইসির নিজস্ব জনবলের প্রতি আস্থা রাখতে পারছে না কমিশন। যদিও এসব কর্মকর্তার নির্বাচন পরিচালনা এক যুগেরও বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার পরেও এবারের নির্বাচনে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) ওপরই ভরসা রাখা হচ্ছে। ফলে ইসির যোগ্য কর্মকর্তা থাকার পরও রিটার্নিং অফিসার হওয়ার ক্ষেত্রে এবারো তারা থাকছে উপেক্ষিত।
‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে নির্বাচন কমিশন সংসদ সদস্যদের নির্বাচনের জন্য এক বা একাধিক নির্বাচনী এলাকার ক্ষেত্রে একজন রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করতে পারেন। রিটার্নিং অফিসারকে নির্বাচনী কাজে সহায়তা দানের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ করার ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের ওপর অর্পিত। তবে একজন সহকারী রিটার্নিং অফিসার একের অধিক নির্বাচনী এলাকার জন্য নিয়োগ করা যায় না।’
ইসি সূত্রে জানা গেছে, বিগত কমিশন জাতীয় সংসদের উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা উপনির্বাচন, উপজেলা পরিষদের উপনির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে কমিশনের নিজস্ব জনবল দিয়ে নির্বাচন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা শরীয়তপুর-৩, গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) ও টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) উপনির্বাচনে কমিশনের নিজস্ব জনবল থেকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেয়। এই কমিশন এসেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া নির্বাচনগুলোতে নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়। 
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে নির্বাচনের জন্য প্রতি জেলায় একজন রিটার্নিং অফিসার এবং প্রতিটি সংসদীয় আসনে একজন করে সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে থাকে নির্বাচন কমিশন। বর্তমানে ৬৪ জন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রায় ৪০০ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ছাড়াও ১০ জন আঞ্চলিক কর্মকর্তা রয়েছেন ইসিতে। তাদের মধ্যে মাত্র ৩২ জনকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণার পরেই ৩০০ আসনের জন্য ৬৬ জনকে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেয় ইসি; যাদের মধ্যে ৬৪ জন জেলা প্রশাসক এবং দু’জন বিভাগীয় কমিশনার। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৫টি আসন থাকবে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের অধীনে। জেলা প্রশাসকদের মধ্যে বেশি আসন নিয়ন্ত্রণ করবেন ময়মনসিংহ ও কুমিল্লার জেলা প্রশাসক। তারা ১১টি করে আসন নিয়ন্ত্রণ করবেন।
এ দিকে সবচেয়ে বেশি (১০ জন) সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে রাঙ্গামাটিতে। এরপর খাগড়াছড়িতে ৯, বান্দরবানে ৭ ও কুমিল্লা-৬ আসনে ৪ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ হয়।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে ৪৩টি আসনে উপজেলা নির্বাহী ও থানা নির্বাচন কর্মকর্তার পাশাপাশি কালেক্টরেট, জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, সহকারী কমিশনার (ভূমি), অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, জোনাল এক্সিকিউটিভ অফিসার, সার্কেল অফিসার এবং ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ অফিসারদের সহকারী রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এই ৪৩ আসন হলো রাজশাহী-২, চুয়াডাঙ্গা-২, ঝিনাইদহ-৪, যশোর-৪, মাগুরা-২, নড়াইল-১, খুলনা-৩, বরিশাল-৫, মানিকগঞ্জ-২, ঢাকা ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭ ও ১৮, গাজীপুর ১ ও ২, নরসিংদী-২, নারায়ণগঞ্জ-৪, ফরিদপুর-৩, শরীয়তপুর-২, সিলেট-১, কুমিল্লা-৪, নোয়াখালী-২, লক্ষ্মীপুর-২, চট্টগ্রাম ৮, ৯, ১০, ১১ ও ১৪।
সূত্র জানায়, ডিসিদের বাইরে অন্য কাউকে এ পদে (ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা) এনে নির্বাচনে নিয়ন্ত্রণ হারাতে চায় না সরকার। ফলে রিটার্নিং অফিসার হওয়ার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন ও দাবি করে আসা কমিশনের যোগ্য কর্মকর্তারা এবারো থাকছেন উপেক্ষিত। কমিশন বলছে, জেলাকে প্রশাসনিক ইউনিট ধরা হলে এর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ডিসিরা। তাদের বাইরে জাতীয় নির্বাচনে অন্য কাউকে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হলে নির্বাচনের কার্যক্রমে সমন্বয় করা কমিশনের পক্ষে অসম্ভব।

http://www.dailynayadiganta.com/first-page/363501/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8B-%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A7%87-%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A6%A6-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A6%A8