৭ নভেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:৫৪

গ্যাস সংকট দীর্ঘায়িত হতে পারে

সিএনজি স্টেশনে গ্যাসের ঘাটতি বেড়ে গেছে। ফলে গ্যাস নিতে আসা সিএনজি অটোরিকশার লম্বা লাইন -সমকাল
বাসা-বাড়ি থেকে শুরু করে শিল্প কারখানা, সিএনজি স্টেশনসহ বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ঘাটতি বেড়ে গেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে সঙ্কট তীব্র আকার নিয়েছে। তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বন্ধ থাকায় সৃষ্ট এই গ্যাস সঙ্কট কমপক্ষে আরও ১০ দিন থাকবে। তবে বিরুপ আবহাওয়ায় ভোগান্তি আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে আশঙ্কা সংশ্নিষ্টদের।
কক্সবাজারের মহেশখালীর সমুদ্রে অবস্থিত ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় এই সমস্যার উদ্ভব হয়েছে। সাগরের গভীরে স্থাপিত পাইপলাইনের একটি ইমার্জেন্সি ভাল্ক্বে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। যা দিয়ে গ্যাস লিকেজ হচ্ছিল। গত শনিবার রাতে এই সমস্যা ধরা পড়ে। এরপর গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করা হয়। এটি মেরামতের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়েজউল্লাহ। তিনি বলেন, ত্রুটি সারাতে বঙ্গোপসাগরে নির্মিতব্য আরেকটি এলএনজি টার্মিনালে কর্মরত বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনের বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নেওয়া হবে।

এলএনএনজি খাতের তত্বাবধানকারী রুপান্তরিত গ্যাস কোম্পানি আরপিজিসিএলের একজন কর্মকর্তা জানান, সাবসি পাইপলাইনের জরুরি শাটডাউন ভাল্বটি মেরামতে কাজ প্রাথমিক শুরু করেছে এলএনজির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এপিলেটর এনাজি। তবে সাগরে জোয়ার-ভাটা দেখে কাজ করতে হচ্ছে। ভাল্বের ত্রুটি মেরামতে আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
জ্বালানি বিভাগের একটি সূত্র বলছে, ভাল্বটি পানির ৪০ মিটার নিচে। বঙ্গপোসাগরে নিম্নচাপও রয়েছে। বৈরি আবহাওয়ায় কাজ চালানো সম্ভব হয় না। এতে দুর্ভোগ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সূত্র জানিয়েছে, সামিটের এলএনজি টার্মিনালে কর্মরত বিদেশি বিশেষজ্ঞরা বুধবার ঘটনাস্থলে আসবেন। তারা কাজ শুরু পর পানির নিচে ডুবরী নামলে জানা যাবে সমস্যার সমাধানে কতদিন সময় লাগবে। এছাড়া সিঙ্গাপুর থেকে একটি বিশেষজ্ঞদল আসার বিষয়ে কথা হচ্ছে।
বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির (জিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী মো. আল মামুন বলেন, ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস পাচ্ছিল জাতীয় গ্রিড। ফলে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বড় বড় কারখানা চালু করা হয়েছিল। এখন এলএনজি সরবরাহ বন্ধ থাকায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।

ঢাকাসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে গ্যাস সরবারহকারী তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (টিজিটিডিসিএল) স্বাভাবিকের চেয়ে ৯ শতাংশ গ্যাস কম পাচ্ছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে। কল-কারখানার চাহিদা পূরণে জোর দেওয়ায় গত তিনদিন ধরে বাসা-বাড়িতে ভোগান্তি বেড়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে থাকা কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) এক কর্মকর্তা জানান, এলএনজি বন্ধ হওয়ায় গত শনিবার রাত থেকে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ এখন ৪০ কোটি ঘনফুট থেকে ২০ কোটি ঘনফুটে নেমে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর খিলক্ষেত, যাত্রাবাড়ী, এলিফ্যান্ট রোড, ইস্কাটন, মগবাজার, হাজারীবাগ, খিলক্ষেতখান, গ্রিনরোড, নিকুঞ্জ, মোহাম্মপুর, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় দিনের বেলায় চুলায় গ্যাস থাকছে না।

তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল (চলতি দায়িত্ব) বলেন, গত রোববার থেকে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। তিনি বলেন, তাদের ২২০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন ১৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হতো। গত তিন দিন ধরে তা আরও ১৫ কোটি ঘনফুট কমেছে। ফলে সঙ্কট বেড়েছে। অনেক এলাকাতেই দিনের বেলায় গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, এখন সার কারখানা বন্ধ রাখা সম্ভব না। ফলে অন্য খাতে সরবরাহ কমানো হয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস দেওয়া যাচ্ছে না। গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টঙ্গিসহ ঢাকার অধিকাংশ শিল্পকারাখানা কম গ্যাস পাচ্ছে।

আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছে, চাপ না থাকায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে বন্ধ হয়ে গেছে। দুই শতাধিক শিল্পকারখানা উৎপাদন থেমে গেছে। আবাসিক গ্রাহকরাও সঙ্কটে পড়েছেন। গত ৩ দিন ধরে নগরীর অধিকাংশ এলাকায় রান্নার চুলা জ্বলছে না।

 

http://samakal.com/capital/article/1811419