৭ নভেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:২৯

আস্থাহীনতায় পুঁজিবাজার

আস্থাহীনতায় ধুঁকছে পুঁজিবাজার। প্রতিদিনই পতন হচ্ছে পুঁজিবাজার সূচকের। হ্রাস পাচ্ছে বাজারের লেনদেন। গতকাল নিয়ে টানা চার দিন সূচক হারিয়েছে দেশের দুই পুঁজিবাজার। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, এ মুহূর্তে বাজারের নেতিবাচক প্রবণতার কোনো কারণ নেই। বিনিয়োগকারীরা বুঝতে পারছেন না সামনের দিনগুলোতে তাদের বিনিয়োগের কী পরিণতি ঘটবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখেই সৃষ্টি হয়েছে এ আস্থাহীনতা।

প্রতিদিনই দিনের শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী থাকা পুঁজিবাজারগুলো ঘণ্টা না পেরুতেই বিক্রয়চাপের শিকার হচ্ছে। দিনের বাকি সময় এক ধরনের ধুঁকতে ধুঁকতেই পার করছে দুই বাজার। এর ফলে একদিকে সূচক হারাচ্ছে বাজারগুলো, অন্য দিকে সংশয়ের টানাপড়েন কমিয়ে দিচ্ছে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ। এতে অবনতি হচ্ছে বাজারগুলোর লেনদেনের।
প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ২০ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট হ্রাস পায়। ৫ হাজার ২২৪ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট থেকে দিন শুরু করা সূচকটি গতকাল মঙ্গলবার দিনশেষে নেমে আসে ৫ হাজার ২০৪ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে। আর এভাবে গতকাল ডিএসই সূচক নেমে আসে বিগত ২২ মাসের সর্বনি¤œ অবস্থানে। ২০১৭ সালের ৯ জানুয়ারির পর আর এত নিচে নামেনি সূচকটি। এ বছরের ৩ জানুয়ারি ৬ হাজার ৩১৮ পয়েন্টে থাকা সূচকটি এক বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে গতকাল নেমে আসে ৫ হাজার ২০৪ পয়েন্টে। এই সময়ের মধ্যে ১১০০ পয়েন্টের বেশি হারায় সূচকটি। দেশের দ্বিতীয় পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের অবনতি হয় যথাক্রমে ৫১ দশমিক ৪৯ ও ৩০ দশমিক ৯২ পয়েন্ট। এখানে সিএসই-৫০ ও সিএসই শরিয়াহ সূচক হারায় যথাক্রমে ১ দশমিক ১৩ ও ২ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট।
সূচকের মতো অবনতি হয় দুই পুঁজিবাজারের লেনদেনের। ঢাকা শেয়ারবাজার গতকাল ৪৪০ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৯৮ কোটি টাকা কম। সোমবার ডিএসইর লেনদেন ছিল ৫৩৮ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম শেয়ারবাজারে ২৫ কোটি টাকা থেকে ১৬ কোটিতে নেমে আসে লেনদেন।

এদিকে সোমবার বিকেল ৫টায় এডিএন টেলিকম লিমিটেডের প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) বিডিং শুরু হয়েছে। বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে চলমান নিলামে প্রথম কয়েক ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৭ টাকা পর্যন্ত দর প্রস্তাব করেছেন যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (ইআই)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায় প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের জন্য সর্বোচ্চ ২৭ ও সর্বনি¤œ ১৫ টাকা দর প্রস্তাব করেছেন ইআইরা। আগামী বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর প্রস্তাব করতে পারবেন তারা।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতির আইপিওর মাধ্যমে ৫৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে এডিএন টেলিকম। এর মধ্যে ৩৫ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হবে ইআইদের কাছ থেকে। সর্বশেষ যে দরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্ধারিত মূলধন উত্তোলন হয়ে যাবে, তা হবে কোম্পানিটির কাট অফ প্রাইস। এরপর ১০ শতাংশ হ্রাসকৃত মূল্যে আইপিওর আবেদন গ্রহণের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রাথমিক শেয়ার বেচে অবশিষ্ট মূলধন সংগ্রহ করা হবে। সংগৃহীত অর্থ কোম্পানির ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, ডাটা সেন্টার স্থাপন, আংশিক ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও আইপিও প্রক্রিয়ার খরচ মেটাতে ব্যয় করবে কোম্পানিটি।

২০১৭ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে এডিএন টেলিকমের শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ১৬ টাকা ১৩ পয়সা। ২০১৪-১৮ পর্যন্ত পাঁচ হিসাব বছরে কোম্পানির ইপিএসের ভারিত গড় দাঁড়ায় ২ টাকা ১৩ পয়সা।
২০০৩ সালে যাত্রা করা এডিএন টেলিকম দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। কোম্পানিটির বর্তমান পরিশোধিত মূলধন ৪৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এ কোম্পানির ইস্যু ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড।
গতকাল সূচকের উন্নতি দিয়েই দিন শুরু করে দুই পুঁজিবাজার। ঢাকায় ডিএসইএক্স সূচকটি ৫ হাজার ২২৪ দশমিক ৯৪ পয়েন্ট থেকে যাত্রা করে বেলা পৌনে ১১টায় পৌঁছে যায় ৫ হাজার ২৩৯ পয়েন্টে। এখান থেকেই শুরু হয় বিক্রয়চাপ। দিনের বাকি সময় বেশ ক’বার বাজার সূচক ঊর্ধ্বমুখী হলেও প্রতিবারই বিক্রয়চাপের কাছে হার মানে। দিনশেষে প্রধান সূচকটি ২০ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট হারিয়ে ৫ হাজার ২০৪ দশমিক ৩৫ পয়েন্টে স্থির হয়।

http://www.dailynayadiganta.com/last-page/362867