৬ নভেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ২:২২

কারাবন্দি নেতার হাতে বোমা দেখল পুলিশ!

চট্টগ্রাম নগরে ২২ অক্টোবর ৩০-৩৫ জন বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য মিলিত হয়েছিল দাবি করে মামলা করে পুলিশ। ওই মামলায় অন্যদের সঙ্গে আসামি করা হয় কর্ণফুলীর শ্রমিক দল নেতা আবদুর রহমানকে। অথচ তিনি ৮ অক্টোবর থেকেই কারাগারে।
কর্ণফুলী থানা এলাকার শ্রমিক দল নেতা আবদুর রহমান ‘গায়েবি’ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যাওয়ার ১৪ দিন পর থানা পুলিশ ২২ অক্টোবর বেলা আড়াইটায় দেখল কারাবন্দি আবদুর রহমানসহ ৩০-৩৫ জন জামায়াত-বিএনপি নেতাকর্মী ইছানগরে সেগুন বাগানে বসে সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জনমনে ভীতি সঞ্চার ও নাশকতামূলক কার্যকলাপ তথা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র করতে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন!

বৈঠকস্থল থেকে তিনটি ককটেলসদৃশ বিস্ফোরক ও কাচের বোতলে লাল স্কচটেপ মোড়ানো পেট্রলবোমাসদৃশ বিস্ফোরকও পায় পুলিশ। তবে ওই দিন পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বৈঠকের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, সেই বৈঠকে অন্যদের সঙ্গে আবদুর রহমানও ছিলেন। এই আবদুর রহমান কর্ণফুলী থানার জুলধা গ্রামের মৃত আহাম্মদ হোসেনের ছেলে। তিনি জুলধা ওয়ার্ড শ্রমিক দলের সেক্রেটারি। আবদুর রহমান গতকাল সোমবার পর্যন্ত কারাগারে বন্দি রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তাঁর স্ত্রী রোখসানা বেগম।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সহসভাপতি মোহাম্মদ আবু তাহের এই বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কর্ণফুলী থানা এলাকায় রাজনৈতিক সহাবস্থান ছিল। কিন্তু কিছু পুলিশ কর্মকর্তা অতি-উৎসাহী হয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১০টি গায়েবি মামলা রেকর্ড করেছেন। এসব মামলায় পুলিশ যে অভিযোগ এনেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং পুলিশের কল্পনাপ্রসূত। মামলাগুলোয় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম মামুন মিয়া, থানা বিএনপির সভাপতি এহছান এ খান ও সেক্রেটারি আব্বাস আলীসহ থানাপর্যায়ের জ্যেষ্ঠ নেতাদের আসামি করা হয়েছে।’
১০টি মামলার এজাহার কপি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মামলাগুলো বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক আইনে করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ অক্টোবর উপপরিদর্শক ফজলে রাব্বী কায়সার বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, ৭ অক্টোবর রাত ১০টা ৪০ মিনিটে কর্ণফুলী থানার চরপাথরঘাটা ডায়মন্ড সিমেন্ট ফ্যাক্টরির কাছে ধৃত আসামি আবদুর রহমান, সোলায়মান ও জাহেদুল ইসলামসহ ৬০-৭০ জন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নাশকতামূলক কার্যকলাপ তথা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। এ সময় পুলিশ ধাওয়া করে তিনজনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে। ওই মামলায় পরদিন ৮ অক্টোবর এক নম্বর আসামি হিসেবে কারাগারে যান আবদুর রহমান।
কারাবন্দি সেই আবদুর রহমানকেই পুনরায় ২২ অক্টোবর দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে নাশকতার পরিকল্পনা করতে দেখে পুলিশ। ওই দিন ইছানগর বিএডিসি আবাসিক মাঠের পাশে সেগুন বাগানে ৩০-৩৫ জন বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার জন্য মিলিত হয়েছিলেন দাবি করে উপপরিদর্শক কাজী মনিরুল করিম মামলাটি করেন। এ মামলার ২৪ নম্বর ক্রমিকে আবদুর রহমানের নাম রয়েছে।

কারাগারে থাকা আসামিকে দিনদুপুরে নাশকতার পরিকল্পনা করতে কিভাবে দেখলেন—এমন প্রশ্নের জবাবে মামলার বাদী উপপরিদর্শক কাজী মনিরুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে নাম-ঠিকানা পেয়ে এজাহারে লিখেছিলাম। পরবর্তী সময়ে জানতে পারি আবদুর রহমান কারাগারে। এরপর চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে আবদুর রহমানকে বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছি।’
মামলাটি রেকর্ড করেছেন কর্ণফুলী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাসান ইমাম। অন্য মামলায় কারাবন্দি আবদুর রহমান কিভাবে আসামি হলো—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমন তো হওয়ার কথা নয়। এ বিষয়ে এজাহার দেখে এবং জেনে কথা বলতে হবে।’

 

http://www.kalerkantho.com/print-edition/news/2018/11/06/700276